দ্বিতীয় দশকের ৩৭ জন বাংলাদেশি কবির কবিতা নিয়ে গত ৪ এপ্রিল প্রকাশ হয় ‘দ্বিতীয়র অদ্বিতীয় প্রেমের কবিতা’। বিশেষ আয়োজনটি বাংলা কবিতার পাঠকদের একটা বড় অংশের কাছেই পৌঁছেছে। প্রশংসা যেমন পেয়েছে, পাশাপাশি নিন্দাও কম জোটেনি। প্রশংসা এবং নিন্দা সবই আমরা ভালবাসা হিসাবে নিয়েছি। প্রথম আয়োজনে জায়গা পাওয়া সেই ৩৭ জনের বাইরে অন্তত ২শ জন দ্বিতীয় দশকে কবিতা লিখছেন। তাদের ভেতর থেকে ৫৭ জনের লেখা নিয়ে ‘আবারো দ্বিতীয়’র অদ্বিতীয় প্রেমের কবিতা’-এর এই আয়োজন। প্রথম আয়োজনে যাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি, যারা আমাদেরকে সাড়া দেননি তাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করেছি। তাদের সিংহভাগ এবারও সাড়া দেননি। নতুন যাদের কাছে লেখা চাওয়া হয়েছিল, তাদের ভেতর থেকেও অনেকে লেখা দেননি। যাদের লেখা আহ্বান করা হয়েছে এবং সাড়া দেননি, তাদেরকেও অভিনন্দন। নিশ্চয় শিরিষের ডালপালায় তাদের না লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। লেখা না দেবার পেছনে যদি কোন ব্যক্তিগত অহং কাজ করে, সেই অহং’র প্রতিও সম্মান জানাই। সবচেয়ে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই তাদের, প্রথম আয়োজনে লেখা না থাকার পরেও যারা অকপটে সাড়া দিয়েছেন। তাদের কাছে নিশ্চয় কবিতা এবং সম্প্রীতি সবার চেয়ে বড়। কয়েকজনের কাছ থেকে লেখা চেয়ে নিয়েও প্রকাশ করা গেলো না। তাদের প্রতি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
ইলিয়াস কমল, শাহ মাইদুল ইসলাম, ও চাঁদনী মাহরুবাকে বিশেষ ধন্যবাদ। তারা বেশ ক’জনের লেখা সংগ্রহ করে দিয়েছেন। চমৎকার একটি ব্যানারের জন্য বিধান সাহা’র কাছে কৃতজ্ঞ। আবার প্রেমের কবিতা পড়া যাক…
– রুহুল মাহফুজ জয়
অমিত চক্রবর্তী
বোর্হেসের জানালা
(অমিত অম্বর ’কে)
কাল রাতে এক ম্রো যুবতীর সাথে দেখা হল, বোর্হেসের জানালায়। তার শরীরে কমলালেবুর ঘ্রাণ, চেহারায় হরিণীর চাপল্য। পাহাড়ের ভাষায় অনেক গল্প করলাম আমরা। সে বললো যবকলে কাজ করার অভিজ্ঞতা আর জুমচাষ সম্পর্কে। জানালো মাতামুহুরীর জলে কতো নিঃস্ব চাঁদ ভেসে চলে গেছে নিরুদ্দেশের দিকে। গত শীতে আমি ছিলাম ‘হরিণপাহাড়’ নামের শহরে, তুষারবালিকাদের সাথে- তাকে বললাম।
চাঁদ নেই।
জানালা থেকে লাফিয়ে নেমে যাচ্ছে তামাটে তরুণী;
অজস্র ফিউনারেলের স্মৃতি।
অহ নওরোজ
মহাশ্বেতা নেই
বনের ধারে জোছনার কাছে
কোন এক কুয়াশায়
তার সাথে দেখা না হলে
কখনই হয়তো জানতাম না
কথা থাকে চোখে, ঠোঁটে, ভুরুতে;
কথা থাকে ইনসমনিয়ায়।
তাজ্জব!
নারী মানের নাকি
নাভির নিচে গভীর জলরাশি,
সমুদ্রমন্থন;
নারী মানেই নাকি
রৌরবের তাব্রিজ শহর,
শতাব্দীর রেহেলে ভেসে থাকা অদ্ভুত সৌরভ।
কিন্তু আমি বলি
নারী মানেই টান
মায়া;
রেটিনার ককপিটে অশরীরী মুদ্রণ।
নারী মানেই যেন সিল্কের কাজ করা নীল কুশন,
পাহাড়ের বুকে বেড়ে ওঠা হরিণীর মতন
আদিগন্ত প্রানÍর দেখায় শান্তি।
নারী মানেই যেন
রৌদ্রজ্জ্বল প্রসঙ্গে প্রলম্বিত ছায়া,
যার প্রকোষ্ঠে
আমরা এক রমণীয় শিশু।
আজিম হিয়া
মিমসিটি এক্সপ্রেস
তখন আমরা ঘুমের তালিম নিচ্ছিলাম কোনো এক জলসাঘরে সম্ভবত
চাঁদনিহাট থেকে আসা সেই ঘর আমাদের ঘুমের আয়োজন করতে গিয়ে
নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল বিব্রতকর নাকডাকা ভঙ্গিতে। এ উন্মাদ ঘরকে
ঘুমের ভেতর গচ্ছা দিয়ে আমরা মিম’দের বাড়ির উদ্দেশে রাজশাহীগামী
ট্রেন ধরলাম। পথমধ্যে আমাদের রুখে দাড়ালো একজন সিল্কি ঘুম—যদিও
তার হাসিতে ফুটে পড়ছিল চন্দনের ঘ্রাণ আর একটা মিম-মিম সৌন্দর্য!
দলের কনিষ্ঠ হিসেবে আমার উপর ভার ছিল সফরটা নির্বিঘ্ন করা। উদ্ভূত
পরিস্থিতিতে আমি যা করলাম—প্রথমেই ট্রেনটির নাম পরিবর্তন করে রাখলাম
মিমসিটি-এক্সপ্রেস।
অতঃপর সকলকে আশ্বস্ত করলাম এই বলে যে, পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লেও
আমরা ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যাবো!
সবশেষে ট্রেনটির অট্টহাসির সাথে আমরাও ফেটে পড়লাম পৃথিবীর নানা প্রান্তে—যেন
প্রত্যেকেই এক-একজন মিমসিটি এক্সপ্রেস!
আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির
মানবিক
পৃথিবীর সব বৃষ্টি আর কুয়াশারা আজন্ম এত একলা যে
একলা থাকাকেই তারা একমাত্র সুখ মনে করে।
দিগন্ত থেকে দিগন্তকে আড়াল করে
পৃথিবীর প্রতি ফুট জায়গাকে সেই আনন্দ দিতে চায়
অন্ধ বন্ধ কুয়াশারা
আর
এক ঝাঁক বৃষ্টি মেঘের আসমান থেকে উড়ে পড়ে মাটির আসমানে
যখন তুমি আমি ঘরের ভেতর ঘর খুঁজে ক্লান্ত ভীষণ
যখন আমি তুমি একসাথে আজীবন
থাকতে থাকতে ভুলে গেছি
একলা থাকতে কতখানি একলা লাগত
আশরাফ জুয়েল
অলস আদরিণী
কাছে না পাবার অনুভূতি দাবার চালের মতো,
পিছু হটি খেলা থেকে, ছুঁতে পারি না, কষ্ট যতো
ভিড় করে ঘুঁটির শরীরে, অলস আদরিণী আমার-
উদাসীন মাদকতায় ফিরে যাও শয্যাতে, সোনার
বার্নিশে গড়তে থাকি গহনা, দেবতারাও প্রতিদ্বন্দ্বী
কামারুণ ইচ্ছেঘরে। ষ্পষ্ট ভঙ্গির কাছে আমি বন্দী।
স্থির চোখের সুকন্যা, এই নাও ফুল, কষ্টের অধীন-
নি:শ্বসিত স্থির, লুপ্ত বেদনায় শীতার্ত আমি, লীন।
তৃপ্তিহীন সাপের স্থিরতায় আমি এক জাগতিক বাস্তব,
বরফ দাঁতের কামড়ে ক্ষণে ক্ষণে হয়ে যাই শব।
মরণের কাছে জমা রাখি কায়া, ভারাতুর প্রেমিক
আমি খেলার নিয়মে অতরুণ। স্মৃতি তবু ঝিকঝিক।
ধুলোময় পথচারী, শোকে সম্পদে সাবলীল, সংব্রিত,
মর্মঘাতী, শোভমান ত্তুই! আমি কাঠবাদামের মত মৃত।
মরণের মহানৃত্যে রাহুগ্রস্থ আমি, দাহ হই অস্পষ্ট কাফনে-
ব্যপ্ত চরাচর বিলীয়মান, বারংবার মৃত তোর হিমস্রব রণে।
আশিকুর রহমান
তন্দ্রা
প্রতিবেশী কোনো পাহাড় লালচে, লালরঙ
অভিধানসিদ্ধ নীচু শহরের শৈশবে ভেসে আসে
তোমার মারাত্মক সংক্রমণ; এই ছায়ানট
আলাদা গুল্মপৃথিবীর- ধীর জবাফুল, আরো সংঘবদ্ধ একা
সে- ফুটেছে…..
