ব্যাঙ্কসির এই ইন্টারভিউটা পাবলিশ হয় দ্য গার্ডিয়ানে, ২০০৩-এ। দাবী করা হয় এইটাই ব্যাঙ্কসির প্রথম ইন্টারভিউ। আর যেহেতু ব্যাঙ্কসির তাই রেয়ারতো বটেই। তবে এই ইন্টারভিউ আদৌ ব্যাঙ্কসির কিনা আমরা নিশ্চিত নই, তাই এখানে যা যা জানবো, তাও সত্য কিনা নিশ্চিত নই। এমন কি এই প্রশ্নও যদি কেউ করেন; ব্যাঙ্কসি কী আসলেই আছে? প্রশ্নটা অযথা হবে না। আসলেই তো, ব্যাঙ্কসি যদি থেকে থাকে, তাহলে ইংল্যান্ডের মতন ওরকম একটা ওয়েল সিকিউরড, সিসিটিভিময় দেশে ব্যাঙ্কসির আত্মগোপন কীভাবে ঘটতেছে? নাকি সবটাই প্লট; কারণ ব্যাঙ্কসি আবিষ্কার হয়ে গেলে, আর যাই হোক তার গ্রাফিতির এই রমরমা বাজার তো আর বহাল তবিয়তে থাকবে না, না?
যাই হোক; ব্যাঙ্কসি বরাবরই ইন্টারেস্টিং, তার গ্রাফিতিও। ইন্টারেস্টিং ব্যাঙ্কসির ইন্টারেস্টিং এই ইন্টারভিউটা নেন সাইমন হ্যাটেনস্টোন। অনুবাদ করেছেন সুবর্না ধর। তাকে ধন্যবাদ।
ব্যাঙ্কসি যেকোন সময় হাজির হতে পারেন। সমস্যা একটাই, সে দেখতে কেমন জানি না। শুধু আমি না, এখানে কেউই বোধহয় জানে না। কিন্তু সবাই তাকে জানে। মানে তার সম্পর্কে জানে ।
লন্ডনের পূর্ব প্রান্তের শোর্ডিচ’র একটা হাল-ফ্যাশনের পাবে বসে আছি ব্যাঙ্কসি’র অপেক্ষায়। পাবের বারম্যানকে ব্যাঙ্কসির কথা জিজ্ঞেস করলাম; সে ফিসফিস করে বলল “হ্যাঁ, ‘ব্যাঙ্কসিকে চিনি তো’, না, আসলে চিনতাম, বলতে পারেন। আমিও ব্রিস্টলের, গ্রাফিতিও করতাম একসময়।”
উনি কি পাবে আছেন এখন?
সে দ্বিধাগ্রস্তভাবে মাথা নাড়ে। ব্যাঙ্কসিকে চিনতে পারবে কি না জানে না সে, আবার চিনতে পারলেও সে নিজেই সমস্যায় পড়ে যাবে বলে মনে করে।
বললাম, আমি তার একটা ইন্টারভিউ নিতে এসেছি জাস্ট।
সে বিশ্বাস করে না বরং বেশ প্রত্যয়ের সাথে বলে, ‘ব্যাঙ্কসি কখনো কাউকে ইন্টারভিউ দেয় না’।
কিন্তু এবার সে সত্যিই রাজী হয়েছে। তবে ছবি তুলতে রাজী হয় নাই…
ব্যাঙ্কসি, ব্রিটেনের সবচেয়ে সেলিব্রেটি গ্রাফিতি আর্টিস্ট। তার পরিচয় গোপন রাখা প্রয়োজন কারণ গ্রাফিতি অবৈধ। যেদিন তার পরিচয় জানাজানি হয়ে যাবে সেদিন হয়তো তার গ্রাফিতিরও শেষ।
ওর সাদা-কালো স্টেন্সিলগুলো বেশ সুন্দর, মজার আর পোলাইট তবে বিধ্বংসী; যেমন পুলিশের হাসিমুখ, ড্রিল মেশিন হাতে ইঁদুর, যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে বানর, আদর করে মিসাইল জড়িয়ে ধরা ছোট্ট মেয়েটা, পাল্প ফিকশনে স্যামুয়েল জ্যাক্সন আর জন ট্রাভল্টার গুলির পরিবর্তে কলা ছুড়ে দেয়া কিংবা দেয়ালে দেয়ালে ‘এনার্কি’ নিয়ে করা কাজগুলো।
