কোমলগান্ধার
দ্রাবিড় পাখির ঠোঁট চঞ্চু হয়ে যায়
সেইখানে অবিরাম নদী ঝরে পড়ে
তার মাঝে বিভাজন কাহিনি বানায়
সহোদর বিকেলের দাগ ওঠাধরে
পাথরের জানালায় নদী মাথা ঠুকে
মোহিত হরিণ পাল হাঁটে ছায়া ভেঙে
দুই হাতে বুক বাঁধে দেয়ালের বুকে
চোখ ছেড়ে চোখ নামে বহুদূর গাঙে
বহুদিন এক হাতে কোলাহল ধরা
আর হাতে তৃষাদের জলের অসুখ
কোমলগান্ধার জল ঈর্ষায় অধরা
দুই চুমুক পানের পরে ভয়াল চুমুক
ধূলির ফাগুন আসে নখে নিয়ে জরা
সুর আর সন্ধ্যা মিলে ডুবুক ডুবুক
প্রাণরাক্ষস
ভ্রমণ সরল হলে পথে ছনখোলা
অসুখের রং সব তোমাকেই আঁকে
অন্ধ ফুলদল আছে স্মৃতিচুর লীলা
জেনেছি তুমি সুন্দর হলে সব থাকে
রেখার মিছিলে আঁকা ছিলো গতকাল
যেই ধামে ধ্যানে বসে কিছুই পারি না
আমার তোমাকে ছেড়ে যাওয়া সকাল
আমার তোমাকে ছুঁড়ে দেয়া সব ঘৃণা
আমাকে নিজের মাঝে জমা করে দিয়ো
আমার হাতের মধ্যে আঙুলের ছাই
প্রাণরাক্ষস আমার হুহুপাখি প্রিয়
অক্ষয় নখ আমার কোনো পায়ে নাই
বিসুখ আমাকে যেতে দিয়ো যেতে দিয়ো
ওইখানে আমি একা খাক হয়ে যাই
জালপাশা
গরুগুলি ফিরে চলে গোধূলির গ্রামে
খুরে ও নিশ্বাসে ওড়ে ধূলি ধূলি রেণু
পৃথিবীর সব মাঠ বুকে এসে থামে
মাঠের বিথারে বাজে অবারিত বেণু
শূন্য আবেষ্টনে আমি ভাঙি পর পর
ভেঙে দিয়ে আনমনে বুনি জালপাশা
বৃশ্চিক বিলাস এসে বসে স্বয়ম্বর
উপুড় বালিশে নামে বাচাল কুয়াশা
কুয়াশামোড়ানো চাঁদে ফোটে কুঁচফুল
সুমন্দ্র শিশির ফাঁদে বাঁধা বারো মাস
কালির সংরাগে মাতে আঁধার আকুল
আধখানা ঘ্রাণে ছাই উত্তর আকাশ
ঝিরি ঝির ঝিরি ঝির আঁধারের চুল
ফিরে যেতে যেতে ক্ষয় যত অবকাশ
হুহুপাখি
গাঢ় ধোঁয়ার ভিতর খুঁজি সদা ফল
সদা ফল ফুটে থাকে দেয়ালের গাছে
দেয়ালের শেষে মাঠ ধূসর শ্যামল
রাখলের অভিশাপ মাঠে গেঁথে আছে
বইয়ের মধ্যে খুঁজি অক্ষর জীবন
রাইফুল ঘ্রাণে আমি ধাবমান ক্ষয়
খুঁজে খুঁজেই গুটিয়ে নিই রাইবন
সন্ধ্যায় তেরোটি ফুল কুসুমিত হয়
ফুল শেষে ভুল শেষে ক্ষরণের গান
পতিত দিনের পাড়ে হুহুপাখি কাঁদে
অনুরক্ত হিম করে আগুন সন্ধান
পুষ্পবিষ জমা হয় পূর্ণিমার চাঁদে
সাতপদী স্বরে বোনা মাঠজুড়ে ধান
আপ্তবাক্য লুকায়িত সায়ন্তনী ফাঁদে
মৃত্যুলেখ
ফুলতোলা বালিশের দুইটি কভার
কথা বলে পরস্পর আঁধারের খাঁজে
তেরোমাইল দূরত্ব মাঝে অন্ধকার
কণ্টকারণ্যের পর জাগে ক্লান্তি মাঝে
ক্লান্তির বাঁপাশে জাগে বিরামের স্নায়ু
শয্যা শেষে পড়ে থাকে অপর আগুন
আগুন জানে না তার উত্থানের আয়ু
শাদাফুল দিন করে গান গুন গুন
পরাজিত এ আঙুলে নদীচেরা স্বেদ
ঘুমের ভিতর তুমি মরে যাও বক
স্বপ্নের ভিতর মরি সংরাগে সংবেদ
আকাশে কখনো ডাকে বিজলি গমক
দীঘল ক্ষেতের আড়ে চাঁদ নেমে বেদ
গমকের চোখ চিরে মৃত্যুলেখা নখ
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
জন্ম: ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ।
লেখালেখি আর ছবি আঁকাই মূল কাজ।
পড়াশোনা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলা। বইয়ের সংখ্যা: ১৬ টি।
বই :
‘পাখি ও পাপ’ (২০১১, কবিতা), ‘শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১, মুক্তগদ্য), ডুবোজ্বর (২০১২, গল্প), কাপালিকের চোখের রং’ (২০১৩, কবিতা), ‘পুরুষপাখি’ (২০১৪, মুক্তগদ্য), ‘আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক’ (২০১৫, প্রবন্ধ), ‘মহিষের হাসি’ (২০১৫, কবিতা), ‘রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয়’ (২০১৬, গল্প), ‘আকাশ ফুরিয়ে যায়’ (২০১৭, মুক্তগদ্য), ‘হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস’ (২০১৭, কবিতা), ‘উদ্ভিদ ও বৃন্দাবনী’ (২০১৯, কবিতা, ভারত থেকে প্রকাশতি), ‘কুসুমকুমার’ (২০১৯, মুক্তগদ্য), ফুলের অসুখ (২০২০, গল্প), কবিতালেখকের জার্নাল (২০২০, মুক্তগদ্য), আমি ও গেওর্গে আব্বাস (২০২০, মুক্তগদ্য),
সম্পাদিত বই : ‘ওঙ্কারসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের শ্রুতিলিপি’ (২০১৭)।
সম্পাদিত ছোটোকাগজ : ‘ মুক্তগদ্য’ (২০১১ থেকে) ।
সম্পাদিত অনলাইন : www.kothaboli.com