আবুল হাসান পূর্ব বার্লিনে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সেখানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মাস কাটান। কিন্তু সেই সময় নিয়ে তেমন কিছুই কোথাও পাইনি। কবির জীবনীতে পেয়েছিলাম বাংলাদেশ ও পূর্ব জার্মানিরর মধ্যে সাংস্কৃতিক চুক্তির অধীনে কবি আবুল হাসান বার্লিনের চ্যারিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখানে গ্যাব্রিয়েলা নামের এক শিল্পীর সাথে বন্ধুত্ব হয়। পরবর্তী সময়ে রাইনহার্টকে লেখা হাসানের চিঠি থেকে বোঝা যায় যে গ্যাব্রিয়েলার প্রতি কবি বেশ দুর্বল ছিলেন। বার্লিন থেকে কবির লেখা চিঠি পাই মেঘের আকাশ আলোর সূর্য বইতে- ছাপাটা পড়ার উপযোগী না।
কিন্তু আমার চোখের দৃষ্টি অনেক ভাল ছিল বলে পড়ে চিঠিগুলো নকল করতে করতে অজানা অনেক কিছু জানতে পারি ও সূত্র খুঁজতে থাকি। গ্যাব্রিয়েলাকে আমি খুঁজে পাইনি, কিন্তু পেয়েছি রাইনহার্ট হেভিকের প্রবল উপস্থিতি। সে কথা একটু পরেই বলছি। বন্ধু মাহফুজুল হক খানকে লেখা চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, এখানে বড়দিনের ছুটিতে এক বড়লোকের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম, কাশির সাথে রক্ত ইত্যাদি। ‘বড়লোক’টির নামও দেয়া ছিল Yugnik hiuchnar! সেই থেকে আমি এই ভদ্রলোকটিকে খুঁজতে শুরু করি, কিন্তু বিশেষ কিছু পাই না।
এরপরে প্রথমে চ্যারিটি হাসপাতালের ওয়েবসাইটে গিয়ে কিছু ইমেইল এড্রেস পাই। সেখান থেকে তিন বিভাগের তিনটি ইমেইল এড্রেসে ইমেইল লিখে যোগাযোগ করি ( ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০)।
প্রথমে চ্যারিটি হাসপাতালের ওয়েবসাইটে গিয়ে কিছু ইমেইল এড্রেস পাই। সেখান থেকে তিন বিভাগের তিনটি ইমেইল এড্রেসে এরকমের ইমেইল লিখে যোগাযোগ করি ( আমার দুর্বল ইংরেজি পড়ে পাঠক বিব্রত হবেন জেনেও চিঠিটা দিচ্ছি) –
To: international-scholars@charite.de
presse@charite.de
Mostaque Ahmed <mostaque.aha@gmail.com>
Wed, Sep 16, 6:30 PM
to Friedemann.Paul
Dear Friedmann,
Greetings from Bangladesh!
I am not sure I am writing to the right person. If you can please explore regarding a patient of cardiology department back in November 20, 1974 to February 17. 1975 or you can refer me to the right person to know about the patient.
The patient, Abul Hassan (1947-1975) is a renowned poet of our country. I am writing a biographical Novel on the poet. It would be interesting for the readers to know how was his life at Hospital Charite and East Berlin in the then GDR. We know very little about that part of his life. He made some friends in Berlin among artists, film directors ( Yugnik hiuchnar) , poets. Gabriela is commonly known name as his friend who was an artist. I also have some photo and autographs of few other friends of the poet like Jochen Clemens. Clemens gifted a book of total nonsense anthology of German poems. It might be helpful to know from doctors/ nurses/ aids attended him and other patients of that time. A very few links would be a great help to me.
This is for today. Waiting for your reply.
Thanks,
Regards
Mostaque
কিন্তু উত্তর আসে, ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত চিকিৎসা নেয়া রোগীদের রেকর্ড তাদের কাছে নাই-
Dear Mostaque,
Unfortunately are the patient records of the cardiological clinic of the Charité hospital are not archived from the GDR-time (1949-1989). Patient records are saved only for thirty years, except of the clinic of psychiatry.
Sincerely,
Dr. Rainer Herrn
Institut für Geschichte der Medizin und Ethik in der Medizin
Zentrum für Human- und Gesundheitswissenschaften (CC1)
Charité – Universitätsmedizin Berlin
Thielallee 7114195 Berlin
এই ১৯৮৯ সালেই ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গের পর বার্লিন দেয়ালের পতন হয়ে দুই জার্মানি এক হয়েছিল।
অন্যদিকে হাসপাতালের অন্য একটি বিভাগ জানিয়েছে রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য কাউকে দেয়ার নিয়ম নাই –
“For reasons of data protection law, we are unfortunately unable to provide you with any information or a contact person regarding former patients ( Data Protection Act.)”
