আমি পাণ্ডিত্যপূর্ণ কিছুতে অনাগ্রহ নিয়ে বড় হয়েছি ।। উডি অ্যালেনের সাক্ষাৎকার ।। অনুবাদ: নীলাঞ্জনা অদিতি

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উডি অ্যালেনের অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর— মোশন পিকচার, মঞ্চ, সাহিত্য। তিনি নিজেকে শিল্পের এসব মাধ্যমের বাধ্যগত কর্মী মনে করেন। তিনি একবার বলেছিলেন, “আমি সবচেয়ে বেশি করতে পছন্দ করি সেটা, যেটা এখন করছি না”। কমেডিতে অ্যালেন কাজ শুরু করেন বয়ঃসন্ধিতে, তখন তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কৌতুক জমা দিতেন। ১৯৬৫ সালে What’s New, Pussycat? দিয়ে অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার হিসাবে আবির্ভাব হয় তার। ১৯৬৯ এ মুক্তিপ্রাপ্ত Take the Money and Run তার প্রথম সিনেমা। যা তিনি শুধু লেখেন নি, বা অভিনয় করেননি; পরিচালনাও করেছিলেন। যদিও তার প্রথমদিকের অনেক সিনেমাই (Bananas, Sleeper, Love and Death ) সমালোচক দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল, কিন্তু  ১৯৭৭ এর আগে বা Annie Hall এর মুক্তির আগে , যা ৪ টা অস্কার পুরস্কার পায়, অ্যালেন কে আমেরিকান সিনেমার অসাধারণ শক্তি হিসাবে আবিষ্কার করা হয়নি। উডি অ্যালেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা ও কথাসাহিত্যিক। এই সাক্ষাতকারের বেশির ভাগ অংশ নেন মিশিকো কাকুতানি এলাইন রেস্তোঁরায় নৈশভোজে , শেষ হয় ১৯৮৫ তে। তারপর থেকে সম্পাদক প্রতিনিধি দ্বারা টেলিফোনে কথা বলে এটি হালনাগাদ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি প্যারিস রিভিউতে প্রকাশ হয় ১৯৯৫ সালে। উডি অ্যালেনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র BananasAnnie HallManhattanThe Purple Rose of Cairo, Hannah and Her Sisters, Alice, Bullets Over BroadwayYou Will Meet a Tall Dark StrangerMidnight in Paris, To Rome with Love, Blue Jasmine. পহেলা ডিসেম্বর এই কীর্তিমানের বয়স হবে ৮২; কিন্তু তিনি এখনও কর্মসাধনায় মজে আছেন। শিরিষের ডালপালা পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন নীলাঞ্জনা অদিতি।

 

আপনার কি এমনটা  মনে হয় যে, হাস্যরসিকরা পৃথিবীকে কিছুটা অন্য চোখে দেখে থাকেন? 

হ্যাঁ। আমার মনে হয় যদি আপনার কৌতুকের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, যা কিছুই হবে আপনি সেগুলো হাসির ফিল্টারে ছাঁকতে পারবেন। এটা সংক্ষিপ্ত মেয়াদী মানিয়ে নেয়ার একটা রাস্তা। কিন্তু কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নেই আর এটা অশেষ নবায়ন দাবী করে। সুতরাং লোকে হাস্যরসাত্মক কিছু নিয়ে কথা বলে যারা সব সময় হাসিখুশি। এটা অনেকটা আপনার চেতনাকে জাগিয়ে রাখার মত কম কষ্ট দিয়ে।

সেটা বেশ দুর্লভ তাই না?

এটা জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়ার একটা রাস্তা। মানুষ ভাবে মজার মানুষ হওয়া খুব কঠিন কিন্তু এটা বেশ আগ্রহ জাগানিয়া। আপনি যদি কমেডি করতে পারেন এটা একদমই কঠিন না। এটা এমন ব্যপার যে,  যে খুব ভাল আঁকে এমন কাউকে যদি আমি বলি, ও ঈশ্বর! আমি সারাদিন কাগজ পেন্সিল নিয়ে থাকলেও এই ঘোড়া আঁকতে পারব না। আমি করতে পারব না, আর তুমি একদম ঠিকমত করেছ। আর অপরজন  ভাবেন, এটা তেমন কিছু না, আমার যখন চার বছর বয়স তখন থেকেই আমি এটা করছি। কমেডি নিয়ে আপনার অনুভূতিও একই – আপনি যদি করতে পারেন , এটা সত্যিই কোন ব্যপার না। এমন না যে শেষে যা দাঁড়াবে তার দাম নেই কিন্তু নিয়ম টা সাধারণ। অবশ্যই, কিছু মানুষ আছেন যারা যথার্থই মজার, আর কেউ আছেন যারা নন। এটা খামখেয়ালী স্বভাব।

কোন কোন লেখক আপনাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন?

আমি প্রথম যার কথা স্মরণ করতে পারি, পড়ার সময় যাকে নিয়ে খুব হেসেছিলাম, তিনি ম্যাক্স শুলম্যান। আমি তখন ১৫ বছরের। আমার কাছে ওনার বেশ কয়েকটি পুরান বই ছিল। তার মাঝে সবচেয়ে মজাদার ছিল দ্য জেবরা ডার্বি। বিশদ অর্থে মজাদার, যদিও যে প্রসঙ্গের ভিত্তিতে এটা লিখিত তার প্রশংসা করতেই হবে, যেহেতু এটা অভিজ্ঞতালব্ধদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রত্যাবর্তন, আনুগত্যের ভূমিতে প্রত্যাবর্তন। তারপর আমি রবার্ট বেঞ্চলে আর এস যে পেরেলম্যান নামে আরো দুজন মজার লেখকের সন্ধান পাই যারা সত্যি মহান শিল্পী। এক রাতে এলাইন রেস্তোরায় পেরেলম্যান এর সাথে আমার দেখা হয়। আমি মার্শাল ব্রিকম্যান এর সাথে এসেছিলাম আর একজন পরিচারক এসে আমাকে একটা কার্ড দেয়। পেছনে এমন লেখা ছিল যে, খুব খুশি হব যদি এসে আমার সাথে কেলেরি টনিক পান করেন। আমি ভেবেছিলাম, তিনি  হয়ত বহিরাগত পর্যটক আর কার্ড ফেলে দিয়েছিলাম। দেড়ঘন্টা পরে, কেউ একজন বলল, আপনি জানেন, উনি এস জে পেরেলম্যান, তো আমি মাটি থেকে কার্ডটি উঠালাম। এখানে লেখা ছিল এস জে পেরেলম্যান, আর আমি কোনায় যেখানে তিনি বসেছিলেন সেখানে ছুটে গিয়ে তার সাথে যোগ দিলাম। আমার তার সাথে আগেও দেখা হয়েছে। যতবার দেখা হয়েছে তিনি উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ন ছিলেন। আমি পড়েছি তিনি জটিল মানুষ কিন্তু আমি কখনো তার সেই দিকটি দেখিনি।

আপনি কবে লেখালেখি শুরু করেন?

