হাসিন এহ্সাস লগ্ন’র কবিতা

•এভরিবডি’স মেকিং লাভ অর এল্স এক্সপেক্টিং রেইন•


ভেজে উপশহর, ব্রিটিশ কাউন্সিল।
কাদায় থপথপ পা ফেলে রিকশায় চড়তে মনে পড়ে তোমার বাসক পাতার ঘ্রাণ।
সোঁদা গন্ধের থেকে বহুদূরে ঠেলে দ্যায় তা।
রাত-ভোর বৃষ্টি বেঁধে রেডি করি প্রেজেন্টেশনের খসড়া।
‘এ ফ্রিহুইলিন’ টাইম’ বারবার বাঁধ সাধে তাতে।
তবুও বৃষ্টির তালে ভিজতে থাকে ইলেক্ট্রিসিটির তার, আর ব্লু জিন্সের কদমের মতো দৃশ্য না জন্মাতে দ্যাখার ব্যর্থতা।
সকালে কেউ বলে, সেখানেও নাকি বৃষ্টি।
তুমি বৃষ্টিবন্দি হয়ে দেখছো ‘দ্য ক্যুইক অ্যান্ড দ্য ডেড’।
না, তারচেয়ে বরং দেখতে পারো ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুকু’স নেস্ট…’
আর শোনো কাকতাল।
‘নীল শহরে বৃষ্টি’, ‘কাক ও কোকিলের বৃষ্টির আহ্বান’…
আর আমি, শৈশবের পাঠ গায়ে মেখে হাঁটি আর ছড়িয়ে যাই, ‘ঘন মেঘ বলে ঋ, দিন বড় বিশ্রী।’
দেখি থোকায় থোকায় ঝোলে ‘ন্যাশভাইল স্কাইলাইন’।
নামিয়ে আনি, মেখে খাই।
রাজন শোনায়, ‘হোয়েন ইউ রুস্টার ক্রো’স অ্যাট দ্য…’
ওহ্, নীল নীল নীল সব কেমন নীল!
ভিজে ভিজে ভিজেই গেছে মেঘদূতের পাতা (কিংবা পাখা)
অথচ দ্যাখো!
‘অন্তস্তোয়ং মণিময়ভুবস্তুঙ্গমভ্রংলিহাগ্রাঃ
প্রাসাদাস্ত্বাং তুলয়িতুমলং যত্র তৈস্তৈর্বিশেষৈঃ।।’১


•অ্যানি ওল্ড উইন্ড দ্যাট ব্লো’স•


শৈশবে চেটোভর্তি অভিমান নিয়া দৌড়াইতেছিলাম ধইন্যা ক্ষেতের দিকে।
সেইখানে খাড়া করা বাঁশের মাথায় বাঁধা ছিলো টুটাফাটা এক লাল কাপড়।
তার উপ্রে বইসা ডাকে বারগেন্ডি রঙের ফিঙে।
আমি ফিঙেটার দিকে তাকায়ে সব ভুইলা যাইতে থাকলাম… মা শিখাইতো, সোয়ালো মানে ফিঙে।
‘সোয়ালো… ও সোয়ালো… আমারে নিয়া চলো সুনসান কোনো নগরে। বা ঐ হ্যাপি প্রিন্সের পায়ের কাছে একটু বসতে দিও।’
সোয়ালো আমার কথা শোনেনি, উড়ান দিয়া চইলা গেছে।
তুমি যখন আসলে, আমি আমার সোয়ালোরে ফিইরা পাইলাম। বা ঐ লাল কাপড়রে।
একবার এক শীতে কম্বল খোলার সময় ভিত্রে পাইলাম আমারই এক টুপি। কী যে সুন্দর!
তোমারে দেখলে ওই টুপি আবিষ্কারের আনন্দ’য় পায়।
‘বাতরাজ’ দিয়ে পুতুল বানাইতাম, ছাড়তাম না মুহূর্তের জন্যেও। ঐটাও তো তুমিই।
প্রতি সন্ধ্যায় ভাপাপিঠার সৌগন্ধ আর উষ্ণতা ছড়ায়ে আসতো ফেরিওয়ালা।
কমলা রঙের জিরাফ, গোলাপি লাটিম, সবুজ হাতির পিঠে তার মাহুত… আরো কত কী।
আমি মা-রে চিৎকার করে ডাকতে থাকতাম, কিন্তু তোমার প্রবৃত্তি গায়ে মাখায়ে সে হারাইতো কোন্ আন্ধারে।