আরেকটি বিভাগ থেকে মেইলের উত্তর আসেনি আর।
ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত আবুল হাসানের বার্লিন অধ্যায় নিয়ে তিন চারটি ব্যর্থ ই-মেইলের উত্তর ছাড়া সঞ্চয়ে কিছুই নাই। বার্লিনের হাসপাতাল থেকে সবিনয়ে কোনো তথ্যই না দেওয়ার কথা বলছে বারবার। আমি তখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাহলে কী কবির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়টি বাদ থেকে যাবে? আমি বার্লিনে কবির ফটোগ্রাফ দেখেছি। সেই ছবিগুলো শুধুই পটে আঁকা থাকবে! পাঠক কিছুই জানবে না? কষ্ট হতে থাকে।
এক সুন্দর সকালে কক্সবাজারে আমার প্রাক্তন সহকর্মী শাওন আজিমের সাথে দেখা হল। তিনি পুষ্টিবিদ, লেখালিখিও করেন। কবি ও সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ ভাইয়ের সহধর্মিনী। তিনি দেখা হলেই সব সময় আমার লেখালিখির খোঁজ নেন। আমি তাঁকে জানাই যে আবুল হাসানকে নিয়ে আমি একটা বড় কাজ করছি।
এই ঘটনার সূত্রে কয়েকদিন পর সাজ্জাদ শরিফ ভাই আমাকে ফোন করে জানান, পূর্ব বার্লিনের একজন শিল্পী, আবুল হাসানের বন্ধু হয়েছিলেন। শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের সাথে তাঁর বার্লিনে দেখা হয়েছে। শিল্পীর স্টুডিওতে গিয়ে ওয়াকিল হতবাক হয়ে দেখেছিলেন তিনি আবুল হাসানের প্রতিকৃতি আঁকছেন, আবুল হাসানের কবিতার অলংকরণ করছেন। শুধু তাই নয়, সাজ্জাদ ভাই বললেন, ওরা ছিল বন্ধুর চাইতেও বেশি কিছু। হাসানের পোর্ট্রেটগুলো ‘ বিউটিফিকেশন ‘ করা ছিল। আমি লিখেছিলাম, হাসানের সংলাপে, “ আরে ইয়ার তুমি আমাকে গ্রিক ভাস্কর্যের মতো সুন্দর করে আঁকছ কেন?” ওয়াকিল ভাই রাইনহার্টকে একটি স্মৃতিকথা লিখতে বলেন। তিনি ছোট একটা স্মৃতিকথা লিখে দেন, আর অনুরোধ করেন এই স্মৃতিকথা বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় প্রকাশের জন্য। সাজ্জাদ ভাই শিল্পীর নামটা বলতে পারেন না, বললেন ‘ হেটমুট’ জাতীয় কোনো একটা নাম হবে হয়ত। তিনি বলেন শাহাদুজ্জামানের কাছ থেকে আমি যেন ওয়াকিল ভাইয়ের ফোন নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করি।
সাজ্জাদ ভাই যেটুকু তথ্য দিয়েছিলেন, সেটুকু ভর করে ‘হেটমুট’ চরিত্রটিই আমার পাণ্ডুলিপিতে ঢুকে পড়ল। ওয়াকিল ভাইও প্রথম আলাপে শিল্পীর নামটা পরিষ্কার করে বলতে পারেন না। তাঁকে ফাইল খুলে দেখতে হবে বললেন। তিনি জানালেন, শিল্পী সেই স্মৃতিকথাটি প্রকাশনা নিয়ে ঘন ঘন ফোন করতেন। স্মৃতিকথাটি বাংলায় অনুবাদ করতে তাঁর দেরি হচ্ছে দেখে এক পর্যায়ে শিল্পী বিরক্ত হয়ে তাঁর পাণ্ডুলিপি ফেরত নিয়ে যান। তবে তাঁর কাছে কপি আছে। দ্বিতীয় দিন কথা বলে আমি জানতে পারি শিল্পীর নাম রাইনহার্ট হেভিকে। এছাড়া হাসানের সাথে সুনীল দাশগুপ্ত ও বারবারা দাশগুপ্তের সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। সুনীল সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তাও জানতে পারি। সে সময়ে পূর্ব বার্লিনে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মীদের ভালো অবস্থান ছিল।
