সেলিম মোরশেদের নাটক মানুষ উত্তম : আধ্যাত্মিকতা ও চিরায়ত বিশ্বরাজনীতির আগুন | মাসুমুল আলম


ঈশা বলেন, আমাকে সৎ বলো না, সৎ একমাত্র আল্লাহ্। আমি একজন সত্যের সত্যায়নকারী। একজন ব্রতনিষ্ঠ বিপ্লবী।

 

নাট্যশিল্পে সত্য অনেক রকম। রয়েছে তার বহুমাত্রিক রূপ ও গুণাগুণ। খণ্ডিতভাবে তার কিছু ব্যাখ্যাযোগ্য আর কিছু শব্দের সীমাবদ্ধতাহেতু অব্যাখ্যাত থেকে যায়। যদিও শিল্পকে অখণ্ডভাবেই বিবেচনা করা শ্রেয়, কেননা তাতে শিল্পের সত্য ও সৌন্দর্য অবিকৃত থাকে। তথাপি সেই সত্য ও সৌন্দর্যের সন্ধানে একজন নাট্যকার যে উদ্যম দেখান, তার নির্মিত বাস্তবতায়, সেলিম মোরশেদ প্রণীত নাটক ‘মানুষ উত্তম’ পড়ার পর পাঠকের সম্যক উপলব্ধি : প্রেরিত পুরুষ সম্মানিত ঈশাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সংঘাতময় ঘটনার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পুনর্বিন্যাস; পরন্তু, রাজনৈতিক পটভূমিতে ঘটনার যোগসূত্রগুলো ধরে সুসঙ্গতিপূর্ণ একটা সচেতনতায় নাট্যকার আমাদের নিয়ে যেতে চান। যেখানে, যে নাটকটিতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কিংবা ধর্মীয় সত্য অপেক্ষা অনেক বেশি আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা ক্রিয়াশীল এবং সে-কালে আর আজকের কালের মধ্যে নাটকের চরিত্রগুলোর মানানসই চিত্রণ আর উত্তেজনাপূর্ণ অগ্নিগর্ভ সময়ে পরিবর্তন-প্রচেষ্টার প্রধানতম পথপ্রদর্শক সম্মানিত ঈশা-কে অনুভূতিপ্রবণ একজন ‘মানুষ উত্তম’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে, শিল্পসত্য ও জীবনবাস্তবতার সঙ্গে জনচেতনার প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটে এবং ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ থেকে সম্মানিত ঈশাকে রাজনৈতিক উপলব্ধির প্রতীক হয়ে উঠতে দেখা যায় নাটকে। স্বয়ং ঈশা, অন্তত দুটি বড় সম্প্রদায়ের অনুসারীরা যাঁকে নবী বা প্রেরিত পুরুষ বলে সম্মানিত করছেন, আর তিনি-ই কি-না নিজেকে সাধারণ প্রেক্ষিতে বর্ণনা করছেন এভাবে: ‘আমাকে লোক বলো না। চল্লিশের আগে লোক হয় না। আমি শিশুর মন থেকে কথাগুলো বলি।’

বেথেলহেমের এক উপাসনালয়ে রাব্বী (প্রধান পুরোহিত), কাতিব (ধর্মীয় পণ্ডিত), সম্ভ্রান্ত সুশীল ও বণিকদের সমাবেশে সম্মানিত ঈশা বলেন, আমাকে সৎ বলো না, সৎ একমাত্র আল্লাহ্। আমি একজন সত্যের সত্যায়নকারী। একজন ব্রতনিষ্ঠ বিপ্লবী। অর্থাৎ বিপ্লবী ঈশা নবী অথবা যিশু খ্রিস্ট নিজের সম্বন্ধে আরো কী বলেছেন, পাঠক এই নাট্যখণ্ড থেকে তাঁর উচ্চারিত সংলাপে তা লক্ষ করতে পারেন:

আমি ইমানুয়েল, ইশু (নেতা) ঈশা, যমুসা এবং যিশু। গালিলি রাজ্যের নাসারতের লোক।

আমি মুসার ধর্মের সত্যায়নকারী এবং তার ঠিক প্রয়োগ করতে আমাকে পাঠানো হয়েছে।

আমি কোনো শাসক না, নেতাও না, এমনকি ধর্মপ্রচারকও না। আমি প্রেরিত পুরুষদের ধারাবাহিকতা।

