জয় বলতেছিলো কবিতার পেছনের গল্পের কথা লিখতে, বা বই প্রকাশের। সমস্যা হইলো, আমার তেমন কোন গল্প নাই। অনেক ছোট থাকতে বন্ধুদের ইম্প্রেস করতে বা তখন যে মেয়েটারে ভালো লাগত তার জন্য গদগদ হয়ে অনেক রাবিশ লেখা হইত। সেইসব রাবিশের একটা ডায়েরি, অর্চি আমারে সেদিন খুঁইজাও দিলো।এইসব ক্র্যাপ লিখছি দেখে নিজেরে নিয়া একচোট হাসার পরে একটা আত্মোপলব্ধি হইলো। আমি কেন কবিতা লিখি তার ব্যাপারে। কবিতা করাটা, লেখাটা, পড়াটা আমার যাপনের অংশ হয়ে গেছে সামহাউ। মানে এইটাকে আমি মহৎ কিছু ভাবি না আর। কেউ মাটি কাটে, কেউ প্লেন চালায়, আমি চাকরি করি, কবিতাও লিখি, এমনই। আমি খেয়াল করে দেখলাম বাচ্চাকালের সেই লেখাগুলা ভীষণ এক্সপ্রেসিভ। প্রেম, হতাশা, ভালো লাগা সব উপচায়ে পড়তাছে সেখানে।সেখান থেকে এখন আমার যে লেখা সেগুলা উলটা এন্টি এক্সপ্রেশন, তারা যত না কইতে চায়, তার চেয়ে বেশি না কইতে চায়। শব্দের চেয়ে শব্দের ফাঁকে-ফুকেই যেন বেশি কবিতা। এরপরেই তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় বই করা কেন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর আমার কাছে নাই। আমি ধরে নিছি, আমার অনেক কিছু আছে কনফেস করার। কিন্তু সেইটা আউটরাইট সোজাসাপ্টা বলে ফেলার তাগদ আমার নাই, আবার নাই সেইটারে গিলে ফেলার মত সামর্থ্য। এই বই কনফেশন তাই, আবার এই বই কোডেড এন্টি এক্সপ্রেশনও। এমনই আরকি…
-ফয়সাল আদনান
এবার বইমেলায় প্রকাশ হতে যাচ্ছে ফয়সাল আদনানের প্রথম কবিতার বই ‘চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে‘; প্রকাশক উলুখড়। ফয়সালকে অভিনন্দন। শিরিষের ডালপালা পাঠকদের জন্য পাণ্ডলিপি থেকে পাঁচটি কবিতা এখানে প্র্রকাশ করা হলো। আশা করি, কবিতাগুলো ফয়সালের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগাবে।
ফোরটিন্থ ফ্লোর
সে নিয়ে এলো মিউজিক
যন্ত্র এলিভেটরে
আর শ্যানেল সুবাসে
গ্যালারিতে তুমুল বৃষ্টি
নত হলো পৃথিবী, তার নখের ডগায়
ফুল ফুটে ফিকে হলো বসন্তের কোলে
ফর টিন থ ফ্লোর…
নোট টু সেলফ
নিজেকে লেখো মাঝে মাঝেই, কারণ বাকিরা কেউ সত্য বলবে না। তোমার ধূসর স্মৃতির নিচে
জমে আছে বাইসনের হাড়, শহরের একমাত্র শেরিফ তুমি, অথচ তোমার হাড়ের দুর্গে নেই
বারুদের দাপট। নিজেকে লেখো মাঝে মাঝে নাইলে কেও মনে করাবে না— একেকবার ড্র’র
সাথে কতজন প্রেমিকা তোমার মরে বেঁচে গেছে। শহরে ওয়াগন ভর্তি হয়ে বিষাদ আসছে, তোমার
বন্ধু আউট ল’টি ধূর্ত চোখে উইঞ্চেস্টার বাগিয়ে বসে আছে— লুট হবে। তুমি একটা ফ্যান্টাসির
মাঝে নিজেকে লিখতে থাকো, নইলে ভুলে যেতে পারো বুর্বনের গন্ধ, এপাচিদের কুড়ালের ধার।
নোট টু সেলফ: শুধু একটা শিষের মত শব্দ যেন প্রার্থনায়… – শহরের শেষ শেরিফ।
কর্নেলকে লেখা চিঠি
তোমার নি:সঙ্গতার মাঝে
আমি ডুবে যাচ্ছি কি নীরবে
অথচ গ্যাসোলিনের গন্ধ
ও
গতিদানবের হুংকার
ঝ
রে
পড়ছে খরতাপ-মাঝে
উজাড় হয়ে যাচ্ছে এই মানবঘটিত কল্পবাস্তব
ছি
ট
কে
পড়ছে রক্ত
অন্তর্গত সেই শিকারিই বুঝি সত্য
তামাক ও বারুদের গন্ধ যে পুষে রাখে আঙুলের গাঁটে
রোজকার মত তুমি ঘুমিয়ে পড়
শুধু আর দিনের মত তাড়া নেই কোন
অফুরন্ত সময়ের জন্য
মিশে পড় এই অনন্ত ডেলিরিয়ামে।
ওঁ
ঘোড়াদের হাসিমুখ কেমন হয়? এই প্রশ্ন করে আমি জানতে পারি সহাস্য কোন ঘোড়ার সন্ধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই যুদ্ধের ময়দানে, সাদা ঘোড়া, কি করছ তুমি? গুলি-বোমা না ছুলেও মানুষ যে ছুতে পারে জানোতো, আর একবার ছুলে তোমাকেও হাসতে হবে একশটি বছর। হায় জোভান! দেখ ক্রুশ থেকে উলটে পড়েছেন যীশু, আর আমি পানপাত্রে মুখ চুবিয়ে, ভ্রাতৃহত্যার রক্ত পেয়েছি।
“there is no war until a brother kills a brother”।
সাদা ঘোড়া, তুমি আমায় রহস্যের জাদু বন্দরে নিয়ে চলো, সেখান থেকে শুনেছি ভূমি ও আকাশ নোঙর তুলেছে, এইসব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা রেখে আসি, বৃদ্ধ হবার পূর্বেই আমি বসুন্ধরার কাছে উপগত হতে চাই।
মৃত্যু বিষয়ক
আমার বোন মারা গেছে সবুজ ঘাসের বুকে
তার বুকের উপর চলে গেছে মূঢ় ইস্পাতের ফলা
দূরত্ব-অর্থে ফেলে এসে স্যানাটেরিয়াম
আমি খুন করেছি এক ট্যাক্সি ড্রাইভার
আর তাই – এইভাবে লিখে রাখছি নীরবতা…
কবি পরিচিতি:
ফয়সাল আদনান
জন্মঃ অক্টোবর ৫, ১৯৮৬, চট্রগ্রাম
‘চতুর্থ সেলাইয়ের নিচে’ প্রকাশিতব্য প্রথম বই
faisalrabbi@outlook.com