সেটা ২০২১-এর জানুয়ারি মাস। তখন আমি ইন্টারনেট ঘেঁটে অসুস্থ শিল্পী রাইনহার্ট হেভিকের প্রায় নিষ্ক্রিয় ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সক্রিয় বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশে তাদেরকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ও বার্তা পাঠাই। এভাবে কবি স্টিফেন মারসিনিয়াকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হই। স্টিফেন খুব অবাক হয় – তুমিও কি কবি? আমাকে কীভাবে জানলে? ইত্যাদি। আমি আবুল হাসানের সাথে রাইনহার্টের বন্ধুত্বের কথা জানতে আগ্রহী বলেই যোগাযোগ করছি বলে তাঁকে জানাই। আমাকে অবাক করে দিয়ে স্টিফেন জানায় যে, সে আবুল হাসানের কথা জানে। রাইনহার্টের সাথে স্টিফেনের এক ধরণের অসম বয়সের বন্ধুত্ব ছিল। শিল্পী রাইনহার্ট হেভিকে স্টিফেনের কবিতার বইয়ের ( HYLAS or The Triumph of the Nymph, 2014) প্রচ্ছদও করে দিয়েছে । স্টিফেনের কাছে আবুল হাসান বিষয়ক রাইনহার্টের স্মৃতিকথা আর আরো কিছু ছবি ও দলিলপত্র ছিল। স্টিফেন আমাকে কিছু কিছু ছবি ও দলিলের ছবি পাঠায়।
রাইনহার্টের বিভিন্ন ডকুমেন্ট আমাকে পাঠাতে পাঠাতেই স্টিফেন এক সময় আমাকে জানালো যে রাইনহার্ট হেভিকে আর নাই। ৭১ বছর বয়সে এই শিল্পী ২০২১ এর ২৩ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৯ এ রাইনহার্টের জন্ম। স্টিফেন আমাকে পত্রিকায় প্রকাশিত রাইনহার্টের মৃত্যু সংবাদও পাঠায়। আমি ওয়াকিল ভাইকে ৩০ মার্চ এই শোক সংবাদ জানাই। তিনি আমার কাছ থেকেই প্রথম শোনেন। আমার কাছে রাইনহার্টের মেয়ের খোঁজ জানতে চান। কিন্তু আমার তখনো নীল নাবের্টের সাথে যোগাযোগ হয়নি। অনেক পরে যোগাযোগ হয়েছে। ওয়াকিল ভাই নীলকে খুঁজে বের করে রাইনহার্টের বই প্রকাশের অনুমতি নিয়েছিলেন।
যা বলছিলাম, স্টিফেন সেই সাথে রাইনহার্টের স্মৃতিকথার একটি অংশ (কুড়ি পৃষ্ঠা থেকে পাঁচ পৃষ্ঠা) নিজের মতো করে গল্প হিসেবে লিখে পাঠাতে চায়। অসুস্থতা, বেড়ানো ও নানা কাজের চাপে সে লেখাটি দিতে দেরি করছিল। এদিকে আমার বইটি ছাপাখানায় চলে গেছে। স্টিফেনকে খুশি করার জন্য আমি ওর কাছে ওর ইংরেজিতে লেখা একটি কবিতা বাংলায় অনুবাদের জন্য চাইলে সে আমাকে একটি কবিতা পাঠায়। আমি সেটা অনুবাদ করে পাঠিয়েছিলাম যাতে খুশি হয়ে আমার কাজটা দ্রুত করে দেয়। স্টিফেন আমাকে জুলাই মাসের শুরুতেই লেখাটা দিয়েছিল। আমি সেই অংশটুকু প্রথমে আমার মেয়ে শাশ্বতীকে দিয়ে ইংরেজিতে অনুবাদ করাই। সে একটা ট্রান্সলেটার অ্যাপ দিয়ে কাজটা করে। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি ট্রান্সলেটরে বাংলা করাতে গেলে যেমন হাস্যকর ও অর্থহীন টেক্সট পাওয়া যায়, জার্মান থেকে ইংরেজি করতে গেলে তেমনটা হয়নি বরং মানসম্মত টেক্সটই পাওয়া গিয়েছিল। লুৎফুল হোসেন ভাইকে দিয়ে বাংলায় অনুবাদ করাই। লুৎফুল ভাই অবিশ্বাস্য রকমের দ্রুততায় অনুবাদটি না করে দিলে এই আখ্যানটুকু ‘ ঝিনুকে’র পরিশিষ্টে জুড়ে দেয়া সম্ভব ছিল না। সেখানে কবি ও শিল্পীর প্রথম দেখা ও পরের কিছুদিনের স্মৃতি আছে। আমার গল্পের সাথে অনেক জায়গায় মিল থাকলেও কিছু জায়গায় অমিল পাই। তখন আর সংশোধনের সময় নাই। পরিশিষ্ট পড়ে পাঠক একটা ট্রায়াঙ্গুলেশন করে নিবেন এই ভরসায় লেখাটি ‘ পদ্মাসনে’ শিরোনামে পরিশিষ্টে যোগ করি।