বৃক্ষযুদ্ধ শুরুর আগে সৌন্দর্য ছড়ায় তরু
বুদ্ধবনের পাশ দিয়ে গেছে আক্রান্ত চোখ
আসমা অধরা
সেই সমস্ত মিসইন্টারপ্রেইট
বুকের ভেতরে কবোষ্ণ উষ্ণতায়
পুষে রাখা কথার বাবুই আমার
উড়ে গ্যাছে নিজস্ব পাখিপুর গ্রামে,
তারপর থেকে তুমুল অন্ধকারের মাঝে নিজের
চোখ ও দৃষ্টিসমূহ গলে যায় লাভার মতো;
কেটে ছড়ে যাওয়া হাত
ও সহজাত লিখে যাবার ক্ষমতা সমেত
সমস্ত আঙুল- নৃতত্ত্ব বিধান ও আইনসঙ্গত প্রক্রিয়ায় দানপত্রে মাথা গুঁজে দিয়ে
অস্বস্তির শ্বাস বাড়ায় ম্যানগ্রোভ ছদ্মমূলে।
দীর্ঘশ্বাসও হায় ভুলে
হ্রস্ব ই-কারের মতন কেটে যায়
এক একটি দীর্ঘ দিন,
কাঁটাতারের এপার থেকে তাকিয়ে থেকে দেখি
ওপারে
ফোঁস করে ওঠে
হিলহিলে সাপ।
তীব্র নিনাদ এবং উৎপ্রেক্ষা ভুলে গিয়ে
নাদ ও নাদসর্বস্ব আর্তনাদে কুলকুল নদী।
জানো তো, ঝিঁঝিঁ আর জোনাকের সাদৃশ্য কোথায়-
ভেতরে যখন হাজার গুমোট আহাজারি
ঠিক সেখানেই অগুনতি আগুনের চাষ!
এইখানে এমন এক গোঙানীর উদগীরন হোক- যা পরিণত হবে
অতিকায় ভূ’কম্পে!
যার রিখটার স্কেল মাত্রায় ভেঙে পড়বে পৃথিবীর তাবৎ শার্শী,
সে কাঁচের আঘাতে বিচূর্ণ হবে যত হরিত্ মুখোশধারীর দল।
এইখানে এমন এক দীর্ঘশ্বাস ব্যবহার হোক- যা বয়ে গেলে দাবানল ছড়াবে বেশুমার,
সেই অনলে খাক হয়ে যাবে যত
পিঙ্গল অট্টহাসি।
আহা সমুদ্র!
আর কত তিক্ততা বাড়বে বোহেমিয়ান ও পার্থিব রূপকথার পশ্চাতকালে
কতসহস্র ডুমো ডুমো নীল মাছি রুয়ে দিলে ক্ষতজুড়ে
শান্ত হবে শাণিত জিহ্বার ক্লেদাক্ত খেদ!
তবু প্রেম, বসে থাকো পাশে…
উদয়ন রাজীব
চেক শাড়ি
তোমারে একদিন না দেখলে
দুইদিন অনাহারের মতন লাগে।
হাতপাউ কামড়ায়
তিনদিন কামকাজ করতে পারি না
সাতদিন ঘুম নাই;
মাসের পর মাস ভাবি—
আমার কী হইবো?
ছয়মাস অন্তর অন্তর বুকের ভিত্রে চিঞ্চিনা এক ব্যাথা উঠে
সূক্ষ…
চিকন।
বারোমাস আমি ছটফট করি
মনের মাঝখানে—
হাউকাউ করে আন্ধার!
তোমারে একদিন ছুঁইতে না পারলে
বছরভরা অবশ অবশ মনে হয়।
আমার কাছে যেদিন ফিরা আইবা
কপালের কালো টিপখান
লাগাইয়া আইসো দিনপঞ্জিকায়…
উবাইদুল্লাহ রাফী
ক্যানো
তারে মনে পড়লে মরে যেতে চাই ক্যানো! ক্যানো ভেবে ভেবে ক্যানো গড়ায়ে পড়লো জল, চোখের গুহা থেকে!
চোখের জল দুটি খোঁড়া গাধা; যারা টেনে নিয়ে যায় বোঝা,
নদীর মধ্য দিয়ে—
প্রায়ই তুলার; কখনো নুনের।
আমি আর দুই গাধা দূরে গিয়ে থাকি না কখনো; গাধা আমারে ছাড়ে না দূরে কখনো। এই গগন,পবন, ভূবন মাঝে তারও নয়; আমি শুধু এদেরই মুনিব; বিরান মালিক— তারাও আমার।
প্রত্যেকে প্রত্যেকের অধীন আমরা একসাথে শুয়ে, এখন—
আকাশে শশী থাকলেও জুড়ে,
তাকাবো না তার পানে;
অর্ধচন্দ্র দিতে চাইবো আমরা,—
অথচ তারার খোলস দেখেই,
অন্ধকারের ফুটোয়,
তোরে মনে পড়লেই ক্যানো মরে যেতে চাই,—
ভেজা তুলার ভারে ডুবে যাওয়া গাধার মতো?
…ফালি হয়ে বর্শা হয়ে ছুটে আসলে খোলস, ক্যানো কখনো জলে ভিজে নাই হওয়া লবণের মতো?
কবির কল্লোল
জ্যামিতিক
ফুল্লরা। সেবার ম্যাট্রিক দিলো। আমাদের পাড়ার কুমারী।
আমার দুই শ্রেণী নিচে এবং যেহেতু পাশাপাশি বাড়ি
পরীক্ষা নিকটবর্তী হ’লে একদিন ডাক পড়লো আমার।
ফুল্লরা জ্যামিতিতে কাঁচা। মহাশয়ের গণিতে লেটার।
একটামাত্র ছ’ইঞ্চির সরলমাপনী এবং বাহুর মতো
পেন্সিলকম্পাসের নিখুঁত শৈল্পিক ব্যবহারে অন্তত
চৌষট্টি ভিন্ন অবস্থান থেকে তিনশত ষাট ডিগ্রিকে
মাপিয়ে ও মাপাতে শিখিয়ে এবং কয়েকটি সহজ সূত্র লিখে
যোগ্য ক’রে তুলেছিলাম।
অথচ পরীক্ষার পরের ছুটিতে
কী নির্লজ্জ রক্তিম সিঁদুর সে পরেছিলো কৌণিক সিঁথিতে!
কাউসার সাকী
বিহাইন্ড দ্যা সিন
সেলুলয়েড নাগাল পায় না এমন অনেক দৃশ্যই
জীবন ধরে রাখে ।
ক্যামেরাম্যানের ভেতর হাঁপাতে থাকা সিসিফাসের
সামনে থেকে যেমন
উড়ে চলে যায় নায়িকার চুমু ও আলিঙ্গন; পড়ে
থাকে কস্টিউম। অতিজীবন
দেখার ছুতোয় আমরা যখন কোনো পর্দার
সামনে বসা, কারো আঙুলের ফাঁক
তখন প্রশস্ত লন, আর তার গভীরে বেদনা-
বীজ ফেলে দ্রুত সরে যাচ্ছে
প্রেম। ফিল্মমেকার বা দর্শক জানে না,
সেখানে আঙুলের বদলে বেড়ে
উঠা চারাদের নাম সিগারেট।
কেয়া চৌধুরী জুঁই
জননী ও প্রেম
কিছু সীবন-স্মৃতি লেগে আছে তোমার সোয়েটারের বুনটে।
শিল্পিত আস্তিনের কাছটায় বিদেহী আত্মার মতন,
দেখতে পাচ্ছো?
যদিও আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার অপেক্ষমাণ…
তাই এই বীতশ্রদ্ধ বেলায়-
হতে হয় অন্ধ!
তুমি বলছো-
একটা লক্ষ্মীছাড়া সন্ধ্যেয় এসে আটকে গেছে রিল।
হা ঈশ্বর! তোমার ক্যাসেট পাল্টাও!
স্খলিত করো চনমনে রাত,
এসো, ক্লাইম্যাক্সে,
গো! টুইস্ট!
অন্যদিকে জননী মেতেছে তুমুল দাবাবোর্ডে,
বোড়ে-কাঁটায় চৌষট্টি সোজাঘর-উল্টোঘর-
আগামী পৌষে যেন পেড়ে আনতে পারো প্রেমফল।
দেখতে পাচ্ছো?
তোমার আস্তিনের কাছটায় কিছুটা লেগে আছে সীবন-স্মৃতি,
কি আচানক প্রেম ও প্রাপ্তির নবুওয়ত!
খন্দকার নাহিদ হোসেন
সরল ছন্দিত স্পন্দন
ডানে…
গহনে বৃষ্টির শ্যালো-ইঞ্জিন
গাঁও-গেরাম ডোবে-ডোবে ছেলেটার
বুকের ঘাটলা…
মেয়েটা ডুবতে তবু ডরায় না ক্যান?
অন্ধকারের গুহায় মানুষ নরম
যাদুকরও তাই
তবে কি কিচ্ছার মেঘে সে লিখবে
শেষ লাইনের ধসে-
এসো খোঁপা বেঁধে দেই-ঝড় আসছে…!
চন্দ্রবোড়ার ফণার পাড়ে
যে যাদুকর আসমানটা মুছে দেয়
তারই কাছে চাও ধুধু-
পরাণের বাড়ি…
চলো গাঙের কুলায় লিখি-হাতে ডুবিয়েই হাত
আড়ি আড়ি আড়ি!
