পাঁচটি কবিতা | কামরুজ্জামান কামু


চলো গাজিপুরে


চলো গাজিপুরে—
খালের পারের শালের পাতাটি
দুলিতেছে মৃদুমন্দ—

খাসের জমির আ’লের উপর
ডাবের খোসাটি পড়িয়া রইল—
কে খাইল ডাব কে খাইল ডাব?
—বাতাস বহিল ছন্দে

বিষয়বুদ্ধি জ্ঞান ও গম্যি—
চারিধারে খালি জমি আর জমি—
ভুঁড়ি চাড়া দিয়া দালাল কহিল

—এ জমি লইব কিনে


ভিটামিন ডি খাই


অফিসের ছাদে উঠে একেলা
ভিটামিন ডি খাই
বিরাট আকাশ দেখি

কা কা করতে করতে
কানের পিছন দিয়ে
কাক উড়ে যায়

আহা কালো পাখি
ভালো—
লাগে না আমার

পাশে ফুল ফুটে আছে লাল
একটু পরে ডার্ক হয়ে
যাবে এ বিকাল

গ্রন্থনাজটিল এই বিকালে বসিয়া
আমি মনে মনে ভাবি—
কাক কেন কা কা করেই
অলওয়েজ ডাকে?

কেন কামরুজ্জামান কামু
পুরা নাম ধ’রে
ডাকে না সে?


এখানে


এখানে আসার ছিল, এসেছি—
যাওয়া লাগে বলে মোরা যাই—

এখানে গগনজোড়া পাখি ছিল

আহা!

এখানে দিগন্ত ছিল বলে
আকাশ ছোঁয়ার তরে কিশোরের
হৃদয়ের ছুটে চলা ছিল—

এখানে তো রক্ত ছিল, ছোরা ছিল
ভাবাবেগ, বুভুক্ষুর কান্না ছিল
চিতার চিৎকার ছিল, কিন্তু—

ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে
লিপস্টিকও ছিল
ডান হাতের সম্পর্ক ছিল বাঁ-হাতের সঙ্গে
ছিল ছিল ছিল শুধু
ছিল তো সকলই, তবু

অশেষ নদীর এই তীরে কেন হায়
মুছে যাওয়া মানুষেরা গান গেয়ে যায়

আহা! ভব যা সংসারও তাই—
নিত্য পারাপার

তুমি কাঁদো আমি কাঁদি
কাঁদে রে নিগার


কুয়াশা সরায়ে


কুয়াশা সরায়ে আমি
নিখিল-হৃদয় পানে ধাই—

সেখানে সে-আদিকালে গীত
দীপ্ত সেই অন্তরাটা হয়তো
শোনা যাবে বলে মনে হয়

বলে মনে হয় যেন গান মানে
পরিযায়ী পাখির হৃদয়
চলন বিলের ধারে দুলছো

বলে মনে হয় ওগো, তারার হৃদয়,
তুমি ঝরিতেছো সর্বত্র সব ঋতু
সব ফুল সকলের তীরে—

তাই তো-এ লতাগাছে কথা বলে
নিচুস্বরে শীতের সকালে—


অঞ্জন Dutt


গেছিলাম তেজগাঁওয়ে
Anjan Dutt in Metropolis
কনসার্টে গান শুনতে সন্ধ্যায়

রঙিন আলোর নিচে
দুই হাত নাচাতে নাচাতে গায় গান

দুই বঙ্গ অঞ্জন Dutt

ঠ্যাং দুটি তদনুবর্তী হয়ে দুলিতেছে
প্রক্ষেপিত বর্ণাঢ্য আলোর নিচে

৭১ বছরের যুবকের শিরায় শিরায়
রক্ত নয়, হুইস্কি নয়, বেলা বোসও নয় এমনকি

হায়, সে যে সারাজীবন একই গান গায়।


কামরুজ্জামান কামু

জন্ম ১৯৭১ সালের ৩১ জানুয়ারি গাইবান্ধার বামনডাঙা ইউনিয়নের রামধন গ্রামে, নানাবাড়িতে। নয় বছর বয়স পর্যন্ত একই গ্রামে দাদাবাড়িতে বেড়ে ওঠেন মায়ের সঙ্গে। এরপর পিতার চাকরিস্থলে গমন এবং স্থানান্তরিত হতে হতে উত্তরবঙ্গে সমতলের জীবনের কলতানে বেড়ে ওঠেন। রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় আসেন জীবিকার প্রয়োজনে। পেশা হিসাবে প্রথমে সাংবাদিকতায়, পরে নানা প্রতিষ্ঠানের অডিও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড-কমিউনিকেশন বিভাগে কাজ করছেন।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ
কবি মুখপত্রহীন, অহেতু গুঞ্জনমালা, মামুজির নৌকায়, তুনির কবিতা, নিগার সুলতানা, চেয়ে আছো, আমি রোহিঙ্গা, আমাকে এবার পিছমোড়া করো, এখানে শিয়ালমুখী ফুল হয়ে ফুটে আছো ও কবিতাসংগ্রহ।

শেয়ার