আপনি বিদেশি প্যান্ট পরবেন, শার্ট পরবেন, সেটা যেমন ঝাড়তে চাইবেন না, তেমন কবিতা থেকেও সব ঝাড়ার মানে নাই। আপনার কি ধারণা, শুধুই ভারতীয় জিনিস দেখে গীতাঞ্জলিকে নোবেল দেওয়া হইছে? মানিক ভারতীয় না? বিভুতিভূষণ ভারতীয় না? আমি তাদের লেখার কথাই বলছি কিন্তু। জীবনানন্দ সম্পূর্ণ ইউরোপীয়?
হামেদী
সম্প্রতি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কবি বলেছিলেন,সমসাময়িক বাংলা কবিতা আশির কবিতারই রিপিটেশন।কী মনে হয় আপনার?
শামশাম
আশির রিপিটেশন এই কথা যিনি বলছেন, তারে কিছু জিগান নাই হামেদী ভাই?
রাসেল
এইটা উনিই বলতে পারবেন। আমি তো দেখি এখনকার কবিতা ষাটের পর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এইটা আমার মত।
হামেদী
এখানে প্রশ্নটা কে করেছে গুরুত্বপূর্ণ না, অভিযোগ বা প্রশ্নটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।এইটার জবাব সমসাময়িক তরুণদের কাছেই আমি প্রত্যাশা করি। রাসেলের কাছে জিজ্ঞাসাটা সে কারণেই।
রাসেল
আগেই বলে রাখি, দশক থাকা-না থাকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন কইরেন না। এইটা ফালতু বিষয়। এতই ফালতু যে থাকলেও সমস্যা নাই, না থাকলেও। স্রেফ কর আছে বলে গোণা। নইলে মানুষ অন্যভাবে গুণতো। কিংবা না গোণাই ভালো ছিল!
হামেদী
এটা তো ঠিক আশি থেকেই বাংলা কবিতার নতুন এক যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন সেটা কোথায় এসে দাঁড়াচ্ছে?
রাসেল
আমি দেখি, সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা আমাদের সময়ের কবিতায়। বহুদিন পর এত শক্তি, এত বৈচিত্র্য, এত রস, এত ঘ্রাণ!
হামেদী
বৈচিত্র্য তো সবসময়ই আছে। চিন্তা বা ভাষার জায়গা থেকে নতুন কোনো অভিমুখ তৈরি হচ্ছে কিনা?
রাসেল
আলাদাভাবে যাত্রা শুরুর জন্য আশিকে নির্ধারণ করার সঙ্গে, আমি একমত না। কবিতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাঁকের জন্যও দশ বছর হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। আশি একটা ধারাবাহিকতার অংশ, ষাটের পর অন্যগুলোও তাই। ধারাবাহিকতা চলছে। মূল বাঁক কখন নেয় আমি জানি না। স্রেফ আমাদের সময় নিয়ে আশাবাদী। বৈচিত্র সবসময়েই আছে। কিন্তু এই সময়ের যে লক্ষণ, তাতে সেটা বেশিই মনে হচ্ছে।
হামেদী
কী কী ধরনের বৈচিত্র্য অসলো, যেটা আগে কখনও ছিল না বাংলা কবিতায়?
রাসেল
এমনকি এই আট/দশজনের (এই ইন্টারভিউতে সম্পৃক্ত) কবিতাই দেখেন আট/ দশরকম।
হামেদী
বাংলা কবিতার ইউরোসেন্ট্রিজম বিষয়ে ইদানীং নানা তর্ক উঠছে। এক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী?
রাসেল
বলার বৈচিত্র্য, ভাবার বৈচিত্র্য।
ইউরোসেন্ট্রিজম জিনিসটা কী, তাই-ই তো বুঝি না! এর মানে কী, ইউরোপনির্ভরতা, বা এমন কিছু?
হামেদী
হুম। ইউরোপকেন্দ্রিকতা।
রাসেল
আগেই বলে রাখি, আমি কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, অনেক বিষয়েই জ্ঞান কম। আমারে যদি জিজ্ঞেস করেন যে চর্যাপদ পড়ছেন? আমি বলব, হ্যাঁ। যদি জিজ্ঞেস করেন, এর গভীরতা, প্রভাব নিয়ে কিছু বলেন, বিপদে পড়ব। আচ্ছা, ইউরোপকেন্দ্রিকতা নিয়ে বলছি…
হামেদী
আপনার মতো করেই বলেন। নম্বর কাটা যাবে না। হা হা হা ।
শামশাম
নানা তর্ক কই উঠছে? বরং যারাই কথা বলেন, ইউরোসেন্ট্রিজমের বিরুদ্ধেই তো বলে! সে সুবাদে আমরা গত শতকের ত্রিশের দশকের কবিদের খারিজ করি! হামেদী ভাইয়ের কাছে নিরীহ জিজ্ঞাসা, কী কী তর্কে উঠছে, একটু পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়?