আমি কারো পুত্র নই। আমি তা দাবিও করিনি। আমি সর্বোচ্চ এক পবিত্র সত্তার পরম্পরা।

আবার জেরুযালেমে রোমান আধিপত্যবাদী শাসকশ্রেণির ঘনিষ্ঠ, বিদ্যমান পরিস্থিতি টিকিয়ে রাখার অন্যতম দেশীয় খেলোয়াড় বিদ্বান রাব্বী ও কাতিবদের সঙ্গে একলা কিশোর ঈশা বা যিশু’র মধ্যে বাহাস চলাকালে পূর্বোক্ত গালিলি রাজ্যের নাসারতের লোক বলে নিজের পরিচয় দিলে একজন কাতিব (ধর্মীয় পণ্ডিত) তাঁকে বলেছিলো: ‘তুমি এখনো লোক হওনি। যদিও বড়দের মতো কথা বলছো। এবং কাতিব তাঁকে লক্ষ্য করে “শিশু না যিশু” ব্যঙ্গাত্মক উচ্চারণে চলে যেতে বললে সম্মানিত ঈশা তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর করেন এই বলে যে, প্রতিটি শিশুই মূলত যিশু।

এহেন মহাত্মা সম্বন্ধে আমাদের কিছু পূর্বধারণা রয়েছে: তিনি কুমারী মাতা মারইয়ামের গর্ভজাত অপার বেদনার সন্তান, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন অথচ মৃত হন নি, তুলনারহিত মানবিক, সহিষ্ণুতার শিক্ষা দিতে গিয়ে তাঁর দেয়া বক্তব্য এখনো মানুষের শুভ চেতনায় সমুজ্জ্বল- এক গালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দিয়ো, তিনি মাটির পাখিকে প্রাণ দিয়েছেন, কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য করেছেন, তাঁর ভাষায়, ‘সৃষ্টিকর্তার ইশারায়’ মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন…

 


সম্মানিত ঈশা’র সমকালে গোটা রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো, ভূ-মধ্যসাগরের চারদিক জুড়ে। ইসরাইল জাতির একটি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া সর্বত্রই ছিলো পৌত্তলিকতা। একদা ইসরাইল জাতির মধ্যে আসমানি কিতাব ‘তওরাত’ নিয়ে প্রেরিত পুরুষ মহান মুসা’র আবির্ভাব ঘটেছিলো। কিন্তু কালক্রমে ইসরাইলি ইহুদি সম্প্রদায় তাদের সুমহান আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য থেকে সরে যায়। সুবিধাবাদী শ্রেণি তাদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য সম্মানিত মুসা নির্দেশিত কল্যাণমূলক কাজ থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়ে পৌত্তলিক ধর্মের অনুসারী সাম্রাজ্যবাদী রোমের সঙ্গে ভ্রাতৃভাব গড়ে তোলে।

 

প্রকৃতপক্ষে, অতিশয় মানবিকতা আর ঐন্দ্রজালিক চমৎকারিত্বের বাইরে সেলিম মোরশেদ তাঁর নাট্যশিল্পে যে শিল্পসত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তা মূলত রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত। মহান ঈশা’র ঘটনাবহুল জীবনপর্যায়ে ক্রুশবিদ্ধ হওয়া কিংবা তাঁর পুনরুত্থান পর্বের মধ্যে যাপিত সময়ে নাট্যকার জনপ্রয়োজনের দাবি মেটানো একজন পথ-প্রদর্শক বিপ্লবী নেতার চরিত্রে ঈশাকে তুলে ধরেছেন। যদিও আধ্যাত্মিকতার মোড়কে, অধ্যাত্মরস আর গাম্ভীর্যময় কাব্য সংলাপের প্রয়োগ বিস্ফোরকের মতো তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতা- যার কেন্দ্রে যুবক ঈশা নাটকটিকে গতিশীল এবং একইসঙ্গে প্রধান চরিত্র সমেত নাটকটিকে একটি সর্বকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিয়ে গেছেন।

