রোজনামচা
সারা বছর ষড়ঋতু নিয়ে যে কয়টা রচনা লিখেছি, তাতে বর্ষাকেই স্নেহ দিয়েছি সবচেয়ে বেশি। একটা খালি পৃষ্ঠার মতো পানি জমেছে আমার রোজনামচায়।
হাতা গুটানো মেঘলা শার্ট পরে, আমি হেঁটে গেছি পুরানো পথের চিহ্ন ধরে—সবুজ রাস্তায়। ক্ষুধার্ত মেকুরের মতো জিরাতে বসেছি সূর্যাস্তের লালিমায় ম্লান হয়ে আসা বাড়ির দেহলিপ্রান্তে। আমার স্মৃতি ছুঁয়ে গেছে তাবিজের রুহ, পিতলের রঙ, নানুর মুখে জর্দার মজলিসি ঘ্রাণ। স্বপ্ন থেকে পাওয়া স্মৃতির মতো প্রতিবেশির বাড়িতে আমাদের কোনদিন হবে না আবাধ যাতায়াত, সময় মত পৌঁছাবে না কোনো উপহার। আমাদের প্রতিবেশি গরীবই থেকে যাবে।
আমাদের ঘরের দিকেই ঢলে পড়ে বয়স্কা নদীর শিথিল আলগা পেট। অবসাদের শেষ ঢেউ আছড়ে পড়ে সবুজ তটে। লেপ্টে পড়ে বিষণ্ণ মানুষ— বিছানায়, মৃত্যুর খুব কাছে। অবসন্ন চোখদুটি তার কোনো মতে মেলে ধরে—তাদের দুঃস্বপ্নে আবারো হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে অসুখী ভিড়ের সেইসব মুখ, অবিনাশী রুগ্নতা আর বহু শতকের সমবেত পাপ তাদের জয় করে নিবে।
পাকুর গাছের মরা ডালে বসে বয়স্ক জ্বীনগুলি ঝিমায়। তাদের আছর করা সন্ধ্যায় ধোয়াশে তারাগুলি ঝিমঝিম করে৷ নতুন তারকা খোঁজার উন্মাদনায় নাড়াক্ষেতের ভিতর টলতে টলতে বের হয়ে আসে ঘোলা চোখের জ্যোতিষীরা, মুহুর্তের জন্য হলেও তাদের মস্তিষ্ক আক্রান্ত—আলোকিত হবে উত্তেজনায়। যদিও তারা ভুলে যাবে তাদের অস্তিত্ব এমন এক যুগে, যে যুগে খোদার নিশান মানুষের চোখেরও ঢের উপরে।
স্কুল-ছেলেদের আগ্রহে আমি ছুঁতে চেয়েছি নারীর হৃদয়ের চেয়েও গোপন কোনো ত্বক! পড়ার বইয়ের পীতাভ ভ্যাপসা পাতা থেকে সেই কবেকার জীবন্ত এক নারীর গন্ধ ভেসে আসে, যার সৌন্দর্যের বিবরণ গ্রামের যুবকদের মাঝে ডেকে এনেছিলো অনন্ত বিপর্যয়—তাদের নিষ্প্রাণ দেহগুলি থেকে বহুদিন পর্যন্ত বাতাসে মিশেছিলো বেগোনিয়া ঘাসের ঘ্রাণ। শব্দের সাথে এমন সহজ সম্পর্ক আমাকে স্বস্তি দিয়েছিলো, যতটা স্বস্তি হয়তো পেয়েছিলো ওই যুবকেরা—মৃত্যুর পর।
রাজপ্রতিনিধিদের অজাচারে জন্ম হলো বিকলাঙ্গ শিশু, সমস্ত গাছের ফল আক্রান্ত হলো বুড়িয়ে-যাওয়া রোগে, আকালে মরে গেলো গবাদিপশু, পুড়ে গেল নতুন তোলা ঘর। অথচ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই নিরব ঔদাসীন্যে, যেন কী হচ্ছে তা বোঝার ক্ষমতা নাই তাদের!
