ইমরুল হাসানের ইন্টারভিউ | আলাপকারী: রুহুল মাহফুজ জয়

ইমরুল হাসান। একজন কবি, চিন্তক। এছাড়াও গদ্য লিখেন, অনুবাদের কাজও কম করেন নাই। বাংলাদেশের সিনেমা- সিনেমার গান নিয়া কাজ করতেছেন। ইমরুল হাসানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা বেশ পরিষ্কার। তিনি জুলুমের বিপক্ষে, ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমের বিপক্ষে ননস্টপ ভোকাল। সম্প্রতি ফেসবুক মেসেঞ্জারে কবি ইমরুল হাসানের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ হয়। শিরিষের ডালপালার পাঠকদের জন্যে সেই আলাপ রইলো এখানে। আলাপে উনি যেই বানানরীতি ব্যবহার করেছেন, সেভাবেই প্রকাশ হলো।


বাংলাদেশের রাজনৈতিক কবিতার ট্রাডিশন কখনোই কোন ইন্টেলেকচুয়াল প্রজেক্টের লগে এলাইনড হওয়ার মতো ম্যাচুরিটির দিকে যাইতে পারে নাই


রুহুল মাহফুজ জয়:

ইমরুল ভাই, কেমন আছেন বাকশালি আমলে, ঘন ব্ল্যাকআউটের কালে?

ইমরুল হাসান:

বাঁইচা থাকা তো সবসময়ই নরমাল একটা ঘটনা। কিন্তু যখন জুলুমের শাসনে মানুশরে বাঁইচা থাকতে হয়, তখন বাঁইচা থাকাটা নরমালের চাইতেও বাড়তি কিছু হয়া উঠে। মেন্টাল স্যানিটি মেইনটেইন করা টাফ হয়া উঠে, বেশিরভাগ সময়। একজন রাইটাররে তার ক্রিয়েটিভ কাজকামের বাইরেও সামাজিক-মানুশ হিসাবে রোল প্লে করতে হয়। তো, অইটা ঝামেলার জিনিসই, বেশিরভাগ সময়।

রুহুল:

দমবন্ধ হয়ে আসে নিশ্চয়, টের পাই আরকি। অই ক্রিয়েটিভ কাজ-কাম কী কিছুটা হিল বা নিরাময়ের আশ্রয়?

ইমরুল:

অইটা একটা বাড়তি ঝামেলা আর কি! যেমন, লাতিন আম্রিকার রাইটার’রা সবসময় এতো পলিটিক্যাল কেন? এইটা ভাবতে গিয়া একটা সময় বুঝতে পারতাম না ঠিকঠাক মতো; পরে টের পাইছি যে, একটা জুলুমের শাসনে থাইকা একজন রাইটার’রে পলিটিক্যালি ভোকাল না হয়া কোন উপায় নাই। এইটারে এড়ায়া যাওয়াটা যেকোন রাইটারের পক্ষেই কঠিন। মানে, এই যে সামাজিক-পরিস্থিতি, সেইটারে ডিল করাটা বাড়তি একটা কাজ। এখন ক্রিয়েটিভিটি সেই বাস্তবতাটারে এড়ানোর কোন ঘটনা না, বরং এইটারে যে ক্যারি করা লাগে, সেইটা একজন ক্রিয়েটিভ পারসনের জন্য প্রবলেমই মনে হয় আমার কাছে। মানে, “প্রতিবাদী-সাহিত্য” কইরা রাজনীতি’তে তেমন কোন চেইঞ্জ আনা তো মুশকিলই, আবার পলিটিক্যাল-সাহিত্যে যেহেতু কনটেম্পরারি ইস্যুগুলা নিয়া ডিল করা লাগে, একটা সময় পরে গিয়া সেইগুলা খুব তাড়াতাড়ি ইরিলিভেন্ট হয়া উঠতে পারে। যেমন ধরেন, এরশাদ-বিরোধী সাহিত্য তো ছিল একটা সময়, ঢাকা শহরে; পরে গিয়া আমরা তো দেখতেছি, বেশিরভাগই ট্রাশ জিনিস হইছে। শামসুর রাহমান কবি হিসাবে সামাজিক-দায়িত্ব পালন করতে গিয়া অনেক অনেক ট্রাশের নিচে চাপা পইড়া গেছেন। আবার মার্কেস উতরায়া গেছেন। মেবি, কবিতাতে জিনিসটা ডিল করা অনেক বেশি টাফ। কিন্তু লেখালেখি বা রাইটিংসরে পলিটিক্যাল টুল কইরা তুলতে হইলে রাইটারের দিক দিয়া রিডিউসড একটা টেনডেন্সির দিকেই যাইতে হয় বেশিরভাগ সময়। এইটা রাইটারের জন্য পজিটিভ কোন জিনিস না মনে হয়।

রুহুল:

আপনার এই বক্তব্যে অনেকগুলা লেয়ারের চিন্তা করার জায়গা আছে। নেরুদা, লোরকারা পলিটিক্যাল জায়গাগুলা ডিল কইরাও তো ট্রাশের নিচে পড়েন নাই। আমাদের কবিরা ক্যানো চাপা পড়েন?

ইমরুল:

লিটারারি ভিশন মেবি একটা ঘটনা। নেরুদা এবং লোরকার খুব একটা ভক্ত আমি না, কিন্তু উনারা ফ্যাসিজমের বিরোধিতা করতে গিয়া এক ধরনের বিপ্লবী-ড্রিমের জায়গারে তৈরি করতে পারছিলেন। এখন যেইটা এক ধরণের বিপ্লবী-পনার ভিতরে আটকায়া গেছে বইলা আমার কাছে মনেহয়। মানে, ইমোশনালি উনারা একটা ইন্টেলেকচুয়াল স্পেইসরেও রিলিভেন্ট কইরা তুলছিলেন। বাংলাদেশের পলিটিক্যাল রাইটিংসে এই জিনিসটা নাই। যে কোন ভাষার কবিতা তো একটা ট্রাডিশনের ঘটনা। একটা সময়ে কাজী নজরুল ইসলাম যেইভাবে ব্রিটিশ-বিরোধী হইছেন, বা ফররুখ আহমেদ যেইভাবে ইসলামি-পরিচয় চাইছেন, অই জায়গাগুলা তো পলিটিক্যাল এচিভ হইছে একভাবে; কিন্তু এরপরেও উনাদের যেই ইমোশনাল-জোস, সেইটা কন্টিনিউ হইছে। কিন্তু আরো বাজে হইছে, একটা ফাঁপা ইমোশন হিসাবে কন্টিনিউ হইছে। এই কারণে পরে নির্মলেন্দু গুণ’দের “রাজনৈতিক কবিতা” হইছে একটা পলিটিক্যাল দলের তাবেদারি করারই ঘটনা! মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কবিতার ট্রাডিশন কখনোই কোন ইন্টেলেকচুয়াল প্রজেক্টের লগে এলাইনড হওয়ার মতো ম্যাচুরিটির দিকে যাইতে পারে নাই। আর এমনিতেও, অইটাই যদি কবিতার মেইন উদ্দেশ্য হয়া উঠে, সেইটা কবিতার জায়গা থিকাও সইরা যাইতে থাকে, একভাবে। এইটারে ডিল করাটা টাফ। আমার ধারণা, দুনিয়াতে যত সুন্দর সুন্দর প্রেমের কবিতা আমরা পাইছি, তত ভালো পলিটিক্যাল-কবিতা আমরা পাই নাই। একটা লিটারারি-ভিশনরে পলিটিক্যাল-ভিশন কইরা তোলাটা কবিতাতে কঠিন কাজই, সবসময়।

রুহুল:

আপনার সাথে একমত। তো যেই কথাটা বলছিলেন, একজন পোয়েট-রাইটারের লেখালেখি বা ক্রিয়েটিভিটির বাইরে গিয়াও কিছু দায়িত্ব থাকে। জুলুমরে তারা সঙ্গ দিতে পারে না—নৈতিকভাবেই। গত তের/চৌদ্দ বছরের তীব্র স্বৈরাচারি আমলে আমরা তো বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের অইভাবে ভোকাল হইতে দেখি নাই। যেন পলাইতে চায় বা চুপ থাইকা স্বৈরাচাররে সাপোর্টই করতে চায়। এইটা কী দুর্বল মানসিকতা নাকি সুবিধাবাদী চয়েজ?