স্টিফেনের কাছ থেকে পাওয়া অন্যান্য তথ্য –
– রাইনহার্টের করা আবুল হাসানের পোর্ট্রেটের এর ছবি
– রাইনহার্টের করা আবুল হাসানের একাধিক স্কেচ
– একটি ছবিতে আবুল হাসান খালি গায়ে বাংলাদেশের উন্মুক্ত প্রান্তরে। দূরে মা, বোন আর ভাইয়েরা দেশের পতাকা হাতে ছোট্ট মিছিল নিয়ে যাচ্ছে ( হাসানকে খুব রুগ্ণ লেগেছে বলে আমি শুধু মুখটি ব্যবহার করেছি)
– একটি ছবিতে হাসান রাইনহার্টের স্টুডিওতে শুয়ে শুয়ে লিখছেন। দেয়ালে ‘ পৃথক পালঙ্ক’ ইংরেজিতে লেখা। হাসানের ট্রাংকটিও ছবিতে আছে)
– রাইনহার্টের করা আবুল হাসানের জার্মান কবিতার অনুবাদের বইয়ের প্রচ্ছদ। পরে অ্যামাজন থেকে সেই বইয়ের আরো তথ্য ও ছবি পাই।
– আবুল হাসানের ইংরেজিতে লেখা কবিতা অনুবাদের অনুমতিপত্র এবং রাইনহার্টের অলংকরণে জার্মান ভাষায় কবিতার বই করার আগ্রহবাচক লেখা
– রাইনহার্ট হেভিকের কিছু আত্মপ্রতিকৃতি
– রাইনহার্টের করা আবুল হাসানের লাইফ মাস্কের ছবি, যার পিছনে জার্মান ভাষায় আবুল হাসান ও রাইনহার্টের লেখা একটি যৌথ কবিতা উৎকীর্ণ আছে।
– আবুল হাসান ও রাইনহার্টের লেখা যৌথ কবিতা ( জার্মান) ইত্যাদি
স্টিফেনের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৩ মার্চ মৃত্যুর আগের শেষ শীতকালটিতে শিল্পী রাইনহার্ট এ কথা জেনে নাকি খুব প্রীত আর তৃপ্ত ছিলেন যে আবুল হাসানের পরবর্তী জন্মদিনেই আমার বইটি (ঝিনুক নীরবে সহো) প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। স্টিফেন এখনো আমাকে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন। নতুন সংস্করণে সেসব কথা যোগ করতে পেরেছি।
আত্মস্বীকৃত অলস স্টিফেন আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন। বই প্রকাশের বেশ পরে তিনি আমাকে রাইনহার্ট ও আবুল হাসানের গল্পের বাকি অংশটুকু পাঠান। আমি দ্বিতীয় সংস্করণে সেই গল্প থেকে কিছু গ্রহণ করি। সেখান থেকে আবুল হাসানকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ,
রাইনহার্টের স্বপ্নে আবুল হাসানের সাক্ষাৎ, নববর্ষের রাতে যৌথ কবিতা লেখা, হাসানের ওপর হেরমান হেসের সিদ্ধার্থের প্রভাব, রবীন্দ্রনাথের প্রতি নিবেদন – এই বিষয়গুলো পরে যুক্ত করি।
আবুল হাসানের জার্মান কবিতা আর লাইফ মাস্কের কাহিনি
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ও পূর্ব জার্মানির মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক চুক্তি অনুযায়ী হৃৎপিণ্ডের সম্প্রসারনজনিত অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য কবি আবুল হাসান সরকারিভাবে পূর্ব জার্মানি যাবার সুযোগ পান। ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ব বার্লিনের চ্যারিটি হাসপাতালে অসুস্থ আবুল হাসানের হৃদরোগের চিকিৎসা শুরু হয়। হাসপাতালে আবুল হাসানের সাথে রাইনহার্ট হেভিকে ( হুবনার) নামের এক জার্মান তরুণ চিত্রশিল্পীর পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়; বয়সে হাসানের দু বছরের ছোট রাইনহার্টও ছিলেন একজন হৃদরোগী । রাইনহার্ট সে সময়ে বার্লিন-ওয়েইসেনসির একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে অধ্যয়নরত। এক পর্যায়ে বড়দিনের সময় হাসান, হুবনার পরিবারের আতিথ্য গ্রহণ করেন। রাইনহার্টের বাবা আছিম হুবনার ছিলেন একজন চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও কাব্যামোদী। রাইনহার্ট হাসানের বেশ কিছু প্রতিকৃতি আঁকেন; তিনি জীবনভর হাসানের কবিতার অলংকরণ করে গেছেন এবং ২০১৬ সালে বার্লিন থেকে রাইনহার্টের অলংকরণে আছিম হুবনারের অনুবাদে হাসানের ৪৪ টি কবিতার জার্মান অনুবাদ Das Kleine Abul Hasan Brevier প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদকর্মের জন্য রাইনহার্ট হাসানের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিও নিয়ে রেখেছিলেন।
১৯৭৫ সালের নববর্ষের প্রাক্কালে তাঁরা যখন একে অপরের শান্তি, স্বাস্থ্য এবং সুখ কামনা করছিলেন, আবুল হাসানের পায়ে বেশ ব্যথা হচ্ছিল, আর তিনি নতুন বছরের আতশবাজির শব্দে- অনভ্যস্ততাহেতু, খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন । রাইনহার্টও সচরাচর রাত জাগতে পছন্দ করতেন না। কিন্তু আবুল হাসান কয়েকটা ছোট বালিশের উপর নিজের পা রেখে নিজের হাতেই পায়ের মাংশপেশী মালিশ করতে করতে রাইনহার্টকে বললেন, আজ, এই নববর্ষের রাতে, এসো আমরা একসাথে মিলে একটি কবিতা লিখে ফেলি; তারপর এই পৃথিবীতে আমাদের যন্ত্রণাদায়ক দেহ থেকে একটি আনন্দময় উত্তরণের জন্য আমরা সেই কবিতাটি সুর করে গাইব। রাইনহার্ট কাগজ কলম নিয়ে হাসানের হাতে দিলেন। হাসান মৃদু হেসে বাংলায় কিছু একটা গুনগুন করলেন; তারপর লিখলেন, আমাদের নশ্বর দেহের খোলসগুলি গাছ, পাতা, ফুল, পাখি, ফল এবং হ্রদে রূপান্তরিত হয়- যেখানে নগ্ন মেয়েরা লাফ দেয়। রাইনহার্ট যোগ করলেন, লম্বা, আলগা চুলের সাথে। দুজনেই কিছুক্ষণ ভাবলেন এবং তারপর ইংরেজিতে এই সব কথা আলাদা আলাদা কাগজে লিখলেন। তারপরে তারা কবিতাটি সম্পাদনা করলেন । হাসান চেয়েছিলেন সেই গীতিকবিতাটি জার্মান ভাষায় বিশেষভাবে উদ্দাম এবং সুরেলা শোনাবে। রাইনহার্টের কিছুটা সাংগীতিক প্রতিভাও ছিল; তিনি সদ্য জন্ম নেওয়া কবিতাটি জার্মান ভাষায় যতটা সম্ভব সুরেলাভাবে আবৃত্তি করেছিলেন। এইভাবে সে রাতে একটি সত্যিকারের আন্তঃভাষিক কবিতা তৈরি হয়েছিল- বাংলা, ইংরেজি আর জার্মান। সকালে উঠে রাইনহার্ট দেখলেন, হাসানের নিদ্রিত চেহারায় বেদনার কোনো ছাপ নেই।
রাইনহার্ট, আবুল হাসানের ইচ্ছাতেই প্লাস্টার অব প্যারিসে তাঁর মুখের ছাপ নিয়ে একটি মুখোশ ( Life-mask) তৈরি করেন। মুখোশের ফ্রেম আর পিছনের দিকটা তামার তৈরি। হাসানের মৃত্যুর পর রাইনহার্ট সেই মুখোশটি ব্যবহার করে হাসানের একটি সমাধি তৈরি করে নিজের ঘরেই রাখেন। মুখোশের পিছন দিকে ধাতুর উপর এই যৌথ কবিতাটি জার্মান ভাষায় উৎকীর্ণ করা আছে।
এ সকল তথ্য এবং ছবি, শিল্পী রাইনহার্ট হেভিকের একজন ভক্ত জার্মান কবি, লেখক ও সম্পাদক স্টিফেন মার্সিনিয়াকের সূত্রে পেয়েছি। রাইনহার্ট, স্টিফেনের বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণও করেছেন। এই যৌথ কবিতা রচনার ইতিহাস পেয়েছি রাইনহার্টের পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে স্টিফেন মার্সিনিয়াকের অপ্রকাশিত আখ্যান ‘পদ্মাসনে, দূর দেশে: কবি আবুল হাসান ও চিত্রশিল্পী রাইনহার্টের বন্ধুত্ব ’ থেকে ।
