ডিম ফাটার মুহূর্ত
ফাটবে ফাটবে ক’রেও ফাটতে না পারার যন্ত্রণায়
ভিতরে ভিতরে লাল হয়ে ওঠে যে ডালিম
তার বেদনার্ত বোঁটায়
সে চায়—
একটা পাখি এসে বসুক,
যার সঞ্চিত ডানার ঝাপটায় বিপদখচিত কালবৈশাখী;
একটামাত্র আচমকা ঠোকরের বাসনায়, সে
গোপনে গোপনে
গ’ড়ে তোলে রক্তিম শাঁস, তার
কেঁপে উঠার করুণ আকুতি যখন সংক্রমিত হয়
সমীরে সমীরে…
তখন
খড়কুটো, নাড়া আর ফেঁসোর ভিতরে
ধীরে ধীরে ফাটতে থাকে ডিম।
যে জীবন অস্ত্রাঘাতে শুরু
জন্মের পর কার সাথে পরিচয় হয়েছিল তোমার?
ধাত্রী? নাকি ধাত্রীর হাতে থাকা ছুরি,
কে তোমাকে অভিবাদন জানিয়েছিল প্রথম?
যদি ছুরি হয়, সে তো অস্ত্রই
যদি ধাত্রী হয়, হাতে তো অস্ত্রই ছিলো
মানুষ—
চিরকাল তোমাকে অস্ত্রের সাথেই পরিচয় করাবে
নদী সব মিশে যাচ্ছে এন্ড্রয়েড ফোনে
কখনো শীৎকারের শব্দ শোনেনি যে বধির, তার
তৃপ্ত সঙ্গিনীর
একান্ত উচ্চারণের
বেদনার মতো করুণ কিন্তু
উজ্জ্বল একটা আলো কেঁপে কেঁপে উঠছে
যেন বিশেষ মুহূর্তের কম্পনরতা তলপেট
কোনো রমনীর—
আজ
এই মুক ও বিষণ্ণ গভীর মেঘনায়
বৈঠার অবুঝ আঘাতে
ছিন্নভিন্ন চাঁদের মতোই একা ও অস্থির আমি
ফুটে উঠেও ফেটে পড়ছি জলে।
তবু মেঘ কত কথা বলে। মিথ্যা অনেকরকম।
আকাশে ফানুশ ওড়ে। কমলা-হলুদ কিছু তারা।
আমার মন—
প্রথম সঙ্গমরত ভয়ার্ত কিশোরীর
উদ্বেগজনকভাবে আনন্দিত কিন্তু
যন্ত্রণায় দিশেহারা একটা অস্ফুট শরীরের—অকস্মাৎ
প্রস্ফুটিত হবার ঘটনা চুরি ক’রে দেখে ফেলবার মুহূর্তের
ছেলে শিশুর
না ফোটা শিশ্নের অগ্রভাগে চর্মের স্ফিত হবার উত্তেজনায়
বিক্ষিপ্ত হতে চেয়েও
বাঁধা পেয়ে ফুলে উঠবার ব্যথার মতো করুণ
ও টনটনে।
কিন্তু কে কার কথা শোনে? ফুলেরা পচনশীল।
ধরা যাক সকলের মন আজ নদীতে ভাসমান।
এবং সাগরের পরিবর্তে
ধরা যাক নদী সব মিশে যাচ্ছে এন্ড্রয়েড ফোনে।
সম্প্রীতি
গুলিস্তান গিয়ে দেখি—
জাতীয় মসজিদের পাশেই
জাতীয় স্টেডিয়াম
রাস্তার উল্টোপাশে সারি সারি
বন্দুকের দোকান
বন্দুকের দোকানের গা ঘেঁষেই
গ্রন্থভবন
এবং
গ্রন্থভবন ও সচিবালয়ের মাঝখানে
রাস্তা যেইখানে
দুইপা ফাঁক ক’রে
আলাদা হয়ে গেছে,
সেইখানেই…
উদ্দীপিত শিশ্নের মতো খাড়া হয়ে আছে
গোলাপ শাহ’র মাজার
মাথার উপর একটা চাঁদ
মাথার উপর একটা চাঁদ
খুব হর্নি
আলোর অর্গাজম ঘটিয়ে যাচ্ছে;
নিজেকে মনে হচ্ছে—পৃথিবীর জিভ
এই মুহূর্তে—
খটখট ক’রে ছুটে গেলো ট্রেন; মাথার ভিতর তার বিভিন্ন স্টেশন।
দুটো আত্মহত্যাপ্রবণ পাখি
একটা বোঁটাভাঙা গোলাপ
ডাঙায় তড়পানো কিছু কৈ
এইসব আমার স্মৃতি, ভুলে গেছি;
যা-কিছু ভুলে গেছি তার সবই আমি মনে করতে পারি।
যেমন: তুমি; তোমার নামটাও ভুলে গেছি, ঋমু।
এই মুহূর্তে—
মাথার উপর নির্লজ্জ উলঙ্গিনী একটা চাঁদ,
কিছু অন্তর্বাসপ্রবণ মেঘ—উড়ে উড়ে যাচ্ছে,
নর্তকীর উদ্দেশ্য ছুঁড়ে দেয়া সোনালী মুদ্রার মতো চকচকে অসংখ্য তারা
এবং গোঙরাতে গোঙরাতে
কয়েকটি যুদ্ধবিমান ঢুকে গেলো শীৎকারের মতো।
তখন মাথার উপর একটা চাঁদ
খুব হর্নি
আলোর অর্গাজম ঘটিয়ে যাচ্ছে;
দূর থেকে ভেসে এলো বোমব্লাস্টের বিভৎস রতিচিৎচার।
কবি পরিচিতি
অস্ট্রিক ঋষি—জীবজগতের এমন এক অস্ফুট মাখলুকাত, যে তার ভিতরের কিয়দংশ মানুষটাকে কাদামাটির দলার মতো ক’রে, খামচে ধ’রে, ছুড়ে ফেলবার বাসনায় ব্রত। একেকটা কবিতাকে সে এমনভাবে টেনে-ছিঁড়ে হাজির করতে চায় যেন নিজের স্বরটাকে দিতে পারে প্রকৃষ্ট ঘেউ-রূপ; এই আশায়, যেন মৃত্যুর পর তাকে সারমেয় হিসেবে মেনে নেয় মানুষ।
প্রকাশিত বই:
নদী সব মিশে যাচ্ছে এন্ড্রয়েড ফোনে, কবিতা, চৈতন্য প্রকাশন (২০২২) সতীতালয়, কবিতা, কিংবদন্তী পাবলিকেশন (২০২৪)