আ হ্যান্ড ইজ নো লংগার আ হ্যান্ড | মূল: মোসাব আবু তোহা | অনুবাদ: সাঈদ শ’

মোসাব আবু তোহা একজন ফিলিস্তিনি লেখক, কবি, পণ্ডিত এবং গ্রন্থাগারিক। তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ : Things You May Find Hidden in My Ear (2022) প্যালেস্টাইন বুক অ্যাওয়ার্ড এবং আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। বইটি ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ড এবং ওয়ালকট পোয়েট্রি প্রাইজ-এর জন্যও ফাইনালিস্ট ছিল।  মোসাব আবু তোহা গাজার প্রথম ইংরেজি ভাষার গ্রন্থাগার ও  এডওয়ার্ড সাইদ লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তিনি তার পরিবার নিয়ে মিশরে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হন। পরে নির্যাতনের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তখন থেকে তিনি দূর থেকে যুদ্ধের কাহিনী বর্ণনা করে গেছেন। এই কবিতাগুলি তারই এক নজির। 

 


১.
এয়ারস্ট্রাইকের পরে
একটা মালবেরী গাছ
আর কিছু বন্যতরূর পাশে
তারা খুঁজে পাইলো ছেলেটার অসাড় দেহ
এক চোখ ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ
আরেকটা অর্ধেক খোলা
সেই চোখে তাকায়ে দেখে
আর কোনো বোমা অবশিষ্ট আছে কিনা

যা তারে মেরে ফেলতে পারে আরো একবার


২.
আমার শহরে, আর্মিরা
সব লোকেদের ঘিরে ফেলল
তাদের বাধ্য করলো প্রাইমারি ইশকুল-দেয়ালের
মুখামুখি দাঁড়াইতে
হাতগুলি, উপরে উঠানো
পেইন্ট করা নতুন ইটগুলিরে স্পর্শ করছে
যেনবা পিয়ানো বাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে

থরথরে মাথা এবং পিঠে
বুলেটগুলি ঝাঁঝরা করার আগেই


৩.
এয়ারস্ট্রাইকের সময়গুলাতে, আমরা বসে ছিলাম একটা টাইলসের উপর, ময়লা ফ্লোর, একটা শহরের একটা ফার্মেসিতে একটা বোতলের ভেতর ট্যাবলেট-বড়ির মত সম্পূর্ণ স্থির, যেখানে কেউ অসুস্থ হয় না, যেখানে সবাই-ই লাশ।


৪.
আমি তার হাতের কব্জির দিকে তাকাইলাম
ক্ষত-বিক্ষত,
প্রায় ছিড়েখুঁড়ে গেছে
তারপর কাঁধের দিকে
একটা হাড় ভাংগা
তার বয়স চার
আমি আমার বউরে বলি,
দেখো, বাচ্চাটা কি সাহসী!
সে কান্না করতেছে না
ব্যথা নাই, চোখে পানি নাই
এমন কি তার মা-বাবাও নাই
তার পাশে
আমি ওর মুখের দিকে তাকাইলাম
তার চোখ নড়তেছে না
তার হৃদ-স্পন্দন হইতেছে না
সে খানিক আরাম করতেছে


৫.
একটা হাত আর হাত থাকে না
যতক্ষণ না পর্যন্ত সে মোলাকাতের লায়েক
আরেকটা হাত খুঁজে পায়
যতক্ষণ না পর্যন্ত খাবার হাতে পায়
আরেকজনের সাথে তা ভাগ করে খাওয়ার জন্য
যতক্ষণ না পর্যন্ত সে লেখার জন্য একটা কলম খুঁজে পায়

যখন হাতটা শুধুই একটা মাংসপিণ্ড কুত্তারে খাওয়ানোর
এবং যখন এইটা হারায়ে যায়, চিরতরে