ও কাজগুলোয় সাইনও করে বেশ গাঁট্টাগোট্টা আর ঘুরানো-পেছানো টাইপের। কখনো একইরকম গাঁট্টাগোট্টা টাইপে শুধু শব্দ বা আবার কখনো প্রশংসার ছলে নিন্দা বা সাধারণ কোন বক্তব্য কিংবা উস্কানিমূলক মন্তব্য লিখে রাখে। তবে, প্রায়ই তার বিভিন্ন গ্রাফিতিতে ‘ দিস ইস নট অ্যা ফটো অপর্চুনিটি’(ছবি তোলার জন্য নয়’) এ লেখাটা থাকে। অনেক বড় বড় বিল্ডিং-এ দেয়ালে গিয়ে “ন্যাশ্যানাল হাইওয়ে এজেন্সির আদেশ অনুযায়ী এই দেয়ালটি গ্রাফিতির জন্য মনোনীত ঘোষণা করা হলো” এমন লিখে দিয়ে আসে। (আর ক‘দিন পর দেখা যায় আসলেই লোকজন বাধ্য নাগরিকের মতো দেয়ালটি নানান লেখা-আকাঁয় ভরে তুলে)।
সম্প্রতি, ব্যাঙ্কসি তার কাজের পরিসর বাড়াচ্ছে, ব্লার এলব্যাম, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’এর কাভার ডিজাইন করেছে, আগামীকাল ব্রিটেনে তার প্রথম গ্যালারি শো ‘টার্ফ ওয়ার’ এর উদ্বোধন হবে। আবার কিছু কিছু কাজে কমার্সিয়াল, আর স্ট্রিট ওয়ার্ল্ডের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টাও করেছে।
ওর কাজে আসক্ত হয়ে পড়া খুব সহজ। আমি শুরুর দিকে ব্যাঙ্কসি’র কিছু কাজ দেখার পর আরও আরও খুঁজতেছিলাম। সরু অলিগলিতে হঠাৎ তার কোন কাজ গোপনে উঁকি দিচ্ছে দেখলে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না। গ্রাফিতিগুলো দেখে কখনো মনে হয় খুব ব্যক্তিগত, যেন আমার জন্যই করা, আমার কথাই বলছে। আবার কখনো একই কাজটাই মনে হয় একদম পাব্লিক, সবার জন্য ব্যাঙ্কসি’র উপহার। কাজগুলো হাসায়, সম্মিলিত স্বপ্নের কথা বলে আবার সার্বজনীন মালিকানার সম্ভাব্যতা নিয়ে আশাবাদী করে তোলে।
ব্যাঙ্কসি ট্রেইলে ওর অনেক ভক্তের সাথে পরিচয় হয়েছে। ওরা আমাকে বলেছে, ব্যাঙ্কসি কিভাবে গোপনে রাতের আঁধারে গ্রাফিতি করে যায়, এ সময় নিজেকে কিভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখে, একটা গুদামঘরে তার প্রথম প্রদর্শনী কিভাবে আয়োজন করা হয়েছে, সবকিছু। আবার সেই গুদামঘরের ঠিকানাও কারো জানা নাই কেবল ৪৭৫ নম্বর দেয়া আছে কিন্তু তা কোন রোডের তা বলা নেই কোথাও। ব্যাঙ্কসি পুরা শহর তার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে, পুনরুদ্ধার করেছে আর দিনশেষে তার ভক্তরা মনের মত একটা শহর পেয়েছে।
এখনো তার দেখা নাই। স্টিভ, মানে ব্যাঙ্কসি’র এজেন্ট’কে ফোন করার জন্য রাস্তার দিকে গেলাম। ফোনে স্টিভ ব্রিস্টলের চিরাচরিত গমগমে স্বরে বলল ‘এখনই নিয়ে আসছি ওকে’। আমার কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো, ফোনের অপরপ্রান্তে ব্যাঙ্কসি’র উপস্থিতি ফিল করতে পারছি মনে হচ্ছে। প্রায় ৪০ গজ দূরে একটা লোক ফোনে কথা বলছে দেখলাম। স্টিভকে আমার ঠিক এজেন্টের মতো মনে হয় না। সেও নিজেকে ব্যাঙ্কসির বন্ধু বলে পরিচয় দেয় আর ওর ছবি তোলে।
