১.
তোমাকে ভাবতে গিয়ে দেখি কোনোখানে অবসর
বলে কিছু নাই, খালি প্রতিদিন সূর্যের সময়
এসে ক্ষীণ বারান্দায় গড়ে তোলে অমৃত-বলয়
দূরে, চিতা নিভে যায় তা-ও নাভি অনন্ত দোসর—
আগুন উড়ছে যেন ঝাঁক ঝাঁক ফ্লেমিঙ্গোর মেঘ—
এখানে বেলের শব্দে সুমসাম ভিজছে দুপুর
আমরা মাড়াতে পারি ছায়া, নিঃসঙ্গতা কিছুদূর
আসলে ফেরে না কেউ, ফিরে আসে নিহিত আবেগ—
বহুকাল বৃষ্টিহীন এই মাটি অকর্ষিত, খাঁখাঁ
আত্মাও জড়িয়ে আছে কুকুরের বিষণ্ন লালায়
সাপিনী সবুজ তার চেরা জিভ এ উপত্যকায়
বাড়িয়ে দিয়েছে যেন থরথর কাঁপছে বিশাখা—
তোমাকে ভাবার এই অবসরহীন পরিখায়
কারা যেন ঘষে দেয় মহাকাল শিরিসে-রেঁদায়—
২.
মানুষের অপমান আগের চাইতে ভালো লাগে—
তারপর, বাতাসের দিকে চলে গেলে মনে হয়
কোথাও একটা হাঁস বৃষ্টিতে ভিজছে এ সময়
কাগনার ফুল ভিজে যাচ্ছে সন্ধ্যা নামবার আগে—
নিমের ভূ-পথ ধরে কোনোদিন বাড়ি ফেরে সে-ও
অশোক-চাঁদের বনে হারিয়েছে তার ছোট বোন
পুঁইয়ের লতার নিচে একাকিনী ভিজছে শাওন
সমুদ্র বেদনা নিয়ে ভেসে গেছে অনন্ত সন্দেহ—
এখানে সুপ্তির কাল—যত প্রেম, নীল নীল হাঁস
সময়ের অক্ষ ধরে উড়ে গেছে আশিমুল রোদে
সেখানে মানুষ নাই, নিহিলিজমের ফাঁকা বোধে
চলে যাওয়া নাই অন্য কোনো স্থানে—যেন সে জুডাস
রাতের মন্দিরে একা সুইসাইডের পাশে জাগে—
মানুষের অপমান আগের চাইতে ভালো লাগে—
৩.
তোমার মিনারে মেঘ, আমাদের একলা শাওন
ভিজতেছে লেবুগাছে—বেজে যাচ্ছে পুরনো রেডিয়ো
না দেখা মাঠের পর এইবার ঠিকানাটা দিয়ো
অনেক বৃষ্টির শেষে নিভে গেছে যে রেল-স্টেশন—
বিস্কুটের ঠান্ডা ঘ্রাণ গায়ে নিয়ে যুবতীর বুকে
সুগোল রঙের হাঁস উড়ে গেছে মাঘের আলোয়
সন্ধ্যা নামবার আগে বল ধুয়ে শিশুরা ঘুমোয়
যেখানে মেয়েরা ভালো বেসেছিল তারার অশ্রুকে—
যদি একবার বলি অনন্তর ভালোবাসারাশি
কিছুই থাকে না—মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ যেইভাবে
অনেক কালের থেকে উড়ে আসা হাওয়ার জবাবে
ম্লান থেকে ম্লানতর হয়ে ছিঁড়ে যায়, ভাঙে বাঁশি—
নতুন ব্যথার মূলে যেভাবে পরেছো নাকফুল—
মৃত্যুর অদূরে একা অনন্তর ফুটছে জারুল
৪.
‘সমস্ত ফুলের মধ্যে কূট গন্ধ থাকে—‘এতসব
বুঝে নিতে আমাদের চলে গেল পাথরের কাল—
বৃষ্টির তুমুল দিনে রক্তে রক্তে শিলাগুল্মজাল
অনেক জন্মালো মেঘে—অর্থহীন বিষণ্ন প্রসব—
ভালোবাসা হলো, প্রেম—ইয়াকুব ফিরে পেল চোখ
ঝিনাই নদীর কূলে পচে হাওয়া, তুমিও নিশ্চুপ
এমন, শাওন রাতে কোথাও ঝরছে অপরূপ
শিশুর কাঁথার ওম—যায় দিন, ঘুরছে গোলক—
স্তব্ধ মাঠে, শূন্যতায় ভিজে যাও পরাগত তুমি
নোলক লুকিয়ে রাখে যুবতী যেমন করে একা
লেবুর আঘ্রাণ কেটে দেখেছিল যেভাবে জুলেখা
ডানায় কাঁপছে রোদে সেইভাবে দূর জন্মভূমি—!
যদি তুমি নেমে আসো, নদীর উরোত ধরে ঠাঁয়
ঘুমন্ত এস্রাজ বাজে অনাথ কাঠের কুয়াশায়
৫.
আকাশে পচছে জুই ফুল, দেখেছিল তথাগত—
কোথাও বৃষ্টির নিচে শূন্য মাঠ, মমতার ঘ্রাণ
তুমিও খোলো নি তাও কল্পতরু, ঊষার বাগান
এমন মেঘের দিনে ঘাই মারে পূরবীর ক্ষত—
কে ছিল প্রেমের পাশে, চলে গেছে নিয়ে বীতরাগ
ফুলের নির্মাণ থেকে বুঝে ছিল বাগানের লাভ
উড়ছে ব্রিজের শেষে ফাঁকা কারো চিঠির জবাব
ভুল প্রেমে চিরকাল যশোধরা ছুঁয়েছে পরাগ—
বাতাসে পাশার চাল, মেঘে মেঘে ফুটেছে বিজুরি
অপরাহ্ণে পাতা ঝরে নাসারা মাসের এই দিনে
গমের পাতারা নড়ে সিনেমার দূরে, শেষ সিনে
প্রথম ঋতুর নিচে কাঁপে যেন ভয়ার্ত কিশোরী
আমরা শাফল শুধু ঝাঁক ঝাঁক নিখিল তাসের
ভালগার হলেও বলি অহেতুক ভালোবাসো ফের

জন্ম : ১৯ আগস্ট, ১৯৮৯; বগুড়া।
শিক্ষা : পুলিশ লাইন্স হাইস্কুল, বগুড়া। সরকারী আজিজুল হক কলেজ; বগুড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত বই :
ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে [কবিতা; চৈতন্য, ২০১৬] ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে [ভারতীয় সংস্করণ, বৈভাষিক, ২০১৮]; মীনগন্ধের তারা [কবিতা; জেব্রাক্রসিং, ২০১৮]; আনোখা নদী [কবিতা; তবুও প্রয়াস, কলকাতা, ২০১৮]; এমন ঘনঘোর ফ্যাসিবাদে [কবিতা; ঢাকাপ্রকাশ, ২০১৮];
মাধুডাঙাতীরে [কবিতা; ঐতিহ্য, ২০২০]
ই-মেইল : hrobayet2676@gmail.com