নতুন কবিতার সন্ধানে | দিপংকর মারডুক

শিশিরের হাঁটুতে রসালো আর্তনাদ

তোমার নাম ধরে একটি বালিকা অনতিদূরে কাঠপোড়ানো শীতকাল

আজ এই শিশিরের শব্দে ভাঁজ খোলে, যে-ভাবে

অরণ্য অন্ধকারে তোমার নিখিল আকাশ—

উঠে আসে জল ফুলে

বস্তুত, লাটিমের মতো ঘুরতে ঘুরতে ঝাউপাতার পাশে

অনাদরে সকাল পারাপার দেখতে গিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেশহীন

এই কার্তিক-গণেশের ছেলে—ক্ষয় করেছি

সমুদ্রের দিকে বারবার চেয়ে থাকার দৃশ্য

যাচ্ছি ফুলের ডাকনাম ধরে—রসালো আর্তনাদে

অথবা তোমাদের হেমন্ত বাগানের ধারে;

কিছুক্ষণ এইসব সবুজ পাতার নিশানায় পরিচিত ঝিনুকের পাহাড়

এমনকি তোমার পলাশে রেখেছি সূর্যাস্তের মৃদুস্বর।

অন্ধকার সংকোচন

বিষাদগ্রস্ততা থেকে উপড়ে ফেলা হবে ঘন্টার ধ্বনি। তা নাহলে বিলম্বফুলের ডালপালায় পৌঁছে যাবে আমাদের ভাগ্যরেখার মৃত্যু-সংবাদ। ঝলমলে বৃষ্টিরাত, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে সেইখানে—

বেতাল বাড়ির শ্মশানঘাট, কতরকমে কতবার গিয়েছি স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্জনতা নিয়ে— মাঝে মাঝে হরিতকী গাছের গাঢ় অন্ধকার— পাশে বৈশাখী দুপুর। প্রশ্ন করে কোন্ ফুলের আগ্রহ কোনদিকে? কোনদিকে মাটির যন্ত্রণা নির্ভয়ে—নিবিড় জুঁইফল?

এই-যেন ঝুমঝুম বৃষ্টির দিনে প্লাবিত চিরদিনের ঘর-বাড়ি

ছায়াপথের সংকোচন—

তবুও নিজেকে একবার নতুন বৃক্ষ মনে হয়।

পায়ের রেখায় অর্পিত ঋতুচক্রের মধ্যমণ্ডল

এখনো চলমান পায়ের রেখা— তা সত্ত্বেও মৃত্যুর হয়েছে উপযুক্ত বয়স।

প্রতিদেয় বৃক্ষের শাখায় ফুটে যাচ্ছে ঋতুমতীফুলের সম্প্রদায়। কোনো এক বিরল পাতার ন্যায়—পীতবর্ণের আগে আসে সাদৃশ্য হওয়া অন্ধকার। অতিশয় বদলে গেছে এমন বিগত স্বভাবের প্রকৃতি। তবুও আজ বিকেলের রোদ চোখে নিমজ্জিত সব রূপোপজীবিনীর বাড়ি।

এই-তো তৃণলতা থেকে বিচ্যুত পাহাড়ি পথের দূরত্ব।

যেন বৃষ্টির মুহূর্তে—পুরুষদেবতার ভাবনায় আমোদিত স্তন—

কোথাও মনে হয় উত্তোলিত রাতের জোসনা— বিষণ্ণ হচ্ছে বনকলমির ছায়া নিয়ে। এরূপ অনাগত সাঁওতালী জীবন—বিমূঢ় হাওয়া দিয়ে যায় একলা বসে থাকা অবয়ব সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পাশে…

তারাচৈত্র দিন

একদিন টুথপেস্ট থেকে বেরিয়ে

চলে যাবো—তমসা পাহাড়ে—কাজুবাদামের ঘরে।

খণ্ডলচিত্রে বালিকা’র সূচালো স্তন তাকিয়ে থাকবে

স্নানকাটা আনারসের চোখে— আর

স্কুল পালানো ভাঁটফুল থেকে ফিরে আসবে নইলা মাছের ঝোল!

নির্জন গাঙে বরশীপাতা বালক বসে থাকে সুরমার দিনে—

তারপর, এই উদ্ধত জলপাইয়ের লাভায় চলে যাবে রাত

অথবা তারাচৈত্র দিন—অকস্মাৎ উপোসের সকালে।

হলদে সন্ধ্যার চামড়াবন্দর

দিগন্তে সবুজ পালংক্ষেত দৃশ্যসমেত শুয়ে থাকে

ধর্মশালার ক্লান্ত প্রজাপতির মতো—

এখানে পুরানোঘর পালিয়ে স্তনতলায় জল আর বজ্র নির্মাণে গুরুতর ঝড়।

কয়েকদিন ধূসরনীল আকাশে সন্ধ্যে নামলে করাতকল পার হয়

পশ্চিমে নুয়ে পড়া দীর্ঘ নিঃশ্বাসের ক্ষুধার্ত সূর্য,

তার বেগুনি অর্কিড ফোটার ঘ্রাণে মিশ্রিত শামুক পাতার গ্রাম

এইভাবে যাবতীয় সন্ধ্যা নিয়ে অন্ধকারহীন রাতে

শরীরের আলো যবনিকা দৃশ্যমান—

আর অদূরে সমস্ত দাঁড়িপাল্লায় পার হয়—আমাদের বয়ঃসন্ধির চামড়াবন্দর;

তখনও বসে থাকে বৃষ্টি কুড়িয়ে পদ্মবন—

শেয়ার