বামে…
এইসব ভয়ংকর অস্থিরতা
তুলে দিয়ে দুঃখের নায়ে মরে গেছি
জিতে যাওয়ার ঐ গ্লানি দেখে নিঃশব্দে নিঃশব্দে
মরে গেছি;
তাই বুঝি-আয়াতের সোনার মুকুট বিষাদের মতো স্বাদে
মানুষ মাছেরা যায় রেখে ফেলে ঠোকরাতে ঠোকরাতে…?
ওগো জলের দেবতা, একটু ঘৃণা দিয়ো খুঁজে
হৃদয়ের মাংস দুঃখে নোনা হলে…ভেসে যাওয়া লাশের চোখেই
একটু ঘৃণা দিয়ো বুজে-ঘৃণা দিয়ো বুজে।
মধ্যে…
প্রভু, আর-জন্মে মনে পড়াটাই শুধু পোষ মানা?
খান আলাউদ্দিন
ক্লোন
এমন একদিন আসবে শুধু তোমারই সাথে দেখা হবে । রাস্তায় , বাজারে , বাসে দেখা পাবো অসংখ্য তুমির । তুমি চলে যাবার পর সেই অন্য তুমিকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবো , সারারাত শালবনে রূপার থালার মতো চাঁদ দেখবো । হাতে থাকবে হাত , দু’জনে নির্জন রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটবো – হাঁটবো – হাঁটবো । তারপর কখন বেলা পড়ে আসবে । তোমাকে না পাওয়ার বেদনা থাকবে না । তুমি চলে গেলে অন্য তুমির মাঝে তোমাকে প্রতিষ্ঠা করবো । এমন একদিন আসবে শুধু আমার সাথেই দেখা হবে । রাস্তায় ,বাজারে , বাসে দেখা পাবো অসংখ্য আমির ।
সেইসব আমির নিজের উপর কোনো ঘৃণা থাকবে না ।
খান রুহুল রুবেল
একা চিতার উপাখ্যান
চিতা ও চাতুরীর বহুদেশ পার হয়ে এসে; কাজলরেখা, তোমাকে মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল, কতটা বিদ্যুৎরেখা তুমি ধরো, অথচ বহুকাল নিদ্রিত আছ, বহুকাল চোখ মেলে আমাকে তাকাবে, এমন অবসর দূরতর বাণিজ্যে চলে গেছে।
আমার সমস্ত গোলাকার ডোরা মুছে গেছে, কেবল নখ ও দাঁতের বিস্ময় নিয়ে, দেখি খলকৌশল সব ভুলে গেছি, যত রক্তস্রোত আমাকে টানে, তেমন বাগানে আপেলের নির্জনতা দেখে ফিরে আসি। আজও শঠতা যত জমি ও ঘাসের, যত নিশিচারণ লঘু ক্ষীপ্রতার, ভুলে গেছি, কবে কোন তাসের দান হেরে গিয়ে বলেছিল- তুমিও শিকারী।
চিতা ও চাতুরীর বহুদিন পার করে এসে মনে হলো, মানুষ হয়ে গেলে ভালো হতো খুব। মানুষ হয়ে গেলে জানা যেত সোনা ও রূপোর সেই পুরনো সমন্বয়, কাঠিবদল করে নিলে, কিভাবে রেখা ও কাজলের ঘুম ভেঙে যায়।
কাজলরেখা, মানবশরীর পেলে তোমার নিকটে, চলে যাওয়া যেত একা একা।
চাঁদনী মাহরুবা
চোখের বালি ২য় পত্র
পৃথিবীর তাবৎ আখ্যানশাস্ত্রে কে যেন লিখেছিল , রবি বাবুর প্রেমিকার আরেক নাম বালি!!!
বয়ামভর্তি জামার গল্প নিয়ে আমরা সই পাতাই। অড়বড়ই গাছে সেবার হলুদ গড়ায় ভীষণ।
চোখ চিবুক চিড়ে কে কার মায়াখণ্ড খুঁজতে যায় বলো ? আমরা তবু হাতরাই লোমকূপ ভিড়।
আমাদের আঙ্গুর ক্ষেত পুড়ে গিয়েছিল,
পুড়ে গেল শামিয়ানা, কচু পাতায় জল! জলজ ঘ্রাণ খুটে খেল ডাহুক।
দেড়শ বছর থেকে দু হাত অতল , দু হাত গভীর ক্ষত এক!
আর কতটা ঢাকা যায় বল ভেলভেট থানে ?
সেই শোক বুকে নিয়ে ফিরে গেছে ক্রুশবিদ্ধ জেসাস! আহা তার পানপাতা হ্রদ।
জেসাসকে চিনতে তুমি? ডাহুকের ইতিহাস?
চৌধুরী ফাহাদ
প্রেম অথবা অপ্রেম
এই মেয়ে শোন
শুধুই প্রেমিক ভেবো না আমায়
আমি পাখির মত ফিরে ফিরে আসি আকাশের পথ ধরে দেখবো বলে
তোমাকে,
তোমার প্রেমে-অপ্রেমে
অহর্নিশ মোহে আরোহণ খুঁজে যাওয়া ফুলের মতন প্রস্ফুটিত নয় সে
প্রেম
ধুকপুক ধুকপুক বুকে বিস্ফারিত আবেগের
যদি প্রেমে পড়ি আবার
সুকোমল আকাশের মত বারবার পড়ি প্রেমে
তোমার প্রেমে-অপ্রেমে
সহস্র চুন্নির হৃদয় স্ফুরিত স্ফটিক চোখ তোমার
শিখিয়েছে ভালোবাসা
মুখ খুললেই ফাটে ঠোঁটে চারকোটি বছরের পুরনো ফসিল
সমুদ্র গর্ভে রক্ষিত নীলকান্তরঙ
জলের অতল ফুঁড়ে শুনেছি জলতরঙ্গের ডাক
মাতঙ্গ ইচ্ছেরা তবু শিকড়ে ফিরে যায়-নির্বাক
সব রাতে রূপকথা থাকে না
অনির্ণীত বলে হৃদয়ের পাশা ফিরে ফিরে আসি এই হাওয়ায়
নিস্তরঙ্গ ঠোঁট নিমন্ত্রণ দিয়ে রাখে প্রতিবার-ভাষাহীন
নিদাগ মেঘের মত ঘনীভূত আবেগের বিদগ্ধ প্রতিফলক
তোমার ওই চোখ,
ভালোবাসায় বলে ভালোবেসে যাই
আমি কেবলই প্রেমিক নই
জানো তো,
ভালোবাসা মানে শুধু তোমার দিকে যাওয়া নয়
যদি প্রেমে পড়ি আবার
এই শোন মেয়ে,
আমি সেই প্রেমিক নই যে মেঘ নিয়ে তোমার উঠানে রেখে যাবো ছায়ার মত রাত!
লুণ্ঠিত আকাশ জুড়ে যে সীসার প্রলেপ ধোঁয়াটে ধাঁধাঁয় রেখে যায় সংশয়
আমি সেই জল নই যে ঝাপসা বাষ্পে আড়াল করে নেব দিগন্তজুড়া সম্ভাবনা
উড়ু হাওয়া ঝটিকা সফরে এসে সরিয়ে নিয়ে যায় সব মেঘ যেমন
আকাশের মত আমিও জানি বুকে ধরে রাখার মন্ত্রযতন
যদি প্রেমে পড়ি আবার-পরবর্তীবার
শোন মেয়ে,
এইসব আঁধার-গভীরতর জলের ব্যাকরণ,
অজুহাত মাত্র
পৃথিবীর সকল হৃদয়ের উড়ান ভোরের দিকে..
জুলফিকার রবিন
যদি হৃদয় পাতো কানে
তোমার দেহে যে আবহমান রূপের সম্মেলন
তার প্রতিটি ভাঁজেই আমি খুঁজে পাই ইবাদতের ভাষা
আমি যে তোমায় এত ডাকি এত যে জপি তোমার নাম
তুমি তার প্রতিবাদ করেছিলে
অথচ তুমি জানো না- ও দেহের ভাষা জানলে যেকোন কাফেরও মগ্ন হবে কঠোর উপাসনায়
মুশরিকেরা সব বসে যাবে অনির্দিষ্টকালের ই’তেকাফে
তুমি বরং তোমার হৃদয়ের সাথে একটা কান জুড়ে দাও অথবা কানের সাথে একটা হৃদয়
তাহলেই শুনতে পাবে- কতটা মর্মস্পর্শী আমার এই একাগ্রতার আজান।
জুয়েইরিযাহ মউ
#খুলিতে_হাসপাতাল দ্য রিডার
শরীর ভাঙছে শরীরে। রোদ ছিড়ছে বিছানায় –
এই রকমের গল্প ভেবে ড্যালড্রি আঁকছে ‘দ্য রিডার’।
অতএব –
যে কোন পুরুষই দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্তিকর। তবে মানুষ ব্যাপারটা চার্মফুল, ভ্রমণে রোমাঞ্চ জাগে। শহরের অনেক গাছেই আমি লিঙ্গ খুঁজে ফিরেছি, ছাল ওঠা সাদা, গাঢ় বাদামী কিংবা কালো!
