বিভাকুসুম
১.
নখে নয়,
তুমি নেইল পলিশ মাখছিলে তোমার
নখরে উঠে আসা আমার জোড়া চোখে—
গত জীবনের লোককবির মেলা থেকে ফিরতে ফিরতে মনে হলো,
তোমাকে ভালোবাসা আসলে ওফেলিয়ার অমা-সরোবরে
বিভাকুসুম হয়ে ফোটা
২.
নখে নয়,
তুমি নেইল পলিশ মাখছিলে তোমার
নখরে উঠে আসা দাসের জোড়া নয়নে—
গত জীবনের শোণপাংশু মেঘ থেকে ফিরতে ফিরতে মনে হলো,
তোমাকে ভালোবাসা আসলে তোমার বিষে
জলজ কুসুম হয়ে ফোটা,
মা ফাতিমার কারবালায়
ইয়ালদা রাত
গণদাবী আদায়ের আগেই
ডিমভরা মা-মাছ ধরা পড়লো
মরা মাছটির চিৎসাঁতার হয়ে দেখছি,
নিরামিষাশী ঋ-ফলাও কেমন লুকিয়ে কাঁটা বাছছে!
অনপনেয় জলের দাগ
হয়তো কোথাও,
জলে ভেসে আসা মিথ্রা ও ঘোড়ার রথের গল্পে
মাছের চোখের আলোয় জাগবে ইয়ালদা রাত
এই অবেলায়
বরফছুরি বরফছুরি
ঘুরছি নিয়ে সাথে
তোমার বুকে সেঁধিয়ে দিবো
মুক্তিপণের প্রাতে
আগুন চুরি পবন চুরি
করছ চুরি দেশ
পাতাল বেয়ে করছো শিকার
উন্নয়নের মেষ
শূন্য ভাঁড়ার, পুড়ছি তবু
ঋণশোধের শ জালে
কার গোলাঘর করছো পূর্ণ
মা’র মুখে বিষ ঢেলে?
আর কতটা বেচবে অতীত,
সবাই জালি, পেইড
তলিয়ে যাচ্ছে দেশের ত্রিকাল
কেউ শানাচ্ছে না ব্লেড!
আমিই তো দেশ, জয়জনতা
আমিই মুক্তি আমার
নিজের হিস্যা খাবলে নে চাঁদ,
তুই লোহা তুই কামার
যোগাযোগ
ব্রিজ আছে, ব্রিজের নিচে নদী আছে
নদীতে পানি নেই, হড়পা বানের জমজ স্মৃতি নেই
দেশ আছে, হতভম্ব বাঘ আছে,
গরম আলকাতরায় আঁকা মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা আছে,
স্বল্প গোধূলির চেয়েও স্থায়ী জখমে তবু ফেরা নেই
স্বাধীনতার অসুখে
বিশ্বাস করো, আমি রাধারমণ আর শুনি না
বেঁচে থাকার ভয়ে
দানিকেনের লণ্ঠন
পাখিদের শরৎকাল ও ভাষার বিষাদ রপ্ত করে
শিস্ দিয়ে তাদের ডাকি কাটা ফসলের মাঠে
শিকারিপাখিরা বললো— মিনিং-এর ফাঁদ এড়াতে না পারলে
ছাতিমফুলের দাগে অচেনাই রবে আগামী
যে পাখিদের আমরা শিকার করি, তারা বললো—
মাসপিপলের হারিয়ে যাওয়া উত্থিতমুঠির চেয়েও
জরতি আমাদের সন্ধ্যা
এ কুরুক্ষেত্রের বাইরে যে পাখিরা, বললো—
আয়না তোমাদের একটা বড় ক্ষতি করেছে,
যতি ছাড়া তোমরা পরষ্পরের বাক্যে ফিরতে পারো না!
তবু কোথাও পাকা ফসলের মাঠে
ক্রমশ কর্পোরেটদের চোখ রাঙানির মাঝে
মানুষের তামাম অন্তঃসারশূন্যতা মুছে চলেছে এক ছোট্ট গায়কপাখি
অমিত রেজা চৌধুরী
জন্ম সত্তরের দশকে, বসবাস বগুড়ায়। লেখালেখির শুরু নব্বইয়ে, পিতা রেজাউল করিম চৌধুরী (ষাটের দশকের কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক) সম্পাদিত ছোটকাগজ অর্কেস্ট্রা’য়। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ক’বছর চাকুরিরত ছিলেন। মূলত লিটল ম্যাগাজিনের মানুষ। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও সমালোচনা লেখেন। সঙ্গীত, ভ্রমণ, পুরনো বইপত্র, ফিল্ম ও নিঃসঙ্গতা তার প্যাশন। এখনো কোন বই প্রকাশ হয়নি।