রাসেল
দেখেন, পরকালের স্বর্গে যারা বিশ্বাসী, তারা তো বিশ্বাসীই। কিন্তু এর বাইরেও আমরা পৃথিবীতে কোনো জায়গা যদি লোভনীয়, স্বর্গীয় ভাবি, সেটা পশ্চিম। সুতরাং এর প্রতি মোহ, আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। তার উপরে ওরা শাসন করেছে দুইশ বছর। মিশছে তারও আগে। সুতরাং তারা শুধু আমাদের ত্বকে আর পোশাকেই না, মজ্জায়, রক্তেও মিশে আছে। সেটা প্রকাশ পাবেই। আর এই কেন্দ্রিকতা এখন কেন, জীবনানন্দরাই তো শুরু করেছেন। বীজ তো মাইকেল-রবীন্দ্রনাথরাই বপন করছেন। কিংবা তারও আগের কেউ। তার আগের কারও কথা মনে পড়ছে না। সুতরাং ওটা আলাদা কোনো প্রসঙ্গই হতে পারে বলে মনে হয় না আমার। বরং সবাই শিকড় খুঁজছে। মুখ স্বর্গের দিকে, ভিত পৃথিবীতেই।
হামেদী
ইউরোপকেন্দ্রিকতা বাংলা কবিতাকে তার নিজস্ব খাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।ইমেজ, চিন্তা সেটা অনুকরণবাহিত হয়ে উঠছে।এইরকম আরও নানা অভিযোগ, শামশাম।
রাসেল
সত্যি কথা হলো এইগুলা অনুসিদ্ধান্তের মতো। আমরা ওদের অনেক মূল সূত্র থেকে অনুসিদ্ধান্ত নিছি, ওরা আমাদের সূত্র থেকে। সূত্র জিগায়েন না। একপাক্ষিক দাতা কিংবা গ্রহিতা কেউই নয়।
হামেদী
কিন্তু ইংরেজ শাসন তো এখন নাই শারীরিকভাবে। ভাষা ও চিন্তা কাঠামোর জায়গায় যদিও ভালোভাবেই আছে। এই ভূত তাড়ানোর কোনো জরুরত আছে কিনা? যেটা নগুগি, এমে সেজাররা করার চেষ্টা করেছে।
রাসেল
দেখেন, গত একশ বছরে বাংলা সাহিত্যে কেউ নোবেল পায় নাই। জিনিসটা মজার কিন্তু। আপনি যাকে ভূত বলছেন, সে আছর করছে, এবং ভূত নিজে জানেও না বোধ হয়।
ভালো অনুবাদক নাই। সমালোচক নাই। আপাত ফলাফল, ভালো সাহিত্যও নাই। বের হওয়ার একটাই পন্থা, প্রচুর অনুবাদ হওয়ার এবং অন্যের পা টেনে না ধরার!
হামেদী
আমার তো মনে হয়, এই কারণেই নোবেল পায় নাই। আমাদের লেখা পশ্চিম থেকে সম্ভবত আলাদা কিছু হয় নাই এই সময়টায়।
রাসেল
আমি মনে করি না, ইউরোপ তাড়াতাড়ির প্রসঙ্গ নিয়ে ভাবাটা জরুরি। আপনি আপনার চারপাশ দেখেন, সেটাই বলবেন, দেখবেন তারা নাই। থাকলেও বুঝবেন যে ঐটা থাকা উচিত। জোর করে নিতেও হবে না, তাড়াতেও হবে না!
পশ্চিম তাদের থেকে আলাদা জিনিসকে প্রমোট করবে? মনে হয় না আমার। কখনো কখনো আলাদা কাউকে প্রমোট করে তারা, সেটা বৈধতার স্বার্থে।
হামেদী
খুবই দরকার আছে বলে আমি মনে করি। এমন সাহিত্যই আমি প্রত্যাশা করি, যেটা অন্য যে ভাষায়ই অনুবাদ করা হোক না কেন, তাতে বাংলার ঘ্রাণ থাকবে।
রাসেল
সেটা থাকে তো। থাকে দেখেই তাড়ানোর দরকার দেখি না।
হামেদী
নোবেল দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাতন্ত্র্য দেখা হয়। আপনি ‘গীতাঞ্জলি’ দেখেন। এইটা নিখাদ ভারতীয় জিনিস।
রাসেল
আপনি বিদেশি প্যান্ট পরবেন, শার্ট পরবেন, সেটা যেমন ঝাড়তে চাইবেন না, তেমন কবিতা থেকেও সব ঝাড়ার মানে নাই। আপনার কি ধারণা, শুধুই ভারতীয় জিনিস দেখে গীতাঞ্জলিকে নোবেল দেওয়া হইছে? মানিক ভারতীয় না? বিভুতিভূষণ ভারতীয় না? আমি তাদের লেখার কথাই বলছি কিন্তু। জীবনানন্দ সম্পূর্ণ ইউরোপীয়?
