পাঁচটি কবিতা । জুয়েইরিযাহ মউ


মাফলার
(প্রিয় সৌরভ মাহমুদ-কে)


নতুন একটা কলম কিনলেই লিখতে মন চায়,
এমনই বিভোর, প্রচুর এই জীবন!
তবু মাফলারে চড়ে সৌরভ চলে যায়।
আমাদের কাছে পড়ে থাকে
মায়ের চিৎকার,
কাগুজে বিবরণ,
গলাতে কচ্ছপ
আর লাশকাটা ঘর।


ধর্ম এবং ইমেজ
(স্মরণে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ … ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ …)


ধর্মকে একটা ইমেজের মধ্যে শান্ত স্নিগ্ধ লাগে যার ভেতর ভোর হবে হবে এমন মৃদু আলোতে আম্মু ঝুঁকে ঝুঁকে কোরান পড়েন।
রক্তের ভেতর জেগে উঠে মনে হয়, আম্মু নিশ্চয় যীশু বা কৃষ্ণকেও সূরা পড়ে-টড়ে ফুঁ দিয়ে দিতেন ঘর থেকে বেরোনোর আগে।
তাহলে তোমরা তাদের কিংবা তারা তোমাদের মেরে ফেলো কী করে!! তা…ও!!


অক্ষর শেখো নিনাদ


অক্ষর শেখো নিনাদ,
স্বতন্ত্র অক্ষরে দেখো শিশুদের মুখ। ঐশ্বরিক বলে কিছু নেই। গাছেরা অক্ষর। একেক জটিল রেখাতে মূল ছেড়ে এগোচ্ছে পরস্পরে। টাঙিয়ে দিচ্ছে ঝালর।

অক্ষর শেখো নিনাদ,
মিথ আর আর্টের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইনফার্নো। এদিকে সস্তা হোটেল উঠে গেছে নজরদারিতে। স্থাপত্যের ভার নিতে নিতে আড্ডা হারাচ্ছি রোজ।

অক্ষর শেখো নিনাদ,
মা-বাবার ঝগড়ার পর সকালকে গুলে খাওয়া চলে দুধ-চার সাথে। দ্বিতীয় লিঙ্গের বই খুলে রেখে তেলাপোকা পড়ো।

শরীর শেখো নিনাদ,
ধুলো উড়িয়ে আসা অসংখ্য ঘোড়ার সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকো। নিজেই নিজের নিজস্ব ঘোড়া হয়ে ওঠো।


বাবার অসুখ হলে
(একটা বইভর্তি ঘর বাবা দিয়েছিলেন বলেই যে আমি লেখার ঘোরে বাঁচি…)


বাবার অসুখ হলে
ব্যালকনিতে অযত্নে পড়ে শখের বাগান, ঝুলে থাকা ড্রিমকেচার।
শীতের বাতাস মনে কাঁটা দেয়, স্বর আটকে থাকে গা-য়।
বই-বিরহ-আড্ডা-প্রেমিক-কপালের টিপ বিবর্ণ হয়ে যায়।

লাল ম্যাট্রেসে জেগে থাকে স্মৃতি শৈশবের –
আমার বাবা গভীর রাতে বের হয়ে যাচ্ছে
জ্বরে পুড়ে যাওয়া আমার জন্য বনরুটি কিনবে বলে।
শহরের সব দোকানদার তখন গভীর ঘুমে
গলিতে কুকুর ছাড়া আর কেউ জেগে নেই।
না, আছে আছে, আর একজন –
যাকে আমরা ‘পাগলি’ ডেকে বড় হয়েছি এই পাড়াতে।
পুরনো কম্বলে গা মুড়ি দিয়ে কুকুরের সাথে গল্প করছে সে
আর বনরুটি খুঁজতে খুঁজতে পার হয়ে যাচ্ছে আমার বাবার যৌবন।


বড়ইওয়ালা বাসা


আমাদের বড়ইওয়ালা বাসা ডিঙিয়ে যাওয়া সন্ধ্যায়
একটা জোনাকি প্রায় ঢুকে পড়তো অন্ধকার ড্রইংরুমে।
বাড়ির মেয়েরা তখন ব্যস্ত নাস্তার আয়োজনে,
পুরুষেরা উদোম গা নিয়ে তালপাতার বাতাস খাচ্ছে।
লোডশেডিং-এ পড়াশোনা ছেড়ে উঠে গিয়ে আমরা
বাজ্ঞা ধরতাম বোতলে… সবুজ ঘাসফড়িং…
সমস্ত বাজ্ঞা মরে পড়ে থাকতো পরের দিন সকালে।
এখনো বিষণ্ণ সন্ধ্যায় বসে বসে ভাবি
সেইসমস্ত বাজ্ঞাদের কাছে মাফ চাওয়া যায় কী করে?


জুয়েইরিযাহ মউ

জন্ম: ১১ই অক্টোবর, ১৯৮৮
পেশায় এবং নেশায়,
লেখেন এবং নির্মাণ করেন ইমেজ – এটুকুই পরিচয়।

বই

কবিতা

তাসেরা বুকমার্ক – ২০১৬; প্রকাশক- মিতাক্ষরা

গদ্য

টিলাগড়ের রহস্য – ২০০০; প্রকাশক – ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স
সোনাপুরের মিলা –  ২০০২; প্রকাশক – ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স
অস্তিত্বে কুহেলিকা কিংবা টুকরো টুকরো প্রাণের কথকতা – ২০০৯; প্রকাশক- নালন্দা

zuairijahmou@gmail.com

শেয়ার