আলাপচারিতা ।। হাসান রোবায়েত ও ওরা দশজন ।। অন্তিম পর্ব

আমাদের কবিতায় ভাষার উপস্থাপন ভিন্ন। রাইসু ভাই বা টিপু ভাইয়েরা যে ভাষা-ঘরানায় কাজ করছেন সেইটা অনেকটা বাংলা কবিতার স্ট্যাব্লিশড কবিদের ভাষাকে মক করে এবং একটা বিশেষ অঞ্চলের ভাষাকে বাহন করে। কিন্তু আমাদের কবিতায় সেই স্যাটায়ারই এসেছে নিজেদের ভাষাভঙ্গী দিয়ে।


রাজীব: এ সময়ের কবিতা নিয়ে আপনার মুল্যায়ন কি?

রোবায়েত: নিজের সময়ের কবিতা নিয়ে মূল্যায়ন করা সবচে কঠিন। আমি এই সময় বলতে ২য় দশকই মিন করছি তাহলে। প্রচুর লেখা হচ্ছে এখন। অধিকাংশেরই একটা করে বই হয়েছে। কারো কারো আবার বই আসেইনি। তাই সামগ্রিক মূল্যায়নটা সম্ভব নয়। তবে বিচিত্র কাজ হচ্ছে। টানাগদ্য কবিতা যেমন লেখা হচ্ছে প্রচুর, তেমনি ফ্রি ভার্সেও লেখা হচ্ছে। ছন্দ এই সময়ে এসে একটা ওয়েভ তুলেছে, আমি মনে করি এর ফল আমরা আরো কিছু বছর পর পেতে শুরু করবো। আর, ভালো মূল্যায়নের জন্য সময়ই সবচে ভালো পরীক্ষক।

রাজীব: আমার লাগে আর কি, মোটা দাগে বাংলাদেশের কবিতা দুই প্রকার। একটা টাইপ ব্রাত্য রাইসু, সাখাওয়াৎ টিপু, ইমরুল হাসান ভাইদের ঘরানার। যথেষ্ট পলিটিক্যাল। স্যাটায়ারও আছে।  আরেকটা টাইপ আমরা যেরকম লিখি। কোমলমতি। দুঃখি দুঃখি। আপনি কি দেখেন এইভাবে?

রোবায়েত: হা হা। স্যাটায়ার আসলে আমরাও লিখছি। তবে নন্দন ভিন্ন।

রাজীব: আমাদের কবিতা কিরকম স্যাটায়ার?

রোবায়েত: আমাদের কবিতায় ভাষার উপস্থাপন ভিন্ন। রাইসু ভাই বা টিপু ভাইয়েরা যে ভাষা-ঘরানায় কাজ করছেন সেইটা অনেকটা বাংলা কবিতার স্ট্যাব্লিশড কবিদের ভাষাকে মক করে এবং একটা বিশেষ অঞ্চলের ভাষাকে বাহন করে। কিন্তু আমাদের কবিতায় সেই স্যাটায়ারই এসেছে নিজেদের ভাষাভঙ্গী দিয়ে।

রাজীব: আমার তো তেমন লাগে না। কেমন মুখ ভারী মুখ ভারী লাগে।

রোবায়েত: যেমন ধরেন, আমি যখন বলি, ‘হে অশ্ব, দণ্ডায়মান অভিশাপ’ তখন কিন্তু সেটাও এক ধরনের স্যাটায়ার। অথচ রাইসু ভাইদের ভাষায় বলা না এইটা।

ফয়সাল: আমি রোবায়েতের সাথে একমত এইটাতে। ওনারা স্যাটায়ারকে একটা ভাষা-নির্ভর কইরা ফেলতেছেন বলে আমার কাছে মনে হইছে কখনো কখনো। আমি পরে রাজীবরে কিছু বর্তমান  কালের লেখা দেখাবোনে যেইখানে একটা স্যাটায়ার আছে আর ভাষাটাও একটা টাইপের মাঝে পড়ে যায় নাই।

