কে যেন বাবল ফোলায় ইস্কাটনে
হয়তো আশার কথা—আসছো জানি
পুরনো ছাদের বাসা চোঁয়ায় পানি।
এদিকে যাচ্ছে ভিজে মেঝের সমান
আমারো থাকল কিছু রোমান হরফ।
কলোনি—শিস বাজাচ্ছে গাছের শাখা
যা কিছু ছিল না তা রাখার কথা।
ধরবে স্মৃতি হাতে—সন্ধ্যা ঘনায়
ব্যাঙেরা গান বেঁধেছে; শোনায় এখন।
আকাশে তারারা সব রাখছে নজর
এভাবে আসছে ভেসে ফজর আজান।
সকালে ডাকছো যদি, আসবো কি না
ঘুমিয়ে কাটল দুপুর—বিকেল টানা।
চাইছি আবছাভাবে অন্য হাঁটা
রাখছে কেউ কি খুলে সব জানালা?
সেখানে দৃশ্য দাঁড়ায় অন্য মানে
কে যেন বাবল ফোলায় ইস্কাটনে।
যেভাবে রাত নেমে আসে গ্রামে
নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সব গ্রামেই
একটা মীরাবাড়ি থাকে
যে বাড়ির পেছনে
গাছের দঙ্গল ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে থাকে
একা, আচানক তেঁতুলগাছ।
গাছটার শরীর ঘেঁষে বসা গোলাকার পুকুরের
কোমর ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়ে
কয়েকটা শেকড়।
প্রতি সন্ধ্যায়
সেইসব অজগর শেকড়ের পেটে
আলগা হয়ে ঝুঁকে
ওজু করেন
কোনো এক আয়নাল মীর।
এরপর ধীর পায়ে ক্রমে তিনি যান
বাড়ির দরজায়। মসজিদের পাশে দাঁড়ান।
ফলে তার কণ্ঠে বেজে ওঠে মাগরিবের আজান।
আর সেই রাতের ঘোষণা শুনে
আকাশে আসেন ভগ্নস্বাস্থ্য চাঁদ,
গ্রামের দিকে অন্ধকার আসে তেড়ে।
মাঠে খেলতে যাওয়া বাচ্চাকাচ্চারা
সন্ধ্যা নিয়ে লোফালুফি করতে করতে ফেরে বাড়ি।
অরণ্যস্বভাব
সন্ধ্যার মন্থর আলো নদীতে ভাসতে থাকবে। ক্রমে এ মানবশরীর রূপান্তরিত হবে রাতে। মিশে যাবে চেনা কুয়াশায়। দূর থেকে বাসের গর্জন শোনা যাবে। যেন কাছেই লোকালয়। হাইওয়ে। অথচ মনে হবে পৃথিবী তো চিরকাল জনহীন ছিল। ছুটে চলা গাড়ির ধাতব ইঞ্জিন যে শব্দ করে, বনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা পাবে অরণ্যস্বভাব, যেন শিকারকে লক্ষ্য করে ছুটে যাওয়ার কালে কোনো অদেখা পশুর কেশর বেজে চলছে বাতাসে। এসবের মধ্যে বসে কিছুটা ভয় আর তন্দ্রাভাব নিয়ে নিজের ভেতরে তাকিয়ে বলব, চাই। বৃষ্টি নেমে আসবে সহসাই!
কথা বলো তার সাথে
নোঙর করে রাখা একা এক বালুর জাহাজ
কী প্রত্যাশা করে তোমার কাছে;
সন্ধ্যায়—
যখন নদীতে হাহাকারের মতো কুয়াশা নেমে আসে।
একটা গাঙচিল ডানা না ভিজিয়েই
নদীর পানি ঘেঁষে
ঠিক সমান্তরালভাবে উড়ে যায়।
অথবা সে যায় না কোথাও,
ফিরে আসে।
যখন মাগরিবের আজানকেও
মুয়াজ্জিনের নিরুপায় কান্নাধ্বনি মনে হয়।
বিদ্যুতের সুইচ টিপে হতাশ হয়ে
কাঁপা কাঁপা হাতে মোম ধরায় আমাদের মা।
এক বন্ধুর নির্জন সেলুনে বসে
পুরোনো পত্রিকা পড়ে
গ্র্যাজুয়েট বেকার বন্ধুটা।
পেটে প্রেমিকের অযাচিত ভ্রূণ নিয়ে
তোমার পছন্দ যখন
বর্ষাকবলিত চোখে
ছাদে বসে গোপন সুরাহা খোঁজে।
তখন তুমি যাও,
গিয়ে বসো ওই বালুর জাহাজে
পা ঠুকে ঠুকে মৃদু, কথা বলো তার সাথে।
সে চায় তোমাকে
পাড়ের প্রসঙ্গে শোনাতে।
দূর পৃথিবী
তার কী জানি কিসের লাভা
তার কোথায় হঠাৎ ফাঁকা—
কখনো কাচের, হালকা আঁচে
কিংবা তরল আকার।
তিনি এই তো দ্বিধা, চড়াই বাধা
রাধার পথে যেতেন।
সকাল যখন, শান্ত ছিল
দুপুর রোদে তেতে—
ধরলে আগুন, বলছে জাগুন
নিজেই নিজের কানে—
ভাঙা টুকরা করছে জড়ো
ছড়ানো সবখানের।
সাতটা মেলে, আধটা পেলে
তিনটা গেলো খোয়া—
নিজের শাখা টান দিয়ে ঠিক
নিজেই তিনি নোয়ান।
এই তো দাঁড়ান, সেই তো বসেন
উড়িয়ে দিলেন ফুঁয়ে
চোখ রেখেছেন দূর পৃথিবী
হেলান দিয়ে শুয়ে।
কবি পরিচিতি
জন্ম: কৃষ্ণকাঠী, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।
প্রকাশিত বই:
মেঘ সামান্য হাসো (ঐতিহ্য, ২০১৫), পুষ্প আপনার জন্য ফোটে (বৈভব, ২০২০), আকাশ চাপা পড়ে মরে যেতে পারি (বাতিঘর, ২০২০), একটা ভয়কে ডর দেখাচ্ছে অন্য একটা ভয় (ঐতিহ্য, ২০২২), আমার বিনাশ (বৈতরণী, ২০২৩)।