প্রায় দুইমিনিট পর ওরা পাবে আসলো। ব্যাঙ্কসিকে দেখি, ২৮ বছরের যুবক, পরনে ক্যাজুয়াল জিন্স, টি-শার্ট, একটা দাঁত রূপার, গলায় রূপার চেইন আর কানে রূপার দুল। সিগারেট খেতে পারবে কিনা জানতে চাইলো আর এক পাইট জিন অর্ডার করলো। ও কিছু একটা ভাবছে মনে হচ্ছে। ওর গ্রাফিতি’র একটা অংশ মাইকেল মুর-এর স্টুপিড হোয়াইট ম্যান (সিস্টেম কিভাবে পালটানো যায় এর উপর লেখা বহুল প্রচারিত বই) ‘এর বিজ্ঞাপনে ছাপা হয়েছে বলল।
“মাইকেল মুর, একজন কর্পোরেট যে আমাকে শেষ করে দিয়েছে, আমার ছবিগুলো নষ্ট করেছে । পুরা পৃথিবীটাই ভীষণরকম অসুস্থ।“
যদিও এভাবে বলল, তবে আমার মনে হচ্ছিল ওর আসলে আইডিয়াটা পছন্দ হয়েছে।
ব্যাঙ্কসি স্কুল থেকে (১৩-১৪ বছর বয়স) থেকে গ্রাফিতি করা শুরু করে। স্কুলে কেউ কখনো তাকে বুঝতে পারেনি। যথারীতি অনেক সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে তাকে। এমনকি স্কুল থেকে বহিষ্কারও করেছে কয়েকবার। প্রায়ই, ছোট ছোট অপরাধের জন্য জেল-জরিমানা হয়েছে।
এটুকুই বললেন। আর বেশি বলতে চাইলেন না মনে হলো।
গ্রাফিতি করতে ভালো লাগে ওর। গ্রাফিতি তাকে নিজের একটা ভয়েস, অবস্থান দেয় বলে মনে হয় তার। সেই সাথে ব্রিস্টলের সংস্কৃতিতে গ্রাফিতির সমৃদ্ধশালী অবস্থান তো আছেই।
“তবে আমি স্প্রে ক্যান ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারতাম না তাই এর বদলে স্টেন্সিল কাটা শুরু করেছিলাম।“
হুম, আমিও একসময় রাস্তার পাশে কয়েকজনের নাম গ্রাফিতি করেছিলাম।
ও বললো,“এটাই গ্রাফিতির মূল, অবস্থান তৈরি করা।“
আমি খুব গিলটি ফিল করি। অবশ্য সেটা আইন ভাঙ্গার জন্য না। বরং রাস্তার পাশে ডুলাক্সড নামের ছেলেটার উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এক ক্যান পেইন্ট শেষ করেছিলাম, তাই আফসোস হয়।
“হুম, এই পুরা ব্যাপারাটাই আসলে প্রতিশোধের” বলল।
“জাস্ট ট্যাগ করাটাও কিন্তু প্রতিশোধের। আপনি যদি ট্রেন কোম্পানির মালিক হতে না পারেন তাহলে পুরো ট্রেনটা পেইন্ট করে নিজের করে নিলেন। আর এসব কিন্তু স্কুল থেকে শেখা, স্কুলে আমরা যেকোন জিনিসের উপর নিজের নাম লিখে রাখি, মালিকানা ঘোষণা করি। ঠিক সেরকম শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজের নাম লিখে পুরা শহরটাই নিজের করে নিতে পারে যে কেউ।”
কথা বলতে বলতে একসময় মনে হলো, আমার সামনে বসে থাকা এই লোক হয়তো ব্যাঙ্কসি না। জানতে চাইলাম, ‘কিভাবে বুঝবো আপনিই ব্যাঙ্কসি?’
