বিকেল বেলা
গোল্ডলিফ হাতে নিয়ে বসে আছে একটা কাক-
বিকেল বেলা।
আগলে রাখার মতোন কোনো ইনবক্স নেই-
বিকেল বেলা।
পরিত্যক্ত পৃথিবীতে একটা কেউটে সাপ ঘুমায়-
বিকেল বেলা।
ডানাটা সারাদিন আকাশে উড়ে উড়ে কেটে গ্যালো-
বিকেল বেলা।
মঙ্গলরোগ
আমার দরকার ছিল বুধবার। আজকে ক্যান জানি ‘বুধবার বুধবার’ লাগছে।
কিন্তু বুধবার আজকে না। আগামীকাল বুধবার। যদিও আগামীকাল আমার কাছে
বুধবারের কোনো দরকার নাই।
আজ মঙ্গলবার- আমি চাই তোমার মঙ্গল হোক। তুমিও আমার মতো
মঙ্গলরোগে ভুগতে থাকো যে কারো সাথে অন্তত পরবর্তী যে কোনো বুধবার পর্যন্ত!
লাইফ সাইকেল
শনিবারে তোমার জন্ম।
রবিবারটা ছিল বন্ধের দিন।
সোমবারে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই তোমার কাঁধে স্কুল তুলে দেয়া হলো।
মঙ্গলবারে তুমি এক বন্ধুর নাক ফাটিয়ে ঘরে ফিরলে।
বুধবারটা ছিল প্রেমের দিন।
বৃহস্পতিবারে তোমার গায়ে ১০৪ ডিগ্রী জ্বর।
শুক্রবারে তোমার বাবা মারা গ্যালো।
আজ শনিবার- তোমার জন্মদিন।
হঠাৎ তোমার ছেলেটা এসে জিজ্ঞেস করলো- ‘আশ্চর্য! আপনি এখনো বেঁচে আছেন!’
একটি নিমন্ত্রণপত্র
(To The Colonial Saints-)
তাদের চোখের মধ্যে আলো! আলোর চারপাশজুড়ে কালো।
কালোর মধ্যে আমাদের। পরাধীনতা নাকি ভালো!
ভালোর সবটা জুড়ে কাড়ো! কাড়ো! কেড়ে নাও আরো!
কোনো আক্ষেপ নেই আমাদের। নেই অভিযোগও!
তাদের নাম ধরে ডাকো। তাদের চোখের মধ্যে আলো!
মরে যাচ্ছে মানুষ। দুই। দশ। বারো। বা সংখ্যাটা সামান্য বড়!
তারা মূলত জানে- মরে গিয়েই মানুষ থাকতে পারে ভালো!
তাই আমাদের তারা মারে। গুলি কিংবা বোমে।
মরে গিয়েই আমরা। আরো থাকতে যাচ্ছি ভালো!
সুতরাং তারা আসতে চাওয়ার আগেই। এইখানে তাদের
আসতে বলতে পারো।
তাদের চোখের মধ্যে আলো! তারা মারুক। মারুক আরো।
মেরে মেরে তারা। রাখুক আমাদের ভালো!
তাদের নাম জপো। তাদের নাম ডাকো। তাদের চোখের মধ্যে আলো!
তারা বেঁচে থাকুক কালও!