কবিতাটি এই –
আমরা এখান থেকে চলে যাই চলো
আমরা এখান থেকে চলে যাই চলো
বেদনামুক্ত মানুষ যেভাবে সহজেই
নিজ থেকে চলে যায়
উন্মুক্ত নিসর্গে।
যেমন জল বয়ে যায়
যেমন পাখি উড়ে যায়
সহজভাবে,
তেমন করেই চলে এলাম ।
আমাদের বাহুগুলো আজ গাছের সবুজ শাখা
যারা পাখির পালকের মত আঙ্গুল বিছিয়ে দেয়
গাছের পাতায়-
বেদনাহীন, কেননা
আমাদের চোখ জোড়া বদলে যায়
আকাশের নীল রঙে ডোবা জলাধারে,
আমরা গ্রীক বনদেবতার হাতে শোভিত
রক্তিম ফল –
এইমাত্র।
নিরন্তর তরঙ্গায়িত বাতাসে দোলে
পরম সুস্বাদু
লাল লাল ফল –
নগ্ন বালিকারা এবারে ঝাঁপ দিবে
পরম আস্বাদে,
আমাদের কামনা
শুধু এইমাত্র!
(আবুল হাসান ও রাইনহার্ট হুবনার ( হেভিকে) , ৩১/১২/১৯৭৪)
বাংলা অনুবাদ – মোশতাক আহমদ, ১২ জুলাই ২০২২
[লেখাটি জুলাই ২০২২ এ লেখা হয় এবং সে মাসেই ‘তর্ক বাংলা’য় প্রকাশিত হয়।]
পূর্ব জার্মানির বসন্ত
পূর্ব বার্লিনে শীতের বর্ণনা তো লিখে ফেলেছি। কিন্তু হাসানের দেশে ফেরার সময়ে বসন্ত এসে গেছে। বসন্তকালে বন্ধুদের কাছ থেকে একজন ক্ষণিকের অতিথি কবির বিদায়! সে দেশে বসন্ত কীভাবে আসে, কী কী ফুল ফোটে তা তো জানি না। এক মার্কিন প্রবাসী লেখিকার কাছ থেকে লেখা নিলাম, কিন্তু ইউরোপ আর আমেরিকার তো অনেক ব্যবধান। মনে খচ খচ করতে লাগল। ভাবলাম বিলেতে খোঁজ করি। ছোট বোন সুলেখিকা মৌসুমী দাশগুপ্তা আমাকে চমৎকার একটা বসন্ত আগমনের বর্ণনা লিখে দিয়েছিল। মৌসুমীর কাছ থেকে পাওয়া দুর্দান্ত মৌসুমের বর্ণনাটুকু এখানে থাকুক-
ইউরোপের বসন্ত আসে ক্রোকাস আর স্নোড্রপ ফুলে। আমাদের বর্ষায় বাগান আলো করা ঘাসফুল অথবা ভুঁইচাপার মতই রঙ বেরঙের ক্রোকাস আর তুষার শুভ্র স্নোড্রপ বসন্তের প্রথম বার্তা বয়ে আনে। এরপর আসে হাসিখুশি ড্যাফোডিল, বনেদী টিউলিপ আর দেমাগি হায়াসিন্থ এর দল। এদের বিস্তার ভূমিতে, আর দিগন্ত আলো করার দায় চেরি ফুলের। গোলাপি আভার চেরি ফুলের সৌন্দর্য হাজার বছর ধরে সাহিত্যিক আর চিত্রকরের অনুপ্রেরণা। একে একে শীতের পত্রহীন গাছগুলোর গায়ে সবুজ সবুজ দানার মত ছোপ লাগে, ধূসর আকাশ নীল হয়, ফিরে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিদের দল। দীঘল শীতনিদ্রা শেষে জেগে ওঠে সজারু, বেরিয়ে আসে দুরন্ত কাঠবেড়ালি আর মাঠে মাঠে লাফিয়ে বেড়ায় নতুন জন্মানো মেষশাবকেরা।
রাইনহার্টের কন্যা নীল
এখন রাইনহার্ট হেভিকের ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করেন রাইনহার্টের কন্যা নীল ন্যাবার্ট।
তিনি আমাকে জানান রাইনহার্ট বিয়ের আগ পর্যন্ত রাইনহার্ট হুবনার লিখতেন। হুবনার তার বাবার পদবী। কিন্তু বিয়ের পর তিনি রাইনহার্ট হেভিকে লিখতে আরম্ভ করেন, যদিও এটি তাঁর মায়ের দিকের পদবী। শিল্পী-নাম হিসেবে তিনি আগে থেকেই হেভিকে ব্যবহার করতেন।