রাজীব: ব্যখ্যা করেন তো একটু

রোবায়েত: ওনাদের ভাষাটা আমার কাছে অধিকাংশ সময়ই শুধুই স্যাটায়ার মনে হয়। কেন যেন মনে হয় ঐ ভাষাটা আমাদের দৈনন্দিনতার পুরো সেটকে ক্যাপচার করতে পারে না। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ঐ টেক্সট স্যাটায়ারেরই ভাষা হিসেবে থেকে যায়। আর ফয়সাল ভাইয়ের সাথে আমি সহমত।

ফয়সাল: ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে কোট পড়া লোক মাত্রই উকিল, কিন্তু অন্যরা কোট পড়লেও তাদের তখন উকিল উকিল লাগে আরকি।

রোবায়েত: হা হা। ভালো বলছেন ফয়সাল ভাই।

রাজীব: আমার অবশ্য ভিন্নমত। আমার লাগে আমাদের কবিতার টাইপকেই বেশি গতানুগতিক লাগে। ইভেন শব্দেরও একটা লিস্ট বানানো যাবো, বারবার ইউজ হয়ে আসতেছে। একটু এদিক  অইদিক হয়ে।

রোবায়েত: সেইটা আপনি বলতেই পারেন। এইটা আপনার অভ্যস্ততার জন্য হইতে পারে।

রাজীব: আমার বক্তব্যটা মোটা দাগে

ফয়সাল: আমি তো আবার রাজীবের সাথেও একমত হাহা.. বাংলা কবিতায় কিছু শব্দরে রিটায়ারমেন্টে পাঠানো আবশ্যক। নিজের বইয়েও আছে এইগুলা যদিও। তাও বলতেছি। যেমন ধরেন ঘোড়া।

রাজীব: ‘হে অশ্ব, দণ্ডায়মান অভিশাপ’ এটার স্যাটায়ারটা আমি ধরতে পারি নাই। ব্যাখা কইরেন  তো…

ঘোড়ারে খোড়া বানায় দেয়া হইছে ইউজ করতে করতে!

রোবায়েত: রাজীব দার বক্তব্য ভালো লাগছে। নতুন চিন্তা আগাইতে পারে। ঘোড়া তো সারা জীবন দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়াই ঘুমায়। তো তার দাঁড়ানোটারে আমার কাছে দণ্ডিত মনে হয়। এইটা তারে এক ধরনের অভিশপ্ত প্রাণীতে পরিণত করছে। ঘোড়া যদি আপনার বলতেই হয় রাজীব দা তারে কী নামে ডাকবেন? আর ধরেন এই যে স্যাটায়ারের কথা বলতেছেন তাইলে কি ধরবো স্যাটায়ারই কবিতা?

ফয়সাল: একজ্যাক্টলি। বাই দ্যা ওয়ে আমি ঐ ধরনের কবিতাকে গতানুগতিক বলি নাই। আমি বলছি তাদের স্যাটায়ারের ব্যাপারটা একটা ডায়ালেক্ট কেন্দ্রিক। অনেকটা টিভিতে নোয়াখাইল্যা ভাষায় বললেই আমরা যন্ত্রের মত হাসি শুরু করবো, এরকম যে এক্সপেক্টেশন থাকে অনেক পরিচালকের, তেমনই আরকি।

রাজীব: টিভিতে নোয়াখালি শুনে হাসাটা কিন্তু আমাদের সমস্যা। যদি পরিচালক না চান।

হামেদী: ওনাদের কবিতা পড়লে মনে হয়, স্যাটায়ার ছাড়া মানুষের আর কোনও কামই নাই। ওনাদের ব্যাপারগুলি ভাষার সম্ভাবনাকে সংকুচিত কইরা ফেলে। ভাষাটারে শুকনা শুকনা লাগে ।

ফয়সাল: আমার ইমরুল ভাই, ব্রাত্য রাইসু এদের কবিতা ভালোই লাগে। স্যাটায়ারের মনোটনের ব্যাপারটা বাদ দিলে। ক্ল্যারিফাই না করলে ভুল বোঝাবুঝি হইতে পারে।