পড়তে পারার আগে থেকেই। আমি সব সময় লিখতে চেয়েছিলাম। এর আগে আমি রূপকথা লিখতাম। আমি সবসময় বিভিন্ন শ্রেণীর  জন্য গল্প বানাতাম। বেশির ভাগ অংশে , আমি কৌতুক লেখকদের এতটা পছন্দ করতাম না যতটা গম্ভীর লেখকদের করতাম। কিন্তু আমার মনে হল আমি মজাদার করে লিখতে সক্ষম, প্রথমে  সরাসরি শুলম্যান কখনো পেরেলম্যান এর অনুকরণ করতাম। আমার স্বল্পস্থায়ী নিস্ফল কলেজ জীবনে আমি আমার পেপার হাতে লিখতাম, সবগুলোই ভাল হোক বা মন্দ শুলম্যান থেকে নেয়া ছিল। আমার একদম নিজের বোধ বলতে কিছু ছিল না।

আপনি কিভাবে নিজের কন্ঠস্বর আবিস্কার করলেন? এটা কি ধীরে ধীরে হয়েছে?

না, এটা একটা দুর্ঘটনাবশত হয়েছে। আমি গদ্য লেখা একদম ছেড়ে দিয়েছিলাম আর টেলিভিশনে লেখার দিকে চলে গেছিলাম। আমি মঞ্চের জন্য লিখতে চেয়েছিলাম আর সেই সাথে সরাইখানায় কৌতুকাভিনয়ের কাজও করছিলাম। একদিন, প্লেবয় ম্যাগাজিন তাদের জন্য আমাকে কিছু লিখতে বলল, কারণ আমি প্রকাশমান কৌতুকাভিনেতা ছিলাম আর আমি দাবার ওপর একটা লেখা লিখলাম। সেই সময় আমি প্রায় বিবাহিতই বলা চলে, কিন্তু সত্যিকারের অর্থে না; যা হয়েছিল লুইস লেসার এর সাথে। সে এটা পড়ে বলেছিল গী, আমার মনে হয় এটা ভাল। তোমার সত্যি এটা দ্য  নিউ ইয়র্কারে পাঠানো উচিত। যা আমার কাছে, আমার প্রজন্মের বাকিদের মতই পবিত্র ভিত্তি ছিল। যেকোন ভাবেই, আমি মজার ছলেই এটা করি। আমি খুব অবাক হই যখন ফিরতি ফোন পাই আর তারা বলে যে আমি কিছু অদল-বদল করলে তারা এটা ছাপাবে। তো আমি সেখানে গিয়ে কিছু বদল করলে তারা এটা ছাপায়। এটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। আমার মনে হল, আমি তাদের জন্য আরো কিছু লিখব। আমি দ্য নিউ ইয়র্কারে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফায় যা লিখে তাদের পাঠিয়েছিলাম তা রীতিতে পেরেলম্যানের মত ছিল। তারা এটা ছাপায় কিন্তু মন্তব্য আসে যে, লেখাটা ভয়ানক অনুকরণভিত্তিক আর আমি সহমত হই। কাজেই দ্য নিউ ইয়র্কার আর আমি দু পক্ষই পরবর্তী অংশের খোঁজ করি যা ওখানে পাঠিয়েছিলাম। পরে আমি তার প্রভাব থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাই। পেরেলম্যান নিশ্চয় যতটা জটিল হওয়া সম্ভব তেমনই ছিলেন – রসবোধের দিক থেকে সমৃদ্ধ। আস্তে আস্তে আমি সহজ করার চেষ্টা করেছি।

আপনি চলচ্চিত্রে যা করতে চাচ্ছিলেন এটা কি সেই সমান্তরাল উন্নতি ছিল?

আমি দুটোকে সমান্তরাল ভাবি না। আমার অভিজ্ঞতা এমন যে বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য লেখলেখি খুব আলাদা দায়িত্ব। মঞ্চের জন্য লেখা চলচ্চিত্রের জন্য লেখা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আর দুটোই গল্প লেখা থেকে আলাদা। গল্প লেখার চাহিদা বেশি। আমার মনে হয়, যখন কাজটা শেষ হয়, শেষে একটা কিছু দাঁড়ায়। আপনি এটা বদলাতে পারবেন না। নাটকে, তার কোন সম্ভাবনা নেই। চিত্রনাট্য অভিনেতা পরিচালকের জন্য বাহনের কাজ করে চরিত্র বুননে। চলচ্চিত্রে তাড়াহুরো করে কিছু নোট তৈরী করে দেই দৃশ্যের জন্য। আপনার কিছু লেখার দরকার নেই, আপনার দৃশ্যের জন্য নোট আছে যা অভিনেতাদের জন্য লেখা আর ক্যামেরা মনে। আসল চিত্রনাট্য রূপায়ণ ও বাজেটের জন্য জরুরী , কিন্তু সমাপ্ত রূপটার চিত্রনাট্যর সাথে মিল থাকে না – অন্তত আমার ক্ষেত্রে।

তো, উপন্যাসের মত আপনার আরো  কোন কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে?

এটা আবেদন – যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন। আরেকটা দারুণ আবেদনময় ব্যপার হল উপন্যাস শেষ হয়ে গেলে আপনি ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারেন। সেখানে যখন চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন তা করতে পারবেন না। আপনাকে সেখানেই সব বসাতে হবে আপনার ভাল না লাগলেও। আমি যোগ করতে পারি, সময় খুব ভাল কাটে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পরের কক্ষে গিয়ে একাকী লেখালেখি করাটা ঘুম থেকে উঠে শুটিং করতে যাওয়ার থেকে মজার। চলচ্চিত্রের চাহিদা অনেক। এটা শারীরিক কাজ। আপনাকে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় শারীরিকভাবে থাকতে হবে। আর আপনি মানুষের ওপর নির্ভরশীল। আমি জানি নরম্যান মেইলার বলতেন যে তিনি যদি এখন কাজ করতেন তাহলে চলচ্চিত্রে থাকতেন ঔপন্যাসিক হতেন না। আমার মনে হয় চলচ্চিত্র তারুণ্যের উদ্যোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা শ্রমসাধ্য। একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট ছাড়াও আমার মনে হয় না যে আমার সেই উদ্যম চাই; মানে আমি এমন ভাবতে চাই না যে সারা জীবন আমাকে ভোর ৬ টায় উঠতেই হবে, ৭ টায় বের হতে হবে যাতে ঠান্ডায় রাস্তায় বা শুষ্ক আবহাওয়ায় বের হতে পারি। এটা একদমই উত্তেজনার না। বাসার চারপাশে বা বাসায় থাকা অনেক আনন্দের। টেনেসি উইলিয়াম নাটক সম্পর্কে খুব বিরক্তিকর একটা কথা বলেছিলেন, “আপনাকে উৎপন্ন করতে হবে- শুধু লিখে ড্রয়ারে রেখে দিলে হবে না। কারণ আপনি যখন চিত্রনাট্য লেখা শেষ করেন আপনি সেটা অতিক্রম করে সামনে এগোন। বই এর বেলায়, এমন পারেন। কাজেই ঔপন্যাসিক হতে তাড়িত হন। এটা খুবই চাহিদাপূর্ন। আমি উপন্যাসের প্রথম খসড়া প্যারিসে লিখেছিলাম  যখন ভালবাসা ও মৃত্যু নিয়ে কাজ করছিলাম। আমার বাড়িতে এটা আছে, পুরোটা হাতে লেখা , গ্রাফ পেপারে আমার ড্রয়ারে রাখা – এভাবে অনেক বছর ধরে আছে । আমি এটা সে সময়ের জন্য সঞ্চিত করেছিলাম যখন আমার উদ্যম থাকবে না বা চলচ্চিত্র বানাতে পারব না। আমি তখন এটা করতে চাই না, ঘুম থেকে উঠে যখন আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো যথেষ্ট প্রাণশক্তি থাকবে। আমার মনে হয় উপন্যাসই ভাল। মানে এটার কোন বিকল্প হয় না, গল্পকে গল্পের মতো করেই বলা যায়। আমি একবার ভেবেছি এটার নাটক বা চলচ্চিত্র বানাব কিন্তু এটা কাজ করেনি। যদি কাজ হয় উপন্যাসেই হবে। গল্পে হয়।

এই উপন্যাসের চিন্তাটা কিভাবে আসলো? আপনি কি এই চিন্তা আগে থেকেই করছিলেন?