নীল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন’ সেক্রেটারি’ হিসেবে কাজ করেন। নীল বলেছেন রাইনহার্টের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর অলংকৃত আবুল হাসানের দুই ভল্যুম কবিতা প্রকাশিত হোক। এই বইটি বাংলাদেশে প্রকাশের সম্ভাবনা নিয়ে আমি কথা বলেছি। অতি উৎসাহে আমি তাঁর সাথে আবুল হাসানের ‘ কবির ভাসমান মৃতদেহ’ কবিতার বাংলা ও এর জার্মান অনুবাদের চারপাশে রাইনহার্টের অলংকরণের ইমেজ দুটি শেয়ার করে জানাই যে আমি ওর সবগুলো কবিতা অলংকরণ নিয়ে একটি রঙিন বই প্রকাশ করতে চাই। এ ব্যাপারে স্টিফেনের সাথে আমার কথা হয়েছে। নীল এ কথা শুনে রক্ষণশীল হয়ে গেল। হয়ত উত্তেজিত হয়ে জার্মান ভাষাতেই লিখে ফেলল যে ছবিগুলোর কপিরাইট এখন তাঁর। অন্য কেউ এ নিয়ে কথা বলতে পারে না। বাবার মতো সেও নীতি নৈতিকতা ও সততায় বিশ্বাসী। আমি বললাম, আমি একথা জানি। এই বলে পঁচাত্তরের পহেলা জানুয়ারিতে হাসান যে লিখিত অনুমতির মাধ্যমে রাইনহার্টকে তাঁর কবিতা অলংকৃত করে প্রকাশ করার অনুমতি দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ইমেজটিও পাঠাই। আমি আপাতত আমার বইতে ছাপানোর জন্য নমুনা হিসেবে কয়েকটি অলংকরণ চেয়েছিলাম। নীল আমাকে বেশ কয়েকটি ফ্রেমে বাঁধানো কবিতার সাথে অলংকরণের ছবি পাঠায়; কিন্তু সেগুলোর রেজুল্যুশন খুব ভালো না। ‘স্রোতে রাজহাঁস আসছে’ কবিতার জার্মান অনুবাদের চিত্র বাদে বাকি ছবিগুলো ভিন্ন কোনো আয়োজনের জন্য রেখে দিলাম। পাশাপাশি সে আমাকে তাঁদের তিন প্রজন্মের একটি ছবি পাঠায়।
রাইনহার্টের মৃত্যু সংবাদ
রাইনহার্ট হেভিকে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ মারা যান। স্টিফেন এর তিন চারদিন পরে আমাকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানায় ও বার্লিনের পত্রিকার একটি লিঙ্ক পাঠায়। সে সময় স্টিফেনের কাছ থেকে আমি নিয়মিত শিল্পীর বিষয়ে কোনো না কোনো তথ্য পেতাম। আমি প্রথমে ওয়াকিল ভাইকে এই দুঃসংবাদটি জানিয়েছিলাম। তিনি আমার সাথে শিল্পীর কন্যার যোগাযোগ আছে কীনা জানতে চাইলেন। কিন্তু তখন আমার যোগাযোগ ছিল না। আমার ধারণা, শিল্পীর মৃত্যুর পরেই ওয়াকিল ভাই রাইনহার্টের স্মৃতিকথাটি প্রকাশের ব্যাপারে সিরিয়াস হন।
ডিপ্লোমেটিক ব্যাগ
২০২২ সালের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম থেকে মোস্তাফিজুর রহমান লিটন আমাকে জানান যে মাহবুব তালুকদারের ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’ বইতে আবুল হাসান ও সুরাইয়া খানম বিষয়ে এমন কিছু তথ্য আছে যা আমার কাজে লাগতে পারে। সে আমাকে বইটির কিছু অংশ ফটোকপি করেও পাঠায়। সে যে বিষয়গুলো আমার জন্য কৌতূহলের বিষয় হবে বলে ভেবেছিল, সেগুলো নয়, বরং আমাকে আকৃষ্ট করেছিল অন্য কিছু এবং দ্বিতীয় সংস্করণের জন্য সেই পাতাগুলো, চিঠিগুলো আমার খুব কাজে লেগেছিল।
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আবুল হাসানের পূর্ব বার্লিন যাবার পথে মাহফুজুল হক খানসহ অন্যান্য বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের পাশাপাশি বঙ্গভবনে কর্মরত কবি মাহবুব তালুকদারের একটি ভূমিকা ছিল।