ইমরুল:

এইখানে এটলিস্ট তিনটা ঘটনা আছে বইলা আমি মনে করি।

এক হইতেছে, চিন্তা করাটারে আমাদের লিটারেচারে মোটামুটি নেগেটিভলিই দেখা হয়। যে কেউ ক্রিয়েটিভ-রাইটিংয়ে আছে এবং একইসাথে ইন্টেলেকচুয়াল-চিন্তাও করতে চাইতেছে, এই দুইটা যেন আলাদা আলাদা দুইটা ঘটনা। এই জিনিসটা সবচে বেশি ক্ষতি করছে, এবং এখনো করতেছে বইলা আমি মনে করি। মানে, আপনারে একাডেমিশিয়ান হইতে হবে – ব্যাপারটা এইরকম না। কবিতাও এক ধরণের চিন্তা-পদ্ধতি। একটা ধরন, ভাবনার। মানে, কবিতা সবসময় নাজিল হইতে হবে – এইরকমের জিনিস না। সার্টেন টেকনিক যে এইখানে কাজ করে – এইটা নিয়া কনশাস হইতে পারলে তো ভালো। বা আমার লেখালেখি কোন পলিটিক্যাল-বাস্তবতাটারে হেল্প করতেছে, সেইটা কিছুদূর পর্যন্ত বা অনেকদূর পর্যন্তই তো বুঝতে পারা পসিবল। কিন্তু এইসব বিষয়ে “খেয়াল-না-করাটারে” “কবি-প্রতিভা” বইলা ভাবার একটা জায়গা আছে। যেই কারণে এইরকম জুলুমের টাইমেও এই বিষয়ে সজাগ না-থাকাটা কোন সমস্যা না, বরং “কবি-প্রতিভার” জায়গা থিকা জায়েজ করার একটা ঘটনা আছে বইলা আমার কাছে মনে হয়।

সেকেন্ড হইতেছে, পলিটিক্যালি যেই কলোনিয়াল ট্রেডিশনটা আমরা ক্যারি করতেছি, সেইটার বাইরে যাইতে আমরা রাজি হইতে পারতেছি না। অই জায়গাগুলারে কোশ্চেন না করতে পারার কারণে এক ধরনের কন্টিনিউটির ভিতর দিয়া যাওয়াটারেই “সাহিত্য” বইলা ধইরা নিতেছি আমরা। এইটা আরেকটা ট্রাপ। মানে, “বাংলা-কবিতা” বইলা কলোনিয়াল-পিরিয়ডের একটা চিন্তার মধ্যে আটকায়া থাকাটা, এক ধরনের পলিটিক্যাল সাবমিশনের জায়গাটারে সহজ কইরা তুলছে বইলা মনে হয়।

লাস্টলি, যেই মিডিয়া-রিয়ালিটি’টা ভিজ্যুয়ালি প্রেজেন্ট করা হইতেছে আমাদের সামনে, সেইটার বাইরে গিয়া ভাবতে রাজি না হওয়ার একটা ঘটনাও এইখানে আছে বইলা মনেহয়।

মানে, উনারা জাইনা-বুইঝা একটা জুলুমের শাসনের পক্ষে থাইকা যাইতেছেন – ব্যাপারটা এতোটা সিম্পল-না না, কিন্তু যেইভাবে এই জুলুমের ফেভারে থাকতে কোন সমস্যা হইতেছে না, সেই জায়গাটারে এই তিনটা জায়গা থিকা দেখা যাইতে পারে।

এর বাইরে, বাংলাদেশের বাকশালি কবি-সাহিত্যিকরা সুবিধা খুব বেশি পাইতে পারেন বইলা মনে হয় না, কিন্তু সুবিধা পাওয়া উচিত – এই দাবি উনাদের বেশ স্ট্রংলিই আছে মনে হয়।

রুহুল:

মানে এই দাসত্বটা সাবকনশাসেও ঘটতেছে?

ইমরুল:

হ্যাঁ, আমার ধারণা, সাব-কনশাসে বলেন বা অন্য যে কোন টার্মে এই জুলুমের শাসনের ঘটনারে এনকাউন্টার করতে হইতেছে না। বাকশালি কবি-সাহিত্যিকদেরকে, বা এনকাউন্টার করাটারে নন-সাহিত্যিক 🙂 একটা ঘটনা বইলাও ভাবতে পারতেছেন, যার ফলে ইজি হইতেছে ঘটনা’টা। কোন টেনশন ছাড়াই সাহিত্য-কর্ম চালায়া যাওয়া যাইতেছে। যেইটা নিয়া সমাজের মানুশ-জনেরও কোন মাথা-ব্যথা নাই আসলে। কিছু গরু-ছাগল মনের আনন্দে মাঠে ঘাস খাইতেছে— এইরকম একটা সাহিত্যিক-ব্যাপার সহজে চলতে পারতেছে।

রুহুল:

বাংলাদেশে প্রগতিশীলতা মানেই যেন ছাত্রজীবনে বাম পলিটিক্স করা আর আওয়ামী ঘরানার লোকজন। এদের বাইরে গিয়ে কেউ যেন সেকুলার, প্রগতিশীল হইতে পারবে না। এরকম একটা ব্যাপারও তো চালু আছে, নাকি? এই প্রগতি বাটপারির একটা উদাহরণ দেই। যুবদলের নেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আটক করা হইছে, এটা নিয়া কোনো সাড়া-শব্দ নাই। আমি নিশ্চিত, ওনার রাজনৈতিক এই পরিচয়টা না থাকলে আমরা ভিন্নরকম ট্রিটমেন্ট দেখতে পারতাম। আপনার অবজারভেশন কী?

ইমরুল:

মানে, বাংলাদেশের সাহিত্য মানেই হইতেছে এক ধরনের ‘মার্কসিস্ট-সাহিত্য’! আপনি কবি-সাহিত্যিক, কিন্তু ‘মার্কসিস্ট’ না – এইটা তো এখনো মোটামুটি পসিবল না! তো, এইটা মার্কসিজমের সমস্যা না, বরং বাংলা-সাহিত্য জিনিসটারে যে আমরা কিছু লিমিট-করা ফেনোমেনার ভিতরে আটকায়া রাখছি – সেইটারই ঘটনা। এর আরো ইনফিরিয়র অবস্থা হইতেছে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ লোক হওয়া, যেইটার পলিটিক্যাল এফিলিয়েশন হইতেছে বাকশাল। এমনকি বিএনপি করলেও আপনারে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ লোক হইতে হবে, তা নাইলে আপনি বাংলাদেশে ‘কবি-সাহিত্যিক’ বা সাহিত্য-সমাজের লোক হইতে পারবেন না। এই জায়গাগুলারে ডিল না করতে পারার বা ডিল না করতে চাওয়ার  ইন-এবিলিটি আমাদের কবি-সাহিত্যিকদেরকে সার্টেন পলিটিক্যাল দলের গোলাম হিসাবে তাদের রোলটারেই মাস্ট কইরা তুলে নাই, একইসাথে আমাদের লিটারেচারের জায়গাগুলারে আরো ন্যারো এবং লিনিয়ার কইরা তুলছে আসলে।

আর “প্রতিবাদ করা”র পুরা ব্যাপারটা একটা পলিটিক্যাল বিজনেসই হয়া উঠছে আসলে। 

রুহুল:

এছাড়া মোটাদাগে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের যে প্রগতিশীলতা, তা কলকাতাকেন্দ্রিক কালচাররেই ক্যারি করে এখনও। প্রগতিশীলতা মানে য্যানো কলকাতাইয়া বাংলা বলতে এবং লিখতে হবে, অইভাবে কথা বলতে হবে, দাড়ি-টুপি পরলেই মৌলবাদী— এরকম বাইনারি চিন্তারে এখনও বহন করে চলতে দেখি তো আমরা।

ইমরুল:

হ্যাঁ, এইখানে দুইটা ঘটনা আমি দেখি।

এক হইতেছে, এইটা যেন অটোমেটিক বা ন্যাচারাল একটা ঘটনা! মানে, কলোনিয়াল-কলকাতার ঘটনাটা। কিন্তু তা তো না! হিস্ট্রিক্যালি যখন রিটেন-ফরম্যাট’টা চালু হইছে, তখন কলকাতার জিনিসগুলা সেন্টার হিসাবে ছিল। অই জায়গাটারে হিস্ট্রিক্যালি দেখতে না-চাওয়ার একটা ঘটনা আছে।

সেকেন্ড হইতেছে, এখন সবকিছু “বাংলাদেশি” হয়া উঠতে হবে – এইরকম না, বরং অই পিছনের হিস্ট্রিক্যাল রিয়ালিটিতে বারবার ফিরা যাওয়াটা তো পসিবল না! মানে, জাতীয়তাবাদী যেই ডিলেমা – অই জায়গাটা থিকা বাইর হয়া আসাটা জরুরি।

রুহুল:

এই বাইর হয়ে আসার চেষ্টাটা আপনার আছে। আপনাকে অনেকেই অনুসরণও করছে মনে হয়। এই আলাদা হইতে চাওয়ার চিন্তাটা কখন আসছে?