রাজীব: আমি গরু-ছাগল ফেলে ঘোড়ার কাছে দৌড়াই ক্যান? কারণ, বাংলা কবিতায় ঘোড়ার  একটা ইমেজ, অলরেডি ঘোড়ার মতোন দাঁড়ায় আছে। আমরা উত্তরাধিকার সুত্রে সেই ঘোড়ার ছায়ার নিচে গিয়ে আশ্রয় নিছি।

রোবায়েত: হা হা। রাজীব দা, আমি কিন্তু গরু, মহিষ,‌ মোরগ, সাপ সবই ব্যবহার করছি। শুধু যে  ঘোড়াই ব্যবহৃত হইছে তেমন না।

ফয়সাল: রোবায়েত বর্তমান বাংলা কবিতাকে কি আপনার এই ধরনের প্রতীকের ভারে জর্জরিত মনে হয়? নাকি এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং চালু অনুষঙ্গ এবং এখনো যথেষ্ট বোরিং হয় নাই?

রোবায়েত: শব্দ ব্যবহারকে আমি গুরুত্বের সাথে দেখি। সেক্ষেত্রে ফয়সাল ভাইয়ের সাথে একমত যে কিছু কিছু শব্দ বাংলা কবিতায় এতো ব্যবহৃত হইছে যে সেগুলো ক্লিশে হয়ে গেছে। ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আরো সচেতন হইতে হবে। আর এইখান থেকেই শুরু কবিতা মেকিং-এর ব্যাপারটা। অর্থাৎ, আপনি যখন শব্দের উপর সেন্সর আরোপ করেন সেইটা কিন্তু মেকিং করেই করতে হয়। আর একটা ব্যাপার, শব্দ সম্ভবত ক্লিশে হয় না। ক্লিশে হয় বাক্যে শব্দের অবস্থানে।


যে ধরনের থ্রোয়িং এর আগেই বাংলা কবিতায় হয়ে গেছে বহুলভাবে, সেইটা আর করা যাবে না। আর আমাদের ফোক, প্রান্তিক মানুষের জীবনে ব্যবহৃত ভাষা, কালচারের দিকে তাকাইতে হবে মনে হয়। সেগুলো প্রাণবন্ত।


ফয়সাল: সেটাই, এইটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত। নতুন বাংলা কবিতার ম্যানিফেস্টো হওয়া উচিৎ এই সব ক্লিশেকে আইডেন্টিফাই করে বছর বিশেকের জন্য বর্জন করা। নতুন কবিতা হয়তো এভাবেই আসতে পারে।

রাজীব: আমি আপনারে বলি নাই, রোবায়েত। টোটালি বলছি। আর স্যাটায়ার কবিতা না। তবে কবিতা খালি  কান্নাকাটিও না। কিন্তু এখানে কলকাতাবাহিত হয়ে কান্নাকাটিটা পার্মানেন্ট হয়ে গেছে, একপ্রকার। ফলত স্যাটায়ারের যে ধারা তা ছোটতরই রয়ে গেছে। কষা কবিতার ধারা প্রবলতর হয়েছে। তাই হামেদী ভাইয়ের সাথে আমার দ্বিমত, রাইসু-টিপু ভাইদের অপজিট ধারাটাই বেশি মনোটোনাস।

রোবায়েত: আমাদের কবিতায় যে ‘খালি কান্নাকাটি’র কথা বলা হচ্ছে। সেইটা ঠিক না। নানান টাইপের কবিতাই লেখা হচ্ছে।

রাজীব: নানান টাইপটা কম পাবেন। কেউ কেউ যে বলে ফরাসি কবিতার কপি এ ধারাটারে? একমত আপনি?

রোবায়েত: না। একমত না। ফরাসি কবিতা বহুত আগেই লেখা শেষ হইছে বাংলায়।

রাজীব: কবে নাগাদ?