ঠিক তা না। আমি এক নাম্বার পেজ থেকে শুরু করেছিলাম। এই পুরনো অভ্যাস টা আমার মঞ্চে কাজের সময় হয়েছিল। আমি নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রথম অঙ্কের আগে তৃতীয় অঙ্ক বা দ্বিতীয় অঙ্কের ভগ্নাংশের কথা ভাবতে পারি না। পরবর্তীতে যে ঘটনাগুলো হয় – চরিত্রের মধ্যে যোগাযোগ, পরিকল্পনার উন্নতি – এসব নির্ভর করে কর্মপ্রক্রিয়ার ওপর যা শুরুতে হয়। অনুক্রমের বাইরে গিয়ে কিছু ভাবতে পারি না। আমি নাটকে প্রাচীন আখ্যানের রূপ ভালবাসি। উপন্যাসেও ভালবাসি। আমি সেই উপন্যাস উপভোগ করি না যেটায় পরিস্কার গল্প নেই। বালজাগ আর তলস্তয় সবকিছুর মধ্যেও দারুণ আনন্দময়। নাটকে, যখন পরদা উঠে আর লোকজন নাকানিচুবানি খায়, আমি জানি হয়ত এই আইডিয়াটা প্রশংসা করতে পারি কিন্তু এই ধরণের আইডিয়ার কোন মানেই নেই আমার কাছে। আমি বেকেট  দেখেছি, আরো অনেক এক্সপেরিমেন্টালিস্টের সাথে আর সমসাময়িক অনেক নাটকের সাথে, আমি বলতে পারি হ্যাঁ, এটা চতুর ও গভীর কিন্তু আমি পাত্তা দেই না। কিন্তু যখন আমি চেখভ ও ও’নীলকে দেখি যেখানে মানুষের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সংকট  হয় – সেটা আমি পছন্দ করি। আমি জানি, এটা এখন বলাটা খুব ক্লিশে, কিন্তু বস্তু নির্ভর। উদাহরনস্বরূপ ভাষায় কথার চতুর ছন্দ যাকে আমি পাত্তা দেই না। আমি মানুষের কবিত্বে ভরা সহজ কথা শুনতে চাই। আপনি যখন ডেথ অফ এ সেলসম্যান অথবা এ স্ট্রিটকার নেমড ডিজায়ার দেখেন আপনি মানুষের প্রতি আগ্রহী হন আর দেখতে চান এর পরে কি হয়। আমার যখন নাটকের চিন্তা মাথায় এসেছিল আমি লিঙ্কন সেন্টারের জন্য লিখলাম – দা ফ্লোটিং লাইটবাল্ব – আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি সাধারণ অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনের লোকজন নিয়ে লিখব। আমি ইছাকৃতভাবে সেইটার থেকেও বিস্তৃত কিছু উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছি। চলচ্চিত্রে বাজে ব্যপার হল, আমি সেভাবে কিছুই অনুভব করিনি। আমি চলচ্চিত্রে স্বচ্ছন্দ্য, সময়ের বিকৃতি বা বিমূর্তায়নে।

অনেক লেখক পরবর্তী পরিকল্পনা শুরু করতে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হন, কোন বুদ্ধি পেতে তারা সত্যি কাজ করতে চান…

হয়তো আমি কাজের জন্য যে বুদ্ধি বের করি তারাও তাই করে আর সেগুলো ভাল হয়। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বুদ্ধি বের করব আর সাথে সাথে কাজ শুরু করব। আর আমি সব সময় কিছু না কিছুতে বুদ্ধি কাজে লাগাতে চাই। আমার কোনদিন বুদ্ধিতে আটকায়নি। আমি আমার সামর্থ্যের সীমার মধ্যেই কথা বলছি। আমার ৫ টা বুদ্ধি  এলে সবগুলো করার জন্য মুখিয়ে থাকি। সপ্তাহ মাস কেটে যায় আমি পরবর্তীতে কি করব সেই ভাবনায় তাড়না বোধ করি। যদি কেউ আমাকে কাজ বেছে দিত ভাল হত। যদি কেউ বলতো ৩ নাম্বার বুদ্ধিটা কাজে লাগাও এর পরে, তবে ভাল হত। কিন্তু আমার কখনো নিজেকে এত নীরস লাগেনি। মানুষ সব সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কি কখনো এমন ভেবেছেন যে সকালে উঠবেন আর নিজেকে মজাদার লাগবে না? এই চিন্তা আমার মাথায় কখনো আসে না – এটা বাজে চিন্তা ও বাস্তবসম্মত নয়। কারন মজাদার ও আমি আলাদা না। আমরা এক। আমার কাছে সেরা সময় হল যখন আমি প্রকল্পে কাজ করি এবং নতুন কিছুর ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেই। সেটা এই কারণে যে এইটা সেই সময় যখন বাস্তবতা সেট হয়নি। আপনার মনশ্চক্ষের চিন্তা সত্যি সুন্দর আপনি সেকেন্ডের ঝলকে এটা কল্পনা করতে পারেন – সুন্দর ভাবনা। কিন্তু তারপরে আপনাকে যখন এটা প্রয়োগ করতে হবে এটা তেমন ভাবে বের হবে না যেভাবে ভেবেছিলেন। উৎপাদন থেকেই  সমস্যার শুরু হয় যেখানে বাস্তবতা তৈরী হতে থাকে। আমি আগে যেমন বলছিলাম আমি যে ধারণাকে সবচেয়ে কাছ থেকে অনুধাবন করতে পারি তা গল্প। বেশির ভাগ জিনিস যা আমি লিখেছি বা প্রকাশ করেছি, আমি অনুভব করেছি যে আমি আমার আসল চিন্তা নিজের সন্তুষ্টির আদলে পরিচালনা করতে পারি। কিন্তু চলচ্চিত্র বা মঞ্চের জন্য নিজের কোন লেখার কথা কখনো ভাবিনি। আমি সবসময় অনুভব করেছি আমার চিন্তাটা উজ্জ্বল ছিল – আমি কোথায় ভুল করেছি? তুমি প্রথম দিন থেকে ভুল করেছ। সবকিছুই আপোষ। যেমন, আপনি আপনার পান্ডুলিপির জন্য মার্লোন ব্রান্ডোকে পাবেন না কোন নিচু স্তরের কাউকে পাবেন। নিজের মনের চোখে যে জায়গা দেখবেন সেই জায়গা যেটা চলচ্চিত্রায়ন করবেন তা না। এটা সবসময় উচ্চাশা, জমকালো স্বপ্ন , দারুণ বাহাদুরি ও আস্থার প্রশ্ন ও টাইপরাইটারে দারুণ সাহসের; আর তারপরে আমি যখন ছবি শেষের মাঝপথে থাকি আর সবকিছু ভয়ঙ্কর ভুল হয় আর আমি পুনঃসম্পাদনা পুনরায় দৃশ্য গ্রহন করে সমাধান করি এটা শুধুই বাঁচানোর সংগ্রাম হয়ে দাঁড়ায়। আপনি শুধু বেঁচে থেকেই আনন্দ পান। বাকি যা গেছে সে সবই উন্নত উদ্দেশ্য আর আশা, শিল্পের কাজের আপোষহীন ধারণা আর আপনি শুধু লড়াই করছেন কাজেই কেউ আলকাতরা পালকের ঝড়ে আপনার যাত্রা সঙ্কীর্ণ করবে না । আমার বেশির ভাগ ছবিতে প্রায় সবগুলোতে আমি যা ধারণা করেছি তা যদি পর্দায় আনতে পারি সেগুলো দারুণ চলচ্চিত্র হবে। সৌভাগ্যবশত মানুষ জানে না আমার মাথায় চলচ্চিত্র কিভাবে খেলতো কাজেই এর সাথে আমি আগাতে পারি।

আপনি আসলে কিভাবে কাজ করেন? আপনার সরঞ্জামাদি কি কি?