ও বেশ জোর দিয়ে বলল, “যাই হোক না কেন, এর কোন গ্যারান্টি নেই কিন্তু।“
তবে তাকে নিজের কাজের প্রতি খুব সংবেদনশীল মনে হয়। ওর আসল নাম কি?
“যা! আমার সাথে মজা করছে না তো।“
ও কি নিজেকে আর্টিস্ট মনে করে?
“জানি না। অইদিনও এ নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি ইদানিং ভ্যান্ডালিজম শব্দটা বিভিন্ন শো’তে ইউজ করছি। নিশ্চয় জানেন, হিপ-হপ ‘নিগার’ শব্দটার সাথে কি করেছিল, আমি ভ্যান্ডালিজম শব্দটা নিয়েও একই কাজ করতে চাইছি। শব্দটা ফিরিয়ে আনতে চাইছি”।
সেও ঠিক ভ্যান্ডালিজম শব্দটার মতো ।
ব্র্যান্ডিং নিয়ে ব্যাঙ্কসি’র আচার-আচরণ পুরাই বিপরীত। নাওমি ক্লেইন-এর মতো তিনিও কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং-এর বিরোধিতা করেন আর ধীরে ধীরে নিজেই নিজের ব্র্যান্ড হয়ে গেলেন। এখন ব্ল্যাক মার্কেটে ব্যাঙ্কসি’র জাল কাজ বা স্টেন্সিল কিট বিক্রি হয় যাতে করে লোকে নিজেরাই ব্যাঙ্কসি বানায় নিতে পারে।
সে কি এই কাটা-ছেঁড়ায় মাইন্ড করে?
বলল, ‘না’।
“আসলে আমি প্রায় তিন বছর ধরে নানান বেআইনি কাজে জড়িত ছিলাম। ফলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অবস্থাটা ছিলো না।“
“ব্লার’এর সাথে কাজ করতে গিয়ে বেশ অদ্ভুত লেগেছিল। যদিও এর আগেও ব্লারের সাথে প্রায় ডজন খানেক শো’এর কাজ করেছি।“
এই কথাগুলো ওদের বলেছিল?
“কাজটা শুরু করার আগ পর্যন্ত বলিনি। আমি কখনো ব্লার গিগের ভেতরে যাইনি। কারণ পুরো সময়টা আমি আর পাঁচজন ভ্যাগাবন্ডসহ কার পার্কে পোস্টার আর টি-শার্ট নিয়ে মেতে ছিলাম“।
“সেকারণেই কাজটা নিয়েছিলাম। আর যা আয় করেছি সব আমার নতুন প্রজেক্ট (BOGOF) ভাস্কর্যে খরচ করি। ওইটা ছিলো অনেকটা Tesco’র একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি’ অফারের মতো। তখন আমি প্রত্যেকটা ভাস্কর্যই দুইটা করে বানাচ্ছিলাম। একটা যদি বিক্রি করতে পারি, তাহলে অইটার মত আরেকটা শহরের কোথাও রেখে দিয়ে আসি, ফ্রিতেই। অই প্রজেক্টের প্রথমটা, যেটা আজকে ইনস্টল করবো, অইটা রঁদ্যা’র ’দ্যা থিংকার’; বেশ বড়। ব্রোঞ্জ দিয়ে করা। মাথায় ব্রোঞ্জের ‘ট্রাফিক কোন’ (মেরামত এর কাজ চললে যেগুলো রাস্তায় সতর্কতার জন্য রাখা হয়; চোঙা টাইপের )।
ওর আর্টের অন্য একটা দিক নিয়েও খুব আগ্রহ আছে বলল। সেটা হলো দক্ষতা।
“শুধু শুধু বছরের পর বছর একটা ভাস্কর্যের পেছনে সময় দেয়ার কি আছে ! যেখানে কেউ চাইলেই একটা ক্ল্যাসিক ভাস্কর্যের মাথায় একটা ‘ট্রাফিক কোন’ বসিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু করে ফেলতে পারছে!”
