ক্ষোভে ক্ষুদ্ধ না, হব ক্ষুধার্ত
শোনেন, একছিটে দানা পরিমাণ সময় বা খাদ্য নষ্ট না! ক্ষোভ যেন ভোগ করার ধারে পাশে গেলেও না হয় প্রমোশন, না হয় প্রশমিত, এমনটা ভাব ছাড়েন! ক্ষোভ যদি বেশি হব হব হয় আর পরক্ষণেই আঠালো ধারা ভাব জাগে জিভে তো লালা লালন করেন, আর তেমন যোগ্য খানা প্রথমে পূর্বরাগ এবং পরে বাকি দক্ষিণ পশ্চিম ঈশান যে কোনও রাগযোগে ক্লাসিকাল বানিয়ে তেমন সহবতে খাবেন যেন ঠোঁটের মুখের সুরত এমন জেরবার হয় যে “ক্ষোভ প্রশমণ করিতে খাবার” এই মনস্তত্ত্বকে আরও গুরুত্ব দিয়ে এই বাজার বাড়ায় খাবারের দাম!
বিশেষত যে খানাপিনা নিজগুণেই আঠালো আর রসালো তাদের দাম বেশি না ভাব বেশি তা নিয়া গবেষক নিয়োজিত প্রকল্পের চাপের ধারাবাহিকতায় খাবারের দাম জরুরতই বাড়বে!
এত ইতিবাচক ভাবনা ভাবার পরেও ঠিক ঠিকই ফাইট্টা যাব যাবই বইলা ভাবতে ভাবতেই মুখের গহব্বরের পুরাটা খুইলা আলজিভরে ঝুলাইয়া যেইমাত্র কসরত দেখাইমু সিদ্ধান্ত নিয়া চিল্লানোর আগে গলারে পয়পরিষ্কার করার দরকার বোধে নিঃশব্দে একটা পজ নিতে গেলামের সময়েই খাবারগুলা যেন উপহারের ভাবে আইলো মোড়কে মুড়মুড়াইয়াই কিন্তু যা হুড়মুড় আর লুকাছাপা তারে আসলে ঘুষ স্বভাবে বেশি খুশ লাগলো।
কিন্তু কাজ হইছে ঠিকঠিক।
ক্ষোভরে আমি নিজেরে খাইতে দেই নাই!
ভলকানো
বহু বহু কাল ধরে হুবহু
সটানভাবের অটল সাক্ষী গাছটা
তার সাক্ষাৎ ছায়ায় আজও
জোড়া মাথারা গুনগুন-
জোড়ায় জড়ায়ে গুনছে
জোড়ায় জোরালো ঘামছে
ফিরতি পথ বেয়ে হাওয়া বদলাতে
অতীতেও যাচ্ছে থামছে
যেতে আসতে দু’জোড়া, শ’জোড়া
স্যাণ্ডেল, স্যান্ডেল আর স্যান্ডেল
আঁকা বাঁকা খাঁচা উঁচা
স্বভাবতই মৃদুমন্দ গোজামিল
উপরন্তু টানাটানির টানাপোড়েনে
পোষালো হবে ভেবে কেউ কেউ
খটাখট হাঁকে শাটারস্পিড
ক্লিক! ক্লিক!
আলপটকা মিচকে কোথাও থেকে আবার একটু ফিক
কানের লতি ছুঁয়ে-মুছে তীব্রতায় আবারও
আরে, কেউ কেউ ফাটিয়ে হুলস্থুল
ফিক! ফিক!
চমকে চমকে থমকায় বুকের মাঝে রোদ্দুর, সুমুদ্দুর
হৃদপিণ্ডে দু’চারটা বিট লাপাত্তা, লাজওয়াব
স্বভাবতই সদুদ্দেশে কেউ কেউ দোলায়
ছলাৎ! ছলাৎ!
কেউ কেউ আচম্বিত, কর্কশ শব্দে, আরে-
প্যাচপ্যাচ জলের ধারায় সয়লাব, অথচ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবর নাই
ধ্যাৎ! ধ্যাৎ!
বিরক্তিতে কেউ কেউ কোণঠাসা
ক্ষোভে কেউ কেউ খোঁজে কোনাকাঞ্চি
কে জানে – বিনে, না কিনে, আসল কাঞ্চি
তবে ধারে বা ভারে কে গনে তারে
আশ্চর্যের তখন -যখন ঘুরেই সে দূর হতে সুদূরে
একপাক নাচাও সারা একশো আশি ডিগ্রী এ্যাংগেলে
কারও আবার চোখ ড্যাবড্যাব
কেননা কিছু রেখা আঁকাবাঁকা তো কিছু রেখা সমান্তরাল কারও কারও জ্বলনোন্মুখ নিয়ে ঝাপসা চোখ
আরে, জ্বলন্ত সস্তার বিড়ি যে
ওহো, যত্তসব পুরোনো অভ্যাসে স্যাতস্যাত
পুরোনো হাত উঠে যায় ঠ্যাকাতে অবশেষ
খ্যাত! খ্যাত!
কারও ভাবনা জাগে চোখের কোণে -জল যে
আরে -না জল না জ্বালা
আশ্চর্যের কণা -না স্মৃতির না বালুর
কচকচ! কিচকিচ!
আচমকা’ই জাগে ভলকানো
স্বরূপ স্বরে আড়ম্বরপূর্ণ
কলিজা পুড়ায়ে স্মৃতির লাভায়
জ্বালায়ে খায়! কেবলই খায়!