দুপুরের ঘাম-ঘাম নৈঃশব্দে ঘোড়াতেও ক্লান্ত লাগে… ‘কোথাও চইলা যাইতে মন চায়।’
বন্ধু বলে – ‘কই যাবেন! উই লিভ ইন দান্তেস ইনফার্নো।’
জেবাউল নকিব
পা
যুদ্ধ চলছে ক্রমে— হেরে যাচ্ছি, ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছে আমার উপর ভর করে থাকা কয়েকটি পা। বন্ধুদের পা-গুলো চিকচিক করছে বেঁচে যাওয়া আলোয়। চলে যাচ্ছে কালো জিপ। তেড়ে আসছে শত্রু মহাশয়— বাঁচান বাঁচান। ট্যাংক থাবড়াচ্ছি কেবল। খুলেই একজন বলে— ইটস ফুল, গো ব্যাক। তারা যায়—আমি দৌড়ে পালাই, দৌড়াই। হাপিত্যেশ আমি টের পাই গলায় ঝুলছে আরো কিছু পা। সব কিছু পিঠে নিয়ে আমি ছুটি— আমার রক্তবমি শুরু হয়ে যায়। ঘুম ভাঙলে বাজারের লিস্ট নিয়ে হাজির হবে আরো দুটো দীর্ঘ পা।
.
হেলেন, আমি হেরে যাচ্ছি বলে তুমি ঢেলে দিচ্ছো আঁচলশীর্ন আর্ত শরীর।
টুম্পা ধর
আমার অস্তিত্ব তুমি টের পাও?
অহেতুক আবদারগুলোকে আমার অভিমান ভেবো না
তুমি সিঁদুরকৌটার লাল রঙ-যত্নে যে ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছ
তা আমার অজানা নয়।
ভীতু রাক্ষসের শিং প্রতি রাতেই আশ্রয় খোঁজে আমার আঁচল ছায়ায়
ফিরিয়ে দেই ধারালো শঙ্খের আঁচড়ে
মনকে আমি গুদামঘরে আটকাতে চাই না।
ঘি মাখানো ভাতের গন্ধে একরাশ শূন্যতার অনুভূতি তোমাকে খোঁজে
বরফ ভাসানো জলেও যে ধোঁয়া ওড়ে তা তুমি টের পাও?
তন্ময় হাসান
হ্যালো, লেট মি টেল ইউ অ্যা স্টোরি
তার এইসব বললাম যে,
“ তোমারে দেখলে আমার হৃদয় হয়ে ওঠে গালতাসারের মাঠ “
পল্লবী বলে,
“ হৃদয়ের অলি গলি জুড়ে থাকে অনেক রিঙ মাষ্টার”
আমি বললাম,
“ সে জানে? তোমার হৃদয় ছোয়ার ট্রীক?
সে বললো,
“ তুমি জানো? প্রতি চুম্বনে পাই অমরত্বের স্বাদ?”
এরপর ব্যক্তিগত ভূগোল ভুলে বসি নির্জনতম সন্ধ্যায়।
শোন পল্লবী,
দেখো আধা চাঁদ
ভাবো প্রেম প্রেম
সব বিস্বাদ।
আমি চাইতাম, তোমারে একদিন।
এইভেবে আঁকি, এক বিষতীর
চোখ বরাবর
ভালোবাসি তাই, অন্ধ করে চাই।
তুমি বললা, “কোথায় কাঁদো তুমি?
স্নানঘরে? জলার ধারে? একা একা বসে?
নাকি চ্যাপলিনের কথায় বৃষ্টিতে ভিজে?
তোমার গালের কান্নারেখা কোনদিকে যায়?
কারদিকে যায়?
এই রেখা ধরে কতদূর যাওয়া যায়…….? “
“তবে কি রইলো? যা আমাদের ? “
“যাও প্রাচীন কোন গন্ধম বনে, গিয়ে কাঁদো।
ভাবো স্মৃতির স্কুলে, বাজচ্ছে বিদায় ঘন্টা।
কলরব সব হারায় গেলে দেখো,
আদরের বিড়াল বলতেসে শুভ সকাল।
দেখো , চোখের ভেতর যত অভিমান, জল হইতেসে প্রতিনিয়ত।
ভালোবাসা মুড়ায় আছে,
শূন্য এপিটাফ।
আর এই যে,
আমাদের নৈঃশব্দ,
যার ভেতর বাইর বৃষ্টি হয় রোজ।
দেওয়ান তাহমিদ
বিশেষত রাত যখন বারোটা পঞ্চাশ
তোমাকে প্রায়শই মনে পড়ে। বিশেষত রাত যখন
বারোটা পঞ্চাশ। যে বিষাদ সূর্যাস্তে__
চুপচাপ সুস্থির বিদায়ে, তারই
ভায়োলিন বাজতে থাকে বুকে।
শান্তির পতাকার পেছনেই যেমন রচিত হতে থাকে
যুদ্ধবিমানের উড়াল, আমি দেখেছি__
দৃশ্যত সহজ কোনো প্রেমের গহীনে
কী তীব্র অগ্নুৎপাত এতদিন গুটি বেঁধে ছিলো!
দহনের মুদ্রা তুলে যা এখন নাচছে নিরত__
দেখো, সে আগুনকে নবি ইব্রাহিমের মতো আমি
উষ্ণতার উৎস বানাবো একদিন।
বিষ্মৃতির ওম নিয়ে সারারাত ঘুমাবো নিঃশব্দে।
ঘড়ির কাঁটা
কখন পেরিয়ে যাবে বারোটা পঞ্চাশ।
দেবাশীষ ধর
হলুদ গোলাপ
দুই
বুকের কেশ থেকে পায়ের লোম, পৃথিবীর পুরনো মানচিত্রে একটি
গুহায় প্রথম দেখা গিয়েছিল, বদলেছে যাপিত কারাগার দিনে দিনে। প্রতিবার
আমার গার্লফ্রেন্ড একটি হলুদ গোলাপ নিয়ে কারাগার বদলিয়েছে, অতঃপর
আমরা শিশু, হলুদ নগর আরো গোলাপে ভরে গেলো।
নাঈম ফিরোজ
ঊহ্যশব্দে, যখন তুমি এলে
ভালোবাসা বাসে করে আসেনি। সে এসেছিলো শব-ই-ঘ্রাণে..
এই যে তার খোয়াবি সোয়াব তার হিলহিল জুতোর ওপারে আমার চেনা নাই দেশ।
যাহার নামে সাতশো লেডিবার্ড বিটল ওপাড়ার অপেরায় কেতাবি নাচ ধরে আছে, ম্রিয়মাণ।
উপকাহিনী পড়ে নাও তুমিও তুলিসম্রাজ্ঞী
না হয় এই রাতের ঈজেলজুড়ে আমিও এঁকে নেবো ভালো ভালোবাসা।
এক রাকার কন্যা নয় কাহন মুখ তুলে তুলে জিকিরের ছলে ডেকেছিলো আমারে,
নাকফুলের আমি তার
সে আমার মাথার ছেঁড়াতার
বেগুনি বেগুনি লাইলাক যাবে মেলানো আমার
ও শেফার্ড-মেয়ে তুমিও কি প্রেমে জর্জর?
পাশবিক এক পুরুষফুল আমার ভেতর
পাশবিক এক পুরুষফুল আমার ভেতর হাসছে
ঊহ্যশব্দে যখন তুমি এলে নাকফুলের ঈজেলজুড়ে
ভালোবাসা তুমি এ অবেলায়?
আমার লোমশ হাতের সাথে এবেলা নাচো নচেৎ!
‘নাকফুলের ঈজেলজুড়ে ভালোবাসা’ তুমি এ অবেলায়?
আমার লোমশ হাতের সাথে এবেলা নাচো নচেৎ!
নাহিদ ধ্রুব
মোমেন্টারি
মে মাসের কোন এক শুক্রবার দিনটি সুন্দর
শিরিষ গাছ হাত-পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোদে —
যেন — রাস্তায় পড়ে আছে মানুষের ছায়া
কী বিভ্রম — আমি কল্পনা করছি তোমাকে
হেঁটে যাই কুয়োতলায় — একটি পুকুর ডুবে
আছে মাটিতে — জলের গন্ধ মুছে গেছে কবে
কালোমেঘ উড়ে গেলো এক —
ঐ জলে কার, কাজলের ছায়া পড়ে?
শুনেছি গ্রীষ্মের দুপুররোদে ভুত তাড়া করে —
নিজাম বিশ্বাস
হাটবারের প্রেম
বালিকা দেখতে ভালো, ভালোবাসা যায়
নাম কী জানি না, চিনি তারে চেহারায়!
শনিবারে হাট বসে, মস্ত বড় হাট
হাটের ওপর বাড়ি তার ছন-কাঠ,
একটা ঘরের মধ্যে চায়ের কেটলি,
বিস্কুট, বাতাসা— চাইলাম পানখিলি
বালিকা হাসলো খিলখিল, মিষ্টি হাসি—
শনি আর রবি নাই, প্রতিবার আসি!
বালিকা দেখতে ভালো, ভালোবাসি তারে
বয়স আঠার হলে ঘরে নিব তারে;
বাপ তার বিছানায়, মা হারানো শোক—
হাটবারে লোক আসে, কতো কতো লোক
কারো চোখে চায় না সে, সবে তারে চায়
প্রেমবিনে কেউ তারে কখনো কী পায়!