হামেদী
ঐটাও ঝাড়তে চাইব। আগে চিন্তা পরিষ্কার হোক। বাঙালির জাতীয় পোশাক নিয়েও বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি আছে।
রাসেল
টু হেলেন আর বনলতা সেনের পার্থক্যটাই দেখেন। ওখানেই পশ্চিম আর পুবের পার্থক্যটা টের পাবেন।
হামেদী
বিভূতিভূষণ পেতে পারতেন। পান নাই হয়তো ওদের কাছে তাঁর টেক্সট পৌঁছায় নাই।
রাসেল
নাহ। আমি প্যান্ট-শার্ট ফেলে ধুতি-পাঞ্জাবি ধরতে রাজি নই, যদি সেটা বাঙালি সংস্কৃতি হয়ে থাকে। পাজামা-পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও একই কথা। হয়তো। হয়তো না-ও। কবিতার ক্ষেত্রেও আমি ঝেড়েপুছে সব বাদ দিতে রাজি নই। রোগ না নিই। প্রতিরোধ শক্তিটা থাকুক।
হামেদী
জীবনানন্দরা বেড়ে উঠেছেন ব্রিটিশ- ভারতে। কিন্তু আমাদের তো জন্ম ও বেড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলায়। ফলে এই জেনারেশন তিরিশ থেকে অনেক প্রোগ্রেসিভ হবে এই প্রত্যাশা আমি করতেই পারি। পোশাকের ক্ষেত্রে জাতীয় সংস্কৃতির প্রসঙ্গে আমি বলেছি। আপনার পছন্দ-অপছন্দ ব্যক্তিক।
রাসেল
জীবনানন্দরা বৃটিশ-ভারতে বেড়ে উঠে যতটা ইউরোপের হাওয়া পাইছে, আমরা এই সময়ে তার চেয়ে বেশি পাই। অনেক বেশি। অনেক অনেক বেশি। ওটা বলে আমি কবিতার ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানাইছি। সংস্কৃতি তৈরিও হয়। যেমন ধরেন পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া। একশ বছর পর কেউ এটাকে নতুব বলবে না। তার মানে, শেষ পর্যন্ত মূল পাওয়া কষ্টকরই।
হামেদী
কিন্তু দেখেন বাংলা মূলধারার গান, যেগুলোকে ভদ্রলোকেরা ‘ফোক’ বলে, সেগুলোকে কিন্তু ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনা গ্রাস করতে পারে নাই। লালন, শাহ আবদুল করিম, উকিল মুন্সি, জালাল খাঁ ….ইনারা কিন্তু নিজের পাটাতনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
রাসেল
একসময় আমাদের এখানকার নারীরা ‘বক্ষবন্ধনী’ পরতেন না। এখন চাইলেও সেই শিকড়ে যেতে পারবেন না। ফোক বলতে জিনিসটাই তো বোধ হয় পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া।
হামেদী
এই ঘটনা একই সময়ে ঘটেছে, যখন নাগরিক সাহিত্য অনেকটা সমঝোতা করেছে, কখনো বা আত্মাহুতি দিয়েছে ইউরোপের হাতে।
রাসেল
ফোক আসলে এলিটদের আলাদা একটা বিনোদন। ফালতু জিনিস এই ‘ফোক’ শব্দটা। যাদের জন্য লালন গান গাইছেন, তারা এটাকে গানই বলে। ফোক বলে না।
হামেদী
এবং গত একশো বছরে আমাদের শিল্প সৌকর্যের যে জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি সেলিব্রেট হয়েছে বাইরে, সেগুলো এই গ্রামের লোকদের রচিত গানই ।
রাসেল
বাঙালিরা শংকর জাতি। তাদের রক্তেই আছে বিভিন্ন জায়গা থেকে নেওয়া। একদম নেওয়া কিংবা একদম বাদ দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব।
হামেদী
কিন্তু এই গানগুলি কীভাবে দাঁড়ালো নিজস্ব ভাব ও ভাষা নিয়ে? গলদ কোথায় আসলে?
রাসেল
এখন তো দেখলাম, কাশেম বিন আবুবাকারও বাইরে সেলিব্রেট হলো। এইটা অন্য রাজনীতিও।
এই গানগুলো আলাদা দাঁড়ালো তার পরিপার্শ্বের কারণে। তার পরিপার্শ্ব আর আমার-আপনার পরিপার্শ্ব আলাদা। আপনি-আমি অমন চাইলে সেটা জোর করে করা হবে।
হামেদী
ঐ গানগুলিকে নিতে বাধ্য হইছে।
রাসেল
কই, বিভুতিভূষণরে নিতে তো বাধ্য হয় নাই।
হামেদী
আমি জোর করার কথা বলছি না। প্রশ্নগুলি তুলছি এবং বের হওয়ার পন্থা খুঁজছি।
রাসেল
কিংবা সন্দীপনকে কেমন পড়ছে তারা? আসলে আমরাই তাদের কাছে পৌঁছাই লালনকে। মূল দায়িত্ব আমাদের। পৌঁছে দেওয়ার। আমরাই পৌঁছাই না, পাছে অন্যরা বড় হয়ে যায় দেখে। ভালো অনুবাদক নাই। সমালোচক নাই। আপাত ফলাফল, ভালো সাহিত্যও নাই। বের হওয়ার একটাই পন্থা, প্রচুর অনুবাদ হওয়ার এবং অন্যের পা টেনে না ধরার!