•লিটল বক্সেস মেড অব টিকি-ট্যাকি•


এমন হ’লে আমি দেখতাম সুইচবোর্ডের দিকে
এই দুই সেকেন্ডে মেরিগোল্ড ডুবে যেতো।
হারমোনিয়ামের রিড খসে পড়লে
শুনতে যেতাম স্নানের শব্দ
সেখানে কিছু হলুদরঙা বাবলাকাঁটার সাথে কোত্থেকে ভেসে আসা কটনবাড জড়িয়ে থাকে।
চুলোয় চড়ানো গরম পানি ফুটছে,
সেই তালেই তো ভাঁটফুলরা মেশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের সাথে।
ভাতের কাড়া করতে থাকি, অনেক কাড়া…
আর হাঁটি অডিটোরিয়ামের ভেতর দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছাবো
লি পো’র ভেতর।


স্কুইশি•


তুমি হয়তো জহরের ‘জলভরা স্মৃতিপুঞ্জ’ নও,
তবু তোমায় দেখলে বাতরাজ দিয়ে পুতুল বানাবার উৎসাহ আসে মনে।
কচুরিপানার নাম কেন বাতরাজ, এই ভাবনায় পায়।
শুক্রবারের ক্ষীর, ধানের লালপোকা, আইলের প্রজাপতি,
চৈতন্য মহাপ্রভু, অতঃপর…
‘কাষ্ঠের পুতুলি যেনো কুহকে নাচায়।’
পলিথিনে মোড়া ঘরবাড়ি, ছোট্ট সবুজ সাবান, সাপুড়ের মন্ত্র আর জিপসির ক্যারাভান…
তোমার ভেতর থেকে দেখলাম সবটাই।
দেখায় তো ভালোই মৃগতৃষ্ণিকা
আর কুটকুট করে মর্কটক’রা যারপনাই।
শুধু তারপুতুল, বেণীপুতুল, লাঠিপুতুল, ছায়াপুতুল
ঐ আরকি, মৃদুমন্দ তড়পায়।


•টোটাল একলিপ্স•


তোমার চোখের ভেতর কে যেন গাঁইথা দিসে এক মহাসমুদ্র।
ওই সমুদ্রচারী হাওয়া আমার চোখে-মুখে ঝাপটা দ্যায়, চুল ওড়ায়।
খুব কমই পারি আমি তটে যায়া বসতে, পেলিক্যানদের সাথে খেলতে।
কালেভদ্রে কোনো প্রাচীন জাহাজে সওয়ার হই, জিম হকিন্সরে সাথে নিয়া।
কবিতায় যে আলবাট্রসের কথা আমি পড়েছি, তা প্রথম দেখি তোমার চোখে।
কী ভীষণ ছটফট করে তারা আনন্দে!
অথচ ‘কপট স্রোতে ভাসে আমার মৃতদেহের ছাল’!
তুমি কে গো? সমুদ্রসমেত চোখ তুলে তাকাতে পারে কে?

আর তোমার ঠোঁট তো আস্ত এক গ্রীনউইচ!
সেখানে কেউ ছবি আঁকছে, গান গাইছে, জ্যাজ শুনছে, কবিতা লিখছে, বিপ্লবের স্লোগান দিচ্ছে।
আর সেখানে আছে পেনফোল্ডসের লাইট পিঙ্ক ওয়াইনের স্বাদ।
ঘন নিঃশ্বাস ফেলে আওড়াই বোদলেয়ার, ‘আমাকে কামড়াতে দাও, অনেকক্ষণ ধ’রে…’
তুমি কে? কে পারে গ্রীনউইচরে ঠোঁটে ধরে রাখতে?

আর তোমার চুল… নয় সহস্র বছর আগের প্রথম উদ্ভাবিত সিল্ক।
ওহ্, আবারও… ‘তুমি যদি জানতে যা-কিছু আমি দেখি! যা-কিছু আমি শুনি!
যা-কিছু আমি অনুভব করি তোমার চুলের মধ্যে!
আমার আত্মা উড়ে চলে তার সৌগন্ধে
যেমন অন্যদের, সংগীতের পাখায়…’২
তুমি কে? তুমি কে!
কে তার চুলের ভেতর ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ ধরে রাখে?
কার পোড় খাওয়া-নরম আঙুলের ফাঁকে বন্দি থাকে ই-চিংয়ের দর্শন?

