যাত্রাঃ আত্মা অভিগমে, পেরিয়ে যাই অন্তর
আমরা অবলোকন করেছি যে, Su Shi ছিলেন এক মহান মানুষ। Foyin ছিলেন একজন উচ্চমাত্রার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, এবং তারা দুজনে মাঝেমাঝে একসাথে ধ্যানস্থ হতেন। Foyin ছিলেন এক নিষ্ঠাবান ও সাধারণ চরিত্রের, এবং Su Shi সর্বদাই তাকে অনুসরণ করতেন। Su Shi নিজেকে তার সহযোগে খুব আপ্লুত থাকতেন ছোট ছোট বিজয়েও- এবং তিনি যখন বাড়ি ফিরেছিলেন, তার বোন Su Xiaomei কে এ ব্যাপারে বলেছিলেন।
একদিন এই দুইজন মানুষ একত্রে বসেছিলেন।
জিগ্যেস করলেনঃ ‘দেখুন তো, আমাকে দেখতে কেমন দেখাচ্ছে?’
Foyin বলেনঃ ‘আমি মনে করি আপনাকে এক বুদ্ধ মূর্তির মতোই লাগছে’
Su Shi এ কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো এবং Foyin কে বললোঃ
‘আপনি কি জানেন ঐখানটায় বসা অবস্থায় আমি আপনাকে কী দেখছি জানেন?শুধু একদলা গোবরের মতোন’।
আবার Foyin যেনো ভাষাহীন ও হতভম্ব হয়ে গেলেন।
Su Shi বাড়িতে ফিরে গিয়ে তার বোনের কাছে এ ব্যাপারে যথারীতি গর্ব করতে লাগলো।
Su Xiaomei শীতলহাসি হেসে জানালো তার ভাইকেঃ
“এতো কম বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে আপনি কী করে ধ্যান করেন? এটা তো আদতে মানুষের অন্তর এবং অভ্যন্তরের সৌন্দর্য দেখবার ব্যাপার আসলেঃ আপনার অন্তরে যা আছে তা চোখে ফুটেই উঠবে। Foyin আপনাকে বুদ্ধের মতোন দেখতে বলেছিলেন তার মানে তার অন্তরে একজন বুদ্ধের বসবাস; আপনি Foyin-কে গরুর বিষ্ঠার সাথে তুলনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি এবং আপনার অন্তরের ভেতর এই জিনিসই থাকার কথা!”
এটা আমাদের সবার জন্যই। চিন্তা করে দেখুনঃ আমরা সবাই একই গ্রহে বাস করি, কিছু মানুষ আরামে বসবাস করে, সুখী জীবন যাপন করে এবং বাকিরা সারাজীবন আর্তগোঙানির মধ্যে থাকে।
তাদের জীবন কি সত্যই আলাদা?
আসলে, ইহা আধ-বোতল মদের মতোন। একজন হতাশ ব্যক্তি হয়তো বলবেঃ
‘কী লজ্জা! এতো ভালো এক বোতল মদ সার তা মাত্র বোতলের অর্ধেক’ যখন একজন আশাবাদী বলবেনঃ ‘কী মোহন! এতো সুন্দর একবোতল মদ এবং তাতে এখনো অর্ধেকটা আছেই’।
আজকের গনগনে প্রতিযোগিতার সময়ে, ইতিহাসের যেকোন সময়ের চাইতেও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষ ইতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।
আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, কনফুসিয়াস বলতেন, ‘একজন junzi শান্ত থাকবেন ও উদ্ধত হবেন না, আর ছোটো কেউ শান্ত না থেকে উদ্ধত হবেন’ একজন junzi এর মন প্রশান্ত, স্থিতধী, সাহসী হবে, তাদের নীরবচারিতা ও কল্যাণমুখিতা ভেতর থেকেই আসবে’ বিপ্রতীপে যা আপনি একজন সাধারণ্যে দেখবেন তা অহমিকা ও আত্মগরিমায় আচ্ছন্ন; কারণ তাদের মন অস্থির ও উচাটন।