পুরস্কার আমারে পঁচিশ হাজার টাকা দিছে, আর কিছু পাঠককে আমার দিকে আকৃষ্ট করেছে। এবং তারা আমার লেখায় আটকে গেছে। আমায় ভালোবাসছে। সত্যি কথা হলো, আমি টাকাটা ছাড়া আর কিছু চাইনি পুরস্কারের কাছে। ভালোবাসাটা বোনাস!
হামেদী
তাদের কাছে পৌঁছানোটা আমার মূল প্রসঙ্গ না, রাসেল। আমার ফোকাসটা হচ্ছে আমাদের সাহিত্য আসলে কতটা ‘বাংলা সাহিত্য’ হচ্ছে এটা নিয়ে।
রাসেল
আমার সাহিত্য বাংলা সাহিত্যই।
রোবায়েত
বাংলা সাহিত্য না এইটা হইলো বেঙ্গলি সাহিত্য। হা হা
হামেদী
বাংলা ভাষায় লিখলেই সব বাংলা সাহিত্য হয় না।
রাসেল
আমি সাহিত্যের কথাই বলছি। অসাহিত্য প্রসঙ্গেই আনছি না। বাংলা ভাষায় লেখারে আপনি বাংলা সাহিত্য বলবেন, অমন ভাবার মতো কাঁচা আমি না। আমি আসলে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগার মতো কিছুই দেখি না। বরং নিজের প্রতি মনোযোগী হওয়ারেই দেখি।
হামেদী
মালার্মে, র্যাঁবো পড়ার পর ঐ একই বোধের কবিতা আমি বাংলা ভাষায় কেন পড়ব?
রাসেল
মালার্মের বোধের কোন কবিতা কেউ লিখছে? একটা ভালো কবিতার উদাহরণ দিতে পারবেন? আমার মনে হয় না। হয়তো ফর্ম নিছে। ফর্মে আপত্তি দেখি না আমি।
আর বোধের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যাপার আছে। ধরেন মালার্মে, র্যাঁবো প্রেমের কবিতা লিখছে, আমিও লিখছি, জয়ও লিখছে। আমার মনে হয় না আমাদের কারো সাথে তার মিল আছে। এমনকি প্রকাশভঙ্গীও।
হামেদী
ব্যক্তিক নৈরাশ্য, হতাশা, বিচ্ছিন্নতা এইগুলি বাংলা কবিতায় ওদের থেকেই আমদানি হইছে। এমনকী ইমেজের ব্যাপারগুলি যেটা আমাদের ‘চর্যাপদে’ও ছিল, সেগুলো তিরিশ এবং তৎপরবর্তী কবিরা দেদারসে ইউরোপ থেকে নিছে, বিশেষত ফরাসি কবিতা থেকে।
রাসেল
নিক। ওরা ইমেজ ব্যবহার করছে দেখে আমি ইমেজ ব্যবহার করবো না, এইটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। আমার আপত্তি ওরা যে ইমেজটা ইউজ করছে আমরাও তার সদৃশ কিছু করছি কি না। সব ক্ষেত্রেই একই কথা।
হামেদী
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের ‘জীবনানন্দ’ বইতে আছে জীবনানন্দ দাশ জার্মানি আয়ারল্যান্ড থেকে কী কী সিম্পটম্পস নিছেন
রাসেল
বহু নিছে। সেটা কুম্ভীলকবৃত্তিই। যদিও উনি নিজের মতো ইউজ করেছেন। কিন্তু তাতে এই অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া যায় না।
হামেদী
জীবনানন্দ এটাকে দোষের মনে করতেন না যদিও।
রাসেল
কিন্তু মজার ব্যাপার দেখেন, আমার সাক্ষাৎকার, আমার কবিতা থেকে প্রশ্ন না করে আছেন ইউরোপিয়ান সাহিত্য নিয়ে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ভবিষ্যৎ নিয়ে। সমস্যাই এখানে। আমরা মূল জায়গায় কনসেন্ট্রেট করতে পারি না। একারণেই এতসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। কাজের কাজ কিছু হয় না।
শামশাম
আপনার পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়া কারো জিজ্ঞাসা ছিল? না থাকলে বলি, পুরষ্কার আপনারে কি দিছে? প্রশ্নটা করছি এই কারণে, আপনার বিব্রত ময়ূর এর প্রচ্ছদে পুরস্কার প্রসঙ্গটা শুরুতেই আছে।
রাসেল
পুরস্কার আমারে পঁচিশ হাজার টাকা দিছে, আর কিছু পাঠককে আমার দিকে আকৃষ্ট করেছে। এবং তারা আমার লেখায় আটকে গেছে। আমায় ভালোবাসছে। সত্যি কথা হলো, আমি টাকাটা ছাড়া আর কিছু চাইনি পুরস্কারের কাছে। ভালোবাসাটা বোনাস!