সমস্ত ছেড়ে আমি পালিয়ে যেতে চেয়েছি প্রেইরির ঘুমন্ত বনে—বরফের পাহাড়ে ঢাকা হেমন্ত-নদী, নির্জন অর্চার্ডে ফুটে থাকা চেরিফুলের শাদা ছবির ভিতর। আমার কল্পনার চেয়ে উঁচু কোনো পাহাড় ছিলো না, আর এত প্রশস্ত কোনো নদী! কত রাস্তা এঁকে দিলো আরো নতুন পথের নিশান—
এখন আমার বিশ্বাস আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে, মূসার লাঠির মতো শক্ত, উদ্যত! খোয়াইয়ের পর খোয়াই, ডাঙার পর ডাঙা আমার মেরাজের রফরফ উড়ে যাবে — যেন এই আপ্তবাক্য শেষ হওয়ার আগেই আমার আয়ু ফুরাবে না।
গলায় সিমারের ছুরি নিয়ে কারবালার শহীদেরাও জেগে উঠবে বিস্ময়ে, দেখবে এখানেও শাহাদতের মহড়া চলছে, যেমন পৃথিবীতে। শুধু সাহসীরাই ফেরার জন্য প্রস্তুত হলো, তারা জীবনকেই বেছে নিল, মৃত্যুর চেয়ে বেশি।
মেরুন কার্ডিগান
যেভাবে মুঠি কামড়ে আঁকড়ে থাকে পকেটে মোচড়ানো টাকা, তেমন শঙ্কা আমার কবিতারও আছে নিশ্চয় (ভাংতি না থাকায় সেদিন চানখারপুল বেদেনীর কাছে খোয়া গেলো, কারণ আমার দংশনের ভয় আছে।) যেভাবে একটা কালো বিড়াল হেঁটে যায় শীতের রাতে কংক্রিট টানেলে, আমাকেও আঁচড়ে দেয় কিছু ধারালো লোম, হেঁচড়ে টেনে নিয়ে যায় অন্ধ গহবর।
আলিঙ্গনে আমি যতটুকু বোঝাতে চাই তোমাকে যে একই দুনিয়ার বাসিন্দা আমরা, (যে ছোট্ট দুনিয়া থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে কম্পমান লোহা, পিটিএসডি, কালান্দারি সুফিরা), অর্থাৎ একটা শূন্যস্থান আরেকটা শূন্যস্থানকে ফিলাপ করছে (স্বতন্ত্র হতে চাইছে)। একই রিকশার রিদমে আমাদের পা গুলি আড়াআড়ি, দুলতে থাকে, ক্রস করে, আর আমরা সমান একাগ্রতা নিয়ে তাকিয়ে থাকি থুতুফেলা রাস্তার উপর, রাস্তার সমান ডিভাইডারগুলির দিকে, মাফলারে জড়ানো, আলিঙ্গনে। সায়েন্সল্যাব থেকে কাঁটাবন কোনো শঙ্কা ছাড়াই পার করলাম, নিরাপদে, যে শঙ্কায় সর্বদ্রষ্টাদের চক্ষু বোজা থাকে সবসময়, যে শঙ্কায় গ্রামের বন্ধুদের সাথে শহরের বন্ধুদের সহসা হয় না সাক্ষাৎ।
হে পরিচিত মুখ, রহস্যময় হাসি, আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করলেন জনাব (অর্থাৎ নাগপাশে)। যথাবিহীত সম্মানপ্রদর্শণপূর্বক নিবেদন এই যে, বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। আমার পিতা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী (নাস্তা-পান-না)। আর নূরে আলমেরও একটা ল্যাপটপ দরকার, কারণ সে পিতার প্রকট বৈশিষ্ট্যগুলি পেয়েছে। অতএব সবিনয় নিবেদন এই যে— কিছু দুনিয়াবি ফজিলত আমাদেরই সংস্পর্ষে আছে।
সমস্ত বিবাহবাতি আর গৃহস্থ সুখের (চা টা দাঁড়িয়ে খাও, নাইলে বাসের জন্য দেরি হয়ে যাবে) বেলকনিতে, শীত আসে, আর শীত তোমার ভালো লাগে, (যেহেতু মেরুন কার্ডিগানে মানিয়েছে তোমাকে), আমাদের উষ্ণ রক্ত কিন্তু শীতল আর্টারি, একটা “স্যাড পারপ্লেক্সিটি”, মানে অপ্রতিভ বিভ্রান্তি? সূর্য মিশে যাচ্ছে মেরুন কার্ডিগানে, অথবা দুনিয়া পিছাচ্ছে, আমরা আগাচ্ছি, আমাদের বৃথা শ্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাস্তার বালিগুলি।
