মেঘ ও বালুচর সিরিজের পাঁচটি কবিতা
১.
মাকড়সার ওই জালের মতো আমিও এক ভাষা খুঁজে ফিরি।
যেনো কিছু গ্রীষ্মের দাবদাহ ধরে রাখা যায়,
হারিয়ে ফেলা কোনো এক ঘুড়িকে যেনো পেতে দেওয়া যায়
হাওয়ার মতো উড়ন্ত ঘূর্ণিপথ।
কোথাও যাই না; এই ঘুমহীন বাঁশবাগানে বসে
আমারও জানতে ইচ্ছে করে- কোথা থেকে ছুটে আসে
এতো অপার নীরবতা!
২.
পাহাড়সমান কাগজের স্তূপ ঘাঁটা হলো;
কোনো কাগজে দস্তখত নেই-
যা নিয়ে দাবি জানাবো কোনো দরোজায়।
শুধু বীজগণিতের জটিল হিসাবের একটি খাতা পাওয়া গেলো তোমার,
অজস্র বিষপিঁপড়ে ঘুরে চলেছে ওর ভিতর।
বীজগণিতের খাতা এখন আমার আকাশ,
বিষপিঁপড়ে এখন আমার কারুকার্যময় নক্ষত্র
৩.
আরো এক বিকেলবেলার কথা বলি।
ক্রমে বালুচরে ফুরিয়ে গেলো আলো।
কোথা থেকে উড়ে এলো কতগুলো যুক্তিতর্ক মৌমাছি।
আমাদের ঘিরে ধরলো।
আমাদের জিহবা ছিড়ে ফেললো কেউ।
কেউ সাড়াশি দিয়ে উপড়ে তুললো দুটি হিম হৃৎপিণ্ড।
কথা-সমুদ্রের ওই ছোটো ছোটো ঢেউ
আমাদের ছেড়ে গিয়ে ভেসে চললো নীরবতার খাদে।
আলো আঁধারির ভিতর দিয়ে আমরা চেয়ে দেখলাম
কীভাবে ডুবে যায় পরিচ্ছন্ন ওই সূর্যালোক।
৪.
হাতকড়া খুলে দাও আমার।
শিয়ালদের কাছ থেকে অনেক নীতিগল্প শোনা হলো।
সব গল্পের মর্মার্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়-
এই সান্ত্বনাবাক্যে নিজের মূর্খামিকে গাল দেই না।
খুব কাছেই জলকাদায় মগ্ন মৃত এক নদী,
নৌকো তার স্মৃতি।
আমি সেই নৌকোয় কিছুটা হলেও বৈঠা ধরি।
শীতের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি ছিলো,
তুষারপাতের লম্বা রাত্রির কথা ছিলো।
পৃথিবীতে শর্তহীন হারিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত দিন
কখনো আসে না, মা।
এবার শীত এলো না,
মানুষ মরে গেলে কোথায় যায়- আমার জানা হলো না।
৫.
গোলাপী ঘাসের বনে গান শোনা যায়।
বাতাসের উর্বরতা বিষয়ে কিছু বলবো বলে ঘুম ভাঙে বারবার।
স্বপ্নে শে অধীর; আকাঙ্ক্ষায় চঞ্চল।
চোখ খুলি না প্রস্তরিত পৃথিবী দেখে ফেলবার ভয়ে।
এই দারু বিগ্রহ স্নায়ু প্ররোচিত নদীর ভিতর দিয়ে
কিভাবে বয়ে চলে সঠিক বুঝে উঠি না।
কাল বোশেখের ঝড়ে আকাশ ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়লো।
অতল সমুদ্র কড়া নাড়ছে দরোজায়।
জলের উৎসবে বিছানা ভিজে গেলে আমরা ঘুমাবো না আজ।
আহমেদ সজীব
জন্মগ্রহণ করেছেন ৮ই আগস্ট ১৯৯২ সালে। কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী ও নবাবপুরে। পৈতৃক নিবাস ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার মুন্সিনগর গ্রামে। বর্তমানে ফ্রান্সের La Régie Autonome des Transports Parisiens, RATP-তে কর্মরত।
প্রকাশিত কবিতার বই ‘বেপথু এই পথে’(দিব্যপ্রকাশ,২০২২)।
ফরাসি থেকে বাঙলায় ভাষান্তর করেছেন আর্হেন্তিনা’র কবি আন্তোনিও পোর্কিয়া’র ‘স্বর’(উজান,২০২৪)।