চোখের পাতা ফেলছো তুমি, জমে থাকা মঙ্ক হয়ে তা দেখি।
তুমি চুমু খাও, তোমার বন্ধ চোখের পাতায় দেখি হিপনোসের ঘুম। র‍্যাঁবোর জন্য ভার্লেনের ছটফটানি।
তোমার মুখাবয়ব, আর তুমি… সবসময় বলি ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কিছু’, জানি এটা কত ক্লিশে।
তুমিই সৌন্দর্য, তারপরও তোমারে ধরার মতো শব্দ নেই কোত্থাও। আমি ক্লান্ত।
তবু হ্যাঁ, এই উদ্বাস্তু আমি হঠাৎ একদিন মালগাড়ি ক’রে পৌঁছোবো তোমার কাছে।
লস অ্যাঞ্জেলস্।
টোটেম হিসেবে ঘুরবে লাট্টু, হয়তো থেমেই থাকবে।
জানো তো, ‘আশ্চর্য দর্শন বহু আছে।’


•এই যে বোকাচোদা, তুই!•


আসো, তোমারে মিথ্যা বলতে শেখাই।
ছোটবেলায় তুমি যে হাওয়াই মিঠাই খাইতে খুব দৌড়াইতা,
সেইরকম গোলাপী আর নরম নরম মিথ্যা।
শুধু ‘আন্দাজে’ বইলা প্রশ্ন এড়ানো যায় না, সাথে অড়বরইয়ের মতো সবুজাভ কিছু মিথ্যা জুড়তে হয়।
এই ধরো, ফ্যান্টাপান-পরবর্তী আমার ঠোঁট যেমন কমলা, লঞ্চের দুলুনির লগে সন্ধ্যার ডুবন্ত সূর্যও নাকি তাই!
এইটা কেমন মিথ্যা?
মিথ্যারে তো হইতে হয় আরও সুন্দর।
চুমুর নোনতা স্বাদের সাথে সানের মিক্স মাসালা ফ্লেভার যেই মিথ্যার জন্ম দ্যায়, তা অনবদ্য।
মিথ্যা বললে, তুমি সাসপিশাস না বইলা তা বাংলায় বলতে পারো। এইটা সুন্দর।
বেশি মিথ্যা বলতে যাইও না, এতে তোমার গায়ের বাসক-বাসক ঘ্রাণ, সন্তর্পণে চইলা যাইতে থাকবে কিন্তু।
আবার তুমি চাইলে এইসব মিথ্যা-মিথ্যি রাইখা ছোট্ট একটা বাইট দিতে পারো হালকা কোনোকিছুতে।


•সান-ট্যুইস-থার্স•
(‘খাপড়া’ সম্পাদককে নিবেদিত)


তারে দেখতে থাকো, প্রিয় সাবান গলতে সময় নেয় যতটুকু।
তারে দেখতে থাকো, ফেস পাউডার তলানিতে পৌঁছোনো পর্যন্ত।
‘পরভৃৎ’ থেকে ‘পরভৃত’ হবার সময়কালটুকু তারে দ্যাখো।
‘পরিবর্তন চাই’ থেকে ‘পরিবর্তন সম্ভব’ এই বিশ্বাসের ভেতর তারে রাখো।
তুমি নিশ্চয়ই জানো, শুয়োরের প্রসববেদনা থাকে কতক্ষণ।
ঐটুকু সময় তারে দ্যাখো।
সূর্যের মধ্যে কালো-সাদা-লাল ছড়ায়ে তারে দ্যাখো।
যতক্ষণে তোমার বিড়ি ধরানো, টানা এবং ধোঁয়া ছাড়ারে মনে হবে ‘পিওর আর্ট’, ততক্ষণ অবধি দ্যাখো।
তোমার এখন আর ইউটিউব ঘেঁটে ‘সুফি হোয়ার্লিং’ দেখতে হয় না, তুমি তো শুনতে পাও তার স্বর!
কীভাবে তা ধীরলয়ে ঘুরে তোমার কাছে আসে।
তুমি দ্যাখো।
বাচ্চার হাতে বেলুনের অস্তিত্ব যতক্ষণ,
কিংবা বাবলওয়ান্ড থেকে ছোড়া বাবলের,
ততক্ষণ হলেও।
তারপর মিশায়ে দিতে পারো, ‘বাষ্পের সহিত বাতাসের মতো’।