উচ্ছ্বাস-অবশিষ্ট
সরকারি কাঁটা তারের পেছনে রাখার হাজার কৌশল সত্তেও যে মহামারী আমাদের ছোঁবে, তা তো আমরা জানতাম। তারপরও দূরে থাকার এত অজুহাত আমরা কোত্থেকে পাই? আমিও এখন শীতকালীন রোদের মতো অলস হয়ে পড়েছি। ভাবতে ইচ্ছা করে এখানে বাতাসে সর্বত্র পাইন গাছের ঘ্রাণ, পাহাড়ের চূড়াগুলিতে ঘন বাষ্প এসে জমেছে, তার ভিতর কোথাও বা ফুঁটে আছে বন্য গোলাপ। কিন্তু এসব আমি বইয়েই পড়েছি, আদতে পাইনপাতার গন্ধ কেমন আমার জানা নাই, যেমন ছিলো না পানকৌড়ির কথা। তারপরও তো আমি জলজদের কথা লিখেছি। পানির সঙ্গে যেমন পানকৌড়ি, জলের সঙ্গে জলপাই। কবিদের কাজ চলে যায়।
কে যেন বলেছিলো, আমাদের সারাটা জীবন শুধু আত্মসম্মান খুঁজে যাওয়া, “একে একে সবই/ ডুবে যাবে 一 উৎসবের কবি”। সারাটা সকাল আমি একটা প্রবাদকেই অভিযুক্ত করে গেলাম, হিংসুক যৌক্তিকতার কাছে আমাদের অবধারিত পরাজয়। আমি সম্ভবত সেই ছেলেদের দলে পড়বো যারা অনুশোচনার ভয়ে কিছু ‘কাজ’ করে ফেলে, অর্থাৎ হীনমন্যতা, মানে আত্মসম্মান। তুমি হয়তো প্রতিবাদ করে বলবা, আমার
আত্মাটা এখনো নারী দেহের ভঙ্গুরতার মতো কমনীয়, আমার গৃহপালিত শরীরটা সম্ভবত এই মতটাকে আরো জোরদার করে। কিন্তু বেশির ভাগ ‘আদি ও আসল’ দোকানগুলিই নকল হয়ে থাকে, কী বলো? লুকিয়ে লুকিয়ে আফটার শেভ মাখার মতো কিছু কৈশোর হয়তো আমার এখনো অবশিষ্ট আছে।
সুগন্ধা থেকে বিষখালী এখন কালো পানির উপর সাতরঙা তেল, আগুন ভাসছে। শুনতে পাই মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা নাকি লিথাল ইনজেকশানকে বেশি ভয় করে, তড়িতাঘাতের চেয়ে। মানুষ আসলে আগুনেই পুড়তে চায়। কিছু উৎসাহী জনতা হয়তো জাহান্নামের আড়ম্বর দেখতে গিয়েও পুলসিরাত থেকে পা ফসকে পড়ে যাবে নিচে। এদের পাপ সম্ভবত ‘উপচে পড়া’। সেদিন ফুটপাতের উপর একদল প্লেবিয়ানকে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠেছিলাম, মনে হলো ফায়ারিং স্কোয়াড! মার্কেজ পড়ার পর থেকে আমার প্রায়শই এমন ভ্রম হয়।
যতটা উচ্ছ্বাসে সামনে আগানো হলো, ততটা নিস্তেজে আর পিছানো যাবে না মনে হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছু হচ্ছে তাও না। আমাদের আড্ডার সবচেয়ে লোভনীয় উপচার এখনো তামাক, চমনবাহার, কাটাছেড়াটা মানজুর একাই চালিয়ে নিচ্ছে, ছুরি কাঁচির সাথে ওর হৃদ্যতা আমাদের চেয়ে বেশি। শহরনালী থেকে নতুন কাঁচামাল যোগাড় করা দরকার। কিন্তু আমরা যে শ্রমবিমুখ, সব কিছুর ব্যাপারে অল্প জ্ঞান আমাদের পুলিন বকসীর মতো প্রায়ই বিমূঢ় করে দ্যায়। তবে তাকে তো আমরা সর্বজ্ঞ বলেই জানি। তারপরও মানজুর কনফিডেন্ট, আমি নার্ভাস। যে নার্ভাসনেসের কারণে নুরে আলম তার নাম জিজ্ঞেস করলে বলে ফেলে ‘আমার নাম রাফি’, তা হয়তো সে আজীবনই বহন করে যাবে।
এর অধিক আর কী বলবো? রুয়াকে আমাদের ভালোবাসা দিও। সমস্ত দৈহিক অন্তরঙ্গতার স্মৃতি ম্লান হয়ে আসলে আমার শুধু মনে পড়বে একটা নীল অন্ধকারাচ্ছন্ন শৈশব, যেখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি আর তোমার হালকা গোলাপী কাঁচের মতোন চোখে ঢুকে পড়া চঞ্চল দুইটা খরগোশ।
পপিফুলের সন্ন্যাসী
এটুকু জানতে আমাদের খুব বেশি পড়াশোনা করতে হবে না যে, আমাদের চোখের নৌকাগুলি যখন ভেসে উঠে লবণ পানিতে, অর্থাৎ সাগরে, তখন আমাদের ডুবে যাওয়ার মতো গভীরতা আছে, মানে আঁকড়ে ধরার মতো আকাশ আছে। যদিও ভাসার বন্দবস্ত রেখেই এসব ডোবার কায়কারবার। তারপরও আমাদের বুঝতে খুব বেশি দেরি হবে না যে, মানুষের মতো সমুদ্রেরও প্রতারণা আছে। যা কিছু জীবিত বা মৃত ভেসে আসে তীরের কাছে— সিন্ধু, জমশেরো, পাল্লা, প্রস্তর, জীবিত বোতল, মূর্তির ভাঙা হাত। সুতরাং জেগে ওঠো গন্ধকারিকা, সমুদ্রের নিরব ফেনা, গোলাপী নরোম ভোর, আন্দালুসিয়ান আতর, পত্রিকার উপর সদ্য কাঁটা নখ (একই রকম জীবিত বা একই রকম মৃত)। “তবে আমি পুণ্য তীর ছেড়ে দিয়ে ক্রমশই পাপসমুদ্রের দিকে ভেসে যাই”, যেহেতু আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত জয়লাভ করেছে। অর্থাৎ আমি বারবার ক্ষমা চাই ভালোবাসার মতো বারাবার ডুবে যাই ক্ষমার সাগরে।
হাজার পৃষ্ঠার এনসাইক্লোপিডিয়া উল্টাতে গিয়ে আমি বুঝলাম ছাপার কালি না, পেন্সিলের নিব না, বরং ফেমিনিন কালারের রাবারটাই আমাদের আকৃষ্ট করে বেশি। আর যেহেতু পড়াশোনার আগ্রহ নিস্তেজ হয়ে আসে, তার সাথে মনস্থির করার অস্থিরতাও, সুনিশ্চিত দ্বিধায় আটকা পড়ে লোকে, অনশনের তাঁবু থেকে হলের ক্যান্টিন পর্যন্ত। ভিক্ষালয় ছেড়ে রিকশার হারিকেন দুলতে থাকে অন্য কোনো গণিকালয়ে। অর্থাৎ বালিকার বেণী আটকে যায় চিরুণীর অবশিষ্ট দাঁতে।
সুখ মানে দুঃখকে মনে না করা, সুখ মানে দুঃখকে মনে করা। ট্যুরে গিয়ে ছবি তোলায় তোমার রাইভাল নাই কোনো, আমাদের মধ্যে অয়নই যা একটু ছবি তোলে, আমি এক্সপ্রেশান দিতে পারি না, আনমনা পাহাড় ভালোবাসে (অন্তত পাহাড়ের ছবি, মানে জনশূন্য ল্যান্ডস্কেপ), আর সুমাইয়া আয়না দেখে লজ্জিত। তোমাদের শহরেও হয়তো একদিন ট্যুরিস্টরা এসে কিছু গন্ধ খুঁড়ে যাবে। খুঁজে পাবে তামার চাবি, রূপার পয়সা, তারও আগে তোমার অমসৃণ হাত (অলমোস্ট স্যুররিয়েল!), আর আকৃতি পাবে বাতাসের চেয়েও বিমূর্ত কোনো গৃহস্থালি, মাটির চুল্লি, পাথরের তৈরী হাড়। কিন্তু তারও আগে পৌঁছাবে উপহার, বিয়ের প্রস্তাব। যেহেতু ওদের শহরে মেট্রোরেল বাসা বেঁধেছে আগে, আর আমরা এখনো নেটিভ, ফোক নাকি আরবান। তাছাড়া এখানেও তো উপযুক্ত পাত্রের অভাব, কারণ যে ভুলে যাওয়া অতীত আমাদের দূরত্বের কারণ হয়ে দাড়ালো, তা ক্রমশই আমাদের নিরব ও নিঃসঙ্গ করে তুলেছে।
মানজুর
আমি হয়তো আজকাল বুঝতে পারি
মানজুর এখানে থাকতে কেন পছন্দ করে
যেমন ধরো, আমি প্রতিদিনই দেখি ওকে, ক্লাসে
আসতে যাইতে, প্রতিবারই নতুন কারো সাথে
এখানে ওর একটা ফ্রেন্ড সার্কেল আছে,
বাম আন্দোলনগুলার সমান বড়
যারা ওর হয়ে যেকোনো তর্ক জিতায়ে দিতে পারে
যদিও ওদের মধ্যে ওই সবচেয়ে বেশি কথা বলে
তারপর ধরো, স্বপন মামার দোকানটাই
ওইদিন যেইভাবে বললো,
ওর কথা বলে দুইকাপ চা আনতে
আর দুইটা কেক সহ
আমি বুঝলাম চা তো উছিলামাত্র,
এখানেও ওর কিছু কৃতজ্ঞতা আছে,
যারা ওর প্রতি কৃতজ্ঞ।
আর ডিপার্টমেন্টের কথাও তো বলতে হয়
কালচারাল ক্লাবের অনুষ্ঠানে ও যেভাবে খাটলো একাই
সবার কাজে। কার্ডবোর্ড, আঠা, রঙ নিয়া মাখামাখি
এমন একটা সং হইলো, যে হাসলো সবাই
মনে হইলো সবাই তো ওর থেকে বাজে,
অলস না হইলেও অকর্মণ্য।
কিন্তু আমি ঠিক বুঝি না আর
এসব জিনিসকে আমি এখন কিভাবে দেখি
মানে একটু জেলাস হয়তো, নিজের উপর বিরক্ত
বাট এটুকু এনাফ না মেবি
তুমি হয়তো বলতে পারো যে, লুক এট দ্য ব্রাইট সাইড
ও তো এমনি এমনি ক্রেডিট নেয় না
ও তো গুরুত্ব দেয় ছোট বড় সব কাজে
আর এটা কোন না কোন ভালো ফল আনবে
এখন না হলেও হয়তো ভবিষ্যতে।
কিন্তু আমি জানি না ঠিক, কখনো কখনো মনে হয়
ও নিজেকে অনেক বেশি জড়ায় ফেলে
একটা মাছ আর আটকা পড়তে পারে কতগুলা জালে!
আমি মানতেছি ও সাহসী,
মীন রাশির ছেলে, পিছলাতে জানে
আর ও খেলাটাকে বুঝে ভালো মতোই
ও জানে কার সাথে খেললে গোল হয় দ্রুত
আর ফাউলের পেনাল্টি দিতে কার মনে বাঁধে
কিন্তু কোনোদিনও দিবে না ধরা
এমন মাছকে কি পৃথিবী পছন্দ করে?
কিংবা হয়তো একটু বেশিই পছন্দ করে
জাপানিরা যেরকম খায় পটকা মাছের স্যুপ
খাবার টেবিলে একটু বিষ, একটু রিস্ক!
বুঝতেই পারতেছো কী এক্সোটিক!
আর ওর তো রক্ত গরম, উষ্ণ
এমন কিসিমের মাছের কথা শুনছো কখনো?
আঁইশে জমা শ্যাওলা পুড়ে যার ছাই হয়ে জমে!
তবে আমি এসব নেগেটিভ চিন্তা করতে চাই না
আমিও ব্রাইট সাইডটাই দেখতে চাই
আমি শুধু চাই ও ওর ভিতরের আগুনটা লুকায় রাখুক
ও হয়তো বলতে পারে, কীট পতঙ্গ মাছি
আর সব গা কিরমির করা প্রানী
আগুনের উপর ঝাপায়া পড়ে,
এতে আগুন কী করতে পারে!
যদিও ও এইটা বলবে না, ও তো ভালো ছেলে!
ফরসা মুখটারে আরো তেলতেলা করে হাসবে
তুমি কি ওরে একটু বুঝায়া বলতে পারবা?
এতো আগ বাড়ায়া সব কিছুতে না যাইতে
আমার তো সাহস হবে না কইতে
এমনিতেই পিছানো আমি,
ও যদি ভাবে পিছানো লোকে পিছেই শুধু টানে!
এমন না যে চাই না আমি ওকে একটু পিছে দেখতে
কারণ ওর কথা ভেবে ভেবে আমি তো পিছায় গেছি আরো
তবে আর কট্টুকই বা পিছান যায়
কাজগুলা সব সময়ই ধইরা ফেলে আমাকে
এবার অনেকগুলা টিউশনি, আর আমার পড়ার চাপে…
এমনিতেও তো পারবো না কোনোদিন আমি
দুনিয়ার সাথে তাল মিলাইতে
আমি বরং চাই না ও এতটাও দূরে চলে যাক,
যদি না যাইতেই হয় ওকে।
![]()
তাহমিদ রহমানের জন্ম ১৯৯৯ এর সেপ্টেম্বরে। বড় হওয়া ঢাকায়। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেন। কবি। অনুবাদক।