জাহাঙ্গিরকে লেখা কবিতা | অস্তনির্জন দত্ত

১.

কিছু পাতা জুড়ে ঘুম, পাতা জুড়ে জুড়ে

সান্ধ্যআহ্নিকের পর

আমি বলেছি চোখ তোমার বয়স হচ্ছে…

 

হয়ত হালকাভাবে

আঠা, লাল নীল কাগজ কুচি জোড়া দিতে দিতে কিছু পাতা

আর বৃক্ষসমীপে

আমি বলেছি ঘুম কিছু পাতা জুড়ে তৈরি হয়

 

যেটুকু টোল ফেললে হাসি তোমাকে স্নিগ্ধ করে, গোসলে নেয়

পানিতে কুলকুচি ছুড়ে ফেলে, এখন 

সেই ঘাটের প্রান্তে বসে আছি

 

গোল করে ঘুরে যাওয়া পুকুর

অতি পুরাতন বয়ে নেমে যাওয়া সিঁড়ি…ধাপ দুই ধাপ

জাহাঙ্গির,

 

মনে হয় পানিয়ের গায়ে সামান্য প্রাণী হয়ে লেগে আছি

এই সন্ধেয় কেউ কাপ তুলবে চুমুক দেবে এবার…

 

 

৪.

মাথায় ছিপি বয়ে যায় সে তরমুজের পাশ দিয়ে যাবে

ফালি রাখা লাল ও ঘুম ঠাণ্ডা ভাউলে সে যাবে

করপাসকলোসাম, দুলে দুলে ঘণ্টা বেজে ওঠার মেডুলা অবোলাংগাটা

 

পায়ের আঙুল খাড়া হয়ে আছে নিপল খাড়া হয়ে আছে

এই উঁচু ধরে দেওয়াল গিরি জ্বালাও জাহাঙ্গির

 

সান্ধমগরেবের পর এই পাণ্ডুর মুখ মাবুদ

ছোট্ট নিঃশ্বাস মাবুদ

পাখিদের ওড়া টারমিনেট করে নেওয়া মাবুদ

খোলা জাফরিতে চলে আসছে ভেজা তপতপে বাতাস হুয়াল এক্কিন

 

মাথায় ছিপি ভেসে যায়, সেখানে শুশ্রুষা রাখো জাহাঙ্গির

অভ্র পোরো গোলাপ জল দাও মেহের ছিটিয়ে দাও সেজদা করো

সেজদা-এ-তাহিয়া

যেখানে সুরমা টানলে চোখের ভেতর দিয়ে মৌরলা চলে যায়…

 

 

৫. 

ঘুম থেকে উঠে পড়লে যে নুমাইশ নরম জড়ো করে, তার

চুল ও বল্লরী

তার লচক কাসাবা ভোরের হাওয়ায় ফুলে ফুলে আছে

 

এখানে তুমি একটু ফোয়ারা চিপে দিতে পার

আখতাবচি

রাস্তায় জল ঢালতে পার…

 

ভোরের রাস্তায় জল ঢাললে সে তো মেয়ে হবেই ঢালল ঢাল্লো ওই

অমন

বসন্ত পরজ

ইয়াকুত আলমস জমরুদ ফিরোজা দিয়ে গাঁথা

 

জাহাঙ্গির বল নিকাহ্, বল কবুল কবুল, বেশুমার রেশমের ওপার থেকে

যদি ফুট ভেসে আসে… জেনো

দিন ফুরিয়ে গেলে সে আলো নিয়ে যায় দরগায় মাজারে

 

                                                                           সী

কোরাল দেখার পর

সে জেনে গেছে ভেতরে আড়াল করে তারও এক অগ্ন্যাশয় নিচু বয়ে যায়…

 

 

১৭. 

হাওয়া তো আর কে পুরম, সেক্টর বত্রিশ— সে দেয়

                                     আর দিগরের সামান্য ওপরে তোমাকে ঘুড়ির মত লাগে

জাহাঙ্গির

যেন,

শিশির পড়লে ভারি হয়ে আর একটু জমিতে নামবে

ঝাপটে নেবে কানকো ও শীত

       শাদা ফতুয়া

 

ঐ যেখানে বট উড়েছে, লিলি করছে পাতা মাটির গন্ধ ও

                                              গোল হয়ে গড়িয়ে যাওয়ার ফল,

                                                                    —ছোট্ট টপ্পর

সন্ধ্যে জল ঢালছে

সিথানে সেই এক ছোট্ট টপ্পর শিয়াকুল দিয়ে ঘেরা, পীরের মাজার

একা জ্বলে থাকা টিমি ফেলে দিছে তার বিটা করোটিন

 

সোনালি চুপচাপ কেউ

মাটির ভেতর চান করতে চলে গেছে…

 

 

২২.   

হাওয়ায় কিছুটা পাতা বেড়েছে – কিছুটা কুয়াশা

                        এই এক পাতলা তহবন্দ পরাভাব,

                                                   মাঘ সন্ধ্যার বিকেলে

           আনাজপাতির থেকে বেরিয়ে আসা আতর

           এই এক কুয়োতলা লোকাস ও তার ওপর কেউ আলতো নব ঘোরালো

 

জাহাঙ্গির তুমি তো জান নব ঘোরালে আঙুল কিছুটা শূন্যে ঘুরে যায়

                                                        ঘাম পড়ে

                তোমার শরীরকে সে আলপাট করে ফসল ফলায়

                           আপখোরাকি দেয়, ঘুলানা ধান ফর্সা করে দেয়

                তাই রুমাল আজও লবণাম্বু উদ্ভিদ

             তাই মুখ মুছিয়ে দেওয়ার নুনটুকু এই দুপুরে এপ্রিলে পানপাতায়।। 

 

নিবিড় গ্রিনের ভেতর সহজ সত্যনারায়ণ,  ত্রিশটি পান, শশাকুচি

               মোদক ও তুলসি, এতদসহ পঞ্চগব্য পঞ্চঘৃত পঞ্চামৃত

 

বারকোষ ঘুরে উঠে পড়া পিঁপড়েগুলি— এই আরো কিছু ফল

 

 

২৫.   