আমি আইনী প্যাড হোটেলের জিনিসের ওপর লিখেছি, হাতের কাছে যাই পেয়েছি তাতেই। আমার কোন ব্যপারে খুঁতখুঁতানি নেই। আমি হোটেল রুমে, আমার বাসায়, সবার মাঝে, ম্যাচবাক্সতে লিখি। আমার তাতে কোন সমস্যা নেই-  অল্প কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়েও কাজ করতে পারি। অনেক গল্প ছিল যেখানে আমি টাইপরাইটারের সামনে বসে শুরু থেকে শেষ অব্দি সোজা টাইপ করে গেছি। কিছু নিউ ইয়র্কের লেখা ছিল যা আমি ৪০ মিনিটের মধ্যে লিখেছিলাম। আরো কিছু জিনিস ছিল যার জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ আমি সংগ্রাম করেছি, যন্ত্রণা পেয়েছি। এটা খুব বিশৃঙ্খল।একটি চলচ্চিত্র যেটা সমালোচকের চোখে সাফল্য পায়নি তা হল এ মিডসামার নাইট সেক্স কমেডি। আমি সেটা অল্প সময়ের মধ্যে লিখে দিয়েছিলাম। এটা ৬ দিনের মধ্যে বের হয়ে গেছিল- সবকিছু সুনিপুণ আকারে। আমি এটা করলাম কিন্তু ভাল মতো গ্রহণযোগ্যতা পেল না। যেখানে অ্যানি হল অশেষ গ্রহণযোগ্যতা পায় – পুরো আলাদা ব্যপার। কাটাছেঁড়ার কক্ষে যত  জিনিস ছিল তা চলচ্চিত্রেও ছিল- আমি পুনরায় ৫ বার দৃশ্যধারণ করি। আর এটা ভাল গ্রহণযোগ্যতা পায়। অপর দিকে, আমার সাথে পুরো উল্টো ঘটেছে যেখানে আমি সহজে যায় এমন কাজ করেছি আর গ্রহণ হয়েছে।  আর যার জন্য যন্ত্রণা পেয়েছিলাম, আমি কোন সম্পর্কই পাইনি। কিন্তু আপনি  যদি করতে পারেন একদম কঠিন না, বা খুব বিশাল কিছুও না। উদাহরণস্বরূপ, আমার যখন ১৬ বছর বয়স আমি প্রথম চাকুরী পাই। এটা ছিল নিউ ইয়র্কে একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় হাসির লেখা দেয়ার কাজ। আমি স্কুলের পরে প্রতিদিন এই বিজ্ঞাপনী সংস্থায় আসতাম আর তাদের জন্য কৌতুক লিখতাম। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের এই কৌতুকগুলো দিতেন আর সংবাদপত্রের কলামে ছাপাতেন। আমি পাতালে যেতাম- ট্রেনে অনেক ভীড় থাকত বাসের হাতল ধরে সবাই দাঁড়ানো, আমি পেন্সিল বের করতাম, নামার আগেই গোটা পঞ্চাশেক কৌতুক লিখতাম … বছরে ৫০টা কৌতুক ট্রেনে বসে লেখা। বিশ্বাস করুন, এটা কোন ব্যপার না। যেখানে আমি দেখব কে গান বাঁধতে পারে – আমি জানি না তারা কিভাবে শুরু বা শেষ করবে! কিন্তু আমি যেহেতু শুধু লিখতেই পারি, আমার কাছে কোন ব্যপার না। আমি সব সময় করতে পারতাম – আমার সীমাবদ্ধতার মাঝেও। কাজেই কখনোই এটা কঠিন ছিল না। আমার মনে হয় যদি ভাল শিক্ষা, ভাল বেড়ে ওঠা অথবা যদি আলাদা ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠত আমি গুরুত্বপূর্ণ লেখক হয়ে যেতাম। এটা সম্ভব, কারণ আমি মনে করি আমার মেধা আছে , কিন্তু কোন আগ্রহ ছিলনা। আমি পাণ্ডিত্যপূর্ণ কিছুতে অনাগ্রহ নিয়ে বড় হয়েছি। আমি লিখতে পারতাম কিন্তু পড়ায় আগ্রহ ছিলনা। আমি শুধু খেলেছি আর খেলা দেখেছি, মজার বই পড়েছি, আমি কলেজের বয়স অব্দি কোন উপন্যাস পড়িনি। কোন আগ্রহই ছিলনা। হয়ত যদি আলাদাভাবে বড় হতাম আমি হয়ত অন্যদিকে চলে যেতাম। অথবা যদি পরবর্তীতে আমি যেসব বিষয়ে সক্রিয় হয়েছি,  আমার অভিভাবক বন্ধু আর পরিবেশের লক্ষ্য যদি তাই হত হয়ত সব অন্যরকম হত। আমি হয়ত একনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক হতাম । হয়ত হতাম না। কিন্তু এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে আর আমি এখন খুশি যে আমার বাতের সমস্যা নেই।

আপনি কি একটা কৌতুক মনে করতে পারেন যা ট্রেনের হাতলে ঝুলতে ঝুলতে লিখেছেন?

আমি যেভাবে প্রকাশিত হয়েছি এটা ছিল পুরা ফালতু ধরণের। যে বাচ্চা আমার সাথে বসতো তার বাবা ছিল জুয়াড়ি- সে কখনোই পরীক্ষার নাম্বার নিতে যেতো না, সে ওগুলো পরের পরীক্ষার জন্য ফেলে রাখতো। এখন তুমি দেখো কেন এটা খুব একটা কষ্টের ছিল না। একদিনে ব্যস্ত সময়েও পঞ্চাশটা কৌতুক লেখা।