শামশাম
ভালোবাসাটাই আসল। টাকাটা বোনাস। আমার এমন মনে হইল। আপনিই ভাল জানেন।
হাসনাত শোয়েব
রাসেল, কেমন আছো? আমি আগের কথাবার্তা অল্পস্বল্প পড়ছি। কমন পড়লে বইলো।
রাসেল
শিওর। আমি ভালোই আছি।
শোয়েব
তোমার কাছে শব্দ এবং ছবির মাঝে কোনটারে শক্তিশালী মনে হয়?
রাসেল
শব্দ। ছবির চেয়ে শব্দে কল্পনা করার সুযোগ বেশি মনে হয় আমার।
শোয়েব
তাইলে কবিতা এবং চিত্রশিল্প এই দুইটার মধ্যে কি কবিতা বেশি শক্তিশালী?
রাসেল
সেটা না বললেও চলতো। আমার তা-ই মনে হয়।
দুইটা বিষয়…
শোয়েব
আমারো তাই মনে হয়।
রাসেল
আমি প্রাইমারিতে থাকতে ছবি আঁকায় দুবার উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার পাইছি, একবার থার্ড, একবার সেকেন্ড। কিন্তু আমি ছবি আঁকা ধরে রাখিনি। কারণ সাহিত্যকে শক্তিশালী মনে হইছে পরে।
শোয়েব
আর কিছু?
রাসেল
আরেকটা বিষয়, আমি একটা ভালো পেইন্টিং দেখার চেয়ে ভালো একটা কবিতায় আনন্দ বেশি পাই। ভালো কবিতাটির বিস্তৃতি বেশি মনে হয়। এইই।
শোয়েব
ছবি বেশিদূর ভাবার স্পেস দেয় না। আচ্ছা, সিনেমা বিষয়ে তোমার ধারণা কেমন? এইটা কি মানুষকে সবচেয়ে বেশি রিলেট করে না? মানে জনসম্পৃক্ত আর্ট হিসেবে?
রাসেল
হুম করে। আমি খুব পছন্দ করি সিনেমা দেখা। কিন্তু সিনেমা মানুষের চিন্তাকে আটকে দেয়। একটা সিনেমা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিরেক্টরের চোখে দেখে মানুষ। কবিতা পড়ে নিজের চোখে। আর জনসম্পৃক্ততা সিনেমার বেশি, কারণ কল্পনা করতে ভালোবাসার মানুষ তুলনামূলক কম। মানুষ ভাবতে বেশি ভালোবাসে না।
শোয়েব
আমার মনে হয় একটা জনগোষ্ঠীর রুচি তৈরি করে সিনেমা। কারণ সহজেই সবার কাছে পৌঁছাতে পারে। আগে আরো বেশি পারত। এখন আমরা ভাগ করে ফেলছি বালের আর্ট ফিল্ম নাম দিয়ে। সেটা একটা বড় সমস্য মনে হয়। তোমার কি মত?
রাসেল
শারীরিক পরিশ্রমের থেকে মাথার পরিশ্রমকে তারা বেশি ভয় পায়। এটা সহজাত হয়তো। নইলে ছোটবেলায় মানুষ কেন পড়তে চায় না? কই, ইটভাটায় কাজ করার স্বপ্ন তো দেখে! ফিল্ম জিনিসটাই তো একটা আর্ট। আর্ট না থাকলে কিসের ফিল্ম! তো যার সবসময়েই দুই হাত আছে, তাকে আলাদাভাবে দুই হাতঅলা মানুষ বলাটা হাস্যকর। অযৌক্তিক। আলাদা আর্ট ফিল্ম বলে একটা এলিট ভাব নেওয়া ফালতু মনে হয় আমার কাছে।
শোয়েব
তোমার কোন কবিতা নিয়ে কখনো ফিল্ম বানানোর কথা ভাবছ? আমি তোমার বাবা নিয়ে কবিতাটা পড়তে পড়তে মনে হলো এইটা নিয়ে ছবি হতে পারে। তাই এত কথা বললাম।
রাসেল
একটা মুভি দেখছিলাম আজ, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, ভানু ব্যানার্জির। সে বাদে বেশিরভাগেরই অভিনয় খারাপ। তাও ঐটা একটা সুন্দর মুভি। কারণ ওখানে ভাবনার আর্ট আছে, ডিরেক্টরের আর্ট দেখানোর প্রবল প্রচেষ্টা আছে।
শোয়েব
এইটা আমারো ভালো লাগছিল
রাসেল
ওইটা নিয়ে শর্টফিল্মের কথা কে যেন বলছিল। আমি ভাবি নাই ফিল্ম-টিল্মের কথা। কবিতা অবলম্বনে ফিল্মের উদাহরণ তো আছে, কিন্তু সেটা ভাবলে কোনো পরিচালক ভাববে। কবিতাটার নামম পরম্পরা।
শামশাম
আমার মনে হয়, আপনার মাতাল কবিতাটা নিয়া ভাল একটা নাটক বানানো সম্ভব।
রাসেল
হয়তো। আমি আসলে জানি না। শুরুতেই আমার কবিতা নিয়ে একটা অভিযোগ ছিল, অনুগল্পের মতন। সেক্ষেত্রে নাটক সিনেমা হয়তো খুব সম্ভব। খুব আশায় আছি, কোনো বড় পরিচালক গল্পটা ধরে সিনেমাই বানিয়ে ফেলবেন।
শামশাম
সেটাও সম্ভব।
রাসেল
আশাবাদী আমি। শুনছি যে সিনেমায় ভালোই টাকা দেয়। সেক্ষেত্রে একটাই শর্ত থাকবে, ভালো টাকাপয়সা দিতে হবে। ফ্রি রাজি হবো না আমি।
শোয়েব
হ্যাঁ, পরম্পরা। আচ্ছা, সেক্ষেত্রে কি এখন যেভাবে পাঠক ভাবছে সেই স্পেস কি বন্ধ হবে না?
