পাণ্ডুলিপি থেকে : হাইপোথিসিস ভাঙার আওয়াজ | কাউসার সাকী

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে কাউসার সাকী-র কবিতাগ্রন্থ হাইপোথিসিস ভাঙার আওয়াজ। প্রচ্ছদ করেছেন কবি নিজেই। পাওয়া যাবে ঢাকা বইমেলা, ঐতিহ্য (২৮ নং প্যাভিলিয়নে)

ব্ল্যাকআউটে বয়স লুকাতে গিয়ে

পায়েরা বয়স লিখে লিখে ছিঁড়ে ফেলেছে যে পথ, উপেক্ষায় ব্ল্যাকআউটে তাতে নেমে গেলাম আজ। বহুদিন হয় হ্যামেলিন আমাদের সন্তানদের নিয়ে গেছে। হ্যাংআউটবর্জিত কফিশপে বসা পা দোলানো শূন্যতার দিকে তাকিয়ে শোকের বদলে জেগে উঠছে কোমল পানীয়ের তৃষ্ণা। দূরগামী গাড়ির হেডলাইটে মুখ আর অন্ধকারের মৌন মিশ্রণকে পরস্পরের সম্মতি ভেবে এগোতে দেখি, কফিশপ গ্রেইভইয়ার্ডের দিকে রওনা হয়ে গেছে। ত্রস্ত যুগল বুঝে নিই, টিথোনাসের নশ্বর শরীরে অমরত্ব প্রয়োগের মতো ভয়ংকর ভুলে জড়িয়েছি আমরাও; কঙ্কালসার পা লু্কোতে তারপর দ্রুত মলের দিকে দৌড়াই—যদিও জানি, দোকানে তোমার আমার মাপে কোনো জুতো নেই।

মিস্ট্রি

ফায়ার সার্ভিসের বাস নদীর দিকে গেলে
জেলেরা সমস্বরে হেসে উঠল। ধীবরীরা,
যারা প্রিয়তমের কাছে মাছের নামে ওম
নিতে গিয়েছিল, সন্দেহ ও শঙ্কার চোখে
তাকাল। এই নির্মল দিনে নদীতে আগুন
কোথায় এ কেবল তাদেরই বোধের গম্য
ছিল এ যাবৎ। ছোকরার দল জানে নদী।
আগুন পানি বা ফায়ার ফাইটার তাদের
অনুষঙ্গে না থাকায় তারা শিসে প্রতি-সাইরেন
তুলে নির্দ্বিধায় নদীতে ঝাঁপাল। আর বিমূঢ়
নারীমুখ থেকে প্রশ্ন তুলে নিয়ে দিগন্ত ছুঁল
জলজ কণ্ঠ, ‘জেলেদের ঝলসানো মুখের
উপর ছায়া ফেলে ফেলে নদীর কাছে কেন
গিয়েছিল অগ্নিনির্বাপক বাস?’

 
নো এক্সিট

পথের গা থেকে দূরত্ব খুলে নিতে নিতে সেই ভূখণ্ডে আসা হল যাকে তোমরা বলো,’নগর’। কাপালিকের ঘোরগ্রস্ত এ আয়তনে কোন অখ্যাত দিনে পিতা আমাকে ফলিয়েছিলেন। রোজনামচা লিখে দেয়া সামান্য(?) কুকুরের অপঘাতে মৃত্যু হলে, সম্রাটকে অভিশাপ দিতে দিতে, না ফেরার প্রত্যয়ে একদিন এ জনপদ ছেড়েছিলাম। তারপর বহুদিন সরাইখানার সস্তা মদের উপর বিশ্বাস মাছি হয়ে ওড়ল। মাছিটাও মারা গেলে আদিম আকাঙ্ক্ষায় আবার অতীতের দিকে ঘুরে গেল মুখ। অতঃপর আজ নগরফটক থেকে যখন সমস্ত দরজাগুলোকে—দেবালয় থেকে ব্রোথেলের— দেয়াল হয়ে যেতে দেখছি, সিসেমের মন্ত্র জানতে পুত্র আমি ঘুরেফিরে খুঁড়তে যাচ্ছি পিতার ইতিহাস।

দেয়াল ও রেণু আপা

শীত এসে চলে যায়, রেণু আপার আচার আর ছাদে চড়ে না। একসময় তার কাচের বয়ামে শুকাতে দেয়া নানান পদের আচার আমাদের যখন তখন ছাদে নিয়ে যেত। বোকাসোকা আপা ভাবত কাকের উপদ্রব। আর বিকালেখেলার মাঠে আমরা তার টক-ঝালের মার্কিং করতাম। আপা সেখানে কখনও খারাপ করত না।বিয়ের পর সেই রেণু আপা আমাদের বিল্ডিং ছেড়ে চলে গেছে। এর বহু বছর পরেও আমাদের স্বপ্নের ভেতর তাকে আচার শুকাতে ছাদে উঠতে দেখেছি। সে আচার চুরি করতে গিয়ে আমরা বারবার বয়াম ভাঙা কাচে পা কেটে ফেলেছি! রক্তাক্ত পায়ে এভাবে একদিন টপকেছি বয়:সন্ধির দেয়াল। দেয়ালের এই পাশে আচার নেই, রেণু আপা নেই। দেয়ালের এই পাশে এখন কেবল ভিনেগার !

সিনেস্থেশিয়া

জলজ উত্তরীয়ের নিচে রেখে এসো বেদনা, এরূপে যেন মীনবংশের কেউ। পাড়ে ছেড়ে আসা পোশাকের চেয়ে ভারী অথচ অদৃশ্য যা সেঁটে ছিল শরীরে তোমার, নামাও। ভাবো, মাথার প্রকোষ্ঠ ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে বাদুড়ের ঝাঁক, পদশব্দ শুনে তারা যেমন প্রাচীন প্রাসাদ ছেড়ে পালায়। প্রক্ষালন শেষ হলে, পাখনা ও লেজ গজানোর আগে আগে, হোমোসেপিয়ান তুমি স্বজাতির কাছে ফিরে যাও। অজ্ঞাতই থাক, তুমি ডাঙায় উঠে এলে সেই প্রাণিহীন জলাধারে কেন তোমারই দৈর্ঘ্যের মৃত এক সাপ ভেসে উঠে।

 

কাউসার সাকী

জন্ম: ১২ অক্টোবর, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর
বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত
ই-মেইল: kawsarsaki25@gmail.com

শেয়ার