যাত্রাঃ আত্মা অভিগমে, পেরিয়ে যাই অন্তর
আমরা অনুধাবন করেছি যে, আমাদের জন্য কনফুসিয়াস যে ব্যবহারবিধি নিরূপণ করে দেন তা কোনক্রমেই আমাদের চারপাশের দুনিয়ার নিষ্ঠুর সমালোচনা নয়; সেগুলো আসলে আমাদের সীমাবদ্ধ সময় ও শক্তিকে ভালো কাজে লাগানোমাত্র, এবং সমালোচনাকে আত্মসমালোচনায় বাঁক নেওয়ানো, শুধু নিজেদের অন্তর ও আত্মা অভিগমে।
আমাদের সবার উচিৎ নিজেদের ব্যাপারে সামান্য একটু কঠোর হওয়া, এবং অন্যদের ব্যাপারে একটু সহনশীল হওয়া ও সততাটা বজায় রাখা।
আজকাল বলা হয় যে একজন বিনম্র মানুষ সতত সততা ও স্পষ্টভাষিতা ধরে রাখবেন। কিন্তু বোকাটে ও সহজে প্রবঞ্চিত হবেন না, পক্ষান্তরে তাকে হতে হবে অন্যের ভুলচুকের ব্যাপারে সহনশীল, অন্যের ব্যাপারে ক্ষমাশীল এবং পরমতসহিষ্ণু। একজন বিনম্র মানুষ অন্যের চোখে দুনিয়াদারি দেখার ইচ্ছা ও ক্ষমতাটাও সংরক্ষণ করবেন- এটাই প্রত্যাশা।
এই কারণেই প্রকৃত Junzi ব্যক্তিই পারেন ‘ not to blame the heaven, not to blame the Man’ এই ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ রেখে আচরণ করতে। তিনারা ঈশ্বরকেও দোষেন না আর ভাগ্যকেও না। ভাগ্য তাদের প্রতি ‘প্রসন্ন সহাস’ নয় আর এই অভিযোগ করেও নয় যে ‘দুনিয়াতে কেউই আমাকে বুঝলো না হায়!’
একটি শক্তিশালী অন্তর ও আত্মা আপনার সহজাত ও অনিবার্য সব বেদনা মুছে দিতে পারে, আরো পারে জীবনে পরিহারযোগ্য ভুল এড়িয়ে যাবার শিক্ষা দিতে। একসাথেই তা করতে পারে আপনার উদ্দেশ্যের দৃঢ়তা সঞ্চার, আপনার উদ্যমকে বাড়িয়ে দিতে পারে, আপনাকে পুরোদমে ও সক্রিয়ভাবে কার্যকর জীবন নিয়ে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন যেন আপনি নতুন জন্মের দেখা পাবেন, এবং আপনি অন্যদেরকেও দেখাবেন এই সুন্দর জীবনের শ্রেয় যে পথ।
যদি কোনো ব্যক্তির অন্তর উদ্বিগ্নতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ভয় থেকে মুক্ত থাকে, তাদের নিজেদের চারপাশের দুনিয়াদারির বিষয়ে খুব কমই কোনো অভিযোগ থাকতে পারে। এবং তাদের সুখের দিশা প্রাপ্তি ও অর্জিত সুখের উপর স্থায়িত্ব লাভ করতে সক্ষম হন। এই প্রক্রিয়ায় সুখের পরিবৃদ্ধিও ঘটার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান রয়েছে। কনফুসিয়াস পড়েই আমরা আরো জানতে পারি যে, উদ্বিগ্নতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ভয় থেকে মুক্ত থেকে, নিজেদের চারপাশের দুনিয়াদারির বিষয়ে খুব কমই কোনো অভিযোগ এনে সুখের দিশা প্রাপ্তি আর এই প্রক্রিয়ায় সুখের পরিবৃদ্ধিও ঘটানোর মাধ্যমে অর্জিত সুখের উপর স্থায়িত্ব লাভ করতে সক্ষম হতে পারি। অর্জিত সুখে স্থির থাকার কৌশল অর্জন করার চেয়ে বড় শিক্ষা আর কিইবা হতে পারে!
যদি আপনার মাথা পরিস্কার থাকে আর মন থেকে থাকে উদার, সরল ও সাহসী, তাহলে দেখবেন অনেক অপ্রত্যাশিত অর্জন আপনার হয়ে ধরা দিয়েছে, এবং প্রত্যেকে আপনাকে সকল ঐশ্বর্য কোথায় তার সুলুকসন্ধান দেবে এনে। যদি আপনি এর বিপরীত ধারার হোন, তবে কনফুসিয়াসের মতো সর্বজনীন শিক্ষক যিনি দরকারি অদরকারি সকল জ্ঞান একত্রে প্রদান করেছেন তিনিও আপনার জন্য কোনো শ্বাসক্ষয় করতে চাইতেন না।
যেমনটা কনফুসিয়াস ভনেন, যদি আপনি কারো দেখা পান যে আপনার কথায় উপকার লাভ করতো, কিন্তু আপনি তাকে এড়িয়ে গেলেন, তখন আপনি আসলে ‘একজন মানুষকে গোল্লায় যেতে দিলেন যেন’। আপনি তার জীবনে অবদান রাখতে ব্যর্থ হলেন- যা কাম্য না। বিপ্রতীপভাবেই, যদি এই ব্যক্তি শুনতে প্রত্যাখ্যান করে আপনাকে, আপনার কথাগুলোই বিফলে যাবে- এবং এটাও কাম্য নয়।
যদি আপনি সেই মানুষটি হতে চান যার সাথে মানুষ ভাব বিনিময়ে সক্ষম, তবে আপনার মূলমন্ত্র হবে অন্তঃকরণ স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত রাখা। আমাদের ব্যতিব্যস্ত আধুনিক দুনিয়াতে, যেখানটায় সমাজ খুব খুব জটিল ইহা অত্যাবশ্যক যে আমরা একজন Junzi এর মতো সুবিশাল অন্তরের হবো আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করে নেবো।
কীভাবে?
তা কনফুসিয়াস দেখিয়েছেন তার শিক্ষায় শিক্ষায়।
(চলবে…)