সহমত। কিন্তু আপনি এই উপন্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন

আমি নিশ্চিত না যে আমার উপন্যাস লেখার পটভূমি বা বোঝার ক্ষমতা আছে কিনা। আমি যে বই এর উপর কাজ করছি বা পরিকল্পনা করছি তা আনন্দময়, কিন্তু গম্ভীর আর আমি দেখব কি হয়। আমি সত্যিই খুব অশিক্ষিত তাই হয়ত স্বতঃস্ফূর্ত। এটা একটা চালাকি, কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যা স্বতঃস্ফূর্ত লোক জানে কিন্তু অনেক দূরত্ব আছে যা অচিন্তনীয় । এটা গঠনমূলক শিক্ষার অভাবে হয়। মানুষ আমাকে চিত্রনাট্য পাঠাবে অথবা প্রবন্ধ অথবা কৌতুকের পৃষ্ঠা আর তারা বলবে এটা কিছু হল? এটা কি ছোটগল্প? এটা কি হাসির নকশা? তাদের কোন ধারণাই থাকবেনা এটা কি? বা কি না? এক দিক দিয়ে আমিও গদ্যসাহিত্য নিয়ে একই ভাবনা ভাবি। আমি যখন দা নিউ ইয়র্কারে একটা লেখা দিলাম আমি জানতাম না কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তাদের প্রতিক্রিয়া এমন হতে পারত, ওহ! এগুলো ত কিছুই না। আপনি অনেক কিছু লিখেছেন কিন্তু সেগুলো সত্যি কিছু না , অথবা হে তরুণ, এটা সত্যি দারুণ জিনিস। আমি তাদের বিচার মেনে নেই আনন্দে। যদি তারা বলে থাকেন, আমি যখন দা নিউ ইয়র্কারে লেখাগুলো নিয়ে যাই , আমরা দুঃখিত কিন্তু এটা সত্যি কিছু হয়নি আমি হয়ত মেনে নিতাম। আমি হয়ত বলতাম ও তাই? আচ্ছা। আমি সব ছুঁড়ে ফেলে দিতাম আর ফিরেও তাকাতাম না। এই এক বছরে তারা যে দু একটা ব্যপারে নীচে নেমেছে, তারা সব সময় পরমুখাপেক্ষী আর বিনয়ী , তারা সবসময় বলেছে আমরা হয়ত এমন কিছু ছাপাব যা এটার খুব কাছাকাছি হবে বা বুদ্ধিদীপ্ত হবে। আর আমি সব সময় অনুভব করেছি ছিঁড়ে ফেল, আমি ধার ধারি না। সেই হিসেবে, আমি লেখালেখিকে কমনীয় বা পবিত্র হিসাবে পাইনি। আমার মনে হয় আমি উপন্যাস শেষ করলে এমনই হবে। যদি লোকেরা এমন বলেই থাকে এটা আসলে কিছুই হয়নি, আমি কখনোই বলব না বোকারা, আমি যথেষ্ট জানি না আমি ক্ষমতাবান কারো সাথে কথা বলছি না যে জেমস জয়েসের মত, যে সব পড়ত আর তার সমালোচক থেকেও বেশি জানত।  একটা বা দুইটা ক্ষেত্র যেখানে নিরাপদ বোধ করি যেখনে আমার বিচার ভাল হয় আর হয়ত অনেকের চেয়েই ভাল হয় । কৌতুক তেমন। মজার বিষয়গুলো নিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আগাতে পারি , মাধ্যম যাই হোক আর আমি নিউ অরলিন্স এর জ্যাজ সঙ্গীত সম্পর্কে জেনেও দুর্বল সঙ্গীতজ্ঞ। দুর্বল কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ।

আপনি কেন কমেডি লেখা শুরু করলেন?

ছোট বয়সে আমি কৌতুক অভিনেতাদের কাজ খুব উপভোগ করতাম। কিন্তু আমি যখন গভীরভাবে পড়তে শুরু করি, আমি চিন্তাশীল লেখকদের লেখা উপভোগ করি। আমি তখন কমেডি কম পছন্দ করতে থাকি। আমি বুঝলাম আমি লিখতে পারি। বর্তমানে আমি কমেডির প্রতি  গভীরভাবে আগ্রহী না। আমাকে যদি ১৫টা চলচ্চিত্রের তালিকা করতে হয় সেখানে হয়ত কোন কমেডি থাকবে না। সত্যি, কিছু হাসির চলচ্চিত্র সত্যি সুন্দর । আমি সত্যি মনে করি সিটি লাইটস দারুণ, বুস্টার কিটন্স এর কিছু চলচ্চিত্র । কিছু মার্ক্স ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র দুর্বল অথবা মূল্যহীন হতে পারে কিন্তু কৌতুক খুব দারুণ। আমি কেটনের চেয়ে কেটনের চলচ্চিত্র পছন্দ করি আর চ্যাপলিন উপভোগ করি আর মার্ক্স ব্রাদার্সের চলচ্চিত্র তার চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু আমি সহজ দর্শক। আমি সহজেই হাসি।

শিশু লালন পালন সম্পর্কে কি ভাবেন?

না আমি কখনো পছন্দ করিনি। এতে মজার কিছু পাইনি।

সত্যি?

না, আমি বর্ন ইয়েসটারডে পছন্দ করেছিলাম, তারপরেও এটা চলচ্চিত্রে রূপায়িত নাটক। দ্য শপ অ্যারাউন্ড দ্য কর্ণার আর ট্রাবল ইন প্যারাডাইজ দুটাই দুর্দান্ত। খুব সুন্দর কথা বলা কমেডি হল দ্য হোয়াইট শিক বাই ফেলিনি।

কেন আপনার ১০ টা চলচ্চিত্রের তালিকায় লঘু হাসির সিনেমা নেই?

ব্যক্তিগত স্বাদ ছাড়া কিছুই না। অন্য কেউ হয়ত ১০ টা কমেডির তালিকা করবে। সহজেই বোঝা যায় আমি গুরুগম্ভীর চলচ্চিত্র উপভোগ করি। আমার যখন চলচ্চিত্র দেখার বিকল্প উপায় আছে, আমি গিয়ে দেখব সিটিজেন কেইন, দ্য বাইসাইকেল থিফ, দ্য গ্র্যান্ড ইলিউশন, দ্য সেভেনথ সিল এমন ধরনের ছবি।

আপনি যখন দারুণ মানসম্পন্ন কোন ছবি বারবার দেখেন, সেটা কিভাবে তৈরী সেটাই বিবেচনা করেন নাকি আবেগীয় দৃষ্টিকোণে কেমন প্রভাব ফেলল তা দেখেন?

সাধারণত, আমি উপভোগ করাটাই অগ্রাধিকার দেই। বাকিরা যারা আমার ছবিতে কাজ করেন তারা প্রযুক্তিগত দিকগুলো দেখেন আর আমি দেখতে পারি না। আমি এখনো মাইক্রোফোনের ছায়া পরলে লক্ষ্য করি না, অথবা কোন কাট যেটা হয়ত ভাল হয়নি। আমি ছবিতেই সম্পূর্ণ  মনোনিবেশ করি।

আপনার চলচ্চিত্রের কাজে কার প্রভাব বেশি?

আমার উপর বড় প্রভাব আমার মনে হয়, বার্গম্যান আর মার্ক্স ব্রাদার্স-এর। আর স্ট্রিনডবার্গ, চেখভ, পেরেলম্যান, মস হার্ট, জিমি ক্যানন, ফেলিনি আর বব হপ্স থেকে চুরি করতে অনুশোচনা হয়নি।

শৈশবে কি খুব মজার ছিলেন?

হ্যাঁ, আমি খুব আনন্দময় বাচ্চা ছিলাম। মানুষ হয়ত ভাবতে পারে জুইশ হিসাবে বড় হয়েছি। এটা একটা মিথ। অনেক কৌতুকাভিনেতাই কিন্তু জুইশ নয়ঃ ডব্লু। সি ফিল্ডস, জোনাথন উইনটারস, বব হোপ, বুস্টার কিটন… আমি কখনো ধর্ম কৃষ্টি জাতি আর কৌতুকের মধ্যে কোন যোগসূত্র পাইনি।

বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আপনাকে কিছু প্রদর্শন করতে বলা হত না?

আমি খুব বেশি প্রদর্শন করিনি, কিন্তু ক্লাসে আমি বন্ধু ও শিক্ষকদের মাঝে মজার ছিলাম।

মানে কখনো কখনো আপনার কৌতুক উপর মহলকে ক্ষুন্ন করত?

