মায়া
গহনে কাঠের আড়তদার থামায়
জিগায়…ও মিয়া, কোন গ্রাম?
আমি হাত তুইলা উজান দেখাইলে
তার চক্ষু বড় হয়-গপসপে ডাকে…
হাটবার হাটবার;
সন্ধ্যায় অঞ্চল জুইড়া সাপের ডর
পা চালাইলে…আন্ধারও বাড়ে
ভুইলা ভুইলা যাই-পিছনের বেলা
কুপির আগুন;
তবু ঘুমাইলে এহনো খোয়াবে শুনি-
‘বুঝলা মিয়া, এইখানেই এই জন্ম
অথচ আল্লায়ও জানে-উজানে কাঠের দাম মেলা…!’
ঘাড় বিষয়ক কবিতা
ভালোবাসায় দুধের সর থাকে
গোলা ভরা ধানে অগুনতি-
হালটের সংসার
ফাঁসিতে বকুল জেনে বিচ্ছিরি তলায়
ঝুলে থাকে ঘাড়-মানুষের করুন রগের
ঘাড়
সংসার…সংসার?
নাহিদ্রাক্ষস
মানুষের ঘৃণা বড় হলে
পুত্ররা সৈকতে বালুতে উপুড়
কন্যারা ভাসানো জলে…ভাঙচুর
ভাঙচুর;
তোমাদের এতো থুথু, তবু দেখো হাসে
মাংসের ঘরে কোষ
ও ঘৃণা, মানুষে থেকো…বোকা নাহিদ রাক্ষস
রাক্ষস।
কৃষক
জমির অন্তরে বীজ রেখে ভুলে যাওয়া
মানুষ স্বভাব নয়, তারপরে থাকে আরো
ফসল সেয়ানা মানে-নরমে নরমে বাড়ে
বাহানায় জাগে হাওয়া, মরসুম গাঢ়…
নদী গিলে নিল বুঝি তাই ছেনেছুনে সব
যেন-গোলাঘর শুধু ঢেউয়েরই প্রিয়
আগুন চাষির আত্মায় রোয়ানো বুক
জলের পরাণে লিখ-কৃষক আত্মীয়
তারপরে থাকে আরো, ‘তারপরও’ থাকে শেষে
বর্গি এলো দেশে…বর্গি এলো দেশে…!
প্রার্থনা
চোখ ফুলের সিজন-কুঠারের রাতে অনেকটা
প্রেম সমাহার
যে নগর নিয়ে ছিলে বুকে…সে গ্রহণ-
দুঃখ আমার?
এইটুকু পারি জেনে-পশ্চিমে মসলা
ছোঁয়া প্রিয়
ফুল রাখি পাপড়ির পাড়ে
অন্তর আত্মীয়!
দুঃখ আমার-আমাকেই দিয়ো
আমাকেই দিয়ো…
*সংগ্রহ-রাক্ষসদের প্রাচীন গীত থেকে।
বৈশাখ
মুছে দিয়ো রাত থেকে পথ
দেয়ালের বন ঘন হলে-একলার জলে
অসুখের মথ…অসুখের মথ;
আহা, যেন-আগুনে আগুন
টুপ করে জাগে ফোঁটা…তাতে
ঝরে যায় খুন-মানুষের খুন
আগুন-আগুন…
নির্জনে
ফুরানো আগুন হেলে হেলে রয় কাছে
নিভু ঢেউ বাড়ে খনিজের সজল আশ্বাসে
কিছুটা করুন মথেরা জাগুক তবু
এনামেল মণির অন্তরে তোমাদের রোয়া প্রভু?
জাতিসাপ ফুলে-গলুই বেদনাঝিরি বাড়ে
ফুরানো আগুন…ঢেউ পাড়ে-ঢেউ পাড়ে
এখনো মানুষ হিসেবের পালে ঘন তাল
তরলের মান্য আয়ু, ভালোবাসা শাওয়ার বাল!
কূটার্থ তখন হাওয়া মূলে…কিছুটা গ্রহণ নিয়
গার্হস্থে তাকাও, আহা ছলনার শিমুল আত্মীয়
রাক্ষস কাটলে রক্ত মিহি, কন্যারাই শিরা-ছাল
খেলনা জানুক-লুডুর খোঁড়ল আয়ু মানুষ নবীরই চাল
শালুক পাখিরা ভেজা, রেণুপদ্ম কালো বেঈমান বিষে
পাপড়ি ভেজানো বিদ্যা রেখো গোলাভরা মিলমিশে
ও পুত্র, ‘আলির নামে মুখ’ মানুষের প্রিয় ঢাল
তরলের মান্য আয়ু, ভালোবাসা শাওয়ার বাল!