সম্মানিত ঈশা’র সমকালে গোটা রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো, ভূ-মধ্যসাগরের চারদিক জুড়ে। ইসরাইল জাতির একটি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া সর্বত্রই ছিলো পৌত্তলিকতা। একদা ইসরাইল জাতির মধ্যে আসমানি কিতাব ‘তওরাত’ নিয়ে প্রেরিত পুরুষ মহান মুসা’র আবির্ভাব ঘটেছিলো। কিন্তু কালক্রমে ইসরাইলি ইহুদি সম্প্রদায় তাদের সুমহান আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য থেকে সরে যায়। সুবিধাবাদী শ্রেণি তাদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য সম্মানিত মুসা নির্দেশিত কল্যাণমূলক কাজ থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়ে পৌত্তলিক ধর্মের অনুসারী সাম্রাজ্যবাদী রোমের সঙ্গে ভ্রাতৃভাব গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে ইহুদি সমাজপতি বণিক সম্প্রদায়, জ্ঞানপাপী রাব্বী ও কাতিবরা বিরাজমান স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং তারা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক ক্ষমতার পূজারি। ফলে, তারা সরে যায় সম্মানিত মুসা’র সত্যের পথ থেকে। তাই, নাটকে, আমরা দেখি মহান ঈশা এবাদতখানায় ঢুকে ‘সালাত অধিক কার্যকর’ ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের জমায়েতে রাব্বী, কাতিব ও প্রগতিশীল ইহুদি ফারিসিদের এই বলে তিরস্কার করেন যে, সম্পত্তি ও বণ্টন বিষয়ক সম্মানিত মুসার দশটা আইন ক্যানো দূরে সরিয়ে রেখেছে তারা (?) বিপরীতে, অহংকারে ‘ঘা’-খাওয়া প্রধান রাব্বী ঈশাকে পাল্টা বাক্যবাণে বিদ্ধ করলে তিনি রূঢ় কণ্ঠে বলে ওঠেন: “আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি যথেষ্ট অশালীন হতে পারিনি, যা আমাকে হতে হবে। জ্ঞানপাপীদের দুটো অস্ত্র থাকে: মানবিক ভঙ্গি আর চুরি-করা সৌন্দর্য। … এ ধরনের তর্কযুদ্ধে আমরা আবিষ্কার করবো মহান ঈশা কিংবা যিশু খ্রিস্ট ঘোষণা করছেন যে, তিনি সত্যের সত্যায়নকারী এবং চূড়ান্তে একজন ব্রতনিষ্ঠ ‘বিপ্লবী’। অতএব, তাঁর সহচর সত্যনিষ্ঠ যুবকদের চেহারা এবং পোশাকের সৌন্দর্য বিষয়ে ঠাট্টা করলে সম্মানিত ঈশাকে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায়। নাটকে, ঈশাকে ক্রুশবিদ্ধ করার আগে, সম্মিলিত জনতাকে ইহুদি পণ্ডিতপ্রধান রাব্বী এই বলে জনতাকে ক্ষিপ্তোন্মত্ত করে তোলে যে: বাদি ও তার ছেলেকে যেন বের করে। দেয়া হয়, … তো, সম্মানিত ঈশা, যিনি প্রকৃতপক্ষে একজন ইসরাইলি, পূর্বঘোষণা মতে, ইসরাইল কুলে প্রেরিত হন এবং প্রত্যাখ্যাত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। এর আগে, কৌতূহলী পাঠক কিংবা নিবিষ্ট দর্শক খেয়াল করবেন যে, ব্রাত্যজনের স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে, সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রশ্নে, ইহুদি সম্প্রদায় এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপক প্রভাববিস্তারী রোমান সাম্রাজের ভিত কাঁপিয়ে ধর্মীয় প্রশ্নের বাইরেও রাজনৈতিক অধিক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে জনআন্দোলন তথা ‘বিপ্লবে’ নিজেকে যুবক ঈশা একজন বিপ্লবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্ষুদ্র এসিন সম্প্রদায়ের ১১ বছরের বালক ফিলিপের সাথে পূর্ণবয়স্ক মহান ঈশা’র কথোপকথনে তৎকালীন রাজনীতির চেহারাটা বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে নাট্যখণ্ডের পঞ্চম পর্বে।