কনফুসিয়াস একবার বলেছিলেনঃ ‘বড় মনের মানুষ কখনো উদ্বিগ্ন, জ্ঞানী মানুষ কভু দ্বিমনা হবেন না; অকুতোভয় মানুষ কখনোই সন্ত্রস্ত নন’। (Analects XIV)
কিন্তু কনফুসিয়াস নিজেও ছিলেন বিনয়ী। তিনি বলেছিলেন তিনি নিজেও তিনটা বিষয় অর্জন করতে পারেন নিঃ কখনো উদ্বিগ্ন না হওয়া, কখনো দ্বিমনা না হওয়া এবং কখনো সন্ত্রস্ত না হওয়া।
‘একজন বড় মনের মানুষ কখনো উদ্বিগ্ন হবে না’ এর অর্থ দাঁড়ায়, সেই সে জন, যার একটা বড় অন্তর আছে, যা দরদভরা, যা ব্যতিক্রমভাবেই দয়ালু, সহিষ্ণু এবং উদাত্ত। তিনি অনেক ক্ষুদ্রেও বিচলিত না হয়েও তা উপেক্ষা করে যেতে পারেন। এবং ছোট কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না।
এভাবে তিনি পার্থিব ক্ষুদ্র সব অর্জন ও পরিত্যাগকে সামগ্রিকভাবেই এড়াতে পারেন। শুধু এই জাতীয় মানুষই সংশয় ও শঙ্কা থেকেও বের করে আনতে পারেন সমূহ অন্তঃসুখ!
‘একজন জ্ঞানী মানুষ দ্বিমনা হবেন না’ এর অর্থ দাঁড়ায় কী?
পঞ্চাশ বছর আগেও বেশিরভাগ চীনা হয়তো তাদের জীবনের একটা পুরো সময় একটা কাজের ইউনিটেই ব্যয় করে দিতেন, বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রায় শোনাই যেতো না, এবং তারা বাল্যকাল থেকে বৃদ্ধকাল অব্দি একটি উঠোনেই কাটিয়ে দিতেন। মানুষ কতটা বিপদাপন্ন ছিলো আর জীবনই-বা ছিলো আর কতটা অনুমেয় আর এসব থেকে উত্তরণের পথ।
কিন্তু আজ আমরা শুধু পছন্দের সংকটেই নিপতিত নই, আমরা পছন্দের সংখ্যাধিক্যে বেপথু।
এই ধন্ধ, এই ক্রান্তি তৈরি হচ্ছে আমাদের দ্রুতবিকশিত ও গতিশীল সমাজের জন্য।
আমাদের পরজগতের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই; আমরা বেশির থেকে বেশি যা করতে পারি তা হচ্ছে আমাদের বেছে নেবার শক্তিটা বাড়াতে। আমরা যখন বুঝতে পারি কখন বেছে নিতে হয়, কিভাবে কোনোকিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়, তখন এই উদ্বেগ ও অসোয়াস্তিগুলোও তিরোহিত হবে।
‘একজন জ্ঞানী মানুষ দ্বিমনা হবেন না’ এর অর্থ এই ছিলো কনফুসিয়াসের চোখে।
কিন্তু ‘একজন সাহসী মানুষ কখনোই সন্ত্রস্ত হবেন না’ এর অর্থই বা কী ?
এটাকে কঠিন না করে আমরা বলতে পারিঃ
‘যখন দুজন বলমত্ত মানুষের মধ্যে মুষ্টিযুদ্ধ হয়, বেশি সাহসীজন জিতে যায়’ অন্য অর্থে আপনার কাছে যখন পর্যাপ্ত সাহস ও উন্মুক্ত এক মানস রয়েছে আপনি তখন সামনে এগিয়ে যাবেন অনিরুদ্ধভাবেই, বিনাভয়ে!
কাজেই যখন কোনো Junzi ব্যক্তি অন্তরে উদারতা, প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতা অরজন করে কেবলমাত্র তখনই তাদের উদ্বেগ, সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভয় নিয়মে কমে যেতে থাকবে।
(চলবে)
পূর্ববর্তী পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন