মাহীন হকের কবিতাগুচ্ছ

ষ্ণ

ভাবি লিখে রাখি এইসব নিরুত্তাপ দিন। আমাদের বসত এক প্রকাণ্ড টিকটিকির চামড়ার ভেতরে, বাতাসে বয়ে যায় তার ঠাণ্ডা রক্তপ্রবাহ। ভাবি লিখে রাখি এইসব নিরুত্তাপ দিন, যখন খাতায় ‘উষ্ণতা’ লিখলেও ষ্ণ তার পাখায় ভর ক’রে উড়ে যায় বসন্তের দেশে। শুধু একটা উদ্যত ‘উ’ ও একটি পাণিগ্রাহী ‘তা’ তাদের মধ্যকার সফেদ শূন্যতা নিয়ে পড়ে থাকে তুষারের মত করুণ কাগজে।

বোবাগাছ

কইলো বিজ্ঞ শ্রোতা, “এই গানে নিশ্চয়ই আপনি
বলতে চেয়েছেন সেই স্বাপ্নিক
যে স্বপ্নেও রঙ দ্যাখে, ঘ্রাণ পায়,
তার কথা?” কবিবর ফাপরে, নিরুপায়
মৃদুমৃদু মাথা নাড়ে:
“হতে পারে, হতে পারে, তবে এও হতে পারে,
মানে যা হয়েছে আরকি,
আগুনের চোখ নিয়ে কঠিন ইয়ার্কি
আর
কোকিলের বুকের ওপর দলবদ্ধ আহার।”

বাতাসের লাই পেয়ে নিজস্ব যে ট্যুনে
বিড়বিড় করে গাছ; তাই শুনে
কইলো বিজ্ঞ শ্রোতা:
“নির্ঘাত এ সুর
অলস ডিভানে বসে ক্লান্ত দুপুর
আর গোরখোদকের বাঁশি; এই দিয়ে বোনা।”
বোবাগাছ, অসহায়, কিছুই বললো না।

এ জার্নি বাই বাস

জানি এরকম দুলতে আপনার আর ভালো লাগে না।
পেন্ডুলামের মত: পা নেই, তাল নেই, অধীনে
পাতাল নেই। শুধু আছে উপরিসুতায় বাঁধা অনিচ্ছা-নাচন,
কারো চোখের সম্মুখে নিজেই সম্মোহিত হয়ে থাকা।
যেভাবে পেটের ভেতর ইঁদুর, মগজে কয়েলের মারপ্যাঁচ
এবং সমস্তদিনের রথচালনার শেষে সন্ধ্যা। দেখুন মড়কের মত
ছড়ায় অন্ধকার, আর আপনি বাসের হাতল ধরে এখনও
দুলছেন, শুধু দুলছেন। জানি এরকম দুলতে আপনার
আর ভালো লাগে না।

বিভ্রম

যেজন শৈশবে
আপন কৌতুহলবশে
হা করে দেখেছিল আয়নার গহীনে, আর
নিজের দুলন্ত আলজিভ দেখে ভেবেছিল পেন্ডুলাম।
ভেবেছিল,
সে বুঝি হয়ে গেছে গ্র্যান্ডফাদার ক্লক।
এবং মুহূর্তের মধ্যে তার বয়স বেড়ে গেল বহুযুগ।
তারপর সে খুঁজে নিল ঘরের তীক্ষ্ণতম কোণা,
যেখানে দাঁড়িয়ে সে শুধু সময় বলে যেত।
বলতো, “এখন সময় ঘর ছাড়ার, এখন সময়
দীর্ঘ শীতের প্রস্তুতির,
                এখন সময় দুঃসময়…”

রাইটার্স ব্লক

শুনি কার কণ্ঠের ঘুঘু উড়ে গেলো
দ্রুতাগত সন্ধ্যার করাল সংকেতে;
কিছু সফেদ পালক তার মেঘবৎ
ফেলে গেল চৈত্রের হলুদ গমক্ষেতে।

কেন তবু হাতা গুটে অবিরত সে
আয়নার নিয়তিরে এইরূপ মক করে?
কেন রক্তের পপিফুল বৃষ্টিতে ধুয়ে
বারবার হাত রাখে জ্বলন্ত অক্ষরে?

রাইটার্স ব্লক-২

কী নিপুণ স্লাইস করে কাটা চাঁদ,
যেন কোনো দেবতার আধবোজা চোখ!
এমনও রাত প্রভু নিস্ফলা যাবে?
এইদিকে এক পথ চলে গেছে ডালিয়ার বনে,
ওইদিকে এক পথ চলে যাবে সাতরঙা ঝিলে।
আর আমি একা এই পথের ক্লিভেজে
দাঁড়ায়ে রবো, এখন যেমন আছি
আজীবন বোকাচোদা।

আমার প্রেয়সী

(উইলিয়াম ইয়েটসের কবিতা ও বব ডিলানের গানের কিছু পঙক্তি হতে অনুপ্রাণিত)

 

আমার প্রেয়সী নরম কাদার উপর
আঁচল তুলে নগ্নপায়ে হাঁটে।
আমার প্রেয়সী প্রেমের মতন সহজ,
যেমন সহজে শ্যাওলা জমে ঘাটে।

বাতাস যখন হায়েনার মত কাঁদে,
রাত্রির হাওয়ায় জমাট বৃষ্টি নামে,
আমার প্রেয়সী এমন ঝড়ের রাতে
ভাঙ্গা ডানায় আমার দুয়ারে থামে।


মাহীন হক

কলেজপড়ুয়া, মিরপুরনিবাসী, অনুবাদক, লেখক।
ভালোলাগে: সঙ্গীত, হিউমর, আর ভাষা।
অনুদিত গ্রন্থ: আর্টিস্টরা কি করে (কার্ট ভনেগাট), ট্রেডিশন এন্ড দি ইন্ডিভিজুয়াল টেলেন্ট (টি.এস. এলিয়ট), সালমান রুশদির সাক্ষাৎকার, কুয়েন্টিন টারান্টিনোর সাক্ষাৎকার, ওং কার ওয়াইয়ের সাক্ষাৎকার, স্টিভ জবসের ভাষণ। সবগুলা বইয়ের প্রকাশক বাছবিচার।

শেয়ার