রাসেল
অবশ্যই বন্ধ হবে। ভাবনা আটকে যাবে। পরিচালকের চোখে দেখতে শুরু করবে তারা। সেটা কবিতার জন্য ক্ষতি। মহাক্ষতি। একটাই লাভ। আমি অনেকের কাছে পৌঁছুব।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, গত দীর্ঘ একটা সময় ছন্দে খুব ভালো লেখা আমরা পাইনি। কাঠখোট্টা ছিল লেখাগুলি। তারচেয়েও বড় যে সমস্যা, লেখাগুলি কবিতা হয়ে ওঠেনি। ফলে নতুনরা ছন্দ থেকে সরে যায়।
শামশাম
এমনিই জানতে চাওয়া, কোথাও বলছিলেন, পরম্পরা অন্য কেউ লেখলে তারে খুন করতেন। এখন এই কবিতা আপনি লেখার কারণে অন্য কেউ আপনারে খুন করতে পারে এমন ভয় কাজ করে?
রাসেল
এইটা ভাবি নাই। তবে হতেই পারে। আমার মতো হুবহু আরও মানুষ থাকতে পারে। মনোপলি কবিতায় আমি সেই আশঙ্কার কথা জানাইছি। শামশামের উত্তর এইটা।
শামশাম
লাভ দুইটা হবে। তারা কেবল আপনারেই চিনবে না, কবিতাটাও পড়বে সিনেমা দেখার পাশাপাশি!
রাসেল
তারা ভাববেও আমার মতন, শামশাম।
শোয়েব
এইটা একটা সমস্যা, আবার সম্ভাবনাও। আমার কবিতাতে গল্প থাকা নিয়ে আপত্তি নাই। আমি নিজেইই লিখি। তবে কবিতাতে যদি একরকম ইঙ্গিত থাকে সেটা আমার ভালো লাগে।
রাসেল
হ্যাঁ। নতুন কবিতা পড়বে। সেই কবিতা যতদিন না কোনো পরিচালক বানায়, ততদিন আমার ভক্ত হতে থাকবে তারা। এইটা ধারণা, শামশাম।
আর শোয়েব, আমি আসলে কবিতা লিখি। সেটা কিভাবে লেখা হলে ভালো হবে, সেটা ভেবে আমি সেইভাবে লিখি। এমন উদাহরণও আছে, একটা ছন্দের কবিতা পরে আমি পালটে ফেলে গদ্যে নিয়ে আসছি, গল্পের আভাস সরিয়ে দিছি, কিংবা অ্যাড করছি। যেটা স্বাভাবিক মনে হয় বেশি আরকি।
শামশাম
মানে কেবল ভাবনাই আপনার কবিতায় সব না, একটা নির্মিতির চিন্তাও কাজ করে?
রাসেল
এটা বলছি আগে। আগে ভাবনা আসে, মানে কিছু একটা ভিতর নাড়িয়ে দেয়, তারপর আইডিয়া পেলে লিখে ফেলি। নির্মিতির চিন্তা তো আছেই। এটা দিনের পর দিন ভাবি। বছর পরেও অনেক বিনির্মাণ হয়।
শোয়েব
তোমার কবিতাতে আমি কবিতাই পাইছি। বিশেষ করে বিব্রত ময়ূর আমার প্রিয় বই। তুমি কি প্রথম দুইটা বইকে আলাদা করতে পারো বা করো?
রাসেল
এটা নিয়ে বলা হইছে, শোয়েব। তাও বলি আবারও। হ্যাঁ, করি।
শোয়েব
আচ্ছা। আমার নেট খুব বাজে।
রাসেল
সমস্যা নাই। শামশাম সাথে চালিয়ে যান। নেট বাজের দেরিটা পুষিয়ে যাবে।
শামশাম
ময়ূরপ্রসঙ্গ; আপনার বিব্রত ময়ূরে কম করে পাঁচবার আসছে। এইটা কি সচেতনভাবেই আসছে?
