অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে আতিদ তূর্য-এর প্রথম কবিতার বই বনের পাশে বৃহন্নলা । মুদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা। পাওয়া যাবে ঢাকা বইমেলা, ঐতিহ্য, প্যাভিলিয়ন ২৮।
বেপথু হাওয়া
এই বন জংলা পথ—
বেপথু হাওয়া, ছায়া ছায়া।
আরও কিছুটা অভিযোজন
আরও কিছু চোরকাঁটা।
পেখম মেলছে ময়ূর, একা
মিলিত হচ্ছে বাঘ— অস্তিত্বে।
বানর আর হরিণের খেলা
মাটিতে থোকা থোকা ছইলা,
নিস্তব্ধতা চিরে একটি জলযান
গোলপাতা নিয়ে ফিরছে বাওয়ালি।
মৌন হয়ে আছে সুন্দরী—
নদের চাঁদ কুমির হয়ে গেছে।
দেয়ালা
একটি শিশু নেমে আসবে যে কোনো সময়।
আমাদের হাতে সোলেমানী জাদু
হাতসাফাইয়ে মুহূর্তে হাজির করবে মানুষ!
বড়োদের দেখে দেখে সে-ও শিখে নেবে সব—
প্রেম দেখে প্রেম
হিংসা সয়ে হিংসা
রক্ত দেখলে রক্তপাত!
শরীরে তার পিতার বদরাগ, মায়ের বিষণ্ণতা
পিতামহের বৈরাগ্য— কৃচ্ছ্রতা।
একটি শিশু ঘুমিয়ে আছে পালঙ্কে, কাছেই।
একটি শিশু ধেয়ে আসছে পৃথিবীতে, ঝড়ের বেগে।
জিরাফ
জিরাফ জাগছে জিরাফ
অভিমানী জিরাফ— মুখচোরা জিরাফ
শক্তকথায় চোখ ছলছল করে
ভালোবাসা পেলে মাথা নোয়ায়।
গাছেরা ওকে আড়াল দিতে পারে না
জিরাফ কোনো ছদ্মবেশ জানে না।
উদাস দাঁড়িয়ে থাকে সকাল-সন্ধ্যা
আহ্বান পেলেই চোখবুঁজে শুষে নেয় আদর।
শত্রুরা মরণফাঁদ পেতে রেখেছে, জিরাফ জানে না।
হন্তারক রেকি করে গেছে, জিরাফ জানে না।
জিরাফ বড্ড একা, সমমনা কেউ নেই
জিরাফ বড়ো নাজুক, কোথাও লুকোতে পারে না।
![]()
মিত্রপক্ষ
শ্মশানবন্ধুরা, কে কোথায় আছো এখন?
চিরকাল তো চেয়েছিলে সংসারের মুখাগ্নি করতে—
সাঁকো পার হয়ে অচেনা গ্রাম
একাহারী বামুন, দূরে দূরে বসতি
পড়ন্ত বিকেলে পাখিদের স্তুতি।
সবচেয়ে উত্তুঙ্গ আগুন জ্বলে কোথায়? চিতায় না প্রাত্যহিকতায়?
তোমাদের সন্তানেরা অবলম্বন না বেড়ি? মনে মনে উত্তর দাও।
কতোকাল দূরে কোথাও ঘুরতে যাওনি? মনে মনে উত্তর দাও।
ঠাণ্ডা এক কলস জল নিয়ে এসেছি নদী থেকে
তোমাদের জুড়ানো হলে ভেঙে ফেলো।
যেভাবে দৃশ্যের জন্ম হয়
স্লেট থেকে খসে খসে পড়ে চক
নামের ছবি আঁকা শিখি পাঠশালা।
তেল-কাজল-পাউডার ছোপছোপ
আঁকতে আঁকতে খুইয়ে ফেলি মনোযোগ।
লিখতে লিখতে কালি হাতের তালুতে
ক্লাসরুম জানালায় কতোগুলো গোরু—
বাড়ির পথের গলিটা সরু।
ম্যাটিনি শো’য়ে রোজ মন দিই
চোখে চোখে নামছে বয়ঃসন্ধি।
টকে যাওয়া দুপুরের তরকারি
বিকালের মাঠে তুমুল মারামারি।
মৃগয়াবিহারে বালিকা বিদ্যালয়
বিনুনি মেয়ের বুকের কাছে পাঁচিল
মিছিলে পুলক, পায়ে পা মেলানোর জোশ
পুকুরে ডুবে গেলো পিঠাপিঠি বোন।
![]()
আতিদ তূর্য
ভাদ্রমাসের এক কাকডাকা ভোরে মাতুলালয়ে জন্মেছিলাম। সেই কবে কোন শরতে পৃথিবীতে এসেছি, তারপর কতো জল গড়িয়ে গেছে! নাড়ি পুঁতে রাখা আছে মফসসল শহর নড়াইলে। কবিতা লিখতে শুরু করেছি অক্ষরজ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। কেউ আমাকে লিখতে মাথার দিব্যি দেয়নি কিন্তু কোন্ এক অমোঘটানে যেন লিখতে বসে গেছি।
“লিখতে লিখতে কালি হাতের তালুতে…।” তবে আমার কবিতার সবচেয়ে বড়ো বাঁকবদল ঘটেছে কুলসুম হেনা নামের বিদুষী একজন তরুণীর সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে। শুধু কি কবিতা? আমি নই? বাংলা সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছি। অনেকদিন হলো খুলনাতে পরবাসী হয়ে আছি। কবি বিনয় মজুমদারের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, আমি কবিতা না লিখলে বাংলা সাহিত্যের কোনো ক্ষতি হতো কিনা জানি না— তবে ব্যক্তি আতিদ তূর্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত। সকল ক্ষতি কি আর খালি চোখে দেখা যায়?