আদম পাহাড়
আদম হাওয়ার কাছে ফেরত চেয়েছিল বুকের হারানো পাঁজর
হাওয়া দিয়েছে গোপন বিদ্যা শিকারের: ছুড়েছে পাথর
সেই থেকে পাথর চুম্বন, হাজরে-আসওয়াদ স্মৃতি হয়ে আছে তার
এখনো পুরুষের বুকে ব্যথা হয়ে বাজে আদম পাহাড়
মানুষের পাপের ভারে পাথরে জ্বলে ওঠে অগ্নি, বুকে তার রৌরব
সে স্বয়ং আগলে রাখে নরকের দ্বার—
আদমের বুকে ব্যথা হয়, হাওয়ার বক্ষে কাঁদে আদম পাহাড়
আলিফ এক মূর্খের ফিকির
আব্বা স্বপ্নের ভেতর কেটে নিতে চাইলেন দুই হাত,
আমি গলা বাড়িয়ে দিলাম।
কিন্তু গলায় ছুরি চালাবার আগে তিনি বললেন: হাত কেটে নেওয়া হোক।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি মৃত্যু,
হাত কেটে নেওয়ার আগে মৃত্যু দাও, খোদা!
তিনি আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলেন।
‘অনেক বেলা হয়েছে, ওঠো নাশতা করো’
—এই বলে আব্বা ফিরে গেলেন অন্য ঘরে
আমি তাকিয়ে ছিলাম তাঁর সাদা গেঞ্জির কোথাও কোনো রক্ত লেগে আছে কি না
নিজের হাতের দিকে তাকাবার কথা আমার মনেও পড়েনি
আবিষ্কার
যার ঘরে বসার পিঁড়ি পর্যন্ত নেই সেও স্বপ্নে পালঙ্কে ঘুমায়!
আজ বিকেলে নদীতীর ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে
এক জেলের গল্প শুনেছি। মীনগন্ধা গা। তবু তার ঘরে মাছ জোটে না।
পাষাণভার বয়ে চলা মানুষের ভেতর পাথরের পুনর্জন্ম ঘটে—
শুনতে পাই।
আত্মলীন এই সত্তা। কোনোদিন মানুষের কথা জানতে চাইনি। তাদের থেকে সুবিধা নিয়েছি অহরহ।
বৈপরীত্যে ঠাঁসা লোভী মন।— এইটুকু উপলব্ধি নিয়েও
বালিশকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি রাতে সে ঘুমায় কি না
ঈশপ
গ্রামে ডাকাত পড়লে লোকেরা জেগে ওঠে,
ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেয়;
উলুধ্বনি আর আজানও যুগপৎ শোনা যায়
কোনো কোনো জনপদে
প্রতিরোধস্পৃহা মানুষ পেয়েছে জন্মের আগেই।
—এই অপার বিজ্ঞান তাকে মর্মপীড়িত করে।
যদিও প্রাণভয়ে সে নিজের হত্যাকারীর নাম
মুখে আনে না,
অথচ সে ভুলে যায়নি, বৃষ্টিতে ভেজার অবসরে প্রকাশ করে দেয়া ব্যাঙের সত্য উচ্চারণ!
গল্পের ভেতর প্রবঞ্চিতের নামে বিবৃত করে
আপন রক্তের দেনা।
আমিও তাদের উত্তর পুরুষ?
দর্জিবালক নই,
তবু স্বপ্নে নিজের ঠোঁট সেলাই করে বাঁচি!
খুনিয়ারা
তারা কবর থেকে লাশ তুলতে গিয়ে দেখে, যাকে তুলে এনেছে সে তখনো জীবিত। কিন্তু তারা লাশের মাংস খাবেই।
আমাকেও ডেকেছে লাশ-ভোজন-উৎসবে।
সাগ্রহে খেতে গিয়ে অবলোকন করি, আমারই মাংস খেতে দিচ্ছে আমাকে! লাশ তুলে আনা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি, প্রত্যেকটা মুখে আমারই অবয়ব।
এমন অদ্ভুত স্বপ্নে ঘুম ভাঙে?
অথচ আমি শীলভদ্রের বুদ্ধবাণী পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে ছিলাম!
কবি পরিচিতি
জন্ম : ১ এপ্রিল ১৯৮৪
রসুল্লাবাদ, নবীনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মা শাহানা ফেরদৌসী (২০২০ সালে করোনা মহামারিতে মারা যান) ও পিতা তাজুল ইসলাম। স্ত্রী ফাতেমা রিয়া ও ছেলে আহমেদ হাসানকে নিয়ে তার সংসার। এই পর্যন্ত পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। আদম পাহাড় (২০১৬), আলিফ এক মূর্খের ফিকির (২০১৮), আরও শাহানা ফেরদৌসী (২০২১), আলফালা গলির ভুলগুলি (২০২২) ও পুরবীর বিড়াল (২০২৪)। এছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে প্রকাশিত অনিয়মিত লিটলম্যাগ তিতাসনামা’র সম্পাদনা করেছেন। কাগজটির ৩১টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহ-সম্পাদক ছিলেন লিটলম্যাগ শ্রয়ণ-এর।