রাসেল
মনে হয় না! শামশাম। বইয়ের নামটাই শুধু সচেতনভাবে আসছে, এইটা নিশ্চিত।
কিন্তু অসচেতনতার মধ্যেও ঘাপটি মেরে বসে থাকে সচেতনতা। এইটা নিশ্চিত।
শামশাম
মাছ এবং ময়ূর _ আপনার শিরিন-কবিতাগুলো বাদ দিলে প্রিয় প্রসঙ্গ! তাই মনে হইল।
রাসেল
হুম। আমার বাবা বাজারে গত পনেরো বছর ধরে মাছ বিক্রি করছে। সেটা মাছের প্রতি দুর্বলতার একটা কারণ।
শামশাম
হু। অসচেতনতার ভেতরেই সত্যিকারের সচেতনতা ঘাপটি মেরে থাকে।
রাসেল
আর ময়ূর তো সুন্দর পুরুষের প্রতীক মনে হয় আমার কাছে। বিব্রত না হইলে ওটারে কখনো আমি নিজের অন্য রূপ ভাবতেই পারতাম না!
নারীবাদীরা খেপে যেতে পারে। তাই আরেকটু ক্লিয়ার করি। ময়ূর বাদে সচরাচর পরিচিত আর সব পুরুষই আমার কাছে নারীর তুলনায় অসুন্দর মনে হয়। এমনকি সিংহও খুব সুন্দর না সিংহীর তুলনায়।
শামশাম
তাইলে কি ধরে নেবো, বিব্রত ময়ূর রাসেলেরই অন্য রূপ?
রাসেল
কেশর তাকে রাজকীয় চেহারা দেয়। কিন্তু রাজকীয়তা আর সৌন্দর্য নিশ্চয়ই এক নয়। রাসেল অসচেতনতা, বিব্রত ময়ূর সচেতনতা।
শামশাম
সেটা নিশ্চয়ই না। সৌন্দর্য আর রাজকীয়তা আলাদাই।
রাসেল
এর বেশি ক্লিয়ার করতাম না। কিন্তু আগে একবার কোথাও এই রহস্য ভেঙে দিছিলাম। বিব্রত ময়ূর কবিতাটার পেছনে একটা আলাদা গল্প আছে। পটভূমিকা। জানতে চান?
সেটাই। তো পুরুষ জাতির মধ্যে আমার কাছে একমাত্র সুন্দর মনে হয় ময়ূরকে।
শামশাম
হোটেলের প্রসঙ্গই তো? গল্পটা করছিলেন ২০১৬ মেলাতে।
রাসেল
হুম। ঐটাই।
শামশাম
নারীবাদীদের ক্ষ্যাপার আর কারণ নাই। আমার কিন্তু আপনার উল্টা মনে হয়। মানুষ প্রজাতির মধ্যেই কেবল নারী সুন্দর। আর সব কিছুতেই পুরুষ।
রাসেল
এইটা সবারই মনে হয়। আমার না। মানুষ শৌর্যটাকেও অনেক সময় সুন্দরের সাথে গুলিয়ে ফেলে। মেয়ে কাক সুন্দর। মেয়ে তেলাপোকাও বোধ হয়। এইটা ঠাট্টা।
সিরিয়াস হই আবার।
শামশাম
সবাই নিশ্চয় গুলাই ফেলে না! দৃষ্টিভঙ্গীতে ভিন্নতা থাকতেই পারে।
আপনার বেশ কিছু কবিতায় আধ্যাত্মবাদ স্পষ্ট। সেটা নিছক আধ্যাত্মিকতা থাকে না। কবিতাই হয়। এইটা অন্য অনেকের কবিতা থেকে আলাদা। এই শক্তির জায়গাটা নিয়া ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করছেন?
রাসেল
আলাদা এই ধরনের কিছু কবিতা আছে। সেগুলিতে স্পষ্টতই আধ্যাত্মবাদের ব্যাপার আছে। সেটা নিয়ে আলাদা বই করব। আগের বই দুইটাতে অমন যা আছে, সেটা আরও প্রকট হবে সেগুলোতে। তবে কবিতাই লিখব আরকি।
আর এটা আমার শক্তি কি না জানি না। তবে আগ্রহ আছে আমার। আমি এটাকে আধ্যাত্মবাদের থেকে প্রশান্তিময়তা ভাবতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি আপনার মতোই ভাববেন। কে সেধে নিজেকে নিচে নামিয়ে আনে!
শামশাম
নিরীহ প্রশ্ন করি একটা, সুখী ধনুর্বিদ কি কখনো ময়ূর শিকার করবে? নাকি সৌন্দর্যের শিকার সে মানে ধনুর্বিদ নিজেই? আধ্যাত্মবাদরে নিচে নামা বলছেন? তাতে অবশ্য আমি কিছুই ভাবতে যাচ্ছি না। আধ্যাত্মবাদ আমার কাছে নিছক কবিতার একটা অনুষঙ্গই।
রাসেল
এটার উত্তর সুখী ধনুর্বিদে আছে। ‘সেই সুখী ধনুর্বিদ হও, তির নিক্ষেপেই যার সমূহ আনন্দ।…’ এমন কিছু আরকি। নিজের কবিতা আমার মনে থাকে না। তো, আমি তির ছুড়েই আনন্দ চাই, সেটা কোনো লক্ষ্য ভেদ করুক, কিংবা না করুক। নিয়তি জানে কী হবে।
আরে নাহ। আধ্যাত্মবাদরে উপরে ওঠা বলছি। প্রশান্তিময়তা তুলনামূলক নিচে। নিজেরে সুফি ভাবতে আনন্দ লাগে!
