সাইন থিটা
সমস্ত মিথ্যার উল্কাধ্বনি থেকে
তোমাকে বার করে আনি, তুমিও কোন বনমোরগের কুঠুরিতে ঘর করতে গেলে!
যে কিনা আনাজের বন চুরি করতে গিয়ে তোমাকে খুঁইয়ে ফেলে
এবং যখন—তুমি তাকে খুঁজে বের করে ফেলো
সে বলতে চায়
তোমায় আগেকার কোন শ্বেত বনমুরগীর কথা
যে কিনা তারই শরীরের পশমের অধিক তাকে ভালোবাসে
যেন তুমি কোন ওজন-ই রাখো না
যেন তুমি সিলভিয়া প্লাথ মৃত্যু তরিকা খুঁজে নাও
দাঁড়িও না, ক্যানো এলে?
আর এতেই মান্টোর গল্পের ট্রাজেডির মতো
তুমি ধ্বসে ভেঙে গেলে
সেদিন শুনলাম না খেয়ে-খেয়ে এতোটাই শুকিয়েছো
গ্রামের আট-দশটা মেয়ের চিনতে চোখ আটকাচ্ছে
আমি অবশ্য তোমার ছায়াও চিনতে পারি
এবং দীর্ঘ পয়তাল্লিশ ঘণ্টা পূর্ণানশনের পর—মায়েরে তোমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে
তোমার ভাইদের রাজী করায়ে,
আজ তিনদিন হলো তোমাকে আমার কবুতরের মতো ছোট খুপরিতে
পালকি করে নিয়ে এসেছি
আর আজ এই প্রথম বনপাপড়ির মতো তুমি যখন চোখ তুলে আমার দিকে তাকালে আমার মনে হলো তুমি সে-ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে যার পিছনে ছুটে দৌড়াতাম।
ইল্যুশন
টপাটপ তার মুখের মধ্যে ঢুকে গেলো ভেড়ার পাল, এরকম দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি
শুধু জিরাফের গলা ছোট হয়ে আসতে দেখেছিলাম।
কুয়োর মধ্যে ডুবে থাকলে ভাবি সমুদ্র দেখার স্বাদ হয় জিওল
অবশ্য, এই অতিসম্ভাবনীয় দৃশ্যে জাদু প্রবঞ্চনা
মুগ্ধ করে রেখেছে—কাল তারই একটি জলধারণা
ঝাঁপি খুলে দিয়েছে, কিভাবে
প্রপঞ্চ এসে দেখিয়ে দিতে পারে গাছে ঢুকে ডুবে মরা—তোমার।
ফায়ারফ্লাই
যেভাবে মানুষ দেখে,
তারাও কি দেখে সেভাবে? খুনিরা?
এই যে কাউকে মেরে ফেলে যাচ্ছে তারা
কুচকুচে রাতের ভিতর আমি দেখছি
সমুদ্রকে যেভাবে মানুষ দেখে,
তারাও কি দেখছে?
কুচকুচে রাতের নির্জন রাস্তায়
ছুরি মেরে ফেলে যাওয়া লাশের পাশে
ভয়ে শীতে আধোমরা আমি উড়ছি,
অন্ধকারের বিপরীতে
—জ্বলে উঠা প্রথম মহাজাগতিক প্রাণ।
বুড়ো আঙুল
তীব্র হাঁটাহাটির ভেতর
আমাদের সেলাই করা রাত কেটে যাচ্ছে,
আমরা খাচ্ছি রাতের সুরমা—ঝালকারি।
বানান রীতিতে মেয়ের ফ্রক
শুকানো হয়ে গেছে তারায়, ধবধবে সাদা
পড়ানো হবে এইবার
এইবার স্পার্টার রাজকন্যাকে
বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমরা
বলে উঠবো
তুমি সুন্দর তবে আমাদের মেয়ের চাইতে নও।
আত্মীয়
রাত এমনও হয়
যেখানে কয়েকটি ঘোড়া, হাতি
পুরোদমে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়।
শিলাবৃষ্টি
আর
কচ্ছপ হাঁটে তাতে
দৌড়ায়
দৌড়ায়
তছনছ করে ফেলে ফসিল জমিন।
প্রায়ই আসে—রাত এমন
আমার ঘরে
দীর্ঘ-দীর্ঘ,
শিলাবৃষ্টি আর কচ্ছপ
হাঁটে তাতে
আমি মেঝেতে বসাইয়ে বলি—সোহাগে
এসেছ, তাড়া ফেলে এইবার অনুরোধ, থেকো কিছুদিন।
জানালা
জানালার স্ক্যাচ নিয়ে ভাবি জানালা আকাশের পথ-
হেঁটে যেতে হয় জলে ভর দিয়ে, সেখানে
প্রতীক্ষায় বসে আছে গাঢ় নীল দোকানী পোস্টকার্ড বিক্রি করে হাওয়ায়
লাল, নীল, সবুজ আর নিখুঁত উচ্চাকাঙ্খা ঝুলানো থাকে
কিনে নিতে পারে মাছ, মাছি—যে কেউ
কুয়াশা অতীবসুলভ
চড়া দামে মেঘ বিক্রি হয়—
তবে চোখ দিয়ে দিলে নিতান্তই ডালভাত কিনে নেওয়ার মতো গাছগাছালি, ঝড়-তুফান, মেঘ-কুয়াশা কিনে নেওয়া যায়।
ঘুম
…
অনেক খেলার শেষে
শিশুদের ঘুম এসে হাজির, ঘুম ভাসমান টানা পুকুরের জল ছাড়া একাকী এসেছে
দিনমান কাতরানো গোরুর বাছুর ভাবছে
কিভাবে এই ঘুম খাদভরে নেওয়া যায়…হাত দিয়ে তুলে
যেই না হাত দিয়ে নিতে হাত গুছায়
বাছুরকে সহজ ভেবে শিশুরা তাকে জাগিয়ে তোলে
তার ভাবনায় গুড় ভেঙে যায়—
এরকম নরম খেলায় সাইবেরিয়ান বন জেগে উঠে
প্রায় বিকেলে আমার উঠোনেও…এমন জাগে
আমি তো দেখি না
তবু অনেক খেলার শেষে
অনেক খেলার শেষে কুঁজো হয়ে শিশুদের সব ঘুম নিয়ে ফেলি
মায়েরা হ্যাপিলেস তারা জাগে কেননা শিশুরা জাগে
আর আমি বাছুরেরে কিছু ঘুম দেই
হরিণেরে কিছু…
বাঘেরেও দেই যেন সে ঘুমে থাকা হরিণেরে খেয়ে না ফেলে।