ইমরুল:

ইচ্ছা একটা আছে আমার, ক্রিয়েটিভ প্রসেসে যতটুক কনশাস হওয়া যায়, সেই জায়গাটারে ইগনোর না করার।

আর ক্রিয়েটিভ কাজকামের জায়গাটা তো খুব লোনলি একটা ঘটনা। অনেক জায়গা থিকাই অনেকে স্পার্কগুলা নেয়। কিন্তু নিজের আগুনটা নিজেরেই জ্বালাইতে হয়। আগুনটা নিজের ভিতরে ক্যারি করতে পারতে হয়। তো, আমি মনে করি না, কেউ আমারে ফলো করতেছে। অনেকে নিজের মতো রাস্তা খুঁজতে গিয়া হয়তো আমারে লোকেট পারতেছে কোথাও। একজন রাইটার আসলে নিজের মতোই লেখে। তা না করতে পারলে লেখালেখির ঘটনাটাই তৈরি হয় না।

আর এমনিতে লেখতে গেলে তো নানান ধরণের কোশ্চেন ফেইস করতেই হয়, নিজের কাছে। আমাদের সময়ের টোটাল চিন্তা-ভাবনার জায়গাগুলাই তো চেইঞ্জ হইতেছে, সেইটার ইনফ্লুয়েন্সটাই বেশি মনে হয়। এর বাইরে একজন রাইটাররে তো তার ইনটিউশনের উপরেই ভরসা করতে হয়। আর একটা আর্টরে আর্ট হয়া উঠতে হইলে তার ডিফাইনড যে টেরিটোরি তার বাইরে গিয়া অপারেট করতে পারতে হবে আসলে। এইটা মোটামুটি সবসময়ের সত্যি। মানে, যেই কবিতা লেখা হয়া গেছে, সেই কবিতা তো আরেকবার লেখতে পারবেন না আপনি। নতুন-কবিতা মানেই ভালো-কবিতা না। কিন্তু ভালো-কবিতার চাইতে নতুন-কবিতা লেখার ট্রাই আমাদেরকে করতে হবে। অই ইচ্ছাটা থাকলে তখন নতুন নতুন ওয়ে’তে ট্রাই করার জায়গাগুলা আমাদেরকে এক্সপ্লোর করতে হবে। অই ইচ্ছাটা থিকা ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে দেখতে চাওয়ার ঘটনাটা ঘটছে মেবি।

রুহুল:

আমার অবজারভেশন হইলো, কলকাতাইয়া কবিতাস্কুলের অনুসরণকারীদের বাইরে গত আট-দশ বছরে বাংলাদেশের কবিতায় নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্মসহ জীবনাচার, ক্রাইসিস ডিল করার নতুনতর কবিতাস্কুল গড়ে উঠতেছে। যা তরুণতর কবিরা গ্রহণও করতেছে। এই কালচারাল পলিটিক্সের জায়গাটা চিহ্নিত করে কবিতারে আরও স্বদেশি কইরা তোলার ব্যাপারটারে আপনি কীভাবে দেখেন?

ইমরুল:

কলোনিয়াল-কলকাতার বাংলা-ভাষা তো অনেক আগেই ডেড! পশ্চিমবঙ্গের মানুশ-জনও এখন গত শতকের বুকিশ ভাষায় কথা কয় না আর। ইউরোপিয়ান রুচি-বোধ বইলা যেই এলিটগিরি, লিবারাল-ভন্ডামি ছিল, সেইটাও মরার অবস্থা। যার ফলে, অই জায়গাগুলা আর কোনভাবে ভ্যালিড না। এইগুলা নিয়া সাহিত্য করতে গেলেও এই কারণে দেখবেন কোন ফিলিংস তৈরি করা যায় না।

কিন্তু ঘটনা হইতেছে, নতুন জায়গাগুলা কেমনে তৈরি হবে, সেইখানে খালি আন-সার্টেনটিটি আছেই না, বরং অই ইন্টেলেকচুয়াল এবং ক্রিয়েটিভ গ্রাউন্ডগুলা এখনো ক্লিয়ার না। আমরা এইটুক বুঝি বা টের পাইতেছি যে, পুরান গ্রাউন্ডগুলা আমাদেরকে ছাড়তে হবে। কিন্তু নতুন জায়গাগুলা কেমনে তৈরি হইতেছে – অই ডিসকভারিটা এখনো পুরাপুরি রিভিল হয় নাই আমাদের সামনে। তো, এই সময়ে চেষ্টাগুলাই ইম্পর্টেন্ট মনে হয় আমার কাছে। কিন্তু কিছু হইতেছে কিনা – সেইটা বুঝতে হয়তো আমাদের আরো সময় লাগবে।

রুহুল:

বহুজনের, বহুরকমের চেষ্টার পরে নিশ্চয় জায়গাগুলা ক্লিয়ার হবে। আমাদের কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে এখনও সংস্কৃতজাত শব্দ, কলকাতাইয়া টোনের শব্দ ব্যবহারের প্রচলন ব্যাপক। একজন সাহিত্যিক কথা বলার সময় বলতেছে বিকাল, সন্ধ্যা, জুতা কিন্তু লেখার সময় লিখতেছে বিকেল, সন্ধ্যে, জুতো ইত্যাদি। ধ্বনির পরিবর্তনের ব্যাপারও তো নাই। কথাসাহিত্যিকরা কী তুলনায় পিছায়ে?

ইমরুল:

ফিকশনে শহীদুল জহিরের পরে তেমন নতুন কিছু তো আমরা মেবি এখনো পাই নাই। আমার ধারণা, ফোকাসগুলা ভুল-জায়গাতে করা হইতেছে। নতুন কোন কিছু হইতেছে না – এইটা যতোটা না ঘটনা, তার চাইতে অই জায়গাগুলারে লোকেট করার ব্যাপারে গ্যাপ আছে বইলাও মনে হয় আমার। মানে, অই ডেড-সাহিত্যের বাইরে যারা কাজ করতেছেন, তাদেরকে দেখতে-না-পাওয়ার এবং দেখতে-না-চাওয়ার একটা জায়গাও এইখানে আছে বইলা আমি মনে করি।

রুহুল:

এই যে লোকেট করার গ্যাপ থাইকা যাওয়া—এইটা কী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা? আমাদের অঞ্চলে কন্সিপিরেসি অব সাইলেন্সের চর্চা বা স্বীকৃতি দেবার কার্পণ্য এত বেশি ক্যানো?

ইমরুল:

যারা সাহিত্যের অথরিটি, তারা জায়গাগুলারে লোকেট করতে পারতেছেন না – এইরকমই খালি না, পলিটিক্যাল কারণে এই জায়গাগুলারে আউট-অফ-ফোকাস কইরাও রাখতে চাইতেছেন। সাহিত্য-পলিটিক্স তো সবসময়ই আছে। কিন্তু কোন পলিটিক্যাল কারণে সাহিত্যিক-এক্সপ্লোরেশনের দমায়া রাখার ঘটনা বাংলাদেশে পারসোনাল জায়গা থিকা খালি ক্রুয়েল ঘটনাই না, বরং কিছু কালেক্টিভ বেরিয়ার তৈরি করার কাজই করে। যেইটা খুবই বাজে একটা জিনিস।

রুহুল:

বাকশালের এই সময়ে ব্যারিয়ার কী আরও বাড়ছে?

ইমরুল:

হ্যাঁ, মানে, এইটা বাকশালি-শাসনটারে সাপ্লিমেন্টও করতেছে একভাবে। এর কোলাবরেটর হিসাবে কাজ করতেছে আসলে।

রুহুল:

কবিতা নিশ্চয় মানুষের কালচারাল আইডেন্টিটির বাইরের কিছু না। একুশ শতকে এসে সাহিত্যকর্ম ভৌগোলিক কালচারাল পলিটিক্সে অবদান রাখতে পারে? নাকি এটা চিরন্তন একটা লড়াই? আমরা দেখি যে, সাহিত্যে নোবেল দেবার সময় অই কবি বা সাহিত্যিকের লেখা তার ভূগোল বা জনপদ, মানুষ, কালচাররে কেমন ডিল করেছে সেইটারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শেকড়, আত্ম-অনুসন্ধান গ্রেট সাহিত্য হবার জন্য কতটা জরুরি?

ইমরুল:

ব্যাপারটারে বরং আমার উল্টা মনে হয় অনেকটা। মানে, কবিতা, কাহিনি, গান এইরকমের ক্রিয়েটিভ জিনিসগুলা মানুশের আইডেন্টিটির জায়গাগুলারে রিভিল করে না, বরং তৈরিই করে আসলে। ব্যাপারগুলা ভাইস-ভার্সাই বলে, লোকজন। কিন্তু আমি মনে করি, লাইফের মিনিংগুলা ডিপেন্ড করে এই জিনিসগুলার উপরে। আমরা বাঁইচা আছি বইলা গান শুনি, কবিতা পড়ি, সিনেমা দেখি – এইটা তো আছেই; কিন্তু আইডেন্টিটির জায়গাগুলা, বাঁইচা থাকার ঘটনাগুলা এইরকম ক্রিয়েটিভ এক্সপ্লোরেশনের ভিতর দিয়াই তৈরি হয়। মানে, আমরা তো অবশ্যই প্রেমে পড়ি; কিন্তু একটা প্রেমের ধারণাও তৈরি করি। কিছু জিনিস ভালো-লাগে, কিছু জিনিস খারাপ-লাগে, কিন্তু এই জিনিসগুলা ক্রিয়েটিভ-ম্যাটেরিয়ালগুলা কনজিউম করার ভিতর দিয়া, এদের লগে কানেক্ট করার ভিতর দিয়া আমরা অই ফিলিংগুলাতে রিচ করি। এই যে শেকড়ের জায়গাগুলা, এইগুলা কন্সটেন্ট না। তবে যেমন টাইমের ঘটনা, জিওগ্রাফিক্যাল লোকশনেরও ঘটনা। একটা সময়ের বাস্তবতা যেইরকম আরেকটা সময়ের বাস্তবতার চাইতে আলাদা, এইরকম একেকটা জায়গাতে জিনিসগুলা আলাদা রকমের হইতে পারে। মানে, ডিফরেন্সের জায়গাগুলা আছে। কিন্তু যেইভাবে আমরা দেখি, বা দেখার অভ্যাস আছে আমাদের, অইরকম না মেবি।

রুহুল:

এক্সপ্লোর করার ডাইমেনশন, ধারণার মধ্যেও ব্যাপারগুলা আলাদা হয় নিশ্চয়। আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ তো আছেই। ইন্টারনেটের কারণে পুরা দুনিয়াটাই একটা দেশ, কালচারের ভিন্নতাও খুব একটা থাকতেছে না। স্মার্ট মানুষজন দ্রুতই এই বাস্তবতারে এডপ্ট করে। সাহিত্যও তো এই ডাইমেনশনের বাইরে না। কী বলেন?

