কোথাও সন্ধ্যামণির কাছে
কুপিটা এতোটুকু তুলে সে দেখে, ঘুমন্ত মেয়ের মুখ! কিছুটা দূর দিয়ে একটা রাতচরা পাখি ডেকে ডেকে উড়ে যায়! নিঝুম উঠোনের পরে নেমে আসা শালপাতা, নিচু স্বরে কথা বলে!
হয়তো তারা, কোন এক ঘুমপাড়ানি গানের কথাই বলতে চায়—
২
অনেক অনেক ব্যথার পাশে রোদ জমে আছে! সোনার বাউটি! অই ফুলের নোলক! তারপর আর কিছুই নেই। এখন তার বুকের ভেতর শূন্য ঘর, উঠোন—শান্ত দিঘীর পরে ঝরে পড়া ফুল জলে ভরে আছে! আঁধার নামিছে ঘন হয়ে, ওইখানে—
৩.
ছোট ছোট ঝোপঝাড় ঘিরে মথেরা ওড়ে! বন-পাথালির মাথায় এতোটুকু অন্ধকার। আর দূরের গ্রাম থেকে মেলা শেষে ফিরছে কয়েকজন অস্পষ্ট মানুষ। চারপাশে হেমন্তের শূন্য মাঠ, শুকনো নাড়া পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা! কেউ একজন আস্তে গান গেয়ে উঠলো! ‘আরও জোরে গাও হে’—বলল আর একজন! এখন এক অপার্থিব সুর একটু একটু করে নিজেকে বিছিয়ে দিচ্ছে ভুবনডাঙার পথে পথে! ঝুঁকে পড়া বাঁশের ডগা থেকে একটা রাতচরা পাখি, উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম আকাশের পানে!
৪.
অন্ধ লোকটার পাশ দিয়ে বিকেলের আলো নামছে। কোথাও সন্ধ্যামণির কাছে জেগে উঠলো তমোমণির দল। শিউলি তলার ছায়ায় ছায়ায় ঝুপসি আঁধার। এখন নিজের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখি—সন্ধ্যা হয় হয়! তুলসী মঞ্চে সাঁঝের প্রদীপ জ্বেলে এখনও মা ঘরে ফেরেনি। ওইখানে শ্মশানচাঁপার গন্ধে ভরে আছে।
৫.
পুকুরের ঘাটের পথে হেঁটে যাচ্ছে বউটা! ছায়াগাঁথা আকাশ ভরে বিছিয়ে আছে, অস্তরাগরেখা। আর মাঝে মাঝে বাতাস লেগে বঁইচি গাছের এলোমেলো ডালপালায় বিষণ্ণ সুর তুলছে! নুয়ে পড়ছে পাপড়ির সাজি। ওই তো শুকতারার পিছনে মরে যাওয়া কিছু আলো! ওই তো একটা ফুল খসে পড়লো জলে; জলের আলপনা এঁকে তারপর ডুবে গেলো!
কবি পরিচিতি
জন্ম, ডিসেম্বর ১৯৮৮। সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক!
প্রকাশিত গ্রন্থ:
শঙ্খ ও শোভা (২০২২)
কোথাও সন্ধ্যামণির কাছে (২০২৫)
ই-মেইল : anupamsoc@gmail.com