কখনো কখনো করত, হ্যাঁ। আমার মাকে বারবার স্কুলে ডেকে পাঠানো হত কারণ ক্লাসে যে কোন কিছুতেই আমি চিৎকার করতাম, ঠাট্টা তামাশা করতাম, আমি হাত দিয়ে অনেক কিছু করতাম যেটা মানুষের কাছে মূল্যহীন ছিল অথবা বেশি যৌনউদ্দীপক ছিল। তাকে বারবার বারবার স্কুলে ডাকা হত।

আপনি কেন শৈশবে লিখতে শুরু করলেন কি মনে হয়?

আমার মনে হয় লিখে আনন্দ পেতাম তাই। এটা এখন আমার কাছে ব্যান্ড প্লেয়িং এর মত। সুর করা, লেখা খুব মজার। আমি বলব আমি যদি মোশন পিকচারের যুগের কেউ হতাম আমি হয়ত লেখক হতাম। আমি আলফ্রেড কাজিনকে টেলিভিশনে দেখেছি। তিনি চলচ্চিত্রের মূল্যে উপন্যাসের কড়া প্রশংসা করছিলেন। কিন্তু আমি সহমত নই। এটা অন্যের সাথে তুল্য না। ছাপানো শব্দটার জন্য তার কথায় অনেক সম্মান ছিল। ভাল চলচ্চিত্র বাজে বই-এর থেকেও ভাল আর যখন দুটাই ভাল হয় তারা মহান ও মূল্যবান হয়ে ওঠে।

আপানার কি মনে হয় লেখার আনন্দ শিল্প থেকে প্রাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত?

যখন চান তখনি নিজের মনের মত পৃথিবী তৈরী করা সত্যি দারুণ। লেখালেখি করা খুব আনন্দময়, চিত্তাকর্ষক ও মহৌষধ। সময় খুব দ্রুত যায় যখন আমি দ্রুত লিখি। আমি কিছু নিয়ে সংগ্রাম করছি আর সময় বয়ে যাচ্ছে। এটা খুব উৎফুল্ল হবার মত। এটা খারাপ কিভাবে হতে পারে? এটা কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে একা বসে থাকা। আপনি নিজের মত দুনিয়া থেকে পালাচ্ছেন আর সেটা ভাল। কেন নয়?

আপনি যদি লেখালেখির সেই নিঃসঙ্গ দিক টি পছন্দ করেন, তবে কি সিনেমার সহযোগিতাপূর্ণ দিক মিস করবেন যদি ছেড়ে দিতে হয়?

অনেক লোকের মাঝে উপস্থিত থাকার বিভ্রান্তিকর আপীল হল এটা আপনাকে লেখার কাজ থেকে দূরে নিয়ে যাবে। এটা কম নিঃসঙ্গ । কিন্তু আমি ঘরে থেকে লেখা পছন্দ করি। আমি সবসময় অনুভব করেছি, যদি তারা আমাকে বলে আর ছবি বানাতে পারব না তার আর টাকা দেবেনা, আমি মঞ্চের জন্য আনন্দ নিয়ে লিখব আর তারা যদি আমার নাটক প্রযোজনা না করে, আমি গদ্য লিখেই আনন্দ পাব, আর তারা যদি আমাকে প্রকাশিত না করে তবু আমি লিখে আনন্দ পাব আর ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ছেড়ে যাব। কারণ সেখানে যদি মূল্যবান কিছু থাকে, বেঁচে থাকবে আর না হলে, উচিত না। এটাই লেখার সবচেয়ে ভাল দিক, বা যে কোন শিল্পের যদি বাস্তব হয়। বেঁচে থাকবেই। এর সাথের সব খোঁচা, সাফল্য অথবা সমালোচিত অবমূল্যায়ন কোন কিছুই আসলে ব্যপার না। শেষে এটা বাঁচবে কিনা তা মেধার উপর নির্ভর। শিল্পের অমরত্ব কোন বিষয় না। ট্রুফট মারা গেলেন, আমরা সবাই ভেঙ্গে পড়লাম, যোগ্য স্তুতি হল, আর তার অসাধারণ ছবিগুলো বেঁচে রইল। কিন্তু এতে ট্রুফট এর কোন সাহায্য হলো না। কাজেই নিজেই ভাবুন, আমার কাজ বেঁচে থাকবে। যেহেতু বারবার বলেছি, নিজের সঙ্গীদের হৃদয় মনে বেঁচে থাকার চেয়ে আমি আমার বাসায় বাঁচব।

এখনো, কিছু শিল্পী তাদের কাজের উপর জোর দেন, এমন কিছু সৃষ্টিতে যা অনেকদিন টিকবে, এই ইচ্ছাটাকে তারা সর্বাগ্রে রাখেন। ফকনারের সেই লাইন “The ‘Ode on a Grecian Urn’ is worth any number of old ladies.”

শিল্প যখন ধর্ম হয়ে যায় আমি ঘৃণাবোধ করি। আমি বিপরীত অনুভব করি। আপনি যখন মানুষ থেকে শিল্পকর্মকে বেশি মূল্য দেন আপনি মানবিকতা হারিয়ে ফেলেন। শিল্পীকে অনুভব করতে পারার প্রবণতার কিছু বিশেষ সুবিধা আছে, আর সেটা ঠিক আছে যদি শিল্পের ক্ষেত্রে হয়। আমি সেই শিল্পের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেছিলাম। আমি সব সময় অনুভব করি শিল্পীকে বেশি সম্মান করা হয় – এটা ঠিক না, আর এটা নিষ্ঠুর। এটা সুন্দর কিন্তু দৈব উপহার – সুন্দর কণ্ঠের মত অথবা বা হাতি। এরপর যদি কিছু সৃষ্টি করেন তা নিছক দুর্ঘটনা। এটায় সমাজে উঁচু জায়গা নিতে হয়, কিন্তু এটা সাহসের মত কোন মহৎ গুণ না। যারা ঝুঁকি নেয় তাদের আমার মজার লাগে। শিল্পসম্মত ঝুঁকি, অনুষ্ঠানের ঝুঁকি- হাস্যকর। যেমন টাইপ ছাড়া কাস্টিং! কি বিপদজনক! ঝুঁকি সেখানেই, যেখানে আপনার জীবন লাইনে আছে। যে মানুষগুলো নাজিদের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিয়েছিল অথবা কিছু রাশিয়ান কবি যারা রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তারা সাহসী ও উদ্যমী , আর সেটা সত্যিই অর্জন। শিল্পী হওয়া নিজেও অর্জন কিন্তু এটা তোমার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আনতে হবে। আমি শিল্পকে সস্তায় বেচার চেষ্টা করছি না। আমি মনে করি এটা মুল্যবান কিন্তু আমার মনে হয় এটা বেশি মূল্য দেয়া হয়েছে। এটা মূল্যবান কিন্তু ভাল শিক্ষক বা ভাল ডাক্তার হবার চেয়ে বেশি না। সমস্যা হল সৃষ্টিশীল হবার একটা ঝাঁক আছে। সিনে বানিজ্যের লোকেরা সব সময় বলে আমি প্রযোজক হতে চাই কিন্তু সৃষ্টিশীল প্রযোজক। অথবা সেই মহিলা, যার সাথে আমি স্কুলে যেতাম যে বলত ও হ্যা, আমি একে বিয়ে করেছিলাম। সে একজন পানির মিস্ত্রী আর খুব সৃষ্টিশীল। মানুষের জন্য এইটুকু প্রশংসা পাওয়ার গুরুত্ব রাখে। যেন সে যদি সৃষ্টিশীল না হত পিছিয়ে যেত।