ফিলিপ : (অংশ) ইহুদি সমাজপতির সঙ্গে রোমের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের অলিখিত চুক্তি আছে। কৃষি, বাণিজ্য ঘুষ ও সুদের। রোম শুধু নজরানা চায় একটা মোটা গোছের খাজনা। ইহুদি সমাজপতিরা তাতে তৃপ্ত। সম্মানিত ঈশা আপনি জানেন, রোমানরা কখনো ধর্মকে শক্তিশালী মনে করেনি, আস্থাশীলও না। ওদের ব্যবস্থাপনার যে কাঠামো, যেখানে কায়েমি স্বার্থ, সেখানে ঘা লেগেছে। জেরুযালেমের সবচেয়ে জনবহুল এলাকায় রক্ত-গরম করা আর আগুনজ্বলা যে বক্তৃতাগুলো আপনি দিয়েছেন তা তাদের ঘরে ঘরে আলোচিত হচ্ছে। এতদিন আপনাকে ওরা নির্বিষ ধার্মিক মনে করেছিলো। চিন্তা ও তৎপরতা সম্পূরক। আদর্শ ও একইসঙ্গে তার উপযুক্ত প্রয়োগ রোমের সুশীল সমাজ পছন্দ করে না। সুশীল আলেমদের আদর্শে আপনাকে ওরা দেখতে চেয়েছিলো। কি রক্ষণশীলরা, কি প্রগতিশীলরা, ইহুদিদের এই বড় দল রোমের বৃহৎ অংশের জনতাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।

– যোহান : (ঈশার দিকে তাকিয়ে) সেক্ষেত্রে আমরাও মুখোমুখি হবো।

ফিলিপ : তার আগে আমাদের দলের একটি রাজনৈতিক নাম প্রস্তাবনায় আনতে চাই।

ঈশা : কী নাম দেবে আমাদের সংঘের?

ফিলিপ : (হিব্রুভাষায় একটা নাম প্রস্তাবনা করে- যার বর্তমান ইংরেজি অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ধ্বনি দাঁড়ায়- Democratic League of Palestine-D-LOP)-ডলপ।

ঈশা : যোহান, বার্নাবাস, জুডাস (যিহুদা) আগামীকাল মধ্যাহ্নে, মসজিদই হোক বা মন্দিরই হোক বা গির্জাই হোক, যেকোনো উপসানালয়ে যেখানে শয়তানরা থাকবে সেখানে আমি আক্রমণ করবো। প্রস্তুতি নাও। আর শীমন জানিয়ে দাও।

উদযোগী শীমনসহ সম্মিলিত কণ্ঠ: মহান স্রষ্টার আদর্শে এবং প্রেরিত পুরুষ সম্মানিত ঈশার নেতৃত্বে সর্বোপরি ফিলিস্তিনি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে আমরা আগামীর জন্য প্রস্তুত।

নাট্যকার যে প্রত্যাদেশ-এ আবিষ্ট হোন-না ক্যানো, তিনি তিল তিল প্রযত্নে একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ নাটকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তা এমন পর্যায়ে যে, আমরা কেবল ‘রোমের সুশীল সমাজ’, ‘রোমের বৃহৎ অংশ’ কিংবা রোমান সাম্রাজ্য’-এর স্থলে ‘মার্কিন’ কথাটি প্রতিস্থাপন করে দিলেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তার সত্য-মিথ্যাসহ আমাদের সামনে প্রকট হয়ে ওঠে। আর D-LOP এর স্থলে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত Palestine Liberation Organization- PLO পড়ে নিলেই আমাদের উপলব্ধি হয় যে, দু’হাজার বছর আগের ঐ সংঘটিত আন্দোলনটি সমকালেও সমান বাস্তবতায় চিহ্নিত করা যায়; এবং তা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটমান কিংবা সম্ভাব্য ধরেই নাট্যকার তাঁর সকল শিল্পসত্যসমেত নাটকটিকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় পৌছে দিয়েছেন।

রাজনৈতিক উত্তেজনার উৎস পরবর্তীতে যা সর্বমাঙ্গলিক চেতনাধারী বিপ্লব ডেকে আনবে তার স্বরূপ উন্মোচিত হয় বালক ফিলিপ এবং সম্মানিত ঈশার সংলাপে। নাটকটির তৃতীয় পর্বে বালক ফিলিপ একেশ্বরবাদী ৪ হাজার মানুষ নিয়ে তাদের সম্প্রদায় সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোকপাত শুরু করলে অনিবার্য লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা বোধগম্য হয়: ‘আমরা বিনীত এবং কোনো সংঘর্ষে বিশ্বাসী নই, এবাদতের নিভৃত মনন আমাদের কামনা, তারপরেও আমাদের লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা পড়েছে।