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
একলা দাঁড়াতে শুধু একটু থামতে হয়
উড়োজাহাজে তোমরা, একলায় সয়!
হয় কী…পশ্চিমে খুব ছোট ছোট বসবার জায়গা আছে। তার সামনে বড় বড় সব ধাতুর মায়া উড়বার জন্য ছুটতে থাকে। ওরা মেঘে ডুবে গেলে…কোলাহল কখনো কখনো কমে…কখনো আসলে কিছুই কমে না।
সন্ধ্যায় রংটা বেশি, যেন আসমানও পরাণ
ছায়া বেড়ে গেলে ছায়ারাই বাঁধে টান।
সে সময় এ শহরে মনে হয়-এইখানেই সবচেয়ে গাঢ় সন্ধ্যা নামে। উঁচু পিলারের আলোগুলো তখনো ঠিকঠাক জাগে না। কোথাও খুব কাছে তাই যেন প্রিয় সেই শুন্যতা। আহা, কবে যেন প্রথম ধরতে শিখলাম…?
বন্দরে মানুষ হারাইয়া যাবে-লগ্নে রাখা
অশ্রু ফুরাক, চোখের মাঝে নোনতা পাখা?
এখন শালিকের ঝাঁকে ছাউনিগুলি ভিজে গেলে…আমি কাউকে সেসব আর বলি-টলি না। ওদের দাম্পত্য এই বন্দরে যেন আমাদের মতো। ভোরের দিকে ওরা খুব চিল্লায়। ভাগ্যিস আমার ঘুম এমনিতেই হয় না। একটা প্লেনকে বোবায় ধরে…
শোনো…
উড়োজাহাজে তোমরা, একলায় সয়
একলা দাঁড়াতে শুধু একটু থামতে হয়!
ছায়া বেড়ে গেলে ছায়ারাই বাঁধে টান
সন্ধ্যায় রংটা বেশি, যেন আসমানও পরাণ।
অশ্রু ফুরাক, চোখের মাঝে নোনতা পাখা
বন্দরে মানুষ হারাইয়া যাবে-লগ্নে রাখা?
শীতে
এমনই এল্লা শীত শুরু হইলে জাইনো
বিয়ানের শঙ্খ নিয়া এট্টু ভাবি
সিন্দুকে জমানো ছুরি, মোহইরা ঝিঁকা
নিজেরই মুখ আল্লা দুঃখেরই চাবি…!
বাক্সে কেমন চিল্লায় মন-তোমার আলতা
জাইনো না খুলে…
ভাঁজের ভিতর কিছু নাই বলে
যদি উপচায় চুল টান-ফিতারই ফুলে?
তবুও গুইনা রাখা দমে সিন্দুকেরই খাম
পিরিতির কইলজায় ফুঁস-এল্লা এল্লা শীত
কলবে মুইছা যায়…চিল্লানোর নাম?
সরল ছন্দিত স্পন্দন
ডানে…
গহনে বৃষ্টির শ্যালো-ইঞ্জিন
গাঁও-গেরাম ডোবে-ডোবে ছেলেটার
বুকের ঘাটলা…
মেয়েটা ডুবতে তবু ডরায় না ক্যান?
অন্ধকারের গুহায় মানুষ নরম
যাদুকরও তাই
তবে কি কিচ্ছার মেঘে সে লিখবে
শেষ লাইনের ধসে-
এসো খোঁপা বেঁধে দেই-ঝড় আসছে…!
চন্দ্রবোড়ার ফণার পাড়ে
যে যাদুকর আসমানটা মুছে দেয়
তারই কাছে চাও ধুধু-
পরাণের বাড়ি…
চলো গাঙের কুলায় লিখি-হাতে ডুবিয়েই হাত
আড়ি আড়ি আড়ি!
বামে…
এইসব ভয়ংকর অস্থিরতা
তুলে দিয়ে দুঃখের নায়ে মরে গেছি
জিতে যাওয়ার ঐ গ্লানি দেখে নিঃশব্দে নিঃশব্দে
মরে গেছি;
তাই বুঝি আয়াতের সোনার মুকুট বিষাদের মতো স্বাদে
মানুষ মাছেরা যায় রেখে ফেলে ঠোকরাতে ঠোকরাতে…?
ওগো জলের দেবতা, একটু ঘৃণা দিয়ো খুঁজে
হৃদয়ের মাংস দুঃখে নোনা হলে…ভেসে যাওয়া লাশের চোখেই
একটু ঘৃণা দিয়ো বুজে-ঘৃণা দিয়ো বুজে।
মধ্যে…
প্রভু, আর-জন্মে মনে পড়াটাই শুধু পোষ মানা?
*কবিতাগুলির রচনাকাল-২০১৭।