দশটি কবিতা | আহমেদ সজীব

আমার বাঙলা ভাষা

 

  এই গ্রহের সব মাধ্যম ব্যর্থ হল;

 

 এখন তুমিই নিখুঁত সরল ভরসা।

 

  এখন তুমিই একক সচল ঈশ্বর।

 

   পার করো; আমাকে বয়ে চলো

        তার গহন দরোজায়

 

 


পারাপার

 

                                                    আমি যেনো

বহুস্তর বিশিষ্ট তুমি নামক কংক্রিটের ভিতরে

          পড়ে থাকা অনাথ শষ্য বীজ।

 

       তোমার শরীর ফুঁড়ে খুঁজে ফিরছি

 

           নিশ্চিন্ত অঙ্কুরোদগমের পথ,

           অপার আকাশের অভিমুখ।

 

 


প্রাকৃতিক

 

আমার অন্ধ দুচোখের ভিতর

পৃথিবীর সকল বস্তু থেকে

অনন্তধারায় বিকিরিত হয়—

তোমার প্রতিচ্ছবি।

 

 


শিকল

 

নিষ্ফলা প্রান্তর 

এবং

ইটভাটার ধোঁয়ায় তলিয়ে যাওয়া আকাশ—

 

এই দুইয়ের মাঝখানে অসুস্থ  রোদের মতো 

বাতাসের শরীরে জেগে ওঠে আমার অস্তিত্ব;

 

প্রতিদিন।

 

 


কবি

 

বহুদিন অসুস্থ আছি।

অসুস্থ চোখে পৃথিবীকে মনে হচ্ছে

একটি ভূতুড়ে দ্বীপ—

আর আমি এই দ্বীপের একমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী ভূত।

 

 


ভুখা

 

সন্তর্পণে দুচোখ সজাগ রেখেছি,

তোমাকে ফের একবার দেখামাত্রই

সমগ্র দৃষ্টি দিয়ে শুষে নেবো—

 

যেভাবে মানুষ বেঁচে থাকার আয়োজনে

বাতাস থেকে শুষে নেয় অক্সিজেন।

 

 


প্রেম

 

সেই কবে থেকে তোমার

ঠোঁট, বুক, পেট, যোনী, গ্রীবা-

এইসব দেখছি।

 

ভাবছি—

কবে বাতাসে পৃষ্ঠা উল্টাবে

কবে আমাকে তোমার পাছা দেখাবে

 

 


বাবা

 

অগণিত গোলাপের দেশ

এবং বড় বড় সুসজ্জিত ইমারতে ঠাসা—

 

এই পৃথিবীটিকে আমার কাছে খুবই এতিম মনে হচ্ছে

 

আপনাকে ছাড়া।

 

 


শুধুমাত্র

 

মানুষ আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে,

 

গাছ এবং যে সকল জড় বস্তুকে একান্ত নিজের ভেবেছি;

তারাও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।

 

আজকাল আমার একাকিত্বের সাথে শুধুমাত্র কথা হয়;

 

শুধুমাত্র আমার একাকিত্বই আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—

 

পৃথিবী এবং অনন্তলোকে আমার সাথে পায়চারি চালিয়ে যাওয়ার।

 

 


চক্র

 

তুষারের ঘন অন্ধকার দিন শেষ হবে না

                   আমি জানি;

 

তারপরও চলো আমরা খানিক বাইরে বেরিয়ে আসি—

                      আবারো একসাথে!

 

গতরাতে তুষারের তান্ডবে ঝরে পড়া চেরি ফুল

কুড়াতে কুড়াতে জিজ্ঞেস করি ঈশ্বরকে—

 

পৃথিবীর সব ফুল কেনো ফোটে ঝরে যাওয়ার লোভে?

 


আহমেদ সজীব

প্যারিস প্রবাসী কবি

শেয়ার