রোবায়েত: আমি যেটুকু ফরাসি কবিতা পড়ছি তাতে সেইটা ৮০ থেকেই শেষ হয়েছে।

রাজীব: ফরাসি কবিতার কথটা ইমেজের প্রসঙ্গে আসে। আমার তো লাগে, এখনও সেই ধারা  প্রবাহমান। খালি ইমেজ আর ইমেজ। এইদিক অইদিক শুধু।

রোবায়েত: রাজীব দা, বাংলা কবিতায় যে ইমেজের কথা বলছেন, আমি অন্তত নিজের কবিতা নিয়ে বলতে পারি, আমার অধিকাংশ ইমেজ শুধু ইমেজ হিসেবে আসে না। এক ধরনের বোধ নিয়েই হাজির হয়।

ফয়সাল: আর রাজীবের অবজার্ভেশন ট্রু, কিন্তু আংশিকভাবে। মনোটন কিন্তু স্যাটায়ার কবিতা বা কান্না কান্না কবিতা না, সামগ্রিক বাংলা কবিতাতেই একটা ব্যাধি এখন। ডিস্টিংক্টিভ এবং সিগনেচার লেখা হইতেছে খুব কম। রোবায়েত কি এই ব্যাপারে একমত? যদি হন, আপনার মতে পরিত্রাণ কি?

রোবায়েত: ভাষা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নাই। যে ধরনের থ্রোয়িং এর আগেই বাংলা কবিতায় হয়ে গেছে বহুলভাবে, সেইটা আর করা যাবে না। আর আমাদের ফোক, প্রান্তিক মানুষের জীবনে ব্যবহৃত ভাষা, কালচারের দিকে তাকাইতে হবে মনে হয়। সেগুলো প্রাণবন্ত। এইটা একটা উপায় হইতে পারে। ফরাসিদের ইমেজ আর আমার ইমেজের মধ্য পার্থক্য আছে যথেষ্ট।

রাজীব: পার্থক্য আছে। তবে ধরেন স্নো-ফল বলতেছে, আমরা কুয়াশা বলতেছি। বা আর কিছু।  এমন না যে স্নো-ফলও বলা যাবে না। আসলে এসময়টাতে নানাভাবেই আপনি স্নো-ফলের ইমেজ  পাবেন। কিন্তু খালি ইমেজই কি কবিতা কি-না?

রোবায়েত: না। খালি ইমেজই কবিতা না। আমার ‘মুখ’ সিরিজ পড়লে সেইটা ক্লিয়ার হবে মনে হয় রাজীব দা।

শিমন: কেউ কেউ হয়তো বলতে চান বা এক সময় বলেছেনও যে, রোবায়েত তো কলকাতার কবি। এবং এই অভিযোগ অবশ্য আমাকেও নিতে হয়েছে। আমি জানি না তারা ঠিক কোন চিন্তা থেকে এরকমটা বলতেন। আমি এ ব্যাপারে কৌতুহলী। তোমার কি মনে হয় নির্মাণের কারণেই তারা এমনটা বলতেন নাকি প্রকাশিত হওয়ার শুরুর দিকে ওপারে বেশি ছাপা হওয়ার জন্যে?

রোবায়েত: তারা ঠিক কোন চিন্তা থেকে সেইটা বলেন আমি জানি না। অধিকাংশ সময় এইটা আমার কাছে প্রোপাগান্ডা মনে হয়। আর কোলকাতা বা বাংলাদেশের সিন্ট্যাক্স কাঠামো প্রায় একই। শুধু কিছু কিছু অনুষঙ্গের ব্যবহার হয়তো ভিন্ন। সম্ভবত কোলকাতায় আমার কবিতা প্রথম দিকে বেশি ছাপা হওয়াই তার কারণ বলে মনে হয়। আর আমাদের এখানে অভিযোগগুলো ছোঁয়াচে বেশ। একজন বললেই সেইটা নিয়ে অন্যরা কথা বলা শুরু করে। ইভেন টেক্সট ভালো করে না পড়েই।