“রাস্তার উপর কোন একটা ভাস্কর্য থাকলে, কেউ প্রত্যেকদিন যাওয়া আসা করলেও অইটা তার হয়তো চোখেও পড়বে না। কিন্তু আপনি যখন অই ভাস্কর্যের মাথায় একটা ‘ট্রাফিক কোন’ বসায় দিবেন, তখন অই ভাস্কর্যটা বদলায় যায়। অইটা হয়ে যায় আপনার। দেখা যাবে অইটা তখন সহজে সবার চোখে পড়তেছে।“
হাসতে হাসতে বলল, “ আসল কথা হলো, একটা ছবি দেখতে যতটা সময় লাগে, বানাতে যেন তার চেয়ে কম সময় লাগে।“
জানি না ও সত্যিই এটা বিশ্বাস করে কিনা।
সত্যিই কি তার প্রিন্টগুলোর দাম ১০ হাজার ইউরোর বেশি?
“ও মনে হয় নিশ্চিত করে বলতে পারবে না কারণ সে সরাসরি এসব ডিল করে না। তবে হ্যাঁ, এগুলোর দাম অনেক বেশি।”
আচ্ছা, ও সুইস নিউইয়র্ক হোটেল ডিজাইন করেছিল, এই ব্যাপারটা কী?
“হুম, আমি নিউ ইয়র্ক শহরে একটা হোটেল পেইন্ট করেছিলাম। কিন্তু সেটা বেশ সস্তা একটা হোটেল – এক রাতের ভাড়া মাত্র ৬৮ ডলার। অই হোটেলের প্রত্যেক রুম ভিন্ন ভিন্ন আর্টিস্ট পেইন্ট করেছিলেন। আর যিনি পেইন্ট করেন তিনি ফ্রিতে থাকতে পারতেন।“
গত কয়েক বছরে অনেক ব্র্যান্ড তাকে বিজ্ঞাপনের ক্যাম্পেইন করতে বলেছে আর ও সবগুলোকেই না করে দিয়েছিল। কোন বিশেষ নীতিবোধ থেকে এরকম করেছিলা কী?
“হ্যাঁ, আমি এখন পর্যন্ত নাইকি’র চারটা চাকরির অফার না করে দিয়েছি। ওদের প্রায় প্রত্যেকটি নতুন ক্যাম্পেইনেই কিছু করার জন্য আমাকে বলে। আমি এর একটাও করিনি। আর যেসব কাজ করি নাই তার লিস্ট, যা করেছি তার চেয়ে বড়। এটা উল্টা সিভি, একটু উইয়ার্ড যদিও। নাইকি আমাকে যে টাকা অফার করেছিল, তা অনেক; চিন্তার বাইরে।“
এত টাকা!
খানিকটা লাজুকভাবে বলল, “হুম, অনেক টাকা!”
এ অফারগুলো নাও নাই কেন?
“কারণ আমার টাকার দরকার ছিলো না। শিশুরা কোন কারণ ছাড়া অমানুষিক পরিশ্রম করে তা আমার পছন্দ না। ‘সেদিন আমার এগার বছরের মেয়ে আমার কাছে এক জোড়া স্পোর্টস শু চাইলো, আমি বললাম, তোমার বয়স এখন এগার, তুমি নিজেই বানিয়ে নাও’- জেরেমি হার্ডি’র এই লাইনটা আমার খুব পছন্দের। যদি সম্ভব হয় অপ্রয়োজনীয় সবকিছুই আমি এড়িয়ে চলতে চাই।”
জানতে চাইলাম, ভালো গ্রাফিতি আর্টিস্ট হওয়ার জন্য কী চালু হতে হয়?
