অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৫ এ প্রকাশিত হয়েছে কবি দৃষ্টি দিজা-র কবিতাগ্রন্থ ‘বলতে লজ্জা নেই’। প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইটি পাওয়া যাবে চন্দ্রবিন্দু (স্টল ৭০১-৭০২)।
আলো
টর্চ ফেললেই যত্রতত্র ধূলা দেখা যাচ্ছে
কাছে দূরে
নিজে পরে
সামার বারো মাস
কাল ভ্যাপসা
আজ তপ্ত রুক্ষ
কাল ভ্যাপসা
বৃষ্টি হওয়ার স্বপ্ন দেখায় পৃথিবী।
গরম অসহনীয় হয়ে উঠছে আজকাল
স্পষ্ট করে তুলছে যত অসহিষ্ণুতা
সুরুক্ করে
ফুরুৎ করে
চিবরে নিয়েছি যত প্রাণরস
খোলের মতো আশেপাশে পড়ে আছে সে লাশ
গরমে দেখছি ভুল
মরিবার তরে এই খেলারামের গজাচ্ছে পাখা
টর্চ ফেললেই এবার, হয়তো দেখা যাবে
নিজেরই রসশূন্য সাদা লাশ
পড়ে আছে ফিরে পাশ
আকাশে এই পূর্ণমাসী চাঁদ
মরিবার তবু হয়নি এখনো সাধ
মরিবার কেন হয়নি রে আজও সাধ
শেষ রাত্র
চলো পাঞ্জেরি
উঠে পড়
রাত এখনো চারটা
চলো, সবাই উঠার আগে
চলো, এই শহরতলীর সকল লোকে জেনে ফেলল
আমার দুঃখ একজন দুইজন তিনজন করে চারপাশে পাড়া পৌরসভায় সংক্রমিত হতে চলল
আমি আর মা বুঝতে পারছি না কে কাকে কষ্টে রেখেছি
বেশি
আমাদের একে অপরের ঘুমের সময় নিউরোলজি খুলে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে আমরা একে অপরে কিংবা উভয়ে আলাদা জগতে মূলত পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আমরা একে অপরের ঘুমের কালে ভর্ৎসনা করি মর মর মরো।
পেরেন্টের মাথায় কুলোয় না নিজের ঔরসজাত কীকরে আপন হলে না
চলো
রাত পোহানোর আগে
গায়গতরে মুড়িঘণ্টর ক্ষীরুর ন্যায় সুবাস
কিংবা কুবাস
জ্বর এসেছে
বাইরে সন্ধ্যা হতেই হিম পড়েছিল আজ
এমন কঠোর কুয়াশায় মা পেঁয়াজপাতা ধনেপাতা বাইরে রাখেন
কাল যেন, ওহ গুডনেস, টাটকা রোদ ওঠে
আমিও উঠে পড়ব সাথে।
শ্যাম্পু করব
শশী ডাক্তারের ন্যায় ঐ ব্যাগ গুছানো শুরু করতে হবে যথারীতি।
চলো।
এখন এই জ্বর গায়ে কিংবা ভাতে মুখে না হলেও কাল কিংবা পরশু নিশ্চয়ই।
চলো, পালাবই।
তার আগে নিয়ে চলেছি অনন্ত সিয়েস্তা।
সুন্দর অনুপস্থিতি
বাড়িটার আপন কষা হাগুর মতো ভগন্দরে আটকে আছি।
মনে হয় বাড়িটি থেকে চলে গেলে নিষ্প্রাণ বাড়ি আবার প্রাণ ফিরে পাবে। আবার ষাঁড়ের লড়াই হবে। নিশ্চুপ বিশাল প্রাচীর ভেঙে পড়বে। সবাই শব্দ করে চিবিয়ে খাবে খাবার।