ইমরুল:

মানে, আমি একভাবে বলতে চাইতেছি যে, আর্ট আমাদের জীবনের সত্যিগুলারে আবিষ্কার করে না, বরং আর্টের সত্যিগুলারে আমরা লাইফের এগজিসটেন্সের মিনিং হিসাবে পারসিভ করি। এই ঘটনাটা বেশি ঘটে।

রুহুল:

স্ট্রংলি এগ্রি করি। দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক মানুষ এবং তার সবকিছুই এখন গ্লোবাল টেরিটরির মধ্যে। সাহিত্যে এর প্রভাবটা কীরকম পড়তেছে মনে হয়?

ইমরুল:

গ্লোবাল জায়গাটা আগেও ছিল, কিন্তু এখন অনেকবেশি ইনটেন্স হয়া উঠতেছে মনে হয়। অনেক সময় লিনিয়ারও। তো, এইটা প্রব্লেমেটিকও মনে হয়, মাঝে-মধ্যে। মানে, যেইভাবে “গ্লোবাল” জায়গাটা তৈরি হইতেছে।…

রুহুল:

প্রবলেমেটিক কোন কোন জায়গা থিকা?

ইমরুল:

গ্লোবাল হিসাবে একটা লিনিয়ারিটি’রে প্রজেক্ট করার জায়গা থিকা। মানে, গ্লোবাল বলতে সার্টেন কিছু জিনিসই আমরা পাইতেছি আমাদের সামনে। কিন্তু অইটুকই, বা অই কয়টা জিনিসই তো আমাদের দুনিয়া না!

রুহুল:

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনি বাংলাদেশের সিনেমা, সিনেমার গান নিয়া কাজ করতেছেন। এই জায়গাটা নিয়া কাজ করতে আগ্রহী হইলেন কেন? কালচারাল পলিটিক্স কী কোনোভাবে ভূমিকা রাখছে?

ইমরুল:

আসলে সবসময় ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের ভিতরে থাকাটা তো কঠিন কাজ-ই, মানে, এইটা এমন একটা প্রসেস যেইটা লাইফের অন্য সব জিনিসের ভিতর দিয়া চলতেই থাকে। তো, এক তো হইলো, লেখালেখি’র বাইরেও বা এর পাশাপাশি অন্য কিছু করাটা লেখালেখিরে হেল্প করতে পারে একভাবে।

আরেকটা জিনিস হইতেছে, আপনার লেখালেখি বা ক্রিয়েটিভ কাজকামগুলারে একটা কালচারাল কনটেক্সটরই রিড করা হইতেছে, আপনি চাইলেও অই কনটেক্সটার বাইরে গিয়া কোন মিনিং তৈরি করতে পারতেছেন না, বা অইটা টাফ-ই হইতেছে। কিন্তু অই কনটেক্সট’টা খুব ন্যাচারাল কিছু না, বরং অনেক পলিটিক্যাল-আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং কালচারাল-ফেনোমেনা দিয়াই তৈরি হইতেছে। মানে, মুখ-ভরাট কইরা সংস্কৃত-শব্দ কইলে সেইটা যে অনেক-বেশি “কাব্য-বোধ জাগ্রত” করে আমাদের ভিতরে, সেইটা কোন আন-ডিফাইনড রুচি-বোধের ঘটনা না। সেইটা একটা সময়ের কনটেক্সটেই তৈরি হইতেছে। যেমন, একটা সময়ে “সাধু-ভাষায়” না লেখলে সেইটা “সাহিত্য” হইতে পারতো না; এরপরে এখন যেমন “কলোনিয়াল বাংলা-ভাষায়” না লেখলে “শুদ্দ-ভাষা” হয় না; এইরকম ঘটনাগুলা তো তৈরি হওয়ার এবং তৈরি করার ব্যাপার আছে। মানুশ-জন তাদের কাজকামের ভিতর দিয়া এক্টিভলি এই জায়গাগুলারে তৈরি করতেছে, চেইঞ্জ করতেছে, বা সাসটেইন করতে চাইতেছে।

তো, অই জায়গাগুলারে খেয়াল করতে গিয়া মনে হইলো, আমাদের সময়ের কালচারাল কনটেক্সটগুলা যদি আগের মতোই থাকে, তাইলে তো আমার কবিতা কোন মিনিং-ই তৈরি করতে পারবে না! অই জায়গা থিকা কালচারাল এলিমেন্টগুলা নিয়া কাজ করার বা জিনিসগুলারে খেয়াল করার ঘটনাটা শুরু হইছে। এই জায়গা থিকা পরে পলিটিক্যাল হিস্ট্রি নিয়াও কাজ করার ইচ্ছা আছে। এইরকম একটা ব্যাপার আর কি…

রুহুল:

আমারও ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশের সিনেমা নিয়া কাজ করব। খুব ছোটকাল থিকা সিনেমাপোকা কিনা… আপনি যেই রেঞ্জে কাজ করতেছেন, মনে হইতেছে এরপরে এটা নিয়া কাজ করা বিরাট চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হবে। সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের সিনেমার একটা ভালো অবস্থানই ছিলো। এমনকি নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্তও। এরপরে এখানকার সিনেমা ডিক্লাইন হইলো। আপনার ফাইন্ডিংস কী? কেন এই ইন্ডাস্ট্রি মরে গেলো?

ইমরুল:

আমার একটা ধারণা হইতেছে যে, যেকোন আর্টের পিছনে ইন্টেলেকচুয়াল একটা বেইজ বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে হয়। যেইটা ক্রিয়েটিভ-আর্টরে এক ধরণের ফুয়েল দেয়। বাংলাদেশি সিনেমার ব্যাপারে এই জায়গাটা কমপ্লিটলি মিসিং, এখনো। মানে, একটা আর্ট হওয়ার জন্য যেই পলিটিক্যাল-দিশা এবং কালচারাল-রিলিভেন্স থাকার কথা, অই জায়গাগুলারে খেয়ালই করা হয় না। ইভেন দেখবেন, বাংলাদেশি-সিনেমা বইলা আলাদা কোন ক্যাটাগরিই এগজিস্ট করে না। তো, এক নাম্বার পয়েন্ট হইতেছে, বাংলাদেশি-সিনেমারে খেয়াল করার (ঠিক হোক বা ভুলো হোক) কোন ইন্টেলেকচুয়াল বেইজ নাই।

সেকেন্ড হইতেছে পলিটিক্যাল-হিস্ট্রি এবং আর্টের হিস্ট্রি আলাদা ঘটনা হইলেও, একটা আরেকটার লগে ডিপেন্ডেড ঘটনা। পলিটিক্যাল ফ্রিডম যদি না থাকে একজন ক্রিয়েটিভ পারসনও সাফার করেন। আবার, ওপেন-এনভায়রনমেন্ট থাকলে সেইটা হেল্প করে। যেমন ধরেন, ভালো-ভালো কয়েকটা বাংলাদেশি-সিনেমার নাম যদি বলেন, এর মধ্যে বেশিরভাগই ১৯৭৬-৭৭ থিকা ১৯৮২-৮৩ এই সময়ের। কারণ দেশে তখন ডেমোক্রেসি ছিল, পলিটিক্যাল ফ্রিডমের পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ফ্রিডমও ছিল। যেইটা পরের সময়ে আইসা খালি কমতেই থাকে নাই, ধান্দাবাজির জায়গা হিসাবেও এস্টাবলিশড হইছে। পলিটিক্স দিয়া কালচারাল স্পেইসটারে পুরাপুরি দখল করা হইছে।

আরেকটা মেজর ঘটনা হইতেছে, বাংলাদেশের মানুশের জন্য সিনেমা বানানো বন্ধ হইছে। যারা আর্ট-ফিল্ম বানান এবং যারা কর্মাশিয়াল-মুভি বানাইতে চান – এই দুই দলই মনে করছেন এবং এখনো মনে করেন যে, “পাবলিক হইতেছে বোধাই!” “ভালো-সিনেমা বুঝে না” বা “মাশালা জিনিসপত্র খায়”… এখন এইরকম ভুল-আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গা থিকা অপারেট করলে ভালো-কিছু করার কোন ইচ্ছাটাই তো থাকবে না সেইখানে!