“জর্দান নদী থেকে সাগর পর্যন্ত আমরা যখন মাছ ধরি, তখন জীবন বিপন্ন করি। বেচতে হয় সেইসব বণিকদের কাছে, যারা দাম নিজেরা নির্ধারণ করে, নামকাওয়াস্তে মাঝে মধ্যে কিছু মূলধন দেয়, এই দোহাই দিয়ে বাজারটা আটকে রাখে। আমরা তাদের যাবতীয় কাপড় পরিষ্কার করি। অথচ ন্যায্য টাকা আজ অবধি পাইনি। আমরা অল্পে তুষ্ট, তৃপ্ততার অর্থ এই না, আমাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নিতে উদাসীন। শস্যচাষের জন্য তাদের কাছ থেকে আমাদের কয়েকজন কিছু টাকা নিয়েছিল। তাদের হিসাবমতো সুদে-আসলে তা আমাদের গোটা সম্প্রদায়ের ওপর ছাপ ফেলছে।”

আর নাট্যখণ্ডের পঞ্চম পর্বে গিয়ে দেখি, সম্মানিত ঈশা এসিন সম্প্রদায়ের লোকজন এবং অন্যান্য অনুরক্তদের সাথে নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন। ফলে, অন্যতম সহচর জুডাস ওরফে যিহুদা- যে ‘আল্লার ইচ্ছায় ঈশার প্রতিবিম্ব হয়ে সামরিক সৈনিকদের সংশয়ে ফেলে দেবে, একবার বহুল প্রচারিত সহিষ্ণুতার উদাহরণ টানলে সম্মানিত ঈশা যুদ্ধপরিস্থিতির বাস্তবতা তুলে ধরেন। এভাবে: ‘সেটা বলেছি যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে, মানুষের সহিষ্ণুতা কামনা করেছি বলে এখন আমরা যুদ্ধের মাঠে। এখানে প্রত্যুত্তর প্রবল হতে হয়। তোমার কাছে যা চরম মনে হচ্ছে- তা মন্দ না। চরম শুধু ধ্বংসাত্মক না, চরম একটা গভীর ব্রত, একটা বিন্দু যার বিস্তৃতি ঘটাতে হয়, যতো বিস্তৃত হয়, চরম পরমে রূপ নেয়।

 


যেহেতু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনীতি ও স্বার্থপরতায় সত্য বিকৃত হয়ে যায়, ‘মানুষ উত্তম’ নাটকে নাট্যকার সেই মিথ্যার উৎপীড়ন দেখানোর পাশাপাশি শেষতম পর্বে শুভ-অশুভ’র দ্বন্দ্ব-চিহ্নিত একটা শিল্পসত্যের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন। কেননা, সকলেই মানেন ‘শিল্পসত্য’ একটা অবিচ্ছেদ্য শব্দবন্ধ।

 