৬.
আসলেই কি তাই?
আমরা কি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি
একটা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে আপনাদের জানাবো বলে
যা রাতারাতি ঘটে গেছে?
আমাদের মৃত্যুর রিপোর্ট করাই কি আমাদের একমাত্র কাজ,
আমাদের ছিন্নভিন্ন দেহের ছবি তোলা,
এবং আপনাদের কাছে সাহায্য চাওয়া?
কখন আপনারা জাগবেন?
এইটা কি স্বাভাবিক যে ঘুম থেকে উঠে
দেখা আপনার ঘরবাড়ি আগুনে জ্বলতেছে?
আপনার সন্তান আগুনে পুড়ে গেছে?
আপনার বউ পড়ে আছে হাসপাতালে কোনো ওষুধ ছাড়াই?
ধ্বংসস্তুপের গাদায় আপনার প্রতিবেশিরে খুঁজে পাওয়া?
আর জেগে না ওঠা?
শুধু জেগেই থাকা!!
যথেষ্ট দেখছেন আমাদের
যখন চেয়ারে বা সোফায় হেলান দিয়ে থাকি
আমরা আপনাদের নীরবতায় বিলীন হয়ে যাইতেছি
আমরা চিৎকার করতেছি অথচ আপনি কান সরায়ে ফেলেন
এগুলারে রাখেন আপনার এয়ারবার্ড কেসে
যখন কেস বেয়ে পড়ে আমরা দেখি রক্তগুলা
এই রক্ত আমাদের কান্না, আমাদের অশ্রু,
আমাদের রক্ত


৭.
আপনারে উৎখাত করা হয়
আপনারে রক্তাক্ত করা হয় তবু আপনি মরেন না
আপনি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে পড়েন
যখন একটা মিসাইল হাসপাতালটারে ধ্বংস করে ফেলে
আপনি আশ্রয় নেন একটা তাবুতে
আপনারে আবারো উৎখাত করা হয়
আপনারে উৎখাত করা হয় আবারো
এবং আবারো আপনি ক্রাচে ভর দিয়া থাকেন
অথবা কোনো হুইলচেয়ারে
আপনারে দেখা যায় হাজার কোটি বার


৮.
যখন আমরা আমাদের বাড়িঘরে থাকি, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা কোনো স্কুলে আশ্রয় নেই, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা হাসপাতালের দিকে ছুটে যাই, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা তাঁবুতে থাকি, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা টয়লেটে যাই, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা একটা এয়ারস্ট্রাইকের থেকে পালাই, ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যখন আমরা এর কিছুই যখন করি না, তখনো ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
যদি আমরা গাছের মত থাকি, অথবা ক্ষণস্থায়ী শরতের পাতার মত চলে যাই,
ওরা আমাদের উপর বোমা মারে
তবু বসন্ত আসবেই এবং ওরা, যারা আমাদের বোমা মারে
তারা ফুলের মধ্যে কোনো বোমা খুঁজে পাবে না
আমরা গাছের উপরে থেকে রোদে গোসল করব
এবং ওরা, যারা আমাদের বোমা মারে
তারা কোনো রোদ পাবে না
বিশ্রামের জায়গা পাবে না
তাদের আর দৌঁড়ানোর থাকবে না পা


৯.
লোকটা আর জেগে উঠলো না
আমি দেখতে পাইলাম একটা জুসার, একটা ম্যাট্রেস,
একটা গদি, আলমারির কিছু অবশিষ্ট,
ঝুড়িতে কিছু অবশিষ্ট
আর সম্ভবত একটা আলু কিংবা পেঁয়াজ
ধুলার কারনে আলু আর পেঁয়াজটারে
আলাদা করা কঠিন হয়ে গেছে
কিন্তু আমি মৃত্যুরে আলাদা করতে পারি
খোলা মুখে, বন্ধ চোখে মৃত্যুরে দেখতে পাই
ধ্বংসস্তুপের নিচে আমাদের প্রত্যেকেরেই দেখতে পাই আমি


সাঈদ শ’
জন্ম উনিশ শতকের প্রায় শেষে। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। বাস করেন চট্টগ্রাম শহরে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। অপেশাদার কবি ও অনুবাদক।

শেয়ার