এর বাইরে টেকনিক্যাল ইস্যুগুলা যে নাই – তা না, কিন্তু অইগুলারে মেইন ক্রাইসিস মনে হয় না তেমন। তবে, এর বাইরেও আরো অনেক ঘটনা তো আছে, বা থাকতে পারে। কিন্তু আমি দেখি যে, বাংলাদেশি-সিনেমারে দেখাদেখির জায়গাটা না-থাকা একটা ক্রুশিয়াল ঘটনা। আপনি যদি জায়গাগুলারে লোকেট করতে পারেন, তাইলে বাকি কাজগুলা করা সহজ হয়।

যেমন ধরেন, রূপবান যে হিট হইলো, এইটা সিনেমার লগে রিলেটেড কেউ প্রেডিক্টই করতে পারেন নাই! কারণ উনাদের চিন্তাতেও ছিল না যে, গ্রামের মানুশও সিনেমা দেখতে পারে! মানে, শুরু থিকাই বাংলাদেশি-সিনেমা নিজেদের জায়গাগুলারে তৈরি করা তো দূরের কথা, খেয়াল করতেই রাজি ছিল না। এখনো রাজি আছে বইলা মনে হয় না।

তো, সিনেমাটারে আমি একটা উদাহারণ হিসাবে নিছি। গান, কবিতা, ফিকশন… কালচারাল এলিমেন্টগুলার সব জায়গাতেই একইরকমের একটা অবস্থা। মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, আমাদেরকে একটা “বাংলাদেশি কালচার” এস্টাবলিশড করতে হবে! মানে, এইটা ন্যাশনালিস্টিক কোন ঘটনা না। বরং যেই আর্ট দেশের মানুশের লগে সবচে বেশি ডিস-কানেক্টেড অবস্থায় আছে, সেইটাই যেন সবচে বড় আর্ট, ভালো আর্ট, আমাদের কাছে! যেই শব্দের মানে বেশিরভাগ মানুশ বুঝে না, সেইটাই যেন ভালো-কবিতা! অই জায়গাটা হইতেছে মুশকিলের।

রুহুল:

আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্তর মতন পরিচালক, যারা আর্ট এবং সাধারণ মানুষের পালস ধরে কাজ করতে পারতেন, বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে রাজনৈতিক পরিচয়ে সাইডআউট করে দেওয়ায় ক্যামন ক্ষতি হইছে?

ইমরুল:

হ্যাঁ, অইটা তো আছেই। পলিটিক্যাল মদদে কালচারাল জায়গাগুলারে তো নষ্ট করা হইছে। এখন ব্যাপারটা কেমনে ঘটছে – এইটা নিয়া আলাপ-আলোচনা তো কমই। কিন্তু এই জায়গাটারে রিভিল করার দরকার আছে। আমজাদ হোসেনের মতো লোকজন তো মেইন-স্ট্রিম হয়া থাকতে পারেন নাই, যারা সিনেমা বানায়া লাভও করবেন, এবং সেইটা আর্টের জায়গাটাতেও কন্ট্রিবিউট করতে পারবে।

কিন্তু কর্মাশিয়ালি ভালো-মুভি হয় নাই – ঘটনা’টা কিন্তু তা না খালি, ভালো কোন আর্ট-ফিল্মের কথাও কিন্তু আপনি বলতে পারবেন না। মানে, আমি মনে করতে পারতেছি না। আলমগীর কবিরের সিনেমা-এক্টিভিজমের জায়গাগুলা বাদ দিয়া উনার সিনেমাগুলা দেখেন, কোন জায়গাটারে সিগনিফিকেন্ট বলবেন? বা তারেক মাসুদরে নিয়া যে এতো হাউকাউ, গ্লোবালি উনার সিনেমার যতটুক একসেপ্টটেন্স সেইটা তো অই “গুড মুসলিম” প্রজেক্টেরই ঘটনা। মানে, কর্মাশিয়ালি ভালো-সিনেমা হয় নাই – তা না, আর্টের জায়গাটাতেও আর্ট-ফিল্মঅলারা গোল্লা মারছেন।

তো, এই জায়গাগুলা নিয়া কোন ক্রিটিক্যাল এনকোয়ারি শুরু হয় নাই বইলাই আমি মনে করি। যারা সিনেমা-টিনেমা বানান, এই জায়গাটা নিয়া ইন্টারেস্টেড তাদের এই জায়গাগুলাতে কোশ্চেন করতে পারা দরকার, এই জায়গাগুলারে এক্সপ্লোর করতে পারা দরকার। আমি তো মোটামুটি একটা কালচারাল এলিমেন্ট হিসাবে এর কিছু জায়গারে লোকেট করার কাজটা করছি। কিন্তু এইখানে অনেক কিছু করার বা খেয়াল করার ব্যাপার আছে আসলে।

রুহুল:

সকল স্বৈরশাসকেরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সিনেমাকে তাদের রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। হলিউড, বলিউডে অনেক বেশি হয়। মোদির বিজেপি সরকার করছে, গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামীলীগও চলচ্চিত্রমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। রায়হান রাফি, দীপঙ্কর দীপন এমন কয়েকজন পরিচালককে দিয়ে র‍্যাব, পুলিশকে গ্লোরিফাই করা, হরতাল-আন্দোলনের নাশকতার ভিন্নধর্মী বয়ান, গুমকে আত্মগোপন হিসাবে এস্টাবলিশ করার প্রোপাগান্ডা সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখা যাচ্ছে। এসব চিন্তা করলে সিনেমা বিরাট একটা রাজনৈতিক লড়াইয়ের অংশ। নাকি?

ইমরুল:

মানে, যখনই সিনেমারে বা যে কোন আর্টরেই পলিটিক্যাল হাতিয়ার হিসাবে ইউজ করা হয়, তখনই সেইটা মারা যাইতে শুরু করে আসলে। মোদী’র আমলেই বলিউডের মরণ শুরু হইছে আসলে। তেলেগু, তামিল ফিল্মগুলা যে ডমিনেট করতেছে, অন্য অনেক কিছুর বাইরে, বা অইগুলাসহই পলিটিক্যাল ইন্টার-ভেনশনের জায়গাগুলারে কিছুদূর পর্যন্ত ইরিলিভেন্ট কইরা তুলতে পারার ঘটনা থাকার কথা। আর্ট একটা পলিটিক্যাল টুলও, কিন্তু আর্টে তো একটা আত্মা থাকা লাগে। অইটা জোর কইরা হয় না। হলিউডও মেবি মারা যাইতেছে, কিছুটা সারভাইব করতেছে ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের কারণে। কিন্তু হলিউডরেও সাফার করা লাগতেছে তো।… আর সিনেমার বা আর্টের পলিটিক্যাল প্রপাগান্ডার জায়গা সবসময় কম-বেশি কিছু ছিলই, কিন্তু অইটাই মেইন ঘটনা হয়া উঠলে মানুশ জাস্ট মুখ-ফিরায়া নিবে। মানে, আমি বলতে চাইতেছি যে, আর্টে রাজনীতি থাকবে, কিন্তু রাজনীতিটাই আর্ট না আর কি! যদি অইটা হয়, তাইলে সেইটা আর্ট হিসাবেই মানুশের কাছে ইরিলিভেন্ট হয়া উঠবে।

রুহুল:

কেবল তো সিনেমা না, সকল আর্টের মাধ্যম এবং প্রতিষ্ঠানগুলারেই রাজনীতিকরণ কইরা ফেলা হইছে, বিকাশের জায়গাগুলা রুদ্ধ করা হইছে। মানুষ কালচারালি বিকাশ হইলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্যায়ন করা টাফ হয়ে যায়। এই ধ্বংস বা বিকাশ হতে না দেওয়া কী সুপরিকল্পিত মনে হয়?

ইমরুল:

আমার ধারণা, এই পলিটিক্যাল ইন্টারভেনশনের জায়গাগুলা আগেও ছিল, কিন্তু রিসেন্ট টাইমে এইটা এমন একটা এক্সটেন্ডে ঘটতেছে যে, একজন ক্রিয়েটিভ মানুশের পক্ষে তার কাজকাম করাটাই মুশকিল হয়া যাইতেছে। এখন এইটা কিভাবে ঘটতেছে – সেইটা অনেক বড় একটা আলাপ বইলা মনে হয় আমার কাছে। মানে, খালি নিও-ফ্যাসিস্টদের কারণেই এইটা ঘটতেছে না, সেইটা তো আছেই; কিন্তু একইসাথে লিবারাল বেইজগুলাও আসলে কাজ করতেছে না, অইটার ফাঁক-ফোকরগুলাও আমরা দেইখা ফেলছি। যার ফলে, একটা নতুন গ্রাউন্ডে গিয়া অপারেট করতে পারতে হবে আমাদেরকে, যেইটা একজন ক্রিয়েটিভ মানুশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই একটা। এই চ্যালেঞ্জগুলা আগেও ছিল একটা ক্যাপিটালিস্ট মার্কেটে, একটা কন্ট্রোলড কমিউনিস্ট-শাসনে; কিন্তু এখন ডাইমেনশনটা অন্য রকমের।… তো, যেইটা বলতেছিলাম কালচারাল-হিস্ট্রি আর পলিটিক্যাল-হিস্ট্রি তো ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনাই।

এতো সব প্রপাগান্ডা-মেশিন এবং মিডিয়া-কন্ট্রোলের পরেও একটা কবিতা, কাহিনি, গান তো রিস্কি জিনিসই পলিটিক্যাল পাওয়ারের কাছে। এইখানে একটা কনফ্লিক্ট এবং রিলেশন সবসময়ই আছে।

রুহুল:

সেই নতুন গ্রাউন্ড কীরকম হতে পারে?