প্রথমে তিনি কবির হার্টে অসুখের কথা শুনে এর গভীরতা না বুঝে, মজা করেই একটা কবিতা লিখেছিলেন যেটা বিচিত্রাতেও প্রকাশিত হয় (ফ্রি স্টাইল ভালোবাসা)। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারেন আবুল হাসানের বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, এবং পূর্ব বার্লিন একটি সম্ভাব্য বিকল্প, তখন তিনি হাসানের কবিতার বইগুলো নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহকে কবি সম্পর্কে অবহিত করেন, এবং সম্ভাবনাময় কবির বিদেশে চিকিৎসার গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হন। রাষ্ট্রপতি স্বয়ং পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলে আইনি জটিলতা নিরসন করে দ্রুততম সময়ে আবুল হাসানকে পূর্ব বার্লিনের চ্যারিটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেন।
সে সময়ে পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হাশিম ছিলেন মাহবুব তালুকদারের বন্ধু। তিনি পূর্ব বার্লিন বিমানবন্দর থেকে মধ্য রাতে হাসানকে বরণ করে নেন। দূতাবাসের হায়দার সাহেবও বার্লিনবাসের সময় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতেন।
সেই যোগসূত্রের সুবাদে দেশে ফিরেও আবুল হাসান ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে বন্ধু রাইনহার্টকে চিঠিপত্র আর বইপত্র পাঠাতে পারতেন। রাইনহার্টও এভাবেই ঔষধপত্র পাঠাতেন। তবে ১৫ আগস্টের পর পূর্ব বার্লিনের সাথে যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু সেই বই থেকে পাই – মাহবুব তালুকদারের বাসা ও অফিসে হাসানের ঢুঁ মারাবার একটি জায়গা হয়, মাহবুব তালুকদার প্রেস ক্লাবে এসেও কবির সাথে দেখা করতেন। আবুল হাসান বঙ্গভবনে বসে মাহবুব তালুকদারের খাতায় কবিতাও লিখেছেন, তবে সেসব কবিতা হারিয়ে গেছে।
মোশতাক আহমদ
মোশতাক আহমদ (জন্ম: ৪ঠা জানুয়ারি, ১৯৬৮) মূলত কবি। লেখালিখি ও বিচিত্র বিষয়ে পড়াশুনা করাই তাঁর নেশা। আটটি কবিতার বই ছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিপাঠের বই। পড়াশুনা করেছেন মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ – ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশাগত জীবনে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। কাজ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি, কেয়ার বাংলাদেশে ও সেভ দ্যা চিলড্রেনে। মোশতাক আহমদের লেখা বইগুলো হচ্ছে: কবিতার বই – সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট, আমার আনন্দ বাক্যে, পঁচিশ বছর বয়স, মেঘপুরাণ, ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি, বুকপকেটে পাথরকুচি, ডুবোজাহাজের ডানা, অন্ধ ঝরোকায় সখার শিথানে, স্বনির্বাচিত কবিতা– পদ্যাবধি; গল্পের বই- স্বপ্ন মায়া কিংবা মতিভ্রমের গল্প; প্রবন্ধ – তিন ভুবনের যাত্রী; স্মৃতিপাঠ – অক্ষরবন্দি জীবন; অনুবাদ কবিতা- যাই ভেসে দূর দেশে (সকল মহাদেশের কবিতা); কবি আবুল হাসানের জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ এবং অনুসন্ধানমূলক গদ্য রচনা ‘আবুল হাসান ও ঝিনুকের সন্ধানে’ তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী সোনিয়া রহমান এবং দুই কন্যা অদ্বৈতা শাশ্বতী ও অতন্দ্রিলা সপ্তর্ষিকে নিয়ে ঢাকা শহরে বসবাস করেন।