পাঁচটি কবিতা | জারিফ আলম


শূন্যতার ধারণা


অক্ষরের প্রবালে যা লেখা নেই যা বলা নেই
তাতেও বেড়েছে কম্পিত বুকের ওঠা-নামা।
কোথাও যেনো কিছু একটা নেই সরল উত্তরে
নেই বলতে নেই; প্রেম নেই আতিশয্য নেই
আবার আসবো বলার মতো কেউ নেই।

তোমাকে কাছে চাইবার ব্যাকুলতা নিয়ে
এগিয়ে যাচ্ছি বিপুল কোনো বিস্ময়ে।
না হওয়া গল্পের শিরোনামের খানাখন্দ পেরিয়ে
মায়াবতী জাদুকর খুলে পড়ছে হৃদয়ের দরবার।
গণতান্ত্রিক ছায়াদের আমাদের এলাকায় দেখা নেই।
শুধু পড়ে আছে প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস
প্রেম অথবা তারও অধিক অভিনয়ের নিত্য মহড়া।


মাতাল ভিড়ে


বাঁচার আশা কবেই গেছে স্বেচ্ছাচারীর তাল ছিঁড়ে
বেঁচে থাকার বিপত্তি আজ ডাকছে কেউ মাতাল ভিড়ে।
হয়তো অনেক কষ্ট আছে ফুটন্ত এই গন্ধরাজে
যতো কিছু ভেবেই দেখি
ভাবনা যেনো সান্ত্বনা যে।

হয়তো তুমি কফির কাপে চুমুক দিয়ে দুঃখ কতো
খেয়েই নিলে ভুলতে এসব কার্যকরী মুখ্যত।
লুটিয়ে পড়া রোদের মাঝে এক বিকেলে আসবে নেমে
বাড়তে থাকে এমন চাওয়া
অনেক কিছুই থাকবে থেমে।

নাহয় এসব রাখলো লিখে মহাকালের এই জীবন
ফুরিয়ে যায় আয়ুর রেখায় এসব কিছুর উদ্দীপন।
এই তো এসব জীবনব্যাপী শব্দ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ
হারিয়ে যাবার দিব্যজ্ঞানে
শিখিয়ে দেবার নেই অবকাশ।


ব্যক্তিগত সুর


টুকরো হয়ে যাওয়া অতলান্ত স্মৃতির কিংখাবে
ফাগুনের সুবাতাস
ক্যালেন্ডারে ঝুলে আছে; ব্যক্তিগত সুরের অভাবে
চেতনায় ঢুকে গেছে সন্ত্রাস।


সাধুসঙ্গ


কীসের ক্ষত লেগে আছে বিষণ্ন রাত্রির দেহঘরে
নিজেকে হারিয়ে পাই সন্দেহের ভেতরে।
আজকাল দরদাম নেই প্রতিযোগী নেই
ডাক ওঠে না তাই, সত্তা আর গভীরতার প্রশ্নে।

মরুর মরীচিকা মুছে এঁকেছি মায়ার গৃহস্থালি
নিষেধ মানি না এইসব গোপনের প্রশ্রয়।
যাপনের গন্ধ ছড়ালে আত্মার সংবিধানে
লেখা হয় আলোর প্রতিশ্রুতি
        ততোখানি শান্তির উপস্থিতি
                        নাহয় লেখা থাকুক।

সব কি তবে মিশে যাবে অযথা বাক্যালাপে
গোলাপজল ছিটাও তবে সুরভিত বাস্তবে।
              এইতো পেয়েছি দূরের ইশারা
লিখিত কিছু শব্দের গূঢ় অভ্যাসে
নিকট সেতো মায়ার মরীচিকা।


মুদ্রিত দুঃখের ধারাপাতে


কখনো মেঘ আর রোদের নিজস্ব ভঙিমায়
সংসারে উত্থানে-পতনে জড়িয়ে যাই
নাম ভূমিকায়, কখনো নিজের বিপরীতে।
কতোটুকু জীবন দেখে নিজেকে দেখা যায়
আয়নায় কতোটুকু দেখি নিজের বিভ্রম!
হাহাকার শেষে কতোটুকু নির্জন প্রশান্তি
ঘিরে আছে প্রেমের ভূমিকায়!

এই যে এতো ভূমিকা এতো উপসংহার
উপহাসের মোড়কে দখলে কার কতোখানি
ছায়ারাও প্রতিবিপ্লবী এখন প্রতিনায়কের ভূমিকায়।

কিছু অশ্রুপাতে প্রতিদিনের সংঘাতে
তবু তো বেঁচে থাকা তবু তো জীবন
চাহিবামাত্র নিজেকে আর
খুঁজে পাওয়া যায় না এখানে।


জারিফ আলম

জন্ম: ৬ এপ্রিল, টাঙ্গাইলের চিনাখালি গ্রামে।

পড়াশোনা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

কবিতাগ্রন্থ: মুখোশ বদলে গেলে (২০২৩)।

লেখালেখির ধরন: কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ।

শেয়ার