ইমরুল:

আমি নিজেও শিওর না। অনেকেই সার্চ করতেছেন। কিন্তু জায়গাগুলা এখনো ক্লিয়ার বা টোটালি এক্সপ্লেইনেবল মনে হয় না আমার কাছে।

রুহুল:

এবার কবিতা প্রসঙ্গে আসি। কবির লগে আলাপে কবিতা নিয়াই কথা হইল না এখনও! প্রথম কবিতা লেখার স্মৃতি, কবি হয়ে ওঠার যাত্রাটা সম্পর্কে জানতে চাই।

ইমরুল:

আসলে অইভাবে কোন একটা ঘটনারে তো আইডেন্টিফাই করা মুশকিলই। ক্লাস এইটে বা নাইনে (১৯৮৮/৮৯) পড়ার সময় স্কুলে আমার বন্ধু আমিনুল বারী শুভ্র ছিল স্কুলের দেয়াল পত্রিকার সম্পাদক, ওর সাথে যেহেতু আমি থাকি, আমি হইলাম সহযোগী সম্পাদক। তো, যেহেতু সহযোগী সম্পাদক. কবিতা তো লেখা লাগবে আমার! এই জায়গা থিকা একটা ছড়া লেখা হইছিল, যেইটা স্কুলের বাংলা-টিচার শরিফ-স্যার ছন্দ ঠিক করে দিছিলেন। অইটা তেমন কিছু হয় নাই। এর মধ্যে আরো দুই-একটা ছড়া-কবিতা লেখা হইছিল দেশপ্রেমের, প্রকৃতি-প্রেমের 🙂 এইরকম কবিতা-গিরি কম-বেশি অনেকেই করতো, বা করছে মনে হয় আমাদের টাইমে।

ব্যাপারটা কিছুটা সিরিয়াস হইলো মেট্রিক-পরীক্ষা দেয়ার পরে। তখন “খেলাঘর” করতাম। শিশু-পাঠাগারের পাঁচ-সাতশ বই পড়া শেষ কইরা শরীফ ভাই’র (শরীফ আহমদ)  পারসোনাল লাইব্রেরির বই পড়া শুরু করছিলাম। উনি ইন্সপায়ার করলেন একটা সাহিত্য-পত্রিকা করার লাইগা। নঈম ভাই (নঈম তারিক) ছাপাছাপির ব্যাপারে হেল্প করলেন। আমরা বন্ধুরা (শুভ্র, রুবেল, সুমন, শামীম আর আমি) মিউলা একটা ট্যাবলয়েড সাহিত্য-পত্রিকা বাইর করার ডিসিশান নিলাম। শরীফ ভাই তখন সুমন রহমানের সাথে আমাদেরকে পরিচয় করায়া দিলেন। আমরা সুমন রহমানের ন্যাওটা হয়া উঠলাম। অইটা ছিল একটা কানেকশনের ঘটনা। ত্রৈমাসিক পত্রিকা ছিল অইটা। ৪-৫টা সংখ্যা বাইর হইছিল। ভৈরব-বেইজড একটা ব্যাপার ছিল। তখন আমি ডাইরি লিখতাম। অই পত্রিকার ফার্স্ট সংখ্যায় (১৯৯১) সালে একটা গদ্য ছাপা হইছিল আমার “কৈশোরক অনুভূতির কিছু পংক্তিমালা” নামে। হেডলাইন অবশ্য কলেজের একজন বাংলা-অধ্যাপক এডিট করে দিছিলেন। তো, অইটা মেবি সিরিয়াস-সাহিত্যের শুরু।

এমনিতে আমি ব্যাপক লেখতাম। অই মতো তো ছাপাইতে পারতাম না। ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে আমি কিছু কবিতা লেখলাম, যেইগুলা “ঋতুচিহ্নগুলি” নামে একটা বইয়ে ১৯৯৮ সালে ছাপাইছিলাম। তো, অইগুলা লেখার পরে মনে হইছিল যে, কিছু কবিতা লেখতেছি আমি। কিন্তু ২০০০-২০০৫, এই সময়টাতে কিছু লেখি নাই আমি। ২০০৫ সালে “কালিকাপ্রসাদে গেলে আমি যা যা দেখতে পাবো” বইটা ছাপানোর পরে ঢাকার সাহিত্য-সমাজে, আমার কিছুটা কবি-পরিচয় তৈরি হইছিল মনে হয়। পরে ২০০৮-২০০৯ এর দিক থিকা আবার পুরাপুরি লেখতে শুরু করি।

তো, জার্নিটা মোটামুটি এইরকম। মানে, কবিতা লেখার সময় তো একভাবে টের পাওয়া যায় যে, কিছু একটা লেখতেছি। কিন্তু এইটা কবিতা লেখার পরের ঘটনাই, কবিতাগুলারে রিকগনাইজ করতে পারাটা। আর সামাজিকভাবে কবি-পরিচয় কবিতা-লেখার লগে যতোটা না রিলেটেড, তার বাইরে সোশ্যাল-কন্সট্রাকশনের একটা ঘটনা বইলাও আমি মনে করি আর কি।

রুহুল:

মাঝখানে ৫-৬ বছরের বিরতিটা ক্যানো?

ইমরুল:

একদমই লিখি নাই – তা না, খুব কম লেখছি। মেবি কিছু সোশ্যাল, এবং ফিলোসফিক্যাল ক্রাইসিসের ভিতর দিয়া গেছি। লেখালেখির জায়গাটারে জাস্টিফাই করতে সমস্যা হইতো মনে হয়। যে, আপনি বেসরকারি চাকরি কইরা, পুঁজির দালালি কইরা ‘বিপ্লবী’ কবিতা লেখতে পারেন কিনা? 🙂 এইরকমের খুবই ‘অ-গভীর’ এবং প্রাকটিক্যাল কোশ্চনের ভিতরে পইড়া গেছিলাম মেবি। যে, ব্যাপারটা হিপোক্রেসি কিনা?… এখনকার সময়ে আইসা এই জিনিসগুলার ভিতরে অনেকেই পড়বেন না, কিন্তু আমাদের সময়ের চারপাশে এইরকমের একটা সোশ্যাল-ট্রমা এমবেডেড ছিল, একভাবে। যে, কলেজ-ভার্সিটির টিচার হয়া, বা সাংবাদিক, এমনকি এনজিও-তে কাজ কইরা কবিতা লেখা যাবে, কিন্তু সরকারি-বেসরকারি চাকরি, বিজনেস কইরা কবিতা লেখাটা কিছুটা “হিপোক্রেসি”র ঘটনা না ভাবাটা কঠিনই ছিল মনে হয় কিছুটা।… কিন্তু পরে তো টের পাইলাম যে, কোন আইডিয়াল সমাজে তো আমরা নাই, তো, একজন কবি’র জন্য আইডিয়াল কোন প্রফেশন বা লাইফ-স্টাইলও এইখানে নাই। বরং কিছু প্যাটার্ন তৈরি হয়া আছে সমাজে, যেইগুলা থিকা বাইর হইতে পারলেই বরং বেটার। কিন্তু আমাদের সময়ে অই জায়গাগুলা ক্লিয়ার ছিল না।…এখন এই টেনশনটা ডিল করাটা অইরকম ঝামেলার কিছু না।

রুহুল:

ইমরুল হাসানের কবিজীবনকে যদি দুই ভাগ করি, কালিকাপ্রাসাদের আগে-পরে করা যায় তাহলে? কালিকাপ্রাসাদ থেকে নিজেকে পুনরাবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছিল?

ইমরুল:

হ্যাঁ, অনেকটা। মানে, সেকেন্ড-টাইম কবিতা লেখা শুরু করছি আমি। অইটা “কালিকাপ্রসাদ…”-এর কবিতার বইটা ছাপা হওয়ার পরে।

রুহুল:

আপনার কবিতা যেন বাংলা কবিতার সমস্ত ছন্দ-অলঙ্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি চায়, দৈনন্দিন জীবনের মতন স্বাভাবিক হতে চায়—এই ব্যাপারটা কখন ঘটলো?

ইমরুল:

এইরকম একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তো ধীরে ধীরে ভিজিবল হইছে আমার কাছে। কিন্তু শুরু থিকাই সো-কল্ড ছন্দে লেখতে ইজি লাগতো না! মানে, চাইলে তো ছন্দ শিখা-ই যাইতো, মাঝখানে ট্রাইও করছিলাম কিছুদিন, কিন্তু ব্যাপারটা আজাইরাই লাগতো, মন থিকা আসতো না। এখন ব্যাপারটা এইরকম না যে, (সো-কল্ড) ছন্দে কবিতা লেখা যাবে না! কিন্তু ছন্দ আর কবিতা যে দুইটা আলাদা আলাদা জিনিস, তার বাইরেও ছন্দ যদি ডমিনেন্ট করতে থাকে তাইলে কবিতার জায়গাটা বেশিরভাগ সময়ই সাফার করে। আরো কথা হইতেছে, কোনরকম ছন্দ (ওয়াইডার অর্থে) ছাড়া তো লেখতে পারবেন না আপনি! যার ফলে, এই যে ছন্দে-লেখা বা গদ্য-ছন্দ বা এইরকমের যা যা আলাপ আছে, সেইগুলা আমি এভয়েড কইরা গেছি। আর মনে করি যে, যেকোন কবি’রই আসলে এইগুলা নিয়া খুব বেশি কনসার্ন হওয়ার কিছু নাই।