হাটের ওপর বাড়ি, বাজারের মেয়ে!
পান-জর্দা খায় না যে, সেও পান খেয়ে
আরেকটু চুন চায় বালিকার কাছে—
বড় বণিকের কাছে সে কি তারে বেচে?
আমার চোখের দিকে তবে কেনো চায়
আমি তারে নিতে চাই, সেও দেয় সায়!
কৃষ্ণকিরিচের নিচে
দাঁড়িয়ে আছি কৃষ্ণকিরিচের নিচে ।
অথচ,
দূরত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে
সহজে হতে পারি
দুই দিকে নদী-
দূরবর্তী ।
অবগাহনের শীত জমতে জমতে
ঢাকা গেলে ক্রমশ তুষারে
চোখের মনি জ্বলে উঠবে না জেনে
এখন
প্রেম একটা নিরুত্তাপ কাঠি ।
রঙিন বাষ্পেরা জমে গেছে
কিছু
গ্রীষ্মগ্রস্ত ব্যাকুল-
একটা অনির্ণিত আগামীর পিঠ বেয়ে
কল্কে ধোঁয়ার মতো
আমরা তবু
বেরিয়ে পড়ি,
চোখাচোখি হই,
নিজস্ব গরাদে আটকে গেলে
ভাবি,
দূরত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে
সহজে হতে পারি
দুই দিকে নদী
দূরবর্তী-
এত গভীরতর মুখোমুখি সংবেদনা
দরকার ছিল না ।
প্রত্নপ্রতিম মেহদী
পরিচয়
বিদগ্ধ নন্দনের পানে তাকিয়ে ভেবেছি, সমুদ্র কতদূর?
তারপর বোধিদর্পণে ডুবে যেতে দেখলাম হৃদয়ের আর্দ্র বনভুমি;
আদিপৃথিবীর কামুক বনস্পতির অবিদিত সর্পিল ধারাভাষ্য
অহমের ক্লান্ত অনিমিখে লেপ্টে আছে আমাদের বিস্মৃতির ভূগোলে!
শাড়ির সামুদ্রিকতার ভিতর অদক্ষ ডুবুরির ন্যায়
একটা কিছু (সাংঘাতিক) ঘটিয়ে চলেছি আমরা
জীবনের অন্তর্মুখী নির্জনতায়, আশ্চর্য স্থিতির মনোটনি
কার্যত হিম করে রাখে আত্মঘাতি বোধের দোলাচল;
(মনোতলে প্রীতির শরাব শরীরের কোমল সহায়ে
রক্তের লোহিতেও ঘনায়েছে অলিন্দ-শিশির)
তবু নিরবধি, কালের ঘূর্ণির আদিম অস্পষ্টতায়
হয়তো সে-ও মুখচোরা এক ধূসর পরিচিতা!
পলিয়ার ওয়াহিদ
প্রেমিকাগুচ্ছ
আমি দুঃখ লিখতে গিয়ে বিসর্গতে বেঁধে ফেলি তোমার চোখ! কিন্তু দ্যখো—সুখের চিহ্ন ধরে রাখার এক মাত্র শিশমহল ওই মুখ! অথচ তোমার চোখেই খেলা করে বাঘের শিকারি মুহূর্তের মতো নান্দনিক ও অভিজাত উত্তাপের ভঙ্গিমা! আর পাশাপাশি মেতে থাকা ডুয়েল ঘাসফড়িংয়ের মতো ভ্রু যেন এখনি উড়াল দিয়ে বসে পড়বে—আমাদের সবুজাভ পৃথিবীর গালে! হে প্রেমিকা, তুমি মাটির ফুলদানিতে রাখা—লাবণ্যময়ী অহমে ভরা গাঢ় এবং লকলকে পাথরকুচি! আর জেনে রাখো—সৌন্দর্য্যরে অন্য কোনো উপযুক্ত শিরোনাম থাকতে নেই!
তোমার মুখে ঝুলোনো যে আয়নামহল—সে জলের সিঁড়িতে বসে সিঁথি কাটছে মমতা আর এই ভবঘুরে আমি—তবু আদমের লোভ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে অক্ষম! দেমাগী লাল মোরগের পাখনার মতো কিংবা মদ্দা কবুতরের আগুনিক ডানার নিচে ফেলে রাখি লাল ফিতার বনেদী সততা। তোমার শারীরিক মগডাল থেকে উড়ে যাচ্ছে— বদ্যনতার অলংকার!
তোমার মুখখানা অন্দরমহলের মতো আদরে উপচানো—যেখানে ল্টকানো জলসাঘর ও কারুকার্যখচিত অতিমূল্যমানের আরশি। জমজচোখ আনন্দের নাটাইফলের মতো দুলে আছে আমার বেদনার পাড়ে! তোমার ঠোঁটে খেলা করছে আপেল ট্রাজেডি আর মাংসল বাহুদুটি প্রভাব বিস্তার করছে—লিলিথের ডানার অসম্ভব কল্পনাশ্রিত উপমায়!
মউ মউ করে ভেসে আসছে—মায়া কবুতরের কূজনের মতো ডানায় মাখানো কামনার সুবাতাস। কাঁচা পেয়াজের রাগী মুহূর্ত ধরা পড়ে তোমার মসৃণ গ্রীবায়। যেখানে তীরের মতো ভেদ করে—আমার শিশুমতী পিপাষা আর বুকে ক্ষত নিয়ে শুয়ে পড়ি তোমার সুগভীর নাভিমূলে। কারণ শিকড় হারানো পুষ্টিহীনতায় আমার অকাল মৃত্যু, আমি—তোমাকে উপহার দিলাম।
জানো কিনা—আসমানী রঙের শাড়িতে তোমাকে উন্মুক্ত লাগে! যেন তুমি ভরাট হয়ে আছো দো-ফসলী মাঠে হরেক কিসিমের শস্যের দানার মতোন! তেতুল কাঠের আগুনের মতোন সুন্দর তুমি অথচ তোমার দৈহিক কদম গাছ থেকে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে অহমের জিকির। আর তুমি মা পাখির মতো আমার ক্ষুধার্ত ঠোঁটে অতিযত্নে তুলে দিচ্ছো—অতীতের যাবতীয় গচ্ছিত আধার!
আমি পুরুষ মৌমাছি বলে—তোমার পুষ্পে সজ্জিত দরবারে ঢুকে পড়ি অনুমতিহীন এবং কম্পমানে অথচ প্রতিবারই তুমি মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো—অপেক্ষার যন্ত্রণামথিত কাঠগড়ায়। কিন্তু পিছন ফিরে আমি মুখস্ত করতে ভুল করিনি—তোমার চওড়া বুকের উপর সোনালী লকেটে বন্ধী হয়ে ছটফট করছে আমার রূপালি দম! অথচ তোমার নতজানু জায়নামাজে আঁকা ছিলো মুক্তির ফায়সালা!
এই কবিতা—তোমার বুকের পাতায় আমার হৃদয় ক্ষরণের কালিতে লেখা হলো! এমনটা ভাবতে ভাবতে তুমি ডুব দিলে আহত বেগুনী রঙের মখমলের বিছানায়। যেখানে ময়ূরী হবার বাসনা নিয়ে প্রবেশ করেছিলো স্বয়ং ঈশ্বর! তবু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি প্রিয়তমা! আমাকে ক্ষমা করো এই অভাবনীয় তসবির মতো বাক্য গঠনের জন্য! কারণ এই লেখাটির শিরোনাম সম্ভবত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পানপাত্রে চুবানো! কারণ নিশ্চিত এখন তুমি—আমাকে মিশিয়ে ফেলবে গোলাপজলের পেটে!
পাঠান জামিল আশরাফ
ঊর্মি
যে অর্থে তুমি অনর্থের নাগাল পাচ্ছো না, বস্তুবৃক্ষের ডালে; যে কয়টি পাখি লেজ নাড়াচ্ছে—যে কয়টি রঙ—স্ফীত, ডালপালার নাচে। সমস্তু সবুজ স্বর-স্বস্তির ঢঙে সর্বস্ব জলের ঊর্মি প্রবাহিত হয়, প্রবাহিত হচ্ছে, ঊর্মি জলের দিকে—জলমগ্নতা; মর্মর, প্রিয় মর্মর, শুকনো পাতার নাগাল পেরিয়ে চলে যাচ্ছি, ঊর্মির হাত ধরে।
পার্থ অগাস্টিন
মৌরি,আমাকেও করো পাঠ একদিন
তোমার ঐ নীল চোখের কোণে- এ কোন্
সামুদ্রিক ঝড়?
কবে সে বলেছিলাম—দেবদূত গান।
তবে কেনো এ ক্ষুধার পাথর?
বেশ ভালোই জানো-পান পাতার মত নমনীয়
গুনে আমিও লাল হয়ে উঠি।
সব কথা শেষে যেখানে ফিরে যাবো বলে কথা
রটে, সেখানে জানালার কাছে দু’টি বিনিদ্র চোখ
তাক করা; যে চোখ নীল দ্যাখে,দ্যাখে প্রেমিকের
স্বভাব।
আততায়ী বারুদের উল্লাস থেমে এলে—
তুমিও বুঝে যাবে গ্রন্থ-গ্রন্থ খেল,মৌরি;
জেনে যাবে-যেখানে ধর্ম পেতেছে ফাঁদ
রাষ্ট্র দিয়েছে সায়;
যেখানে ছত্রিশ ব্যঞ্জনে শব্দেরা কেঁপে
যায়….