শিমন: অথচ বাংলাদেশে ছাপা হন এরকম পশ্চিমবঙ্গের কোনও কবিকে কিন্তু সাধারণত সেখানে ‘ঢাকার কবি’ বলতে শুনি না

রোবায়েত: হা হা। কেবল বাংলাদেশের কবিতাতেই এইটা সম্ভব। মেধাস্বত্ব অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ হলে একটা নতুন কাজকে নিজের করে নেওয়ার ফিকিরই থাকতো বেশি।

শিমন: ‘সতীর্থ’ সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে বেরুনো প্রথম কোনও কাগজ যেখানে তোমার লেখা প্রথম ছাপা হয় বাংলাদেশে। দু’হাজার তেরো সালে, হৃদিতা সিরিজের চারটে কবিতা। সেগুলো তোমার প্রথম বইয়ে নেই অবশ্য। প্রথম বইয়ে শুরুর দিককার এতো এতো কবিতা খুন করা হয়, ব্যাপারটা নিয়ে তোমার কী মত?

রোবায়েত: আসলে, সতীর্থতে যখন কবিতা ছাপা হয় তখন আমি একদমই নতুন লিখছি, মানে কেবল শুরু করেছি। পরে আমার কবিতাভাবনাও যথেষ্ট চেঞ্জ হয়। সে কারণেই একদম শুরুর দিকের লেখাগুলো বইয়ে নাই। এইটা ঠিক খুন না। নিজের বেস্ট কাজগুলোকে হাজির করার দায়।

শিমন: অবশ্য আমি ওই সিরিজটির ফ্যান। তোমার প্রথম বইয়ের প্রবণতার থেকে হৃদিতা খুব দূরবর্তী নয়

রোবায়েত: আমি নিজেও ফ্যান ঐ লেখাগুলোর। পরবর্তী কোনো বইয়ে ঐ লেখাগুলো নিশ্চয়ই আসবে।

শিমন: তোমার কি মনে হয় না, ‘কবিতা লেখা ছাড়া জাত কবি বাঁচতে পারেন না’ এটা রিলকের বাড়াবাড়ি মত ছিল একটা?

রোবায়েত: পারে তো! র‌্যাঁবো পারছিলেন, সমর সেন পারছিলেন।

শিমন: কবিতা কি ফুলটাইমারদের ডিমান্ড করে, যেরকমটা রাজনীতি করে?

রোবায়েত: না। কবিতা হয়ে গেলে আর কিছুই ডিমান্ড করে না।

শিমন: প্রথম বইয়ে তোমার প্রায় সব কবিতাই শারীরিক অবয়বে সংক্ষিপ্ত, ‘ঘূর্ণ্যমান দেরাজের গান’ ছাড়া। সাম্প্রতিক বাঙলা কবিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে সংক্ষিপ্তবাদী হয়ে ওঠার কারণ কী আসলে?

রোবায়েত: এইটা শুধু কবিতায় না। টেকনোলজিতেও আছে। একটা ফোনের মাঝে কত কত ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপস। তো, মানুষের ধৈর্যকে কিন্তু এই টেকনোলজি নিয়ন্ত্রণ করতেছে। কবিতাতেও তার  প্রভাব পড়েছে। আর কম কথায় কবিতা কম্প্যাক্ট, ডেনস হইলে বেশি কথায় যাবো কেন! আমি এইটারে বলি ‘মাইক্রোনন্দন’ বা ‘মাইক্রোএস্থেটিকস’।

শিমন: একুশ শতকের কবিতা কি নির্মাণকৌশল সর্বস্বতা বা চাতুরী বা তথাকথিত ছন্দের খেলার ময়দান থেকে অনেকটা ‘শুধু চিন্তা’র ময়দানে এসে সমবেত হয়েছে বলে মনে করো?