মানে, কবিতাতে টেকনিকের কোন ঘটনা নাই না, বরং ছন্দসহ এবং ছন্দ ছাড়াও আরো অনেক টেকনিকের ঘটনা আছে, কবিতাতে। কিন্তু এই টেকনিকগুলারে রপ্ত করার বা মাস্টার হওয়ার কিছু নাই। বরং এভয়েড করতে পারাটাই বেটার। টেকনিকগুলা তো থাকেই, কিন্তু কবিতাতে একটা আত্মা লাগে। অইটা টেকনিক দিয়া হয় না। টেকনিকের জায়গাগুলাতে কনশাস থাকতে পারাটা তো ভালোই। কিন্তু টেকনিকের মাস্টার বা স্লেইভ হইতে গিয়া কবিতার আত্মাটারে হারায়া ফেললে তো সবকিছুই গেলো। মানে, এই জায়গাটারে আমি কবিতা লেখার ক্ষেত্রে বা পড়ার ক্ষেত্রে একটা প্রায়োরিটি কইরা তুলতে চাই নাই। কবিতা লেখতে গেলে তো নিজেরে ছাইড়া দিতে হয় কিছুটা। ছন্দ বলেন, সুর বলেন, ভাবনা-চিন্তা বলেন, এই জিনিসগুলার হাতে নিজেরে ছাইড়া দিতে হয়, তা নাইলে ভাসতে পারা যায় না। তো, কবিতা-লেখার জায়গাটাতে যেইরকম কনশাস হওয়ার দরকার আছে, একইরকমভাবে নিজেরে ছাইড়া দিতে পারাটাও দরকারি। একজন কবি নিজে তার এই জায়গাটারে ব্যালেন্স করবেন। আমি আমার মতো করছি একভাবে। তো, অই জায়গাটারে জাস্টিফাই করার কিছু নাই। কিন্তু কিছুদূর পর্যন্ত তো জায়গাটারে এক্সপ্লেইন করা যায়। অইখানে আমি দেখি যে, “(সো-কল্ড) ছন্দে কবিতা লেখতে হবে” – এইটা কবিতার জায়গাটারে রিডিউসই করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

রুহুল:

মানে আপনার কবিতা বাঙালির কবিতাধারণার বাইরে গিয়া কবিতা হইতে চাইতেছে অনেক দিন ধইরাই। গীতল আবেগ, অতিকথনরে প্রশ্রয় দিতেছে না। চার্লস বুকোওস্কি, নিকানোর পাররা- ওনারা যেরকম কবিতারে এক প্রকার মুক্তি দিছিলেন, অইরকম কোনো ভাবনা কাজ করছিল কী?

ইমরুল:

না, না, উনাদের কবিতা আমি পরেই পড়ছি। মানে, হিস্ট্রিক্যালি আমি বাংলা-কবিতার নতুন কোন জায়গারে এক্সপ্লোর করতেছি – এইরকমের কোন চিন্তা থিকা ব্যাপারটা শুরু হয় নাই। আমি নিজের কবিতা-লেখার ঘটনাগুলারেই ফলো করছি। পরে ব্যাখ্যা করতে গেলে হয়তো অনেক কিছু চোখে পড়ছে। বা কনশাসলি চিন্তা করার সময়। মানে, আগে কবিতাগুলাই লেখা হইছে। তো, এর লগে হয়তো হিস্ট্রিক্যাল কিছু আন্ডার-স্ট্যান্ডিং ছিল। কিন্তু খুব স্পষ্ট কোন উদ্দেশ্যের জায়গা থিকা লেখা হয় নাই। লেখতে লেখতেই জায়গা ক্লিয়ার হইছে মেবি একভাবে।

রুহুল:

কমন ল্যাঙ্গুয়েজ বলে একটা ফেনোমেনা আপনি দাঁড় করাইতে চাচ্ছেন এবং সেই ভাষায় কবিতা লিখতেছেন। আপনার টার্গেট কী কবিতা নাকি একটা নির্দিষ্ট ভাষারে সার্ভ করা? নাকি ভাষার ভিতর দিয়া নতুন কবিতার কাছে যাওয়া?

ইমরুল:

ভাষা নিয়া একটা কোটেশন/ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেই। আজকের মেমোরিতেই আসলো –

“নতুন ভাষা নতুন চিন্তার জন্ম দেয় না, বরং নতুন চিন্তা ভাষার বাউন্ডারিটারে এক্সপান্ড করে।

চিন্তা যখন ‘নতুন’ হয়া উঠে সেইটা ভাষার এগজিসটিং ফরম্যাটের ভিতর নিজেরে আটাইতে পারার কথা না, যার ফলে ভাষা নতুন হয়া উঠে। আর সেই নতুন ভাষাটা আরো নতুন নতুন চিন্তারে পসিবল কইরা তুলতে পারে।”

/অক্টোবর ১০, ২০১৯

মানে, এই জায়গাটারেই যদি আরো কিছুদূর পর্যন্ত বলি – ‘নতুন-ভাষা’ বইলা কিছু হয় না আসলে। বরং একটা সময়ে গিয়া নতুন-চিন্তাগুলা ভাষার পুরান ফরম্যাটের ভিতরে নিজেরে আটাইতে পারে না আর, ভাষার জায়গাগুলারে চিন্তাই একভাবে এক্সপান্ড করতে থাকে। তো, এইটা খালি চিন্তা না, ক্রিয়েটিভ-ফর্মগুলাও এই কাজ করে। মানে, ব্যাপারটা এইরকম না যে, পুরান ভাষাতে নতুন কবিতা লেখতে পারবেন না আপনি; বরং যদি কোন নতুন-কবিতা লেখেন আপনি সেইটা ভাষার এগজিসটিং ফরম্যাট’টারে তছনছ না কইরা দিতে পারলেও, ইরিলিভেন্ট কইরা তুলতে থাকবে একভাবে। নতুন-ভাষাতে নতুন-কবিতা লেখতে হবে না আপনারে। নতুন-কবিতাই নতুন-ভাষা তৈরি করবে। এইটা একটা ঘটনা।

আরেকটা ঘটনা হইতেছে, বাংলা-ভাষার হিস্ট্রি’টা, এবং কলোনিয়াল আর্টের ফরম্যাটগুলাও। এইখানে একটা জিনিস তৈরি করা হইছে যে, যা কিছু সাধারণ বা কমন-পিপলের জিনিস, সেইগুলা যেন তত-একটা আর্ট না! এইটা যে বাজে-জিনিস হইছে – সেইটা এখন অনেকেই ফিল করতে পারতেছেন বইলা আমি মনে করি।

কিন্তু সবার আন্ডারস্ট্যান্ডিং একই রকমের না, ডিফরেন্স আছে। অনেকেই হিস্ট্রিক্যাল-রিয়ালিটি হিসাবে টের পাইতেছেন যে, কলোনিয়াল বাংলা-ভাষাতে আর কবিতা/কাহিনি লেখা পসিবল না, অনেকে ট্রেন্ড হিসাবেও নিতেছেন। আমি মনে করি, এখন সময় আসছে, নতুন বাংলা-ডিকশনারি লেখার, ভাষার নতুন স্ট্রাকচার পরস্তাব করার। অইটারে আমার কাজ হিসাবে আমি নেই নাই। অইটার বেইজটা কি রকম হইতে পারে – সেই জায়গাগুলাতে কিছু সাজেশন আমার আছে।  আমি মনে করি, অই কাজগুলা ধীরে ধীরে হইলেও শুরু হবে। কবিতাতে, বা অন্য ফর্মগুলাতে আমি উদাহারণই তৈরি করতেছি কিছু। মানে, ভাষার পারসপেক্টিভে দেখলে এইভাবে মনে হয় দেখা যাইতে পারে।

রুহুল:

আপনার কবিতা, লেখালেখি, বাছবিচারের কার্যক্রম— সব মিলায়ে কী বলা যায় যে কলোনিয়াল ও নিওকলোনিয়াল জায়গা থিকা বাংলাদেশের সাহিত্য, সাহিত্যের ভাষারে মুক্তি দেবার একটা আন্দোলন?

 

ইমরুল:

না, না, অইরকম কোন লিটারারি মুভমেন্ট আমি করতেছি না। আমি কিছু জায়গারে লোকেট করতে চাইতেছি, খোঁজ করতেছি এবং ইন্সপায়ারও করতে চাইতেছি, যা ট্রাডিশন্যাল একটা সাহিত্য-ধারণা’র ভিতরে আমাদেরকে আটকায়া রাখবে না, এবং আমাদের আর্ট-কালচার-লিটারেচার’রে ছোট্ট একটা সাহিত্য-সমাজের গন্ডি থিকা বাইর কইরা সমাজের মানুশের লগে, সোশ্যাল জায়গাগুলার লগে আরো মিলায়া তুলতে পারবে। এরে থিওরেটিক্যাল বেইজ থিকা তো দেখা যাইতেই পারে। কিন্তু কোন একটা থিওরির জায়গা থিকা এইটা অপারেট করতেছে না আর কি…

রুহুল:

কবিতার গীতিময়তা, ইমেজ, অলংকার ইত্যাদির লম্বা ঐতিহ্য আছে। কিন্তু আপনার কবিতা প্রায়শই যেন ক্রিয়াকে আক্রমণ করার মধ্যে পর্যবসিত হয়। ফলে এইটাকে কি কবিতার ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুতি হিসাবে দেখবো, কীভাবে দেখেন আসলে আপনি? এর সাথে সম্পূরকভাবেই চলে আসে ‘কবিতা কি কেবলই ভাষা’ এই প্রশ্নটা। কবিতায় আবেগ ও কল্পনার জায়গা কতটা আপনার মতে?

