‘অহম ও অশ্রুমঞ্জরী’ কবি অনুপম মণ্ডলের একটি কবিতা-সিরিজ। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। ‘অহম ও অশ্রুমঞ্জরী’ নামেই বইটি প্রকাশ হবে। পাণ্ডুলিপি থেকে আটটি কবিতা পড়া যাক…
অহম ও অশ্রুমঞ্জরী / অনুপম মণ্ডল
১৮
মন অন্নময়, কেননা বাতাসে ঘুরে ঘুরে শরশব্দ অন্বেষণ করে। একটি পাতার পাশে অন্য পাতার দেহ। তার অঙ্গকান্তি বাতাসে কথিত হয়। বালুর শয্যাপ্রান্তে ডুবে যাওয়া কারো মাথা, টের পাই, ওই শরীর উন্নত ও স্থির। এক প্রেমময়ির নিরীহ কণ্ঠস্বর, নিভৃতে, তীর্থাভিমুখে এগিয়ে চলেছে।
১৯
পুরাতন কথাগুলো একবার বেজে উঠে, ঝিঁঝিঁদের ঐ আবছা গানের তলে মিশে গেল। অতি দূরে নির্বাপিতপ্রায় রাত্রির শিখাগুলি। রাখালেরা গাভীদের নিয়ে পার হচ্ছে। সূর্যাস্তের কণাগুলি এমন ভাবে এসে নেমেছে শিরিষের পাতায়, ডালের ওপরে। যেন লণ্ঠনের ভেতরে আলো জ্বলছে। জল ছেড়ে একে একে উঠে আসছে তরঙ্গ সকল।
২০
তার অন্তিম কালের স্বর; দু’একটি কথা, বুঝিবা আকাশ আশ্রয় করে ধ্বনিত হল। অগ্নিকে মনে পড়ে। ক্রমে, আঁখিনীর তার শুকিয়ে গিয়েছে। আপন রুধিরস্রোত এমন রেখেছে ঢেকে, নিজ হাতে। যেন মেঘগম্ভীর ধ্বনিমধ্যে কেউ অকাতরে নিদ্রা যাচ্ছে। যেন ‘সে আকাশ রুদ্ধ হলে সকলি আকাশ’।
২১
ক্ষুদ্র ঐ কণ্ঠ নিয়ে বসে আছি। শোকাকুল পাতাগুলো একে একে কোলের উপর গড়িয়ে পড়ছে। অধোবদনে। অন্ধকারেরও অতীত ঐ তরঙ্গ; মর্তধাম হতে আরো উঁচুতে, ঐ অশ্বত্থের ডাল, আজ অস্ত দিগন্তের সকল আভা গেঁথে নিয়েছে। সন্ধ্যা ঘুমিয়ে গিয়েছে এইখানে। নিজেরই ভগ্ন ঊরু; মেঘ জালে আবৃত হতে হতে এক ভৃত্য, যাত্রাপথের দিকে এগিয়ে চলেছে।
২২
অনাবৃত বাদাম। ওই অনালোকিত গৃহলোকের দিকে, সূর্যাস্তের বাকলগুলো ঘন হয়ে উঠছে। তার কণ্ঠস্বরের উপর মেলে দেয়া তরঙ্গের শেকড়ে।
২৩
পদচিহ্ন ধরে আমরা হারানো পশুগুলো খুঁজে চলেছি। এই মাটি, ঘোর কুটিল তরঙ্গভঙ্গিত অনালোক আমাদের নয়। প্রানবায়ু এই সময়ে আর ধারণ করতে পারছেনা আমাদের। যেন আপন নাভিপাত্র থেকে, একে একে ভেসে উঠছে শব্দ। দীপালোকে, তীরের কালো জলে সুষুপ্তি ধুয়ে মুছে আমি তারে দেখি।
২৪
একটি কেশের অগ্রভাগে নিহিত সেই অগ্নি; যেন শোকাতীত, যেন অন্ধকারের অল্পতা হতে একটু একটু করে বেরিয়ে গিয়েছে। শর দ্বারা আমি তারে সন্ধান করি। নিভৃতে বসিয়ে তাকে বলি, এই বক্ষ, গ্রীবা, মস্তক আমার; তুমি তুলে ধরো তাকে; ঊর্ধে উঠাও। যেন মাতার মতো তুমি তাকে রক্ষা করো।
২৫
অচেনা পথটি ঘুরে ঘুরে, আমরা শীর্ণ পাতার ব্যথাটুকু আজ শুনি। সমাধির ওপার হতে নেমে আবার কোথায় দাঁড়াবে তারা। হাওয়ারা পাতার তিক্ত গন্ধ বয়ে নিয়ে আসছে। আকন্দ ফুলগুলি, ঝরে যাচ্ছে কোন এক অপরাহ্নের ভেতরে। একটি তৃণখণ্ড, নিঃসঙ্গ, একা, তরঙ্গসমাকীর্ণ ঐ শৈলাগ্র আশ্রয় করে পুনর্বার ঘুমিয়ে পড়েছে যেন।
কবি পরিচিতিঃ
অনুপম মণ্ডল। জন্ম ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৮; কৃষ্ণনগর, খুলনা।
সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশায় শিক্ষক।
প্রকাশিত বই : ডাকিনীলোক [কবিতা, চৈতন্য, ২০১৬]
ই-মেইল : anupamsoc@gmail.com