যিহুদা নামের চরিত্রটিকে ঘিরে, অথবা উল্টোক্রমে, মহান ঈশাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে নাট্যকার সেলিম মোরশেদ নাটকের অষ্টম ও দশম পর্বে যিহুদা-ঈশা সংলাপ রচনায় অনবদ্য দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কেননা, আমরা দেখি আধুনিক মানুষের যাবতীয় প্রবণতা চিহ্নিত যিহুদা-কে: এই যিহুদা যে ‘আত্মসংকটের অভিনব স্তরে থাকে, বিচ্ছিন্নতা ও নৈঃসঙ্গের বোধতাড়িত এই আত্মচেতন মানুষের সাথে সম্মানিত ঈশা কতিপয় দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির খুঁটিনাটি দিক, স্বপ্নতত্ত্ব, সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের মুদ্রানীতি ও নিরীশ্বরবাদিতার তত্ত্বীয় দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সতর্ক, সংশয়ী মনোভাবাপন্ন ও ব্যক্তি-উৎকর্ষে গড়া-চরিত্র যিহুদা’ আলোচ্য নাট্যখণ্ডের সবচে’ উল্লেখযোগ্য অংশ। অথচ মহান ঈশা জানেন, যিহুদা, যে তাঁর চিন্তা, পদচারণা এবং প্রতিটি অভিব্যক্তিকে সূক্ষ্মতার সঙ্গে লক্ষ করে; কিন্তু তার অন্তর্গত ক্রন্দনের ভাগীদার সে নয়, শেষ পর্যন্ত সম্মানিত ঈশার বয়ানে তাকে বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় নিজেকে ‘মানিয়ে নেয়া ভারসাম্যকারী’ হিসেবে বর্ণনা করলে চরিত্রটির সমকালীনতার জন্য নাট্যকারের প্রতি আমাদের সন্তোষ হয়। আর নাট্যকার সেলিম মোরশেদ ধন্যবাদই হবেন নাটকে আরো একটি পুনরুক্তিমূলক বহুমাত্রিক অথচ সরল একটি বাক্যের জন্য। যিহুদার স্বপ্নতত্ত্ব, বার্থলোমিউ-এর আকুলতায় বারবার ঈশা’র কণ্ঠে ঐ সরল বাক্য উচ্চারিত হয়েছে। ‘সংকীর্ণ পথ দিয়ে ঢুকো, যা ক্ষুদ্র তাই মহান’। এই এক উজ্জ্বল উদ্ধার, যা আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে মহান ঈশার মুখে শুনতে পাবো মোট চার বার। সর্বপ্রথম জেরুযালেমে পণ্ডিতদের সঙ্গে বাহাস চলাকালীন একজন সম্ভ্রান্ত সুশীল-কে লক্ষ্য করে ঈশার মোক্ষম উক্তি: ‘মনে রেখো, সংকীর্ণ পথ দিয়ে ঢুকতে হয়, যা ক্ষুদ্র তাই মহান।’ এবং আশুরার মেষ ভক্ষণের দিন সহগামী বন্ধুদের চরণ ধুইয়ে দেয়ার সময় পুনরায় ‘সংকীর্ণ পথ দিয়ে ঢুকো, যা ক্ষুদ্র তাই মহান’-এই অনুবেদন সংবেদনশীল মননে একটা নিরঞ্জন-ভাব তৈরি করে।

প্রসঙ্গত ইহুদিদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত সুশীল-সাইমন নামধারী ব্যক্তিটি একদা ‘বাহ! ছেলেটা বিশ্বাসী। ভালো লাগছে ওর কথা।’ বললে সম্মানিত ঈশা তাকেও প্রতিহত করেন সমান সতর্কতায় :

ঈশা : আমাকে প্রশংসা করো না। আমি কখনোই তোমার প্রশংসায় বিগলিত হবো না। তুমি যেখানে বসে আছে সেখান থেকে আগে নামো, তারপর মাঠ পর্যায় থেকে আমাকে দেখো, সেক্ষেত্রে পরস্পরের জন্য আমরা কিছুটা বিশ্বস্ত হবো।

উপর্যুক্ত উদ্ধৃতি আমলে নিলে রচনায় নাট্যকার সেলিম মোরশেদের অন্বিষ্ট প্রতিভাত হয় যে, আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বে এতটা সচেতনতা না দেখালে ‘বিপ্লব’-এর সম্ভাবনা হয়তো আশঙ্কার মধ্যে গিয়ে পড়ে এবং নাটকে ‘মরণশীল মানুষের গর্ভজাত সন্তান’ মহান ঈশা, যিনি ‘মানুষ উত্তম’ সেই সচেতনতায় নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। নাট্যকার মুসলিমদের অন্যতম নবী ঈশা (আ.) এবং খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে যিশু খ্রিস্টকে প্রথমে একজন মানুষ, পরে ব্রাত্য জনতার কল্যাণে নিবেদিত সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদে চালিত উত্তম পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। আসলে ‘মানুষ উত্তম’ নাটকটিতে সেলিম মোরশেদ নিজস্ব ভূ-মানচিত্র, এমনকি মানচিত্রের সীমানার বাইরে যে কোনো স্থানে ঘটে যাওয়া কিংবা ঘটমান রাজনৈতিক ক্রিয়ার সাহিত্যিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