আপনি যখন লিখেন আপনি কি দর্শকের কথা ভাবেন?  আপডাইক,  উদাহরনস্বরূপ, একদিন বলেছিলেন যে, তিনি ছোট মিডওয়েস্টার্ন শহরে একজন বাচ্চা পাঠাগার থেকে তার বই  খুঁজছে এমন ভাবতে পছন্দ করেন।

আমি সব সময় অনুভব করেছি যে, আমি যতটা পারি লক্ষ্য উঁচু রাখি, সবার কাছে পৌঁছতে না, কারণ আমি জানি তা পারব না কিন্তু সব সময় নিজেকে বিস্তৃত করতে চেষ্টা করি। আমি এমন ভাবতে পছন্দ করি যে, যখন আমি সিনেমা শেষ করেছি, সেই বুদ্ধিমান প্রাপ্তমনস্করা , বিজ্ঞানীই হোন বা দার্শনিক, গিয়ে যেন ছবিটা দেখে অনুভব করে আর বের হয়ে না ভাবে সময় নষ্ট হল। তারা যেন না বলে, ঈশ্বর, কেন আমি ভেতরে গেলাম? আমি যদি র‍্যাম্বো দেখতে যেতাম, আমি বলতাম, হায়! ঈশ্বর! আর তার কিছুক্ষণ পরেই চলে যেতাম। দর্শকের  সংখ্যা  আমার বিবেচ্য না। বেশি হলে ভাল, কিন্তু এটা না হোক যে তাদের প্রলুব্ধ করতে আমার চিন্তা বদলাতে হয়।

চলচ্চিত্র তো তেমন খুব সহজ কোন মাধ্যম না এসব করার ক্ষেত্রে অনেক লোকবল অর্থবল দরকার হয়

সুইডেনের মত কিছু জায়গায় যেখানে আপনি আংশিক রাজ্য দ্বারা ভর্তুকিপ্রাপ্ত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সব কিছুর অনেক দাম। এটা ছবি আঁকা বা লেখালেখির মতো কিছু না। সিনেমা করে আমাকে অনেক ডলার কামাতে হবে- এমনকি সস্তা সিনেমা বানালেও। কাজেই বড় সংখ্যক দর্শক পাবেন না। তদুপরি এটা কিছুটা সংগ্রাম কিন্তু আমি সৌভাগ্যবান – আমার স্বাধীনতা ছিল। আমার উপর আশীর্বাদ আছে। চলচ্চিত্রে আমার স্বপ্নের জীবন আছে- প্রথম সিনেমা থেকেই। এটা হওয়ারই ছিল। জিজ্ঞেস করবেন না কেন। আমি যদি আগামীকাল ভাবতাম যে আমি ১৬ শতকের ধর্ম নিয়ে সাদা কালো সিনেমা বানাব বানাতাম। অবশ্যই, আমি যদি গিয়ে বলতাম “ আমি মোনাডের উপর ছবি করতে চাই”। তারা বলত “ আমরা কাজ করতে এত টাকা দেব”। সেখানে আমি যদি বলি “ আমি বড় বিশাল কমেডি করতে যাচ্ছি” তারা আমাকে আরো টাকা দেবে।

এই এতগুলো বছরে আপনি নিজের কাজে কিরকম অগ্রগতি লক্ষ্য করেছেন?

আমি অবশ্যই অগ্রগতির আশা করি। আপনি যদি আমার প্রথম দিককার কাজগুলা দেখেন সেগুলো খুব বিশাল ও মজাদার ছিল। আমি গল্পের সাথে সাথে মানবতাবাদী হয়ে উঠি আর অনেক বেশি মজা ত্যাগ করি, অন্য নৈতিকতার জন্য যদি বুঝি যে আমার ত্যাগ বৃথা যাবে না। কাজেই দ্য পার্পল রোজ অফ কায়রো অথবা ম্যানহাটনে হাসির উপাদান বেশি নেই। কিন্তু আমার মনে হয় এগুলো বেশি উপভোগ্য। অন্তত আমার কাছে তো বটেই। আমার ভাল লাগবে ধারাবাহিকতা থাকলে – তবু আমি গম্ভীর মেজাজের কিছু বানানোর চেষ্টা করি।

এর অন্তর্বর্তী বিষয় টা কি এমন ছিল যে কেউ যদি নির্মানাধীন সময়ে এটা নিয়ে হাসত আপনি সেই অংশটা বাদ দিতেন? এমন ছিল?

না, না, সত্যি না। গল্পটা ভাল কিন্তু অসত্য। না, আমার ছবির সাথে কোন রঙ্গিন গল্পের সম্পর্ক ছিল না। মানে, আমরা সেখানে গিয়ে ভয়ানক ব্যবসায়ী আবহতে কাজ করতাম আর ছবি বানাতাম, কমেডিই হোক বা ড্রামা। কিছু মানুষ অন্তর্বর্তী বিষয়গুলোর সমালোচনা করেছিল, এই বলে যে এর ভেতরে মজার কিছুই নেই। আমার মনে হয়েছিল এটা পুরোপুরি সম্পর্কহীন সমালোচনা ছিল। এটার সাথে যে অন্যায়ই হোক না কেন, এটা মজার না এটা সমস্যা না। ওথেলো আর পারসোনাতেও তেমন মজাদার কিছু নেই। আমি যদি গম্ভীর স্বরের কিছু নাটক বা ছবি লিখতে পারতাম আমি কমেডি না লিখে তা লেখাই পছন্দ করতাম। কারণ সেটা আমাকে ব্যক্তিগত আনন্দ দিত একই বোধে আমি মোজার্ট থেকে নিউ অর্লান্স জ্যাজ চালানো শ্রেয় মনে করি। মোজার্ট আমার কাছে আদরীয় কিন্তু নিউ অরল্যান্স জ্যাজকে প্রাধান্য দেই। শুধু প্রাধান্যই।

কিন্তু স্ক্রিপ্ট লেখার সময় যে হাসির উপাদান ছড়িয়ে যায় আপনি খুব আনন্দের সাথে তা শুষে নেন তাই না?

হ্যাঁ, এটা সব সময় আনন্দের। সাধারণত কি হয়, ছবিতে অনেক বিস্ময় থাকে, আর সাধারণত বিস্ময় নেতিবাচক হয়। আপনি ভাবেন আপনার কৌতুক বা দৃশ্যে মজার কিছু আছে , কিন্তু আসলে ফিরে আসে নীরসভাবে, আর আপনি অবাক হন।

আর আপনি এটায় আটকে যান

অথবা আপনি এটা ছুঁড়ে ফেলেন। অপর দিকে একবার না একবার আপনি দারুন চমক পান, এমন কিছু যা এত আনন্দময় হবে আপনিও ভাবেননি, দর্শক হয় হেসে ওঠে বা চিৎকার করে ওঠে, এটা খুব দারুণ ব্যপার।

আপনি তার উদাহরণ দিতে পারবেন?