শামশাম
আমারও একই অবস্থা। নিজের কোন লেখাই মনে থাকে না।
রাসেল
এইটা বড় কবি হওয়ার লক্ষণ। ভিতরের অর্থ এত বড় যে মস্তিষ্ক আটকে রাখতে পারে না।
শামশাম
মোটেই না। যে কবিতা পড়লে বেশির ভাগ পাঠক মনে রাখতে পারে সেইটাই ভাল কবিতা!
রাসেল
আমার কবিতা পাঠক হিসেবে আমি মনে রাখতে পারি না। তার মানে স্রেফ ‘খাইছে!’
শামশাম
আপনি দেইখেন, উৎকৃষ্ট কবিতা মানুষ মনে রাখে।
রাসেল
হ্যাঁ। মানুষ উৎকৃষ্ট কবিতা ভুলে যায় না।
শামশাম
কবিকে কবিতা মনে রাখার দায় দিতে চাই না। আজাইরা কথা জিগাই, খাইছেন রাতে?
রাসেল
উৎকৃষ্ট কবিতার একটা শব্দও হয়তো পুরো কবিতা পাঠককে মনে করিয়ে দেয়, ষোলো বছর পরেও।
শামশাম
‘খাইছে’ শব্দটার সঙ্গে ক্ষুধার সম্পর্ক তো সেই জন্য জিজ্ঞেস করা। ফ্রয়েড এমনই বলেন!
রোবায়েত
রাসেল, ‘বিব্রত ময়ূরের’ প্রথম কবিতা ‘যাত্রা’ (*কবিতাটার নাম নাচ) ব্যক্তিগত ভাবে আমার প্রিয়। এই লেখাটা যেভাবে গড়ে ওঠে, এর ইমেজ, আর্টিকুলেশন সবটাই ভিন্ন রকম। কিন্তু ২য় পাতা থেকেই দেখি আপনি চলে যান টানাগদ্যে। অবশ্য কিছু কবিতা ফ্রি ভার্সে। তো, প্রথম কবিতার পরেই আপনি যে টানাগদ্যে জাম্প করেন সেটা কি ইচ্ছা করেই নাকি স্বতঃস্ফূর্ত?
রাসেল
আসলে কবিতাগুলো তো লেখার ধারাবাহিকতা হিসেব করে দিইনি। সাজানোর ক্ষেত্রে কিছু প্ল্যান ছিল। পাণ্ডুলিপি গোছানোর সময় আমি চেয়েছিলাম সব টানাগদ্যের কবিতা, কিংবা ছন্দের কবিতা, কিংবা গদ্যকবিতা একসাথে দেবো না। তাতে পাঠক অন্য একরকম বৈচিত্র্য পাবে। চোখের একটা বিষয়ও থাকে। এক্ষেত্রে খুব সতর্ক ছিলাম। একটা ক্ষুদ্র কবিতার পরে আবার ক্ষুদ্র কবিতা দিইনি, দেখবেন। এমনকি আমার দীর্ঘ কবিতার আগে আর পরে একটা এক লাইনের কবিতা, একটা দুই লাইনের কবিতা দিছিলাম। যাতে অন্য একটা রিলিজ ঘটে পাঠকের।
রোবায়েত
এই কবিতাটা একদম বিশুদ্ধ অক্ষরবৃত্তে এবং অনিয়মিত অন্ত্যমিলও আছে। আরো কিছু কবিতা আছে যেগুলো ছন্দে লেখা বেসিক্যালি অক্ষরবৃত্তে। তো, ছন্দ নিয়ে আমার একটা কিউরিসিটি ছিল, বাংলা কবিতায় একটা সময় ছন্দকে ব্রাত্য মনে করা হলো কেন? আপনার কী মনে হয়?
রাসেল
হয়তো বিষয়টা অত সিরিয়াস হওয়ার মতো নয়, তাও আমি হালকা করে নিইনি। সুখী ধনুর্বিদের ক্ষেত্রেও আমি এটা ফলো করেছি। ছন্দকে ব্রাত্য করা হলো কি না, জানি না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, গত দীর্ঘ একটা সময় ছন্দে খুব ভালো লেখা আমরা পাইনি। কাঠখোট্টা ছিল লেখাগুলি। তারচেয়েও বড় যে সমস্যা, লেখাগুলি কবিতা হয়ে ওঠেনি। ফলে নতুনরা ছন্দ থেকে সরে যায়।
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন