শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, ফার্স্ট পারসন | নাজমুস সাকিব রহমান

বড় আব্বা আর আব্বার নাম নেব না। চাচাদের নাম নিই। আমার চাচা জাহেদুর রহমান, প্রয়াত জাবেদুর রহমান, সাজেদুর রহমান ও মিনহাজুর রহমান—চারজনই গ্রেট লিসেনার। আমি হয়তো তাদের মত গ্রেট নই, কিন্তু আমার পরিবারের অনেক সদস্যই শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর অ্যাডমায়ার। জঙ্গী ভাই বাংলাদেশের প্রধান গীতিকবিদের একজন। তারা ক্যাসেট যুগ থেকে জঙ্গী ভাইয়ের লেখা গান শুনেছেন। তার ব্যাপারে ইনফর্মড ছিলেন।

জঙ্গী ভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। অনিয়মিত হলেও কথা হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—আমি তাকে কখনোই বলিনি, জানেন, আব্বা একদিন জানতে চাইলেন,আপনাকে আর আসিফ ইকবালকে চিনি কিনা। এই ঘটনা খুবই ব্যক্তিগত। আমি জানি না, এটা কীভাবে জঙ্গী ভাইকে বলা যায়! তবে অন্য একটা কথা বলা কিছুটা সহজ।

ঋতুপর্ণ ঘোষের দুই খণ্ডের কলামসমগ্রের নাম ‘ফার্স্ট পার্সন’। জঙ্গী ভাইয়ের পছন্দের নির্মাতা ঋতু। তার সিনেমা অনেকবার দেখেছেন তিনি। একবার ইন্টারভিউ করার সময় ঋতুর কথা বললেন আমাকে। আমি তখন বিস্মিত হয়েছিলাম। না, তিনি সিনেমা দেখেন বলে নয়। আমি সে সময় ঋতুর ‘ফার্স্ট পার্সন’ পড়ছিলাম বলে! যদিও জঙ্গী ভাইকে জানাইনি সেকথা।

যেহেতু সাংবাদিকতা করি, জঙ্গী ভাইকে আমার জ্বালাতে হয়। এজন্য আমার ভেতর খানিকটা সংকোচবোধও আছে। এমনও হয়েছে, জেট লেগের মধ্যে তিনি আমাকে প্রশ্নের উত্তর পাঠিয়েছেন। পরে দেখা গেছে—ইন্টারভিউ পাবলিশড হওয়ার খবরটাও তাকে জানানো হয়নি। ক্রিয়েটিভ পারসন হওয়ার কারণেই বোধ হয় কিছু অদ্ভুত বিচ্ছিন্নতা বহন করি আমি। কিন্তু জঙ্গী ভাই সম্পূর্ণ অন্যরকম। তিনি সবসময় প্রাণবন্ত এবং শেষ পর্যন্ত জ্যান্টলম্যান।

আমি যদি জঙ্গী ভাইকে নিয়ে কখনো বই লিখি, তার নাম কী হবে? ‘মায়াস্ত্রো’ নাকি ‘ফার্স্ট পার্সন’? আমার ধারণা দ্বিতীয়টাই। জঙ্গী ভাইয়ের কারণে গীতিকবিদের অলিগলিতে ঢুকেছি আমি। সেই কবে ঘুম ভাঙা শহরের চিত্রকল্প এঁকেছিলেন তিনি। এখন ভাবি, সেসময় তিনি যদি আমার বড় আব্বা, আব্বা বা চাচাদের মনোযোগ আকর্ষণ না করতেন, কি হতো? আমি কি বুঝতে পারতাম গীতিকবিতা খুব সিরিয়াস একটি বিষয়? আর এত গীতিকবিকেও কি চিনতাম?

উত্তর, সম্ভবত না।

আলোকচিত্রী : ওমর ফারুক

জঙ্গী ভাই গীতিকবিতাকে পেশা বানাননি। তবুও তিনি অপ্রধান নন। বাংলাদেশে এরকম শুধু আরেকজন আছেন। কাউসার আহমেদ চৌধুরী। তারা দুজনই সমসাময়িক এবং অসামান্য সব লিরিক লিখেছেন। বলা যায়, পর্দার পেছনে থেকে অনেকের ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছেন।

দুজনের গদ্যের হাতও চমৎকার। কাউসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা অনেকে পড়েছেন। জঙ্গী ভাইও কম যান না। কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে গান নিয়ে কলাম লিখছেন তিনি। আমি অনিয়মিতভাবে জঙ্গী ভাইয়ের কলাম পড়ি। মিস হলে অন্যভাবে তার লেখা সামনে চলে আসে।

কিছুদিন আগের একটা ঘটনা বলি। রাতে দৈনিক আজাদীর অফিসে চা-কফি খাচ্ছি। এই সময় [ফরচুনেটলি] আমার সহকর্মী ঔপন্যাসিক জাহেদ মোতালেব  জানালেন, জঙ্গী ভাই ‘পঞ্চকবি’ নিয়ে কিছু একটা লিখেছেন। আমি জানি, পঞ্চকবি জঙ্গী ভাইয়ের পছন্দের বিষয়। জাহেদ ভাইকেও বললাম সে কথা। সঙ্গে বললাম কাবাব খাওয়ার গল্প।

জঙ্গী ভাই, আমি স্কুল ফ্রম জার্নালিজম। আপনাকে নিয়ে নতুন কি বলতে পারি? কিছু অনুভূতি ছাড়া? আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, বাংলা ভাষায় গান লেখার জন্য। গীতিকবিতাকে তাচ্ছিল্যমুক্ত করার জন্য। আর অবশ্যই আমাকে জ্বালাতে দেয়ার জন্য। আমি মিউজিক জার্নালিজম যা কিছু করেছি, আপনার সঙ্গ না পেলে তার মধ্যে অপূর্ণতা থেকে যেত।


ব্যানারের স্কেচ : মাহমুদ নোমান

শেয়ার