আলাহিয়া বিলাওল
আলাহিয়া বিলাওল নেচে-কুঁদে বেড়ায়
আলোর আলোকে ফলকে কপাটে
ফাঁক-ফোকরে ঢুকে পড়ে গবাক্ষে
স্বপ্নাবিষ্টের মতো মাথা নড়ে অলীক জগৎ-এ
আহ! আচম্বিত র্ককশ ঝাঁকুনি
ভাবি ভূমিকম্পের ভুমিকা নাকি!
অহোরাত্র জুড়ে, কিন্তু কিনা
তুমিও ব্রুটাস শেষতক!
স্বপ্নোত্থিত হবা মাত্র কিংর্কতব্যবিমূঢ়ে গড়ে উড়ে
শূন্যে’রই উদ্দেশ্যে বড়বড়ে অগড়-বগড়
চেতনা’র চৈতন্য এই এলো বলে রওয়ানা দিল বলে
কিন্তু হায়! প্রভু এতো বিলাওল নয়
পরাক্রমে দুই পরাক্রমশালী
অতীত নিকটেও নিরীহ, প্রমাণিতও
শতভাগ, তবুও কি-না আজ শির ভাগ
কে উখড়াবে কার কত, মারকাটও
আকচা-আকচি ততক্ষণে সপ্তগ্রাম ছড়িয়ে
সময় গেলে আর তার সাধন কি শোধন
স্বপ্নজাল বোনার বলে বুনুনি, দোল দোল করে দুলুনি
দুই-একটা ফোঁড় এদিক-ওদিক হেলান
আর ভাবখানা কি জানি কি ফেলান
জ্বলনোন্মুখ চাপা পড়ুক স্বীয় হাতেই, আর তবেই কিনা
ক্রমশঃ মুক্তের পথেই
হোক না নিত্যকার আলাং-তালাং
শরীর ভাসুক
মুখ হাসুক
হোক নিয়মিতই বিরতির
পরস্পরের আলিঙ্গন, আর তাই
মাকু চলে একমনে, খটর-খট-খটর-খট
স্বভাব মতোই আচার মানা
ঋতুভেদে আচার বানানোও
নিয়মের একই সকাল বিকাল রাত, তবু্ও কিনা
অনিময়ের হঠাৎ দুপুরে কই আর ভুতে মারে ঠেলাও!
তথাস্তু!
সেই লেপা-পোঁছা-পোঁছা-লেপা!
আকারে বিকার
জীবন থমকে কি ঠমকে!
আছে কি নাই হুশ কি দিশ!
তবে আছে ঠিকই
কোনও না কোনও চারকোণা এলাকার
কোনও না কোনও এক চারকোণা বাক্সে
পনেরোশ বাই পনেরোশ কত যেন ফিটে
ফিটফাট গোটা গ্যালাক্সি সমেত
বহুত আচ্ছা না হলেও সাচ্চা
জানালায় প্যাঁচ কষে ক্যাকটাসটা
বজ্জাৎ! স্পষ্টতঃ ভেংচি কাটে
রুখে যেই হাত বাড়াই
অমন কাঁটার খোঁচা বাবুরে
ঘুচিয়ে দিল অহঙ্কার আর অলংকার
দশ বাই দশের সেটাও চারকোণা বারান্দা
সাফসুতরায় হাত সারা উপর নীচ মিলায়ে আটকোণা
ম্যালা যত্ন সাথে আলতো ছুয়ানি কাটাতার
এই-ই!
তাই বলে বলবে ঘেরা কারাগার!
তাই বলে কাঁটা দিয়া কাঁটা তোলার নাম
তাই বলে ছল করে ঘোলা জল
সে ঘোলা অবশ্য আমার জলেও
আমারও ডকে বাধা জীবন বাবুরে
দোল দোল দুলুনির মজা মাজেজা সবও আছে অবশ্য
সকাল দোলে দুপর দোলে রাতও ক্লান্তিহীন
পনেরোশ স্কয়ার ফিটের জাহাজ
তুমিও চালিয়ে নাও দশ বাই দশে
আলো কম পাও মানি
কিন্তু আমার বাতাস তো পুরাই তোমার
আরও দেখো উঁচিয়ে
হলোই সামান্য উঁকিঝুকির যাতনা
কিন্তু যাতনাও যেনতেন না
এইযে ধারালো হচ্ছ সেটা এইটার বাসনায়ই তো
বাবুরে সময় তো চলে যায় ইতিউতি
না হলে কি সময় ধরতি!
যায়টা কই সে!
থাকেটা কই!
ঠিকানা নাই যার তার ধরণ আবার বারণ
এইসব ধন্দের ধান্দায় বেশ দুলুনিতে
আমাতে কাঁটাতে
কখনও রাস্তার কাক
কখনও সাগরের গাঙচিল
কখনও গলির ধারের কুকুর
কখনও আচম্বিত ডলফিন
যাচ্চলে!
পনেরোশ স্কয়ার ফিটেই রাজ্যের তামাশা
রহিমা আফরোজ মুন্নী
জন্ম ১৯৭৪, লক্ষ্মীপুর জেলা
কবি, কথাসাহিত্যিক, চিত্রনির্মাতা ও অভিনেত্রী
কবিতা
আলিলুয়েভার হারানো বাগান (আদর্শ প্রকাশনী, ২০১৪)
উড্ডীন নদীর গান (অনিন্দ্য প্রকাশনী, ২০১৫)
দি নিউ রহিমা পদ্যবিতান (চৈতন্য প্রকাশনী ২০১৬)
মগজে ছাতা (চৈতন্য প্রকাশনী ২০২০)
অধ্যায় অভিসার (বৈতরণী ২০২২)
দেহলিজ (এডুসেন্ট্রিক প্রকাশন ২০২৪)
উপন্যাস
কালো মানুষের কারনামা (শ্রাবণ প্রকাশনী ২০১৮, ২য় মুদ্রণ বৈতরণী ২০২২)