ইমরুল:

সরি, আরেকটা পোস্টই শেয়ার দেই –

“ভাষা দিয়া কবিতা লেখা হয়, কিন্তু ভাষাটাই কবিতা না!… ‘ভাষা’রে আমি একটা রাজনৈতিক বিষয় হিসাবেই দেখি, কিন্তু খালি এই ভাষার কারণেই আমার কবিতা ‘জায়গা’ কইরা নিতে পারবে এই আশা আমার নাই। 🙂

লিখতে গেলে ভাষা বিষয়ে একটা চুজিং লেখকরে করতেই হয়। এইখানে যে ‘রাজনীতি’টা আছে সেইটারে বাদ দিয়া সাহিত্য করাটা সম্ভব না। কিন্তু ভাষা নিয়া এতকিছু বলা হইছে আর হইতেছে যে, মনে হইতে পারে এইটাই একমাত্র জিনিস।

এমনিতে ধরেন, সাহিত্য-তত্ত্ব তো জরুরি একটা জিনিস, ছন্দ জানার মতোই প্রায়! ছন্দ না জাইনা যেমন একটা ছন্দের মধ্যেই কবিতা লিখতে পারেন, তত্ত্ব না জাইনাও একটা তত্ত্বরে আপহোল্ড করতে পারেন কেউ। এইটা রেটরিক অর্থে বলা না।

আরেকটা মুশকিল হইলো, ভাষা জিনিসটারে আমরা মনে করি ভাষা-তত্ত্বের একটা ঘটনা, কিন্তু এইটা তো কখনোই না! ডিকশনারি দেইখা, ব্যাকরণ মাইনা কেউ শব্দ শিখে না, কথা কয় না; বরং যেই শব্দগুলা আমরা বলি, ইউজ করি সেই শব্দগুলাই ডিকশনারিতে থাকে বা থাকতে পারে। যেই শব্দ আমরা বলি না, ইউজ করি না, ডিকশনারিতে থাকলেও সেইগুলার কোন মানে তো নাই!

মানে, একজন কবি বা রাইটারের ভাষা বিষয়ে যে চয়েস সেইটা তার পলিটিক্যাল একটা চয়েস। আমাদের সময়ে আইসা যেইটা হইছে, এইটারে ‘অ-জ্ঞান’ বা ‘সাব-কনশাসের’ জিনিস বইলা এড়ায়া যাওযার কোন উপায় নাই। একটা বাছাই করা লাগে রাইটারের, করতে হয়।

তো, নিজের কবিতার ভাষা নিয়া যেইটা বলতে চাই, আমি কোন ‘প্রমিতভাষা’র এগেনেস্টে ‘অপ্রমিত’ বা ‘আঞ্চলিক’ ভাষায় লিখি না; বা ‘মুখের ভাষা’য়। ভাষারে এইরকম ক্যাটাগরিগুলার ভিতর দিয়া দেখার বা দেখানোর চেষ্টাই ঝামেলার বইলা মনে করি। যে শব্দগুলা আমরা আমাদের ডেইলি লাইফে ইউজ করি – আমাদের চারপাশে বলতে শুনি, লেখায় দেখি… অই শব্দ, ভাষা, ভঙ্গিমাই আসলে কোন না কোনভাবে আমাদের কবিতার ভাষা হয়া উঠতে থাকে।

সোসাইটি বদলায়, ভাষা বদলায়, মইরা যায়। ভাষা মইরা গেলেও সেই ভাষার কবিতা মেবি একটা ভাষা থিকা আরেকটা ভাষাতে ট্রাভেল করতেই থাকে, একটা ইনফিনিটির মতো। এইরকম অনেক ছোট-বড় ইনফিনিটি থাকার কথা, কবিতার। মানে, কবিতা ভাষার বাইরের কোন জিনিস না; ভাষার ভিতরেই বাঁইচা থাকা, ট্রান্সেডেন্টাল কোন একটা জিনিসরে কবিতা বইলা ভাবতে চাই আমি।

কিন্তু যেই ভাষা মইরা গেছে, সেই ভাষাতে কবিতা লেখা পসিবল না; মানে, সেইটার কোন মানে তো নাই আর তখন! 🙂

/ভাষা আর কবিতা, ২০২০”

আর বাকি জিনিসগুলা নিয়া যদি বলি, আমার তো ধারণা, আমার কবিতা খুবই লিরিক্যাল! এতোটাই যে, আমার নিজের কাছেই প্যানপ্যানানি লাগে, পরে, অনেকসময় 🙁 আর এতো “আবেগ” আর “কল্পনা” নিয়া থাকি যে, নিজেরে মাটিতে নামাইতে কষ্টই হয়। মানে, “গীতিময়তা, ইমেজ, অলংকার, আবেগ ও কল্পনার” একটা কোন ফরম্যাট নাই আসলে। কবিতাতে এইসব জায়গার বাইরে যাইতে পারাটা তো মুশকিলই, বরং যে কারো কবিতা-ই এইসব জিনিস নিয়াই ডিল করে, মোস্টলি। মেবি এক্সপ্লোরেশনটা যার যার মতো।

রুহুল:

আপনার কবিতা বা আপনারা যে ধরনের কবিতা প্রমোট করেন, সেখানে দেখা যায় ‘শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’ শ্রেণির জীবনযাপন আড্ডার যে ভাষাভঙ্গি সেটারে প্রাধান্য দিতে। কিন্তু আমার ধারণা সেই যাপনকারী সংখ্যাগত জায়গা থেকে মুষ্টিমেয়। গ্রাম ও মফস্বলের বিপুল মানুষ ও তাদের ভাষা, কল্পনা, জীবন, প্রকৃতি যেন সেসবে বাদ পড়ে যায়। কী বলবেন?

ইমরুল:

এইখানে কৈফিয়ত দেয়ার কিছু নাই আসলে 🙂 কিন্তু জিগাইছেন যেহেতু বলি, একজন কবি বা আর্টিস্ট তো তার নিজেরটুকই লেখবেন। ওং কার ওয়াই তো হংকংয়ের সিনেমাই বানাইছেন। ভ্যান গগঁ নেদারল্যান্ডের ছবিই আঁকছেন। একজন খুব ভালো ফিকশন রাইটার আছেন/ছিলেন, আইজ্যাক বাশিভিস সিঙ্গার, উনি যেই ভাষায় লেখতেন, সেই ইয়েডিশ ভাষায় কথা বলতো দুই লাখ লোক (এখন মনে হয় আরো কমছে), ঢাকা শহরের বাড্ডাতেই এর বেশি লোক থাকে মনে হয়! মানে, আমি আমার চারপাশটারেই লেখি।

লিটারেচারে ‘সাধারণ’-এর কথা লেখতে হবে – এইটা খুবই ভুল এপ্রোচই মনে হয় আমার কাছে, বরং নিজের কথাগুলাই লেখতে হবে, তাইলেই সেইটা ‘কমন’-এর একটা ঘটনা হয়া উঠতে পারার চান্স থাকে।

আর গ্রাম ও মফস্বল যেইভাবে আমাদের কল্পনায় আছে – সেইটা খুবই ভয়াবহ জিনিস মনে হয় আমার কাছে। এর যে “চিরাচরিত” সাহিত্যিক-কন্সট্রাকশন, সেইটা থিকা বাইর হইতে পারাটাও জরুরি। গ্রাম কোন পকরিতি না, বরং গ্রামের নতুন রিয়ালিটি আছে, যেইটার একটা খুব ভালগার-ভার্সন পাওয়া যায় কিছুদিন আগের “আঞ্চলিক” টিভি-নাটকগুলাতে। মানে, নতুন গ্রাম “নির্মাণ” করা লাগবে না, কিন্তু কেউ যদি এখন গ্রামে থাকেন, আর গ্রামের-কবিতা লেখেন, সেইগুলা সো-কল্ড “গ্রাম ও মফস্বলের” কবিতার মতো লাগার কথা না আসলে।

কোন আর্টিস্টই বিপুল মানুশের কথা লেখেন না, বা বলেন না। বরং একজন আর্টিস্ট নতুন একটা দুনিয়ারে তৈরি করেন, যেইখানে অনেক অনেক মানুশ নিজেদেরকে খুঁইজা পাইতে পারে। মানে, ব্যাপারটা আদার ওয়ে রাউন্ডই মনে হয় আমার কাছে।

রুহুল:

কবিতার বাইরে আপনি ছোটগল্প লিখেছেন, নানারকমের অনুবাদের কাজ করেছেন, সিনেমা নিয়া বই লিখেছেন, বড় ফিকশন বা উপন্যাস নিয়া কোনো প্ল্যান আছে?

ইমরুল:

একটা উপন্যাস লেখতে শুরু করছিলাম, অইটা আর শেষ করা হয় নাই। উপন্যাস লেখা একটা ফিজিক্যাল স্ট্রেংথেরও ঘটনা। মানে, অনেক সময় দিতে হয়। অন্য রকম একটা ডাইমেনশন। কবিতা যেইরকম একভাবে রক্তের ভিতরে ঢুকে গেছে, ফিকশন অইভাবে হয় নাই। উপন্যাসের জায়গাটাতেও অইভাবে যাওয়া হয় নাই। তবে দুই-একটা ফেইলড ট্রাই করার ইচ্ছা তো আছেই।

রুহুল:

আপনার সাথে আলাপ করা সবসময়ই আনন্দের। ট্রিগারিং তো বটেই। এবারও ব্যতিক্রম হয় নাই। এতটা সময় দেবার জন্যে ধন্যবাদ, ইমরুল ভাই।

 

ইমরুল:

থ্যাংকস! আমারও অনেক কথা বলা হইলো। কথা বলতে পারাটা তো ভালো জিনিস। নিজের কাছেও অনেক জিনিস ক্লিয়ার হয়।

শেয়ার