•বাবল ইয়াম বাবল গাম কিংবা ডিড ইউ এভার নো?•


বইয়ের ফাঁকে লুকোনো লেবুপাতার ঘ্রাণ
আর ওভিডের ‘বিষাদ’ নিয়ে এসো।
‘এসো না বেরিয়ে গ্রহণমুক্ত তারার মতো
প্রগলভতার প্রলাপ যেথায় বিঘূর্ণিত।’
ভাল্লাগে না ভাল্লাগে না।
ভেতরে একটা প্রুফ্রক নিয়া ঘুরতেছি।
হ্যামলেট তো আমিও নই, তারপরও ক্যান?
খালি বাইজা যায় অর্কেস্ট্রায় সুর দ্রিমি দ্রিমি
আর অস্তিত্ব খোঁজে ম্যাপের কত ক্যাপিটালে!
পুরোনো বইতে হঠাৎ নিজের নাম লেখার মতো কিছুও তো আছে!
এডিবল জেলোর নরম স্বচ্ছ থিকনেস ঠোঁটে নিয়ে
তাকাও অ্যাডোনিস-চোখে, আর মনে করাও ‘অবিকল তার বাচনভঙ্গি নীরবতারই মতো’।
ওদিকে উদ্বাস্তুর ভীড়, এদিকে এসো।
নীল হুডিতে হাত রেখে শোনো স্যাফোর হুইস্পার।
গিটারে খাওয়া আঙুলে ওল্টাও ‘টুয়েন্টি লাভ পোয়েমস্ অ্যান্ড এ সং অব ডিসপেয়ার’ , ‘এ হাসি শুধু জন্মাতে পারে বনভূমি আর তুষার-ঝরা পাহাড়ের দারুণ উচ্চতায়।’
আমি, মতির মাকড়ি পাওয়ার উচ্ছ্বাস চোখে ধরে দেখি।
ও, মাই ওয়্যারহাউস আই’স!
ডু আই ডেয়ার? ডু আই ডেয়ার?
কেউ ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ শুনলে বালিয়াড়ির ওপর না হেঁটে বিড়বিড়িয়ে বলতে হয়—
Let us go then, you and I,
When the evening is spread out against the sky
Like a patient etherized upon a table;
Let us go, through certain half-deserted streets,
The muttering retreats
Of restless nights in one-night cheap hotels
And sawdust restaurants with oyster-shells:
Streets that follow like a tedious argument
Of insidious intent
To lead you to an overwhelming question …
Oh, do not ask, “What is it?”
Let us go and make our visit.৩


ইল্যুশন•


উপশহর, উপশহর!
নৈশ নাবিকের গান, ঘোড়সওয়ারের গান।
কান পাতলে শুনি Weialala leia, Wallala leialala…৪
সময় সেখানে আটকে আটকে থাকে।
আরও আছে কোচিং কিংবা ফিজিক্সের মতো ক্লিশে বিষয়।
মডেল মসজিদে ফোন হারানোর থ্রিল,
কাকের ফ্যালা মাংসের টুকরা, আর পরভৃত’র গলা।
ঘাসের ওপর হাঁটবার সময় বহুবার গিলে ফেলেছি এই শহর, থামতে পারিনি।
আপনারা চাইলে অবশ্যই জিম বিমের সাথে গিলবেন।
আর শুধু এখানেই পড়া যায়,
‘আহা, জিপসিদের শহর!
তোমাকে কি ভোলা সম্ভব?
আমার ভুরুতে আছো তুমি:
চাঁদ ও বালির যৌথ খেলা।’৫


টাইম আউট অব মাইন্ড


কোচিং থেকে ফেরার পথে আঁঠালো-অন্ধকার বাতাসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। শ্যাম্পুর বিলবোর্ডটা খুঁজছি, পাচ্ছি না। একটা অবয়ব। ও, ঘোলা চোখের ছেলেটা নুডুলস্ বানাচ্ছে (তার মানে রেলগেট পৌঁছেছি)। প্রতিদিনই দেখি। কত তার নাম!
নুডলস্, স্প্যাঘেটি, রামেন… একেকটার বৈশিষ্ট্য নাকি ভিন্ন। তোমারগুলো কী?
এরা তো কতকিছুই মেশায়।
সস, মেয়োনিজ, ভিনেগার… তোমারগুলো কীভাবে খায়?
ওরা কী আমার কাটা নখের চেয়েও স্বাদু?
ফর্কেরও অনেক ধরন আছে দেখি। তোমার ওগুলো কী দাঁত দিয়ে কাটে?
নুডলস প্রথমে কাঁটাচামচে পেঁচিয়ে তারপর খেতে হয়। আমার তো মনে হয় তোমার ওগুলো কাঁটাচামচে তুলতে চাইলে পুরোটাই উঠে আসবে!

এসব তো কখনও বলবে না, তারপরও তোমার এই টিকটিকির রক্তের টাইপরাইটার হাতে বসে আছি। খটখট করে লিখে যাচ্ছি। মরণ!

আচ্ছা, কেমন গন্ধ ওতে? জেন্টস শপের গুদামের মতো? কিংবা মরচের? হ্যাঁ, আমি তাই জানতাম। অ্যাদ্দিনে অবশ্য ভুলে যাবার কথা ছিলো, কিংবা ওগুলোও বদলাতে পারতো।

কী বললে? আমার কথাগুলো বুঝতে পারছো না? আমি তো এভাবেই বলতাম। তোমাকেই বা বলি কী, বাছবিচারের লেখা প’ড়ে সবার এই এক অবস্থা!

তবে আমি বুঝেছি, উত্তর দেবে না বলে এই বাহানা! বেশ।

আরক্ত চারকোল ঢেলে দিতে আসছি ওতে। যাক্ পুড়ে! মেলভিলকেও আর পাবে না তখন। দারুণ জমবে। লোরকার সবুজ চাঁদের নিচে লাল-হলুদ ‘কোল’সমেত ঝাঁকা। একজন, যে হয়তো ছিলো কিংবা আছে। আরেকজন যে কখনও ছিলো না।

আচ্ছা আচ্ছা। পুনঃশ্চমার্কা একটা জিনিস জুড়ে দিয়েই থামছি।

বলছি, এই টাইপরাইটারে আমি আর লিখছি না৷ এতদিনেও রক্তগুলো ঠিক জমাট বাঁধেনি। একটু জোর দিলেই মা’র বানানো পুডিংয়ের মতো অজান্তে ভেতরে হাত চলে যায়। গা ঘিনঘিন করে।


টীকাঃ

১. কালিদাসের মেঘদূত’র উত্তর মেঘের প্রথম শ্লোক দ্রষ্টব্য। উদ্ধৃত অংশটুকুর অর্থ:
‘“স্বচ্ছ ভূমিতল সজল মনে হয়, লেহন করে মেঘে তুঙ্গ চূড়া—
সৌধাবলি যেথা এ—সব লক্ষণে তোমারই অবিকল তুলনা।”
(বুদ্ধদেব বসু অনূদিত)
২. শার্ল বোদলেয়ারের ‘La Chevelure’. উদ্ধৃত অংশটুকু বুদ্ধদেব বসু অনূদিত ‘চুল’ থেকে নেয়া।
৩. ‘The Love Song of J. Alfred Prufrock’র প্রথম স্ট্যাঞ্জা।
৪. এলিয়টের ‘The Waste Land’ দ্রষ্টব্য। This is an allusion to a myth where a gnome gives up love to steal money from the nymphs; the nymphs sing the song when they discover they have lost their money.
৫. সাজ্জাদ শরিফ অনূদিত লোরকা’র ‘Romance de la Guardia Civil Española’, বা ‘Ballad of the Spanish Civil Guard’র শেষ ভার্স।


কবি-পরিচিতিঃ

হাসিন এহ্সাস লগ্ন’র জন্ম পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে, ২০০৬’র মার্চে। কলেজপড়ুয়া। আগ্রহের বিষয় কবিতা, গান, পুরাণ আর প্রত্নতত্ত্ব। ভালো লাগে ভাবতে।

শেয়ার