যা অনর্গল সেখানে আতপ চালের গন্ধ লেগে থাকে

টুকু মেথিশাক, আর প্রয়োজনীয় কাঁচালঙ্কার

ভূমিকাটুকু ক্রমশ…

তাকে সবুজ ও ত্বকপ্রিয় হতে হবে

নিটোল ঝরঝরে ও প্রসাধনীমুগ্ধ, আয়নার সামনে

 

আয়ত পাতার ওপর গ্রীষ্মেও রোদ পড়ে ছড়ে যাচ্ছে

উঠোনভর খাঁ খাঁ, শুধু পিতলের পাতিলটিতে পলাটি নড়ে

তার

মরদ ফিরে লাল সুতার বিড়ি ধরিয়ে নেয়

 

আর,

অতি প্রশস্ত দুপুরজুড়ে সেই থালি বাটি গৃহস্থ জমজম করে

বেজে ওঠে অভাব, তার ভিতরের ক্ষিন্নতাটুকু

বিশ্রামটুকু

 

তালের কড়ি থেকে ঝুঁকে থাকে কতদিনের শুকনো হাঁড়ি

তেঁতুল জারানো ওই শ্বাসকষ্টটুকু

যেন সেসব শুঁকে নেবে, হিক্কা  তুলবে, কুঁচকে দেবে ডায়াফ্রাম ও

তার এমব্রয়ডারিটুকু, হিক্কা লাগে জাহাঙ্গির,

গলায় ছোট্ট চার্চ লেগে যায়…

 

 

২৬.  

শুধু ভাবি জল এসে যাবে

               ক্রমাগত গর্ত ছিল এভাবে, মরশুম ছিল

সারা ভোর ভর্তি ছিল কুয়াশায়, পাতলা ও মেহগিনিতে

                                                শ্বাস নিলে

মনে হয় সারসার গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে আছি

                       ঠাণ্ডা শাদা মরিচ গাছের পাতা নড়ছে

                                              উনিফর্ম নড়ছে

আর

দু’একটা চৈ চৈ হাঁসের ডাকে অবিকল তৈরি হয়ে যাচ্ছে স্কুল

 

গায়ে পানি লেগে থাকা হাঁস লেগে থাকা ভালো

                                                 জাহাঙ্গির,

দু’ একটা গর্ত লেগে থাকা ভালো— কেউ জাল ফেলবে

                      ভাঁদিপুঁটি সুরপুঁটি বেলেভোলায় খলুই

           ভরে উঠলে অতঃপর— চোখ চুপচাপ— শান্ত  যাকে মাছ বলো, দ্যাখো

 

মৃত্যুকে কত স্বাভাবিক রেখেছে।

 

 

২৮.  

এই যে বজর বজর করে ফুলে গেল বোরোজ

                           হাওয়া ফুলল তলতলে গোলানোয়

               সেই মেহেদি তুমি মেখে নিচ্ছ

                     এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কিছুটা কাঁচা হলুদ, নিমমাখানি

 

আর, বদরউদ্দিন টিপুর ছোট ছেলে সম্পূর্ণ সর্ষের তেল আনতে চলে গেছে

তবে কি হাত তুলে দিগন্তে একটু মাখাবে

                             গুল্মগুলোকে গরমের বালমুসিবতগুলোকে

সাবান ফুটো করে চলে যাবে বেশুমার চর্বির ভেতর—

                                                       হে জাহাঙ্গির

 

তবু জেনে রাখ প্রত্যেক স্নানের পাশে এক মাজার থেকে যায়

জলে ডুবে গেলে সেই উঁচু ঢিপি তোমার পিঠ ছুঁয়ে

                  কত কশেরুকায় নরম কত শাপলার মতো

                                                         আর

                        ঐ ছাঁচি কালিপাতি এক গণ্ডা দুই গণ্ডা

                                            গলতা, এক পন ঐ মিঠা

 

পাতা পড়ে গেলে সত্যি কোনও আওয়াজ হয় না

মাটি আর একটা প্যাকেট পেয়ে যায় শুধু…



প্রচ্ছদঃ রাজীব দত্ত
প্রকাশকঃ ঢাকাপ্রকাশ
মূল্যঃ ১৫০ টাকা

অমর একুশে বইমেলায় প্রাপ্তি স্থানঃ 

ফেস্টুন

(লিটলম্যাগ চত্বর)

মেঘ

স্টল নম্বরঃ

২৭৩

(সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)

 

এছাড়া ঘরে বসেও বইটি পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঢাকাপ্রকাশের ফেসবুক পেইজের (https://www.facebook.com/dhkprokash/?modal=admin_todo_tour) ইনবক্সে যোগাযোগ করুন। বইটি বিকাশে কিনতে কুরিয়ার চার্জসহ ১৮০ টাকা বিকাশ করুন 01648 469 736 এই পারসোনাল নাম্বারে। টাকা বিকাশ করে একই নাম্বারে আপনার নাম-ঠিকানা এসএমএস করতে ভুলবেন না।

শেয়ার