বই: চান্দের দিকে উড়াল
কবি: কুশল ইশতিয়াক
প্রকাশক: চৈতন্য
প্রচ্ছদশিল্পী: রাজীব দত্ত
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
❑ অবলিভিয়ন
যে কোনো সন্ধ্যা এলেই অরণ্যের ভেতর দাঁড়ানো যায়। একা; আকাশে ভাসমান রুপালী গোলক, অত্যুজ্জ্বল নেমে এলো মাটির ঠিক কাছে। তখন ভাবতে থাকি মহল্লার হলদেটে জানালার কথা— প্রতিটি বাড়ির খোলা জানালা। আরও পাই রজনীর সুঘ্রাণ; দেখি, কেউ প্রদীপ জ্বেলেছে— কী যেন এক অস্ফুট আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছে বন থেকে বনের গহীনে।
❑ পাখিদের ছুটিতে
উজ্জ্বল দিন। রৌদ্রপ্রখর। নীলাভ, সতেজ। জল সমুদ্র। পাথরের চাঁই। জলে গা ভাসাই। মধ্য পাহাড়। তীর থেকে দূরে। বাতাসের সুরে। পাশাপাশি থাকি। কবিতার নারী। চৈত্রের শেষে। স্বল্প বসনে। সাঁতারে সাঁতারে। দিন গেছে কেটে।
❑ পার্শ্বমুখ
চুপি চুপি চোখ দ্বারা প্ররোচিত হই খুব;
দুপুর উৎকট হলে আঙুল আমারই দিকে,
হাতে ধারালো ছুরি— তারপর নিজস্ব মক্তবে বসাই
বিচার
কিন্তু
নিজেরে বিচার করা দূরহ— গজ ফিতা মেপে
বারবার খুন হই, ক্রোধ ও কামে
অত্যধিক জৈবিক চাহিদা স্ত্রীলোকের স্তনে, ভাঁজে,
গ্রীবায়, কিন্তু সহজ চাতুর্যে ভাসি— কানে কানে ভালোবাসা
উচ্চারণ করি অহঃরহ ;
অথচ নিখুঁত শব্দের মানে জানি না
যা হয়, মানুষ সম্পর্কে— টুকটাক ধারণা নিই আর কি
ফলত ছড়িয়ে দিলাম দুই হাত, আর জ্বরে লাল চোখ
পাঁপড়ি ; উঠোনে ফুটিতেছে ফুল— দেয়ালে
আক্রোশে ছুড়ে দিই অন্ধ থালা
যখন চোখ বাদী আর আমি আসামী—
দু খানি সত্য, আমারে হলুদ তামাশার রঙে চুবালো,
অতঃপর নিজেরে দেখে নিজেই
দিয়ে উঠি হাততালি
দু খানি সত্য, আমারে অকপট শেখায়, দুটি টান
মানুষ মাটিতে থাকে, মানুষ নারীতে থাকে—
মানুষ এড়াতে পারে না, শুধু, মাধ্যাকর্ষণ ও কাম।
ভন্ডের বিচার শুরু হলে মক্তবে
যারে তারে অগ্রাহ্য করি, নির্মোহে ;
কি এক সহজ চাতুর্যে ভাসিতেছি— চারিদিক
থেকে প্রচুর হাসি ও হাততালি
ডালপালা ছড়ায়ে থাকি। ডালপালা মানুষের ডানা।
❑ পেয়ারা গাছে পিঁড়ি
জগতের সব নারীরে অত্যধিক ভালোবাসি
সব নারীই আমার হৃদয়ে আদিম
দোলা দেয়
পরি সম্পর্কে যা বলা হয়, তা টুকটাক সত্য—
অত্যুক্তি শুনে পরি মুখ চাপা দিয়ে হাসে
পরি গৃহমুখী ও শৌখিন নারীদের ঘৃণা করে—
পূর্ণাঙ্গ পরি সর্বদাই নগ্ন ও অট্টহাস্যে ভরা,
পূর্ণাঙ্গ পরির গায়ে জামা থাকে না।
❑ বনৌষধি
প্রতিটি নারীই ফলবতী। বৃক্ষ, তুমি উন্মুক্ত হও, জীবন রহস্য মেলে ধরো। তোমার ফল খাবো, তারপর জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করবো।
❑ একালের রুপকথা
শহরে এক জাদুকর এলে তার বাঁশির সুরে মানুষের বুক খুলে যায়; বের হয়ে পড়ে অন্তরাত্মা। জাদুকর জাদু দেখায় না— সে বাঁশিতে আবারো ফুঁ দেয়, আর অতিদূর থেকে সারস উড়ে যায়। এরপর সে হাঁটে, হাঁটতে থাকে নদীর দিকে, তার পিছে হাঁটে আত্মারাও, আর জাদুকর হাঁটে— নদীর জলে ওদের ডুবিয়ে দেবে বলে। অথচ আত্মারা হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের মধ্যে ডুবে যায় আর নদীর জলে কিছু গোলাপ ভেসে ওঠে।