নাটকের শেষতম পর্বে আমরা দেখবো, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মহান ঈশার মৃত্যু হয়নি এবং তাঁর ‘প্রাণবায়ু মৃত্যু-অতিক্রম্য সত্তায় পৌঁছে গিয়ে প্রতিরোধ করবে, যদিও মহান সত্তা সর্বজ্ঞ।’ ফলে, মহান ঈশা, জয়তুন পর্বতের শৃঙ্গমুখী চারজন ফেরেশতাবাহিত হয়ে ঊর্ধ্বারোহণের প্রাক্কালে মা মারইয়ামের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে তিনি ফিরে আসবেন ‘প্রাচ্যকে মুক্ত করতে’। কেননা, তাঁর ভাষায় ‘পৃথিবী সুন্দর হবে প্রাচ্য সুন্দর হলে।’ অর্থাৎ নাট্যরচনার পন্থাতেই নাট্যকার তাঁর স্বপ্ন-আকাক্সক্ষার প্রয়োগ নাটকে ঘটান, আর তখন আমাদের দৃষ্টি প্রাচ্যে আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের ক্রীড়ানৈপুণ্যে আটকে যায়। সুতরাং, নাট্যকার যখন ধর্মীয়/আধ্যাত্মিক প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন, সেই আপ্লুত আবেগে মোহাবিষ্ট পাঠকও কিংবা দর্শক কিন্তু নাটকের রাজনৈতিক ভূগোল থেকে দৃষ্টি কিংবা মনোযোগ সরায় না। জেরুযালেমের বিপরীতে সমভিব্যাহারে সম্মানিত ঈশা’র আপাতপ্রস্থানকে নাট্যকার মহাকাব্যিক চেতনায় নিয়ে গেছেন। সেলিম মোরশেদ-এর বর্ণনায় : ‘দূর ডানার বিস্তৃতিতে নিজেই তিনি দেখলেন শ’ শ’ বছর পরবর্তী দৃশ্য সব। আর আমরা লক্ষ করি, সম্মানিত ঈশা’র পূর্বাপর আগমনকারী প্রেরিত পুরুষ সম্বন্ধে সত্যায়ন ও ভবিষ্যবচন: ‘আমি কেন, সারা পৃথিবীর যেকোনো মানুষের চেয়ে তিনি গুণী। গুণ-ই শক্তি। সবচেয়ে মুক্ত এবং কোমল মতবাদের প্রবর্তক হবেন তিনি। এতটাই সরল যে তাঁর মতবাদগুলো কদর্যতায় বিকৃত হবে।’

যেহেতু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনীতি ও স্বার্থপরতায় সত্য বিকৃত হয়ে যায়, ‘মানুষ উত্তম’ নাটকে নাট্যকার সেই মিথ্যার উৎপীড়ন দেখানোর পাশাপাশি শেষতম পর্বে শুভ-অশুভ’র দ্বন্দ্ব-চিহ্নিত একটা শিল্পসত্যের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন। কেননা, সকলেই মানেন ‘শিল্পসত্য’ একটা অবিচ্ছেদ্য শব্দবন্ধ। পৃথিবীতে যেসব অশুভ ঘটনা ঘটে, তার নেপথ্যে থাকে কায়েমি স্বার্থবাদিতা, সেসব অশুভ ঘটনায় কোনো কোনো লেখক হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখান। যে প্রতিক্রিয়া আসে লেখকের একান্ত দায়বদ্ধতা থাকে এবং এই দায়বদ্ধ অবস্থান থেকে নাট্যকার সেলিম মোরশেদ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে সেই বিশ্ববীক্ষার পরিচয় দিয়েছেন। কেবল দৃঢ়তার সাথে সত্যের অনুসন্ধান এবং তা করতে গিয়ে সকল দেশের সকল মানুষের জীবন ও সমাজে সেই সত্যকে সংজ্ঞায়িত করে সেলিম মোরশেদ নাট্যসাহিত্যে নিজেকে একজন দায়িত্বশীল শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে, আলোচ্য ‘মানুষ উত্তম’ নাটকে পর্ব থেকে পর্বান্তর গমনে নাট্যকার যেসব তথ্যসূত্র রেখে যান, তা খুঁজে-পেতে কি পঠনে, কি দর্শনে (যেহেতু এটা নাটক) নাট্য উপভোগ ব্যাহত হওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা রয়েছে। আবার এটা বিমূর্ত নাটকও নয়, অতএব, অনেকে চরিত্র সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে বহমান নাট্যক্রিয়ায় ল্যাজারাসের অবস্থানও পাঠকের কাছে স্পষ্ট নয়। কেননা, নাট্যখণ্ডে মºলিনি মরিয়মকে দেখে সম্মানিত ঈশার জিজ্ঞাসায় (ল্যাজারাস কেমন আছে?) পাঠক কিংবা দর্শক সচেতন হয়ে উঠলেও নাটকে তার জবাব পাওয়া দুরূহ।