পুরুষেরা নারীর ছোটবড় স্তন, ঘোমটা বিহীন কোমড়ের দিকে সরাসরি তাকাবে। নারীরা আরো বুক উঁচিয়ে পেম্পার করবে মামা কাকা বেয়াই গোষ্ঠীকে।
মনে হয় আমি চলে গেলে মরিচীকা যাবে, সজীব হবে আস-সাহারা।
মনে হয় আমি চলে গেলে কবিতা লেখা শুরু করবে তুমি আবার।
ভাইটাল ভয়
এক প্রকার ভয়
নানান প্রকার ভয়
মা সজাগ হলে,
মা নাক ডাকলে,
বাবা হাই তুললে,
গলিতে হাঁটার শব্দ হলে,
বাজারে মারামারি হলে,
কুয়াশায় নিস্তব্ধ হাট
ঘুম না এলে,
ঘুমিয়ে গেলে,
দরজা খোলার ক্যাঁচ শব্দে কিংবা বন্ধের।
মানুষ সুখী হলে
মানুষ দুখী হলে
কপাল কুঁচকালে,
খুব আনন্দ হলে,
উঠানে হাঁটলে,
আর ঘরে হাঁটলে,
পাকের ঘরে,
আমেরিকায়
ইউরোপে,
পড়ার সময়
করার সময়-
সময় নষ্ট করার সময়
কেউ এলে
কেউ না এলে
কেউ নাম ধরে সরগরম করলে
কেউ না করলে
সরগরম না করলে
জন্মদিনে,
কেক আনলে- জন্মদিনে
জন্মদিনে- কেক না আনলে
পা নাড়াতে থাকলে
না নাড়াতে থাকলে
আঙুল না নাড়াতে থাকলে
আঙ্গুল নড়লে,
দাঁত কিজমিজ
মাথা ঝিম করলে
শান্ত থাকলে
অশান্তি হলে
গড়িমসি করলে
আদাজল খেয়ে
গরম, আদাজল খেয়ে
অতপরঃ রক্ত দেখে থাকলে
রক্ত না দেখে থাকলে-
একমাস রক্ত না দেখে থাকলে
মাথার জরায়
কিংবা শূন্য মস্তকে
আয়নায় শূন্য মস্তকে
উদ্বত কিংবা নত ভঙিতে,
মরে যেতে
আর বেঁচে থাকায়,
ভয় হয়।
স্ক্রোল
এসেছ যখন কিছু দিয়ে যাও
ঋত্বিক ঘটক বললেন নার্গিস কিংবা সুচিত্রা সেনকে
লোকটা আর্টিস্ট কীনা
তাঁরা সানন্দে রাজি হলো
একজনে টাকা দিলে একজনে অভিনয়
বরং তুমি স্ক্রোল করে যাও
কী আছে তোমার?
পিচ গলা রোদে টাকা তুলেছিলে কখনো
নাকি কোনো যুদ্ধ নিয়ে বানিয়েছ ডকুমেন্টারি?
তবু
স্ক্রোল করে যাও
যতক্ষণ পর্যন্ত না
আনটিল
আনলেস
বানিজ্যিক কেউ
সাহায্যে এগিয়ে আসে তোমার
আর্টিস্ট কীনা
তুমি
স্ক্রোল করে যাও
করে যাও
মাথা ঝিমঝিম করুক
চোখে হোক ব্যথা
হাত পা ছুঁড়তে হোক ইচ্ছা
তালাবদ্ধ জগতে দাঁড়িয়ে
যেমন বিছানায় বসে
বালিশে ঢিকা দিয়ে
পেছন নতুবা সামন
পা ঝি ঝি ধরে যাক
তুমি স্ক্রোল করো
ভেতরে তোমার যে
ভয়
আতঙ্ক
দম্ভ
একদিন সব মরে যাবে
যেদিন মরবে তুমি
যেদিন তুমি মরো
আনটিল
আনলেস
স্ক্রোল করো
স্ক্রোল করে যাও তুমি
যেন
স্ক্রোলই কেবল করে যেতে পারো
বিকল
দৃষ্টি দিজা
কবি, কথাসাহিত্যিক
প্রকাশিত গ্রন্থ : বিলুপ্তি ফেরাতে আসা রানী মাছ; বলতে লজ্জা নেই।