সেখানেই বেজে ওঠে আর্তির বাঁশি।
যে নষ্ট বেদনায় লীন হয় কৈতরী রোদ, বকুল
বর্ষা—
সেই আকুল ব্যবধি ধরে নত মুখে,খুব অভিমানে
বারবার ফিরে আসি,বারবার ফিরে যাই…..।
এ কোন্ নেশার লাটিম লাট খায় বন্ধকী গীতে?
তপ্ত সীসার মত গলে গলে যাই স্বর ও সুরের
বিরহে।
সেই অগোচর,সেই অমৃতপাঠ—পাথরের নিচে
চাপা পড়া জলের মত……।
মৌরি,তুমিতো জানো-এই সমাজের রন্ধ্রে
রন্ধ্রে ঢুঁ মারে তুমুল অসভ্যতা,তুখোড় সাইরেন।
এও জানো;এখানে ধুতুরার বীজ ফুঁড়ে জন্ম নেয়
ধাঁধার কয়েন—
মৃত পাখিদের ডানায় মুখ লুকিয়ে রাত জাগে
ছায়ার শরীর;
এ যৌবন কখনো করেনি ধার-ধোঁয়া-ধোঁয়া
সভ্যতার বায়বীয় কৌশল।
মৌরি,ওখানে বিশ্বাসের ডুবোচর,এখানে
প্রেমের সৈকত—
রক্তের শত-খেয়া ডিঙিয়ে তাই এখানেই দিলাম
ডুব।
তোমার প্রভুর নামে আমাকেও করো পাঠ
একদিন…
মাছুম কামাল
মশগুল
অজস্র আয়োজন চারপাশে আমার ক্যাসিনোর বোর্ড থেকে পতিতালয়,
হুড়মুড় ঢুকে যাওয়া প্রচুর মাস্তি
আর ভিতরে খননকৃত এক জলাশয়;
তার অনেক শীতল আবহাওয়া
এত তবু নিজেকে ভ্রমি ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন
বহুরাতে তোমার নিঃসঙ্গতার কাঁকন
আমার নখের ডগা থেকে উদ্বাস্তু প্রান, গায়ের উপর বহুদিনের মৃত আলোয়ান
অসংকোচের জরিনগুল মেখে থাকি
যেনবা ঘিয়ে রঙা মুখোশ টান দিতেই
দেখা যাবে জাজ্বল্যমান তোমার ছবি
তোমাকে আরও আঙুলে ধারণ করি
রুপোর আঙটিতে পরা বহুমূল্য রুবি
তৃষ্ণার্ত পিপাসার ছলে তোমাকে
পান করি, সেইফটি ম্যাচের মত জ্বলে
উঠে ঈষৎ, তোমার অস্ফুট প্রতিবিম্ব আর আমি মশগুল তাসবীহ্-তে তোমাকেই স্মরি।
মাহমুদ নোমান
চিতার গান
আমি তোমার খেলার লাডুম –
ঘুরিয়ে দাও
অষ্টপ্রহর সূর্যদিঘীর মাতাল ঝাঁঝি।
কাঠের বুকে লোহার গুঁতা
নটীবালা ভেঙ্গেচুরে নাগর ডোরে
মেঘসিঁদুর আর উলুধ্বনি।
অট্টহাসির চারণ ভূমে
বেলাশেষে আমায় না হয় মুক্তি দিও –
পুড়িয়ে ফেলে।
মোসাব্বির আহে আলী
অনুহাক্রান্ত
এরকম দরজা আছে আশেপাশে অহরহ।
তার মধ্যে একটি দরজা আপনি প্রায়ই খুলে দেখেন—
মেঝেতে পড়ে আছে পর্যাপ্ত মুচকি হাসি
কাগজে, পাথরে ও বুকে —প্রথম প্রেমের ;
একদম মক্তবের উনকুয়াশা ভোরে
মোম শরীরে মিঠা রোদের প্লাস্টার দেখতে দেখতে
গমের রুটির গোলাকার অক্ষরের ঘোর
চোখে নিয়ে সেই দরজার দিকেই
সবচেয়ে বেশিবার এগিয়ে গেছেন আপনি—
আর চিৎকারসমেত বলেছেন
— অনুহা,
শত দরজা বন্ধ রেখে
আজ আমি
‘অনুহাক্রান্ত’ ভীষণ!
রাতুল রাহা
লিভিং অন এ জেট প্লেন
বেমালুম উড়ে যাচ্ছে
মেঘ
তুলো তুলো
চারপাশ দিয়ে, অজস্র শঙ্খ মেঘ, আমাদের প্রেমাসক্ত স্মৃতি
ও বাতাস, অতোটা বইছো কেন ?
ধীরে
বহো তুমি, মারী ও মড়কের শব্দ এখানে পৌঁছেনি এখনো
অনেক উঁচুতে, এখানে সান্ধ্যপান, দুই হাত সমান্তরালে
প্রসারিত করে রাখো
ভূভাগের দিকে তাকিও না
তোমার উচ্চতাভীতি আছে, আর কিছুখন রাখো, আর বাকি নেই
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ক’হাজার ফুট উঁচু
রাডার কি তার কিছু জানে ? রাডারের মন আজ ভালো ?
তখন সন্ধ্যার গান, তখন আকাশে দুটো পাখি, ওরাও কি জ্ঞাত এই
মৃত্যুমুখী সম্ভাবনা ?
প্রচুর ঠাণ্ডা স্রোত, এলকোহলিক ডানাগুলো
ঠেলে ঠেলে আমার এই ছোট জেট প্লেন, অন্ধকারে এগিয়ে চলেছে
রিমঝিম আহমেদ
হস্তান্তর
একদিন তোমার চোখ দুটি তুমি খুঁজে পাবে না। হাঁটতে গিয়ে দেখবে
তোমার পা জোড়া খুলে পড়েছে ! ঝড়ের রাতে বড্ড শ্বাস কষ্ট শুরু
হবে, দম নিতে গিয়ে টের পাবে তোমার ফুসফুস নেই। ছিনতাই হয়ে
গেছে তোমার হাত, তুমি ছুঁতে পারছ না রাজেশ্বরীর মুখ, নাভি। তোমার
চোখের সামনে মরে পড়ে থাকবে পোষা বেড়াল; তুমি মায়া মায়া করে
কাঁদছ কিন্তু মায়া তোমাকে ছোঁবে না, চুরমার হবে না তোমার ভেতর-বাহির।
তুমি কাঁদছ- কেঁদে যাচ্ছ-কেঁদে যাচ্ছ—তোমার চোখে জল নেই, সমুদ্রগামী
ঢেউয়ে চেপে ভেসে যাচ্ছ একেকটা নদী, স্থল বন্দর, উটের পিঠে চড়ে
পাড়ি দিচ্ছ মরু-সাহারা !
তুমি খুঁজছ তোমাকে হন্যে হয়ে—
তথাপিও তোমার জানা নেই; আমি তোমাকে জমা রেখেছি নিজের কাছে
তুমি তোমাকে হারিয়ে ফেলার পর আমিই তোমার একমাত্র অধিপতি।
রিয়াজ মাহমুদ
রোদন
আপনার শানে দুরুদ পড়ি, তন্ময় থাকি রবের ধ্যানে
রাহমাতাল্লিল আলামীন গো, ভুখা প্রেম ওঙ্কার ক’রে
আবছা কাজল অন্ধকারে, যারে হাতড়াই সিন্ধু তীরে
নাড়ি ছিঁড়ে ঐ দেমাগি, রোলস রয়েসে ফিরছে ঘরে।
জুম্মাবারে জিলেপী দেব, রুকু-সিজদায় কুটব মাথা
সোয়লক্ষ এস্তেগফার মান’ত! একবার মিলাও দেখা।
তিনপক্ষ তজবিহ গুনে বাড়াবাড়ি কিছু তো চাইছি না
পাপীর দু’আ কবুল হলে, চুকিয়ে নেবো প্রেমের দেনা।
বল্কা রোদ, বেতের বন, মঙ্গা হাওয়ায় ঢাকছে আঙুল
অগাস্ট থামানো হেমের পিঠে সন্ধ্যার মত নামছে চুল
পুরোনো ঐ গোরস্থান ছাড়া, কোথায় আর ভিড়ে ফেরী?
