নামকরণের সার্থকতা
নামকরণের সার্থকতা নেই। একা
যেতে যেতে ভাবি, বুড়িগঙ্গায় প্রবাহিত
জীবনের সকল প্রণাম। শান্ত হয়ে
ভেসে যেতে থাকে বেকসুর কান্না।
দেখেছি কয়েকদিন, শহরতলীতে নেই বাণিজ্যবিশেষ
গীতবিতান সুদূর পরাহত, তুমিও নিরুদ্দেশ!
কুয়াশার দেবদূত
আপাত অর্থহীন চিত্রলেখার হাঁটাস্রোত
হুড়োহুড়ি নেই, তন্ময় রহস্যের দিকে
গুঁড়ি মেরে আসছে অরোধ্য কিচিরমিচির
চন্দ্রশীতল রাত।
চিরচেনা মরুদ্যানে জেগে ওঠে
যাতায়াতের পবিত্র পথ—
হাড় হিম
নাইটগার্ড মৃদু হাসে ভয়ে
না কি বিষণ্নতায়!
অস্থির কাঁপা কাঁপা বুকে
কৌতুহলী গার্ড, বাতাশে মাস্তুল গেঁথে
দ্যাখে ঊষাময় অনিরুদ্ধ কাল
পাখিসম চিৎকারচিঁড়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে—
রাত্রির অলৌকিক জলাধার
দুর্বোধ্য প্রেমের একপাশে তুমি
বিপরীতে অলৌকিক জলাধার।
স্বচ্ছ। নীল আলোর নিঃশ্বাস।
প্রজ্বলিত অগণন আহ্বান ঠেলে
নিজেকে বিভ্রান্ত করে যায়।
প্রভূত আলোর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে
হতাশার কাঠ খড়ে আগুন দিয়েছি।
অবসন্ন রাত্রির কলার চেপে ধরি— ‘আপনি কে?’
— আমি ঐ দূরে
পাহাড়চূড়ার আড়াল থেকে
হেঁটে বেরিয়েছি রোজকার মতো
— এসেছ তাহলে তুমি
উড়ুক্কু অন্ধকার, অধিক স্পষ্ট হবার আগে
অর্থময় দীর্ঘকাল পেরিয়ে, মৌ মৌ চিৎকারে
নিয়ে চলো অক্ষরগুলি, শাস্ত্ররেখা বরাবর!
আত্মজীবনী
অর্ধেক জীবন গেল
তোমার দিকে চেয়ে,
বাকি অর্ধেক
তোমার কথা ভেবে।
নৈশসঙ্গী
আলোগুলো লাল আর নীল
টলমল করে
চারটে লোকের ভারে কেঁপে ওঠে
ইঞ্জিনের ঘোড়া।
টগবগিয়ে
কেঁপে কেঁপে ওঠে সমূহ পথের দিশা…
নেমে যাই
এই রাস্তা চলে গেছে
অধিকতর নিঃসঙ্গতার দিকে।
পুরনো শহরে বয়সী শামুক, হেঁটে যায়
অক্ষয়দাস লেন পেরিয়ে—
পকেটে মুদ্রা নাচে।
গলির মুখে নাচে পুলিশের গাড়ি।
বেদনাহত কোকের বোতল ছুঁয়ে
নৈশ বন্ধুর সাথে ট্রাফিক পেরিয়ে হাঁটি
অদেখা প্রতিবেশিনীর নিঃশ্বাস কাঁধে
টের পাই, আমরা তখন মেঘের ছায়ায়
অন্ধকার, বৃষ্টিহীন গ্র্যাণ্ড এরিয়ায়!
সাম্য রাইয়ান
জন্ম ৩০ ডিসেম্বর; বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সম্পাদনা করছেন শিল্প-সাহিত্যের অন্যতর লিটল ম্যাগাজিন ‘বিন্দু’ (www.bindumag.com)৷ কবিতা, প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি লিখেছেন নতুন ধরনের আখ্যানধর্মী গদ্য৷
সাম্য রাইয়ানকে নিয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘তারারা’ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ‘মনমানচিত্র’, ভারতের ‘এবং পত্রিকা’ তাকে নিয়ে বিশেষ একক সংখ্যা ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন ‘নিসর্গ’ বিশেষ মূল্যায়ন (ক্রোড়পত্র) প্রকাশ করেছে৷
প্রকাশিত গ্রন্থ: সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট [গদ্য, ২০১৪]; বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা [কবিতা, ২০১৫]; মার্কস যদি জানতেন [কবিতা, ২০১৮]; হলুদ পাহাড় [কবিতা, ২০১৯]; চোখের ভেতরে হামিং বার্ড [কবিতা, ২০২০]; লোকাল ট্রেনের জার্নাল [গদ্য, ২০২১]; লিখিত রাত্রি [কবিতা, ২০২২]; হালকা রোদের দুপুর [কবিতা, ২০২৩]; জলের অপেরা [কবিতা, ২০২৪]৷
সম্পাদিত গ্রন্থ: উৎপলকুমার বসু [নির্বাচিত রচনা ও পর্যালোচনা, ২০২২]; জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ [পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ সংকলন, ২০২৩]।