কয়েক বছর আগে যখন প্রথম ব্যানানাস বানালাম, আমি শাসকের বাসায় যেতাম – আমি সেখানে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সেই লাতিন আমেরিকান দেশে। আমি বক্সে কিছু কেক নিয়ে গেছিলাম, বেকারি থেকে স্ট্রিং কেক। আমি এটা নিয়ে একদমই বেশি ভাবিনি। কিন্তু নিয়মমাফিক দর্শকের চিৎকার শুনতে পেতাম। ওরা যা নিয়ে হাসত তা হল আমার চরিত্রটা বোকা বোকা ছিল, যেখানে আমি নৈশভোজে কেক নিয়ে যেতাম। আমার কাছে এটা আবশ্যিক মজার কোন বাস্তব ভ্রমণ ছিল – দর্শকের কাছে সবচেয়ে মজাদার ব্যপার ছিল।

মনে হচ্ছে যেন যখন কোন শিল্পী প্রতিষ্ঠিত হন, অন্য লোকেরা, সমালোচকরা, তাদের অনুসারীরা- প্রত্যাশা করে তারা একই কাজ করে যাবে, নিজের মত বিকশিত না হতে দিয়ে।

এই কারণেই আপনাকে নিয়ে সিরিয়াসলি যা লেখা হবে ধরবেন না। আমি জীবনেও এমন কিছু লিখিনি বা এমন কোন পরিকল্পনায় কাজ করিনি যা সেই সময় আমি করতে চাইনি। আপনাকে সত্যিই সেগুলো ভুলতেই হবে যাকে তারা পেশাগত বৃত্তি বলে। আপনি শুধু আপনার সৃষ্টিশীল কাজে তাই করবেন যা আপনার ঠিক মনে হবে। কেউ যদি সেটা দেখতে না চায় দেখবে না। অন্যথায়, আপনার কাজ হল অন্যকে খুশি করা। আমরা যখন স্টারডাস্ট মেমোরিজ করলাম, আমরা জানতাম অনেক নেতিবাচক ফল হবে। কিন্তু এটা আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও থামিয়ে দেয়নি। আমি কখনো ভাবিনি যে আমি এই কাজটা করব না কারণ লোকেরা অপ্রসন্ন হবে। কোন পরিকল্পনায় সেই সময় কাজ করতে চেয়েও না করাটা মৃত্যুর শামিল হবে। স্ট্রিন্ডবার্গ এর মত কারো দিকে তাকান – আমার আরো একজন ভালোবাসার মানুষ – তিনি নির্দিষ্ট কিছু বিষুয়ে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন – সব ধ্বংস করে দিয়েছে। যখন আমি অ্যানি হল বানালাম, অনেক পরামর্শ এসেছিল যেন অ্যানি হল ২ বানাই। ওরকমটা আমার কাছে হাজার বছরেও আসত না। আমি এর পরে ইন্টেরিওরস করার ইচ্ছা করেছিলাম আর তাই করেছি। আমি মনে করি না আর কোন উপায়ে বাঁচা সম্ভব। আমার পদ্ধতি হল অধিক সংখ্যক লোককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা না করে যতটা সম্ভব সুন্দর কাজ করা, যা আমার বিবেচনায় আসে, আর আমি আশা করি যদি কাজটা সত্যিই ভাল হয় লোকে দেখতে আসবে। আমি যে শিল্পীদের খুব ভালবেসেছি তারা খুব জনপ্রিয় ছিলেন না।  গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজটা করা। আর তারপরে যা হয় আপনি আশা করেন যে সৌভাগ্য হবে। এমনকি ছবির মত জনপ্রিয় ধারাতেও যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ মানুষ দ্য বাইসাইকেল থিফ বা দ্য গ্র্যান্ড ইলিউশন অফ পারসোনা দেখে নাই। বেশির ভাগ মানুষ পুরো জীবন দুটি ছবি না দেখেই কাটিয়ে দেয়। বেশির ভাগ নতুন প্রজন্ম এখনকার সময়ে ছবির এত প্রাচুর্যে বুনুয়েল বা বার্গম্যান কে ধর্তব্যেই আনে না। তারা শিল্প মাধ্যমের সুঊচ্চ অর্জন সম্পর্কে জানে না। দুর্ঘটনাবশত জায়গা সময় আর সুযোগের হয়ত একসাথে কিছু সামনে আসে। চার্লি চ্যাপলিন ঠিক সময়ে এসেছিলেন। তিনি যদি এখন আসতেন অনেক বড় সমস্যাগুলোয় পড়তেন।

আপনার মনে হয় না যে গম্ভীর লেখক হিসেবে তারা শুধু থিমকে উন্নত বা বাড়ানো চালিয়ে যায়, যা এর মাঝেই প্রতিষ্ঠিত?

প্রতিটা মানুষের নিজস্ব পাগলামি থাকে। বার্গম্যানের ছবিতে আপনি একই জিনিস বারবার দেখবেন, কিন্তু সেগুলো সাধারণত একদম নতুনভাবে উপস্থাপিত হয়।

আপনার নিজের কাজের খবর কি?

একই জিনিস ঘুরে ঘুরে আসে। এই কথাগুলো আমার মনের কথা, আর যে কেউ মনের কথা প্রকাশের নতুন রাস্তা খোঁজে। বাইরে বের হয়ে এটা বলা কঠিন যে, আমার নিজেকে প্রকাশের নতুন ভাবনা আছে। কিসের কিসের পুনরাবৃত্তি হয়? আমার মতে কল্পনার মোহময়তা আর বাস্তবের নির্মমতা। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে আমি কখনো রাজনীতিতে বা সমাধানযোগ্য কাজে আগ্রহ পাইনি। আমাকে যা আকৃষ্ট করেছে তা হল অসমাধানযোগ্য সমস্যাঃ অগাধ জীবন, অর্থহীনতা ও দুঃখের অনুভূতি আর যোগাযোগের অক্ষমতা। প্রেমে পড়ার পরের জটিলতা আর মানিয়ে চলা। এই জিনিসগুলো অনেক বেশি আগ্রহ জাগানিয়া … আমি ভোটাধিকার কি জানি না। জীবনে আমি রাজনীতি নির্দিষ্ট পরিমাপে অনুসরণ করি – আমি নাগরিক হিসাবে এটায় আগ্রহ পাই কিন্তু এটা নিয়ে কখনো লেখার কথা ভাবি না।

এই সাক্ষাতকার সম্পর্কে কিছু কথা। এটা আমার জন্য কঠিন ছিল কারণ আমি এর প্রভাব বা থিম নিয়ে কথা বলে নিজের কাজকে মহান করতে চাইনি। এই ধরণের কথা আরো বড় উচ্চতার কোন কাজে প্রযোজ্য। আমি এটা সত্যিকারের নম্র হয়ে বলছি যে আমি কোন অর্থবহ কিছু করিনি , কোন ক্ষেত্রেই না। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে অনুভব করি। আমি মনে করি আমি আজ অব্দি যা করেছি তা ভারসাম্যপূর্ণ  কাজ যা সামনের আগত দুই তিনটা সুন্দর কাজ দিয়ে উৎরে যাবে। আমরা বসে ফকনার, আপডাইক ও বার্গম্যান নিয়ে কথা বলছি – মানে আমি নিশ্চয় নিজেকে নিয়ে একইভাবে কথা বলতে পারব না । আমি মনে করি, যদি আমি আমার বাকি জীবনে দুই বা তিনটা সত্যি সুন্দর কাজ করতে পারি – হয়ত দারুণ ছবি বানানো  বা সুন্দর নাটক লেখা তার আগে অব্দি একটা আগ্রহ জাগানিয়া উন্নতিমূলক কাজ হবে। আমি মনে করি এটাই আমার কাজের অবস্থান রত্নের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এখন কোন রত্ন নেই। আমার মনে হচ্ছে আমার সাক্ষাতকার বেশ আত্মম্ভরী ধরণের হয়েছে। আমার কিছু ভারি রত্ন দরকার। কিন্তু আমি আশা করি, আমি এমন একটা পয়েন্টে পৌঁছেছি, যেখানে পরের ১০/১৫ বছরের মধ্যে আমি দুই-তিনটা এমন কাজ করতে পারব যা আমার প্রত্যয়কে এগিয়ে নিবে… আশা করা যাক।

 

শেয়ার