যৎসামান্য এই অবতারণার পরে এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ : কতিপয় নৃত্যমুদ্রা, সংগীত, কাব্যপঙ্ক্তি আর নাট্যকারের একান্ত আধ্যাত্মিক বোধতাড়িত শিল্পনৈপুণ্য নাটকটিকে বিশিষ্ট করেছে। কেননা, বহুদিন ধরে এই ভূ-খণ্ডের নাট্যজগতে পুরাণ-আশ্রয়ী চরিত্র অবলম্বন করে বিচ্ছিন্ন নাট্যপ্রচেষ্টার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ‘মানুষ উত্তম’ নাটকটি অন্তর্নিহিত বিষয়বাস্তবতার জন্যই স্বতন্ত্র একটা অবস্থানে পৌছে গেছে। এই সবকিছু নিয়ে, অন্তর্গত রসায়নে জারিত নাটকটির রয়েছে বহুমাত্রিক কৌণিকতা। ‘মানুষ উত্তম’ সম্মানিত ঈশা’র দুই হাতের দুই পাত্রের অগ্নি-জলের মতো শ্রেণি চেতনার আগুন ও আধ্যাত্মিক প্রেরণাজাত ‘শিল্পসত্য’ই শুধু নয়, যদি কেউ তার মর্জিমতো আলোচ্য নাট্যখণ্ডে আলোকসম্পাত করেন, তবে, এই নাট্যশিল্প থেকে অনেকগুলো উপসংহারে পৌছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, আধ্যাত্মিকতার ঐক্যবদ্ধ সংযোগ-চেতনায় উদ্বুদ্ধ নাট্যকার সেলিম মোরশেদ সংবেদনশীল যে-কারো জন্য সেই সুযোগটি অবারিত করে দিয়েছেন।

 


মাসুমুল আলম

মাসুমুল আলমের লেখালেখির শুরু নয়ের দশকে। জন্মসাল ১৯৭৫, যশোর।
১৯৯৪ থেকে ছোটোকাগজ প্রতিশিল্পে তাঁর গল্প, অনুবাদ, উপন্যাস প্রকাশিত। সমান্তরালে ছোটোকাগজ : শিরদাঁড়া, গাণ্ডীব, জঙশন, দ্রষ্টব্য, অনিন্দ্য, দুয়েন্দে,সূর্যঘড়ি,বাঘের বাচ্চা, হারাকিরি-তে লিখেছেন ।

প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে উলুখড় থেকে।

প্রকাশিত গ্রন্থগুলোঃ
১.বরফের ছুরি (গল্প, ২০২০),
২. কথাপরিধিঃ২২ পয়েন্ট বোল্ড ও অন্যান্য (গদ্য, ২০২০),
৩. দর্শনীর বিনিময়ে (গল্প, ২০১৯), ৪. মৌন ধারাপাত (উপন্যাস, ২০১৭),
৫. আরব্যরজনীর ঘোড়া (উপন্যাস, ২০১৬),
৬. র‌্যাম্প, বার-বি-কিউ আর কানাগলির হুলো (উপন্যাস, ২০১৩),
৭. রঁদেভু (উপন্যাস ২০২১),
৮. সেপ্টেম্বরের ভূত ( ২০২৩),
৯. ফিলিস্তনি সাহিত্যিক ঘাসান কানাফানির উপন্যাস “মেন ইন দ্য সান” (উলুখড় প্রকাশনা, ২০১৫),
১০. ঘাসান কানাফানি : উপন্যাস-গল্প-সাক্ষাৎকার (সংবেদ প্রকাশনা, ২০২৪)

আর বিভিন্ন ছোটোকাগজ এবং ওয়েবজিনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অকতাভিও পাজ, নোর্বার্তো ফুয়েন্তেস, আলেক্স লা গুমাসহ বিভিন্ন সাহিত্যিকের ৩০ টির মতো অনূদিত গল্প।

তিনি পুরোনো বইপত্রের একজন সংগ্রাহক।

শেয়ার