নুন-মশলার নৌকাসহ যে জলে তলায় বিদিশা প্রেমী।
ব্যথা তেমনই চাক্ষুষ রাতে, ব্র্যাণ্ডি ঢালে নতুন পচনে
পাঁজরে গাঁথে তীক্ষ্ম অঙ্কুশ, চ্ছিন্নমুণ্ডি—পাবে জংশনে।
শারমিনকে বলতে যাব না এসব, ভিনগ্রহের রহস্য সে
একাকীত্বের দীর্ঘব্রতে, লীন হৃদয় তার মশগুল আছে।
নিকটতম গীর্জায় কোনো, উপচানো মুসল্লির কাতারে
মহাপ্রয়াণের স্মারক পড়বে, যেদিন যাব ডুবসাঁতারে
তাই হয়তো প্রস্তুতি এত, গুছিয়ে রাখছে মেমোরেন্ডাম
চ্ছল তবু চেপে নেবে, ভুল না হওয়া চাই কথার মাটাম
…
রোজেন হাসান
কিংবা প্রেমের পরে
আমি হয়ে ওঠি এক না শোনা, না-
বলা, না-বধির, না-ঘোরা, না-ফেরা
নিজের ছায়ার সাথে, পাথরে ডুবে যাওয়া
অবনত এক না-দেখা
সবুজ কচ্ছপ।
যার
এস্রাজের বাদামি কল্পচূড়ায়
সাপ পেচিঁয়ে ওঠে স্মৃতিঘোর
আর ছায়ার তূণ ছুড়ে শুণ্যতার দিকে
যে আমি সংগ্রহ করে চলেছি নুড়ি, অবিশ্রান্ত
বৃষ্টির ভেতর
যে ভুলে যায়
যে শুনে-না জন্ম হয়েছে তার।
সমুদ্রধারে রৌদ্রপ্রভাবিত মুক্তোর বাড়ি
যে দেখে
স্বপ্ন দেখে ব্যালকণি আর শুভ্রমাছের
ভুলে যায়, ছিপফেলা
অর্ফিয়ুসের কণ্ঠস্বর, বেঁজে ওঠে বসন্তে
যেন আমি
অর্ফিয়ুস, ভুলে যায়।
শঙ্খচূড় ইমাম
ঘূর্ণন
করুণার তলদেশে দাহ্য ধরে—
সে এক সমস্ত ভোরের শোকানুভূতি
হয়তো তখনই ফিরে আসে
মওসুমের রিক্তলাল, যেখানে—
নীতিমালা উবে যায়—উড়ে আসে
উদ্ভিদের সিম্ফনি—যেন
দ্রাক্ষা সমেত কব্জির কাঁপা কাঁপা
নতজানু চিৎকার!
আমরা এভাবেই সুষমা ঝারি
এবং একটি সাইকেলে থ্যাঁতলে দেই—
মৃত নীল ফুল, কিংবা
ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা ইদুরের কণ্ঠ থেকে
মিথ্যে মিথ্যে ছিনিয়ে আনি
ভাতফোটা গান।
একদিন মেধাবী হয়ে যাই
বসন্তের এক্সামে লিখি—
֍ এখানে কোনো অর্ধপাকা পেয়ারা নেই
֍ প্রতিদিন প্রযত্নে এঁটে যায় বণিকবার্তা
֍ কতিপয় কমরেড রুমাল না পেরিয়ে সেমিজের উৎসব খোঁজে
֍ আদতে ঘৃণাই জীবন
ফলত উত্তাপের দিনে অনুশীল করি
দীঘল ফণা।
করুণা আসে-যায়। টপকে বসি করাতকল।
থুতনিতে দীর্ণ রাতের উগ্রতা জ্বেলে দেই।
না পরা মোজার মৌলিক ক্রোধ থেকে—
যতটুকু অংশ স্বাগত জানাতে চাই
তার আখ্যান ধীরে ধীরে মোচড় খেয়ে
নিয়ে যায়—অজস্র আবিস্কারে—এবং
পথে লাথি মেরে পৃথক করি নিজেকে।
শেষমেষ বলেই ফেলি—যাই জীবনের দিকে—ঝেরে আসি স্নায়ুর ইতিহাস
শামীম আরেফীন
হেরে যাওয়া রেসের ঘোড়া
কণ্ঠনালিতে আটকে আছে দেয়াল। ফলে ফুসফুস তাড়িত ঘোড়াগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে আবার। আমি তো সেই হেরে যাওয়া রেসের ঘোড়া। আস্তাবলে দেহ রেখে যে ছুটে বেড়ায় সহীসের রক্তের ভেতর। অথচ দেখো, ফুঁ দিয়ে মৃত্যু নেভানো সেই আমিই আজ ভুলে গেছি দেয়াল ভাঙার কৌশল। হেরে যাওয়া রেস কাঁধে নিয়ে তবে কি ফিরে যেতে হবে? মৃত্যুর চেয়ে যে কোনো ফিরে যাওয়া সহজ নয় জেনেই ছিঁড়ে খাচ্ছি ঘাসের জীবন।
আসলে দেহ বলতে যে হলুদ পাথরকে ভেঙে পড়তে দেখো, সেও ছিলো পানশালার নিঃসঙ্গ পেয়ালা। পলাতক জুয়াড়িরা যাকে রেখে গেছে শূন্য করে। ইতিহাসের টেবিল খুঁড়ে কেন তাকে জাগাতে চাও? দেহ; সেতো পৃথিবীর প্রাচীন গুহাঘর। ভেতরে মাতাল মাকড়শার সিঁড়ি। নামতে নামতে অন্ধকার ছুরিতে গেঁথে যাওয়াই যার নিয়তি। গুহামুখ যদি বন্ধ রেখেছো, সিঁড়িদের তলপেটে কেন তবে জ্বেলেছো আগুন?
শামীম সৈকত
একজন প্রেম
হাতঘড়ি দেখে দেখে ছুটে যাচ্ছে একটি দুরত্ব-বাইসাইকেল। ধরো, তোমার-আমার সম্পর্কের কাঠামোয় বসে আছে একটি নিঃসঙ্গ পেঁচা। আর সাপের ডাইরী থেকে পালিয়ে বেড়ায় কয়েকটি ব্যাঙ।
একদা ঈশ্বরের গোলা কেটে পালিয়ে বেড়ানো ইঁদুর। হাজার বছরের পথ ধরে, সিংহল সমুদ্র পেরিয়ে, ক্লান্ত হতে হতে জীবন-আনন্দে লুকায়। ” চমৎকার! ধরা যাক দু ‘একটা ইঁদুর এবার “।
দেখার দুরত্ব ও পথের দুরত্ব সমান সমান। তাই নির্মিত শব্দের ভেতর বয়ে চলে আমাদের প্রেম। তুলি। বিমূর্ত জানালায় রাতগুলো ভোর হলে, সমস্ত উদ্দেশ্যহীন অভ্যাসে সময়কে খুন করে সময় তৈরির ছলে ভেবো না আমাদের দেখা হবে না।
শ্রাবণ সৌরভ
মাধবী আাপা
অনেক রাত, লিমুজিন ও ডগি সমেত___
মাধবী আপা আপনার শরীরে কার হাত?
যে প্রেমিকের হাত কাটা পড়েছে শীতের ট্রেনে,
যে প্রথম শুনেছিলো আপনার বয়োঃসন্ধির আর্তনাদ;
তার হাতে ছিলো না কোন পাপ।
প্রেমিক ছুঁয়েছিলো বলে হৃদয় এখনও জাফরান,
আর পুরুষ ছোঁয় বলে____
আপনার শরীরে এখন নষ্ট হয় রাত!
শারমিন সামি
অবহেলার গোপন বিনিয়োগ
বুকে বুকে রটে যাওয়া ক্ষত
হতে পারতো দুর্ঘটনার—
কিংবা মর্মান্তিক কোনো অনুরোধের।
অথচ শারীরিক সেচ প্রকল্প ঘেঁটে জানা গেল
তাতে সেঁটে আছে স্মৃতিকাতরতা আর অবহেলার
কিছু গোপন বিনিয়োগ।
হ্যাশট্যাগের মতো যাদের জীবন ও যৌবনে
গেঁথে আছে হেমন্ত, তারা মূলত কৃষিনির্ভর প্রাণী
পারিবারিক অন্ধকার শিখতে শিখতে
তারা তুলে নেয় রিকশার হুড।
শারমিন রাহমান
ঝিরি
দৃশ্যটা ওখানেই আছে।
মাঘী পূর্ণিমার রাতে গোবর্ধনে তীর্থে যাবার জন্য নয়
বরং, জ্যোৎস্নায় কেঁপে কেঁপে
শীতল মেলোডিক ঝর্ণায় ধুয়ে মুছে যাবার মত
দো চুয়ানীর মাদকতায়, পাহাড়ের পর পাহাড় জুড়ে
সার বাধা তামাক চারাগুলি আর পেলব মসৃণ ঘাসের
জড়াজড়ি হয়ে উঠতে চাওয়ার মত,
ম্রো নারীটির পেটানো শরীরের ঘ্রাণে।
দৃশ্যটা বিশ্বসঙ্গীত শুনছে তবু,
বিশ্ব অঙ্গুলির টোকায় টোকায় চিহ্নিত হতে না হতে
বারবার পৌঁছে যাচ্ছে ডিম পাহাড়ের ঝর্ণার ঘামে
ঝরে ঝরে ক্লান্ত হচ্ছে, বয়ে যাচ্ছে থরে থরে
গোছে গোছে সাজানো বাঁশের ভেলায় চড়ে,
বহু বহু কিলোমিটার পথ।
দৃশ্যটা মেঝেতে আটকে পড়ে আছে যাদু টোনার আঘাত খাওয়া
বউটার মত। ভিন্ন চার দেয়ালের পৃথিবীতে ঘুরে ফিরে
চার মিনিট সাতাশ সেকেন্ডে।
কোন একদিন দৃশ্যটা মরিচিকা হয়ে উঠবে
চীনের প্রাচীরের মত। পৃথিবী ঘিরে গড়ে তুলবে
একটি বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ। ভয়ানক সুন্দর।
সাদা।
পাহাড়ের মাঝখানে তুমুল জ্যোৎস্নায় আবিষ্কৃত ঝিরিটার
গোপন স্বপ্নদোষের মত।
শাহের হাসান
এসো, সমুদ্রস্নানে
শ্বেতা শতাব্দী এষ
চিঠি সময়
চিঠি সময়ের মতো একটা গোলাপি বিকেলে ফিরে যাই,
মূলত আমি সেখানেই থাকি—যেখানে নদীর জলে
মাটির কলস ভরে ওঠে, ক্ষেতের আল ধরে সবুজ
চোখের মাঝে মাখি।
তোকে আমি সেই নামে ডাকি—
পেয়ারাবনের ভোরে রাগসংগীত ভেসে আসে
দূরত্ব-ব্যালকনি পার হয়ে, অনায়াসে তোকে ভালোবেসে
বলে যাই তিনের অধিক সর্বনাম!