পারস্পারিক দুর্ঘটনাসমূহ
অনেকদিন হয়ে গ্যালো অনেকের সাথে আর যোগাযোগ নেই।
অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কেউ কেউ নিজ থেকেই আকাশে ঝাঁপ দিয়েছে।
অনেকে ব্যস্ত। কেউ কেউ মরে গ্যাছে পারস্পারিক দুর্ঘটনায়।
অনেকে আবার এমন- তারা যে ছিলো তারও টীকা-ভাষ্য নেই।
অনেকে হয়তো বেঁচে আছে। চাকরী করছে। ব্যবসা করছে।
কারো কারো স্ত্রী আছে। পরস্ত্রী আছে। কেউ’বা দু চারটা কুমিরও পোষে।
পুরুষ-পরপুরুষে বিস্তর বদলে গ্যাছে।
কেউ কেউ খুনের পর খুন করে যাচ্ছে। কেউ কেউ খুন হচ্ছে। কেউ কেউ হবে।
অনেকে মানচিত্র বদলিয়েছে। ভালো নেই। ভালো আছে। ভালো নেই।
অনেকদিন হয়ে যাচ্ছে- মানুষে মানুষে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
হ-য-ব-র-ল
ধরি,
ক হচ্ছে আমার জীবন। খ হচ্ছে তোমার জীবন। এবং গ/ঘ/ঙ/চ হচ্ছে যথাক্রমে তৃতীয়/ চতুর্থ/ পঞ্চম/… এভাবে আরো আরো চরিত্রদের জীবন।
এরপর তুমি এসে আমার জীবনের মধ্যে ঢুকে গেলে। এখন আমার জীবন গিয়েদাঁড়ালো ক-খ তে। এই ক-খ এর অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হতে আবিষ্কার করলাম আরো আরো খ-গ/খ-ঘ/ক-খ-ঘ/ক-খ-ঙ-চ/.. ইত্যাদি নানা চরিত্রের উপজীবন।
তো বর্ণমালাদের এতসব ব্যঞ্জনার ভেতরে শুতে শুতে একদিন এক অবসন্ন বিছানায় পুনরায় আবিষ্কার করলাম আমার চরিত্র বা জীবন আসলে একমাত্র ‘ক’ ই । কিন্তু ততদিনে স্বরবর্ণ/ব্যঞ্জনবর্ণ/যতিচিহ্ন/যুক্তাক্ষর আর তোমার চতুর্দশ /পঞ্চদশ /ষোড়শ প্রেমিকেরা সব গুলিয়ে-টুলিয়ে আমি একদম হ-য-ব-র-ল!
বংশগতির বয়োজ্যেষ্ঠ সূত্র
পৃথিবীর তাবৎ মানুষ স্থলভাগ ছেড়ে চলে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে
সমুদ্রতেই তাদের শেষ নিয়তি মেনে নিয়ে
প্রাচীন পৃথিবীর মানুষদের মতো
কবি
শিক্ষানবিস
যাদুকর
জীবনবিদ
মুটে
মুচি
মুদি
ধর্মপ্রচারক
চিকিৎসক
মনোচিকিৎসক
সৈনিক
পতিতা ও শিশু
এবং
প্রাণীজগতের আর সব সব চরিত্রের লোক
যার যার জীবন নিয়ে সবাই এসে জড়ো হয়েছে
সমুদ্রের অনির্ধারিত বিভিন্ন পাড়ে।…
প্রজন্ম এই রকমই- যা কিনা যে কোনো
দৃষ্টিযোগ্য/অদৃষ্টিযোগ্য
কিংবা
যাপনযোগ্য/অযাপনযোগ্য
সময়ের দিকেই ভাসিয়ে দেয়া যায়।…
ভাসতে ভাসতে/ঢেউয়ে ঢেউয়ে/হাঁটতে হাঁটাতে
পৃথিবীব্যাপী মানুষেরা সব- ‘বামকানকে বলে ডানকানের গল্প। ডানকানকে শোনায় বামকানের গল্প।’
উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে
পশ্চিম প্রান্ত থেকে প্রাচ্যে, দূর প্রাচ্যে
ভাসতে ভাসতে/ঢেউয়ে ঢেউয়ে/হাঁটতে হাঁটাতে
পৃথিবীব্যাপী মানুষেরা সব- ‘বামকানকে বলে ডানকানের গল্প। ডানকানকে শোনায় বামকানের গল্প।’
কবি পরিচিতি
হাসিবুল আলম
জন্ম: ৬ অগাস্ট ১৯৯৪, জয়পুরহাট। বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিপ্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষার্থী। প্রকাশিত কবিতার বই: ৪১টি গুঁইসাপ (২০১৭)।
hasibul.a94@gmail.com