১.
ঈষৎ নদীর ঢেউ কেঁপে কেঁপে ওঠে
বাতাসের সাথে বাজে বহু কণ্ঠস্বর
নদীটি নারীর মতো ঘরের চৌকাঠে—
ফিরে ফিরে আসে—খুঁজে দ্বিধার ঈশ্বর
দ্বিধা কি কেবল নাম? না কি চিরন্তন—
মানুষের পরিচয়ে বসে থাকে ঘরে ?
কেবলই খুঁজে মরা আকুল যখন
ইট-কাঠ-লোকালয়ে মেঘের ওপারে
সে যে এক কালমতি, ঠোঁট-অশরীরী
বহু বিভক্তির গান গেয়ে ওঠে যেন
কৈশোর ব্যাকুল মন স্বপ্নে-কোজাগরী
বহু প্রশ্ন, ব্যকুলতা চিনছে এখনো
মানুষ তো নদী এক ব্যথা থেকে তৈরি—
সকলে পুরনো হয়— হয় না তো পূর্ণ
২.
মাংসল শরীরের অতি দৃশ্যলোকে
সকল বিদায়ী গান মুদ্রা পিপাসায়
রেখাচিত্র মুছে গেলে আততায়ী চোখে
ঘনঘোর রাত্রি এসে, সহসা দাঁড়ায়
দুপুরে সে রোদ ছিলো হিংসা-থালাতে
নির্মেদ মাংসখণ্ডে, বিপরীত গন্ধে
ভুলে যাওয়া রাতের অলস স্মৃতিতে—
মাঝে মাঝে মনে পড়ে, তৃষ্ণাভূক শব্দে
যেভাবে গভীর ঘ্রাণে শব্দহীনতায়
অলস দুপুর কেটে দ্বিধার পাহাড়ে
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মুখ অবাক তৃষ্ণায়
কেউ সাজে অবতার ঠাঁটের বাজারে
মৃতচোখ মানুষেরা হেঁটে চলে যায়
কারো তবে ঘর নেই, সচিত্র দুপুরে
৩.
খোয়া বিছানো রাস্তায় চিহ্ন মুছে গ্যাছে
উদ্বাস্তু বিকেল ছেড়ে দেন-দরবার
কিঙবা নিত্য পাতার সকলে ছেড়েছে
যারা দিচ্ছে হাঁকডাক ব্যর্থ কবিতার
মুখগুলো শুধু দ্যাখি নিশ্চুপ সময়
দিবসের গ্লানি থেকে কল্পনার জল
গোপনে বেহালা বাজে তৃষ্ণা নিরুপায়
ব্যর্থ বাক্যালাপে হয়, অদল-বদল
অথবা শূন্যের দিন নদী করি পান
ক্ষুধা ও মন্দায় মাতি যতটুকু পারি
আমি তো ব্যাপারী নই মাংস দোকান
যতটুকু আস্থা রাখি প্রশ্ন রাখি জারি
এইসব কথা বলি অধিবিদ্যা ঘ্রাণ
অভেদ্য নজর রাখি নিপুণ আর্চারি
৪.
এসব স্বপ্নের দিন ক্ষুধা-তৃষ্ণা-রতি
গোরস্থানে বেজে ওঠে আচানক গান
কোথাও বাজছে দূরে নিয়ত আরতি
শব্দভূক জেগে বলে—মূর্খের সন্ধান—
পেতে পারো লোকালয়ে বহুল অভ্যাসে
চির দাসত্ব কলায়-চিন্তা দীনতায়
মরে যে বাঁচতে চায় কোন কায়-ক্লেশে
মঞ্চনাটকে এরাই বীরের অধ্যায়
ভীষণ আঁধার তাই শনিগৃহে বাস
দীঘল ছায়ারা আজ দাঁড়িয়ে এখানে
দূরে গ্রহতরী এক আলোর আভাস
মুছে যায় ধীরে ধীরে নক্ষত্র উজানে
মানুষ-মানুষ খেলা অচল সার্কাস—
বন্ধ হোক নীরবতা—শিকার সন্ধানে
৫.
মানুষ ফিরবে ঘরে—আয়ুর সমান
শোক ও সম্পদ নিয়ে চিরন্তন হাতে
ভাঙা আলস্য রেখায় মৃতদের গান
ভেসে আসে লোকালয়ে আশাবরী রাতে
প্রেমের মতোন আসে দেহের গভীরে
যেন জীবাশ্ম শরীরে মায়া লেগে আছে
ওরা দলে গান গায় মুগ্ধ চরাচরে
বিষাদের মানচিত্র যখন ছিঁড়েছে
এসো দ্বিধাজড় গান-ভূবন ঈশ্বর
মানুষের নাম থেকে উড়ে যাও চিল
মৃত নদীদের কাছে করো হাত জোড়
পুরাকাল মুছে দাও আঁকো চিহ্ন নীল
যেন জল দ্যাখে থামে—বলে পরস্পর
এইখানে থেমে যাক সকল অমিল
সৈয়দ সাখাওয়াৎ
জন্ম : ৮ আগস্ট, ১৯৭৮, চট্টগ্রাম।
ইমেইল : smdnur@yahoo.com
প্রকাশিত কবিতার বই :
খণ্ড খণ্ড রাত্রির আলাপ [২০১৩, প্রকাশক: কাঠপেন্সিল]
পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে [২০১৭, প্রকাশক: বাঙ্ময় প্রকাশনা]