সাম্য রাইয়ান
নাম
অনেকটা ঝড়ের গতিতে থাকি;
নামের ভেতরে থাকে সমূহ সম্ভাবনা
ছায়ার আড়ালে হাসে
চিত্রকল্পের বাঘ।
তলিয়ে যাচ্ছি চোখে, ওহ হামিংবার্ড
নিজেকে অচেনা লাগে, অপর থেকেও
অধিক যাপনে, নামের গোপনে।
সিপাহী রেজা
মিছামিছি
ছোটবেলায় আমিও খেলতাম, বন্ধুরা কেউ কেউ
হয়ে যেত আমার ছেলে কিংবা শশুরবাড়ির আত্মীয়।
সাথের বান্ধবীটা হয়ে যেত আমার মিছামিছি বউ।
ঝিলমিল করা রোদে যার মাটির সংসার
মাটির হেঁসেলে পুড়ে যেত মাটির খাবার।
গরম মাটির সে ভাত
আমরা খুব শব্দ করে খেতাম
খেতে খেতে একদিন সে অনেকদিন পর…
সত্যিকারের বউটা গোছায় মিছামিছি ঘর
মাঝেমাঝে মনে কয় বউটার সাথে খেলি
তুমি ঘর গোছাও
হাঁড়ি-পাতিল ধোও
হেঁসেলে দেও আগুন।
আমি বাজার করতে গিয়ে খুঁজি
মাটি পাতা আর রঙিন রঙিন ফুল…
সুজন সুপান্থ
মায়া ও ময়ূরের সখ্যতা যেন
ঘুমের ভেতর কে যেন চুরি করে এনে ফেলে গেছে শরতের হিমশিম বৃষ্টির স্মৃতি। ছিঁড়ে খাওয়া এই স্মৃতি থেকে সহজেই পেরোনো যাচ্ছে আনন্দসরণীর জেব্রাক্রসিং। যেখানে সন্ধ্যা মানে আসলে আলাদা কিছু নেই, শুধু মিলিয়ে যাওয়া আধো আধো মুখ। কথা মানে পুরোনো গল্পের ছায়া ও সেতু। এইসব কথার পিঠে কথা জুড়তে গেলে অহেতু ঘন হয়ে আসে কাছাকাছি ঘ্রাণ। না বলা যতটুকু কথা, তা আমাদের ওই নির্জনে দেখা মায়া ও ময়ূরের সখ্যতা।
ঘুমটুম ভেঙে গেলে, চোখের ভেতর, বুকের ভেতর কোথাও বৃষ্টিভাঙার শব্দ। জেব্রাক্রসিং পেরিয়ে অসমাপ্ত বাতাসের দিকে চলে যাচ্ছে গাঢ় হতে চাওয়া ফিনফিনে কথা। আর হাত নাড়তে নাড়তে অসম্ভবের মতো কেউ ঢুকে যাচ্ছে শহরের সমস্ত আয়না ও বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ফোঁটায়।
এখনো লিখিনি, ঠিক এভাবে হাত নেড়ে চেনা মুখ মিশে গেলে এই হাতে কী করে গোপন চুমুর স্মৃতি আঁকা থাকে; জেনো, এসব কোনো দিন বলব না তাকে ও তোমাকে…
সুপ্তা সাবিত্রী
ডুব
যতোবার বলি ডুবে যাও,
ডুবে যাও কণাদ
সূর্যের দিকে মুখ রেখে
সরে যাও, সরে যাও
পশ্চিমে।
ততোবার ভেসে উঠছো
জল থেকে চাকায়
জিহ্বায় রেখে তেতে ওঠা লাল
বীজ বুনে যায়।
তোমার সকাল পুড়ে যায়
বারবার পুড়ে যায়-
তুমি আর ভেসে ওঠো না,
ডুবে যাও চন্দ্রগ্রস্ত, ডুবে যাও।
সূর্য্যমুখী
৪ঠা এপ্রিল একটি নারীর নাম
জৈবিক ঢেউ গুনে বেড়ে ওঠা বালিকা।
গন্ধ শুঁকে শুঁকে যে উকি মারে পানখের খোলসে আর ঘুঘু চড়ায় একুশটি দিঘীর ভিটেতে। কসম তোমার ব্যক্তিগত ম্যাগপাই বাগানের,
তোতলানো পারদের বুদবুদে মেয়েলি সেফটিপিনের, অশরীরী চোখের ঠারে নিষিক্ত করো না আর একটিও আয়েশি তিল।
কামিজের পুকুরে বরশি ফেললে সকলেই নারী হয়ে ওঠে –
শুধু কেউ কেউ হয়ে ওঠে ৪ঠা এপ্রিল
সেঁজুতি জাহান
ওষধি
বৃষ্টিমন ওগো,
তুমি নেমে এসো পাতলা দুঃখের
শিশির ছেড়ে,
মায়াগলিত এই ‘দুটো ‘ পৃথিবীতে।
আমি তুকমার আগাছা থেকে
শান্তিময় নেয়ামক দেবো তোমায়।
খড়খড়া এই বর্ষার রোজামুখে,
তুমি দিন ভেজাবে পবিত্র – পরিজনে।
শিশিরের দিন ছেড়ে তুমি বৃষ্টি ধরো এসে।
সব জল জমা রবে, অপেক্ষার সুষমায়।
তুমি একটিবার নেমে এসো কবি,
ধাতব যন্ত্রণা থেকে কমজোর বালুর
ছেলেখেলাতে।
আমি আছি, তোমার শুষ্ক কাশির মতো নিয়ত -যন্ত্রণার
ওষধি হয়ে …..
সৈয়দ এনামুল তাজ
বিথী হাজং
হেমন্তের শুরুতেই মেয়েটি নতুন বউ হতে চাইলো। আমি দিতে চাইলাম কিছু নতুন বই। সে বললো— পুরাণেও পাপ থাকে কবিয়াল। তুমি বরং কিনে আনো অফেরতযোগ্য ভালোবাসাময় দিন কিংবা মরণশূন্য রাত। আমি তাকে গ্রিকবালিকা মার্পেসার কথা বললাম। যাকে উদ্দেশ্য করে দেবতারা গান লিখতো প্রেমের।
হেমন্তের শেষে মার্পেসাও আমার প্রেমিকা হলো; বউ নয়
ডারউইনের বিবর্তনবাদের রথে চড়ে মার্পেসা হয়ে ওঠলো বিথী হাজং, ঈশ্বরীয় ধর্মের মতো। আমি একশত আটটি নীলবেশ্যা রাজ্যে হয়ে গেলাম ইলিয়ডের একেকটা মৃতদেবতা।
সোনিয়া রূপকথা
অস্পৃশ্য
দরজার পাশ ঘেঁষে দাড়াও রোজ
ওপাশে তোমার অজানা সব…
কড়ায় হাতের পরশ রেখে ফ্রিজ শট।
সাহস করে একদিনও কড়া নাড়োনি –
পাছে ভাঙ্গে ঘুমঘোর।
তোমার পায়চারির শব্দ-
অহর্নিশ গুনে গেছে নিশি ডাকা ডাহুক ।
তুমি চলে গেলেই
জেগেছে প্রতিরাত …
প্রতিবার …
দরজাই জেনেছে বারোয়ারি জীবনের আখ্যান ।
স্বরলিপি
কুমারী মৃত্যু
‘নিস্তব্ধতা’ যত পুরোনোই হোক— তুমি আছো
মাথার ওপর স্কার্ফের মতো তোমার হাত—
আড়ালে বাতাসকে বুনে দেয় মগজের সব গলিতে।
পালকির গানের মতো ছিঁড়ে আসা নৈশকালীন দোলনায়
আর একটু আগে, ককটেল-বোমার মতো চিৎকার দোলাতে দোলাতে
মরে গেছে যে, কুমারী;
তার মৃত-আত্মা পুরুষ সমেত হাঁটতে শিখছে এখন।
সুরের পাশে
যুগল ছায়া আড়াল করেছে কুমারীর নাম, বাড়ির ঠিকানা।
মোমবাতির লাল আলোর মতো;
সরু পথে হারিয়ে গেছে তার পরিচিত মনোহারি দোকান।
বদলে গেছে সওদাপাতি
কাজুবাদাম কিনতে ভুল হলে
আবার বাজারের দিকে হেঁটে যাবে সে।
‘দ্বিতীয়’র অদ্বিতীয় প্রেমের কবিতা’ এর প্রথম আয়োজনের লেখাগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন