আজ শুক্রবার….
আমি আমার সৌভাগ্য চাই না। বরং আমি তোমার দুর্ভাগ্য দেখে দেখে একটা পাখিকে বলেছি; তোমার ডানায় লেগেছে অন্ধ হাওয়া… উড়বে ওড়ো! বসবে কোথায়?
আমি না তোমাকে চাই না। হতে পারে তোমার নাম বাংলাদেশ। হতে পারে তুমি আমার জন্মভূমি। আমি আমার সৌভাগ্য চাই না। আমি তোমার দুর্ভাগ্য দেখে দেখে মাটিকে বলেছি ; কিভাবে সামলাও এত কবর? ফুলের চাইতে লাশ বেশি হলে সইবে কারে?
সুজলা সুফলা মরার দেশে শর্ষে ফুল ফুটেছে। আমি ফুলের সৌভাগ্য চাই না। আমি মধুর দুর্ভাগ্য দেখে দেখে মৌমাছিকে বলেছি ; মানুষ মরেছে বটে তার কবর মরেনি…
আমি কবরের সৌভাগ্য চাই না। মানুষের দুর্ভাগ্য দেখে দেখে কবরকে বলেছি; তুমি খুব অসুস্থ। তুমি এমন এক মা; যার গর্ভ থেকে খালাশ নেই, জন্ম নেই…
আমি শুক্রবারের সৌভাগ্য চাই না। আজানের দুর্ভাগ্য দেখে দেখে আমি আমার লাশকে বলেছি; ধুর! তুমি আমার দুর্ভাগ্য ছিলে এই দুনিয়ায়….
বসন্ত লীগের দেশে…
কোকিল মেরেছ বন্দুকে। বন্ধু মেরেছ কোকিলের ডাকে ডাকে… মানুষ মেরেছ সকাল-বিকাল। ফুলের গোষ্ঠী মেরে তালা মেরেছ গাছে গাছে… পলাশ ফোটে তার গাছে ; তুমি শাড়ি কেনো কোন দোকানে? কোকিল ডাকে তার আজানে ; তুমি চিল্লাও কোন কারণে?…
মানুষ মেরে মানুষ সাজো ও আমার দেশের বসন্ত… উতালা বাতাসে ফুলের কোনো গন্ধ নেই। আমার বাড়ি নেই তার কোনো ফুল নেই, তার গন্ধ তোমার বাড়ি যাবে না। রোজ মানুষ মারবা আর ফুল ছিঁড়ে ভালোবাসবা এই চোদন এই রোদনের কালে তুমি একটা বসন্তলীগ…
বেহায়া চেহারা তোমারে বলি… বেহায়া দেহ তোমারে বলি… বেহায়া মন তোমারে বলে কী লাভ? লাভিউ’র দিনে রূপচাঁদা মাছ তার চেহারা হারায়ে কাঁদছে পানির গভীরে….
লাল টমেটো, শাদা ফুলকপি জীবনের বসন্ত। গোলাপ জানে না কার বসন্তে কার ভালোবাসার শিকার হয়ে ঝুলছে খোপায়…
আমার বুকে তোমার পায়ের ছাপ…
১.
আমি একটা মৌমাছি দেখেছি। তাকে দেখে বুঝেছি এই মৌমাছি বুকের চাক থেকে উড়ে আসা… তোমার বুকে ঢিল ছুড়লো কে?
২.
আমি একটা কথাকে আরেকটা কথার সঙ্গে দেখলাম। ওরা আটকে আছে কণ্ঠনালিতে। গাছ ওদের কথা দিয়েছে, তাদের কথা একদিন বলবে কালো বিড়ালের বাগানে। অথচ কথা দুটো অপেক্ষা করছে মানুষের…
৩.
গ্রামের নাম জামাদার পাড়া। এই পাড়ায় কেউ জানে না ভাতার ছাড়াও ভাত আছে। মাছ ছাড়াও নদী আছে। কাপড় ছাড়াও দেহ আছে। এই গ্রামের মানুষের বুক আর মুখের মাপ সমান। এরা ফুল তুলে আগুনে সেদ্ধ করে। পাখি মেরে আল্লাকে বলে, আল্লা তোমার দোকানে আমার কিছু ধার রইলো…
৪.
জামাদার পাড়া পেট আর পিন্ধনের গ্রাম। এখানে রোজ রোজ দুনিয়া কাটা হয় বঠিতে। এই পাড়ার গোয়াল গাভীর দুধে হাত দিয়ে বুঝতে পারে জীবন একটা গাভীর দুধ থেকে অন্যত্র বেঁধে রাখা ছটফট করা বাছুর।
৫.
একটা গাভীর বুক থেকে পালিয়ে আসা বাছুরের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। বাছুরটা আমাকে বলেছে, তুমি কেন মায়ের বুক থেকে পালিয়ে যাচ্ছো? তোমার জীবনে কি গোয়াল আছে?
৬.
ছয় থেকে ছয় বাদ দিয়ে দেখি কেউ কথা বলছে… একবার তাকে মেঘ মনে হলো। আরেকবার তাকে গাছ মনে হলো। আরেকবার তাকে মানুষ মনে হলো। এবার আমি মানুষ থেকে মানুষ বাদ দিলাম। দেখি মানুষের গাছের, পাখির রাষ্ট্রে ক্ষমতায় আছে শক্তিশালী কবর…
থ্যাংকিউ পৌনে ছয়টা…
পৌনে ছয়টা; আচ্ছা বলতো বন্ধু, তুমি ভোরের বাজন নাকি সাঁঝের বাজনা? দুপুর বেলা, রাতের বেলা তোমার কোনো ডিউটি নেই? আচ্ছা আমায় বলো হাতঘড়িতে নাকি দেয়ালে? পেটের নাড়িতে নাকি বুকের হাড্ডিতে তুমি কত বাজো?…
পৌনে ছয়টায় কী পরিমান মানুষ মারা যায়? পৌনে ছয়টায় কী পরিমান দুধ জমে গাভীর ওলানে? পৌনে ছয়টার ভেতর ছয়টা নদী বয়ে গেছে উত্তর-দক্ষিণ না বুঝে… নদীগুলো গুম হয়েছে পশ্চিমে… গাছগুলো গুম হয়েছে পূবের মাটিতে… পুলিশ বলছে, এইতো মাত্র পনোরো মিনিট। ছয়টা বাজলেই সব নদী ধরে আনা হবে থানায়…
পৌনে ছয়টা, বন্ধু আমার… এক আর দুই। তিন আর চার। পাঁচ আর ছয়ের কাছাকাছি কূলে তুমি আর আমি মরে পড়ে আছি। তুমি আছ ঘড়িতে; আমি আছি জীবনে… আমরা কী দারুণ পৌনে ছয়টা…
আদালতে তোমার ঘড়ি একটা মিথ্যাবাদী। জীবনে তোমার জীবন একটা মিথ্যাবাদী। অথচ মানুষ একটা সাত মিনিট। আর পনেরো মিনিট হলেই বেজে উঠতো সে তার মরণের মরণে…
আট মিনিটের আকাশে উড়ছে পৌনে ছয়টার পাখি… জগতে এখন কত বাজে? জগতে এখন তুমি বাজছো প্রিয় মানুষ…
শত্রু…
ভাই…
ভাই, ভালো আছেন? আপনাকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম; এই ধরেন একরাত আপনার ‘ভালো‘ আপনার ‘খারাপের‘ সঙ্গে শুয়েছিল জ্যোৎস্নায়। আপনি মানুষ ভাইজান, আপনার শত্রু আপনার ‘ভালো‘। আপনার খারাপ ঢেকে রাখে আপনার ‘ভালো‘
বোন…
বোন আমার, আপনি কেমন আছেন? আপনার খোঁপার ফুলকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম। আপনার মগজ যে একটা শাদা গোলাপ ; খোঁপার লাল কেন জানে না? দুই গোলাপকে আমি একটা ভোরে শুয়ে থাকতে দেখেছি। ফুল মগজের শত্রু….
আত্মীয়…
মধু বিক্রি হচ্ছে রোজ। বাজারের নাম রক্তের সম্পর্ক। এখানে খুব দ্রুত চড়া দরে বিক্রি হয় মায়া। মায়াকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম। আত্মা নাই বুকে, কথা নাই মুখে যদি স্বার্থ না থাকে কপালে। আমি এই বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাকে দেখেছি। তারা ঘুমিয়ে ছিলো দুপুরে…
স্বজন…
দেহ আছে কেহ নাই। রক্ত আছে ব্লাড গ্রুপ মেলে নাই। জন্ম থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ঘোড়া; তাকে আটকানোর মানুষ নাই। মানুষ আছে। আছে মিথ্যা আছে সত্য। এই দেখে সেই কথা মনে পড়ছে। ওই দেখে নিঃশ্বাস ছাড়ছে দেহ…
জন্মভূমি….
জন্মভুমি তুমি আমার শত্রু। আমার ভোরকে টেনেটুনে দুপুর করতে আমি ক্লান্ত। দম নিয়ে যখন দুপুরকে আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত টানি তখন দম আমার শত্রু… আমি একটা জীবন। তুমি একটা জন্মভূমি। তোমার সঙ্গে শুয়ে থাকার রাত খুঁজে পাই না…
জুয়েল মোস্তাফিজ
জন্ম : ১২ নভেম্বর ১৯৮০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ
ই-মেইল : vatervugol@gmail.com
প্রকাশিত গ্রন্থ :
‘জুয়ার আসরে কোনো আঙুলই মিথ্যা নয়’ (কাব্য; অনন্যা ২০০৮)
‘ভাতের ভূগোল’ (কাব্য; ঐতিহ্য ২০১০)
‘দুধের পুকুরে ভাসছে কফিন’ (কাব্য; ঐতিহ্য ২০১৪)
‘মেরাতুন্নেসা, মনমহাজনের কথা’ (গদ্য; চৈতন্য ২০১৫)
‘হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি’ (কাব্য; পেন্ডুলাম ২০২০)
‘আইসিইউ’ (কাব্য; বাতিঘর ২০২২)