ক্ষত – ৩
ঘাসের ভিতরে চ্যাপলিনকে লুকিয়ে রেখেছি বহুদিন। সেল্টা ভিগোর বিমান বন্দরে ভ্রমণকালীন বিরতিতে দেখা হয়ে যায় জীবনানন্দের সাথে। সেকি তুমুল আড্ডা! অথচ ঘাস এবং কুয়াশা ছাড়া জীবনানন্দের অন্য কোন শব্দের অর্থই চ্যাপলিন বুঝতে পারেনি। সে নিজে শুধু বলতে পেরেছিল উই লিভ ইন পোস্টমডার্ন টাইম। অতঃপর দীর্ঘ নীরবতা! নিঃসঙ্গ দেবদারুর গল্পটা জীবনানন্দ আর তুলতেই পারেননি। টেলিগ্রাফের তার বেয়ে নেমে আসা সন্ধ্যাটায় যখন পুরো সেল্টা ভিগো ছেয়ে যায় তখন দ্রুতগামী দুই বিপরীত ট্রামে দুজন উঠে পড়ে।
মাছ ধরার গান
বাবার সঙ্গে আমরা যখন মাছ ধরার গান শুনতে যেতাম, আমাদের একটা নদীর প্রয়োজন হতো। আমরা আঙুল দিয়ে মাটি কেটে কেটে নদী বানাতাম। বাবা একটা পাতা নদীতে দিয়ে বলতেন—এটা হল মাছ। সেই থেকে আমরা পাতা দেখলে মাছ মাছ বলে চিৎকার করে উঠতাম।
সেবার শীতকাল আর গেলো না। মানে শুধুই শীত। আমরা নিজেদের বানানো নদীতে গিয়ে মাছ নিয়ে আসতাম। গাছে লাগিয়ে রাখতাম। আর বাবাকে বলতাম—পাতাদের কোন নদী নেই কেন?
—কারণ তার গাছ আছে।
আমার ভীষণ মন খারাপ হতো। আমি ওই দূরের আকাশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভাবতাম, আমার নদী কিংবা গাছ কোনটাই নাই।
কনক বলতো—ওই যে তোর সাদা ঘুড়িটা, যেখানে আকাশ বেঁধে রেখেছিস। যার কাঁধে হাত দিয়ে সারাক্ষণ কী সব ভাবিস! ওটা কি জানে, রঙের তীব্রতা কখনো দৃশ্য দিয়ে মাপা যায় না।
—সকল ঘুড়িই জানে, কোনো প্রত্যাদেশেই তারা ভেঙে পড়বে না। কারণ প্রকৃতিতে তারাই কেবল ঈশ্বরের নিকটবর্তী।
—তুইও ইশ্বরের কাছে থাকিস। ঠিক বারোটা এক মিনিটে মরে গেছিস। তুই জানিস না?
—আমাকে কেবল মানুষের চিবুকের দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
—তবে সীল মাছের সাথে শীতের যেটুকু দূরত্ব বাকি ছিলো তার কী হয়েছে?
—স্তনের উষ্ণতার সাথে সীল মাছের যতটুকু পার্থক্য তা এবার আমরা সোয়েটার দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছি।
দ্য রেইনি সিজন-১৮
গাছ
গাছের বিস্মরণ আমিও জানি! শিকড় ছড়িয়ে সে তাস খেলে। তার মুখের ওপর হেঁটে যাওয়া পাতা, সে কেবলই সরিয়ে দিতে চায়। পাতার যন্ত্রণা খুঁটিয়ে দেখে পাতা। গাছ জানে, মুখ থেকে সরে যাবে পাতা। মুখের ওপর হেঁটে যাবে তাদের লাশ। জেনেসিসের ড্রাকুলারাও একে একে বের হবে সেদিন।
পাতা
এবার মুছে দিতে পার শিকড় বিষয়ক রহস্য। আমাদের আছে ঔষধি গাছ, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মিথ্যা অহংকার। আঙুর গাছের নিচে জমা হোক প্রার্থনার হাঁস। তুমি আসিও তবে শেষ ভোজসভায়।
বিশ্বাস
এখন চামড়া বদলানোর মৌসুম। আমরা জ্বর নিয়ে অপেক্ষা করছি অবিশ্বাসী পাতাদের জন্য।
শয়তানের আবির্ভাব
শয়তানকে প্রথম কোথায় দেখা গিয়েছিল তা নিয়ে প্রচলিত আছে নানা মত। কারও কারও দাবি তাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল রিওর এক কার্নিভালে। তবে কারাকাস অঞ্চলে অরণ্যঘেরা একদল মানুষের দাবি শয়তান এসেছিল তাদের ভেতর থেকে। দান্তের ইনফার্নো থেকে সরাসরি নেমে এসেছিল সে। সেখান থেকেই সমুদ্র পথে সে ছড়িয়ে পড়ে গোটা পৃথিবীতে। ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার পরেই প্রথম বাধার মুখে পড়ে শয়তান। সেখানকার আদিবাসীদের তাড়া খেয়ে সে ঢুকে পড়ে ব্যাবিলনের এক উদ্যানে। বালির ঝড় ও তুষারপাত তাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলে। আর সে ছিল সরাসরি নেপচুনের উত্তরাধিকার। পাতার ভেতর থেকে সে শিরা-উপশিরাদেরও আলাদা করে ফেলতে পারত। আর নিমিষেই বদলে দিতে পারত মানুষের চোখের পাপড়ি ও আঙুলের ছাপ। এভাবে গোটা পৃথিবীতে সে রাজত্ব করল আড়াই কোটি বছর। খ্রিস্টপূর্ব আড়াইশ বছর আগে দেবতাদের নিজেদের মধ্যকার লড়াইয়ের পর তাঁকে আর কোথাও দেখা যায়নি। যদিও রেইন ফরেস্ট অঞ্চলের এক শিশুর দাবি সে শয়তানকে দেখেছে। বর্ণনা দিতে সে বলেছিল শয়তানের দুটি হাত, দুটি পা এবং একটি মাথা আছে। সে জামাও পরে। তার কথা কেউ বিশ্বাস না করলেও তারা কিন্তু ঠিকই আবিষ্কার করেছিল পঞ্চম আঙুলের ছাপ।
শিরীষকুসুম জানে
তুমি জানো না, শিরীষকুসুম জানে
—একটি সাদা আতা ফল কেনো আত্মজীবনী জুড়ে একা রয়ে গেছে
—জয়তুন নগরে পাখিদের একান্ত আহার
—উৎসব শেষে অতিথিদের বাড়ি ফেরার যন্ত্রণা
তুমি যা দেখো না, শিরীষকুসুম দেখে
—ইশকুলের অনুষ্ঠানে চ্যাপলিনের একক সংগীত।
কবি পরিচিতি
জন্ম: চট্টগ্রাম
পড়াশোনা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক
পেশা : স্পোর্টস জার্নালিস্ট
বই:
সূর্যাস্তগামী মাছ (কবিতা)
ব্রায়ান অ্যাডামস ও মারমেইড বিষ্যুদবার (কবিতা)
শেফালি কি জানে (মেটাফিকশন)
দ্য রেইনি সিজন (কবিতা)
ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস (কবিতা)
প্রিয় দাঁতব্যথা (কবিতা)
বিষাদের মা কান্তারা (মেটাফিকশন)
সন্তান প্রসবকালীন গান (কবিতা)
সন্ধ্যায় ভুল পথে আহির ভৈরব (নভেলা)
স্যাডনেস উইল লাস্ট ফরএভার (কবিতা)
soyeb69@yahoo.com