রোবায়েত: না। কবিমাত্রই চতুর। সে তার চিন্তাকেই এক্সপ্লোর করে অনেক টুলসের মাধ্যমে।

শিমন: হ্যাঁ, তবে অনেকে টুলস ফ্যাক্টরি তৈরী করে ফেলে আরকি।

রোবায়েত: সে তো করতেই পারে। টুলসকে কতটা মুন্সিয়ানায় ব্যবহার করছে সেইটাই তারে আলাদা করে দেয়।

রাসেল: আমি যদ্দুর জানি, আপনি টাকা দিয়ে বই করেছেন? প্রথমত অভিজ্ঞতা বলেন? দ্বিতীয়ত, নিজের টাকায় বই করার বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

রোবায়েত: হ্যাঁ। আমি টাকা দিয়েই বই করেছিলাম। টাকা দিয়ে বই করার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই সুখকর নয়। আর বেশি বললাম না। বই নিজের টাকায় হইতেই পারে, তবে সেটা কোনো প্রকাশনীরে টাকা দিয়ে নয়। এইটা ভালোই লাগে আমার। খারাপ না।


আমার তেমন কোনো খারাপ কবিতা নাই যা পাঠ্য-বইয়ে স্থান পেতে পারে।


রাসেল: আপনি প্রচুর লেখেন জানি, কিন্তু প্রচুর বই নেই কেন? ধরেন আপনি সারাজীবনে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো ৫০০০ কবিতা লিখে ফেললেন। সেক্ষেত্রে ১০০ বই করতে আপত্তি আছে কি না?

রোবায়েত: আমি তো ভাবতেই পারি না আমার ১০০ বই হইতে পারে। এইটা বিব্রতকর লাগবে আমার। অনেক লিখি বলেই অনেক বই করতে চাই না আমি। আমি বই এমনভাবে করতে চাই যেন একটা কবিতা দূরের কথা, যেন একটা শব্দের রিপ্লেসমেন্টও বাজে না হয়। এখন তো আর ৩ ফর্মার বইও করার সাহস নাই আমার।

রাসেল: রোবায়েত, আপনার অন্ত্যমিল আর ছন্দজ্ঞান চমৎকার, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে অন্তত। এবং বড় কথা হলো, এরপরেও লেখাটা সম্ভবত শেষপর্যন্ত প্রাণপ্রাচুর্যময় কবিতা হয়ে ওঠে, অন্তত আমার কাছে। ভয়াবহরকম ভালো ছন্দের মৃত কবিতা আর বালকসুলভ অন্ত্যমিলের ভালো হয়ে উঠছে এরকম কবিতা পড়লে কেমন বোধ হয়?

রোবায়েত: লজ্জা লাগে। মৃত কবিতা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

ফারাহ্: ফারাহ্: পাঠ্যপুস্তকে আপনার কোন কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হলে আপনি চাইবেন কোন কবিতাটি স্থান পাক ? কেন ?

রোবায়েত: আমার তেমন কোনো খারাপ কবিতা নাই যা পাঠ্য-বইয়ে স্থান পেতে পারে।

ফারাহ্: তার মানে ভাল কবিতা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায় না?

রোবায়েত: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পায় না।

ফারাহ্: কবিসত্তার কাছে প্রশ্ন : আপনার কবিতা মৌলিক বলে মনে করেন কি ? কেন মনে করেন ? এ বিষয়ে মনের ভেতর কোন দ্বন্দ্ব আছে?

রোবায়েত: মৌলিক বলে কিছু নাই। আমার ভাষাচিন্তা আলাদা। প্রেজেন্টেশন আলাদা। এই যা!

জয়: তাহলে হাসান রোবায়েতের সাক্ষাৎকার শেষ হলো। রোবায়েতের সবার উদ্দেশে কিছু বলার আছে?

রোবায়েত: ধৈর্য নিয়ে যারা এই আলাপ-বিলাপ পড়লেন সবাইকে ধন্যবাদ। যারা সাক্ষাৎকার নিলেন প্রত্যেকেই অসাম। আমি বেশ এনজয় করেছি। সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা।


প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

শেয়ার