“হ্যাঁ, এটা জব ডেসক্রিপশনের অংশ বলা যায়। বেকুব হলে তো ধরা পড়ে যাবো। কেউ চাইলেই তো আর এটা সেটা এনে আর্ট করে ফেলতে পারে না। দিনশেষে এটা নিয়ে কথা উঠবেই। কারণ আপনি হয়তো আমার সব আজাইরা কাজ টেট মর্ডানে জড়ো করলেন। শুধু তাই না, টনি ব্লেয়ার আর কেট মসকে দিয়ে উদ্বোধন করালেন, কেক পেস্ট্রি বিলালেন, তাতে আসলে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। কারণ আপনিই আবার বাইরে কোথাও বিশাল একটা কিছু পেইন্ট করলেন। তবে, সেটা এমন একটা জায়গায় করলেন যেখানে করা উচিতই হয় নাই। সব শেষ করে ঘরে গিয়ে সোফায় বসে যখন জিরাবেন, তখন আপনার মনে হতে পারে এইসব চালাকি কেউ ধরতে পারবে না। আপনার এ ফিলিংসটা খুব চমৎকার, হয়তো সেক্স বা নেশার চাইতেও ভালো। তবে কথা কিন্তু উঠবেই।“
এরপর ও গ্ল্যাস্টনবুরি’তে যে মজার ঘটনা ঘটেছে সেটা বলা শুরু করল।
“সেদিন পুলিশ খুব রিল্যাক্স মুডে ছিল, আর ল্যান্ড রোভার্স চালাচ্ছিল। দেখলাম আমাদের একটু দূরে দুইটা ল্যান্ড রোভার্স পার্ক করা আছে। পুলিশগুলো গাড়ির একটু দূরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মেয়ের সাথে গল্প করছে। আমার কাছে পেইন্টের একটা ক্যান ছিলো। আমি একটা গাড়ির পাশ দিয়ে জাস্ট হেঁটে গেলাম আর ক্যানটা আমার এক বন্ধুকে দিয়ে দিলাম। সেই বন্ধুটি অন্য একটি গাড়ির পাশে ‘ হ্যাশ ফর ক্যাশ’ লিখে দিল। এভাবে অই রাতে আমরা পুলিশের সাতটা গাড়িতে নানান কিছু লিখে দিয়েছিলাম।”
বলল, সে আগে অনেকবার গ্রাফিতি করার জন্য এরেস্ট হয়েছিল । সাম্প্রতিক সময়ে আর হন নাই। তবে, ব্যাঙ্কসি হিসেবে কখনোই এরেস্ট হন নাই।
গ্যালারিতে এক্সিবিশনের সিদ্ধান্ত কী কঠিন ছিলো?
“না, – প্রথমত, এটা তেমন হাই-প্রোফাইল কিছু না। পুরোনো গুদামঘরে আয়োজন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ফর্মাল কোন স্পেস ছাড়া জীবন্ত ভেড়া, শুকুর, গরু এসব কিভাবে এক্সিবিট করবে, তাই এই ব্যবস্থা।“
আসলে গ্রাফিতি মানেই তো অবৈধ কিছু বোঝায়।
“অনেক কাউন্সিলরই যেকোন আপত্তিকর গ্রাফিতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুছে ফেলা তাদের দায়িত্ব মনে করে। যেকোন বর্ণবাদী, যৌনতাবাদী বা সমকামী গ্রাফিতির ক্ষেত্রে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিম পাঠিয়ে দেয়।“
“কিন্তু কেন জানি, একই কাজ গ্যালারিতে যখন ‘আর্ট’ হিসেবে ঝুলানো যায় তখন তা আর এতো কঠোর বাউন্ডারি দিয়ে মাপা হয় না।“
এরপর ও ইহুদি নারীর স্টেন্সিল- ফ্লুরুসেন্ট লিপস্টিক দেয়া সেই ভয়ঙ্কর-মজার ছবিটা নিয়ে বলতে শুরু করল ।
“এ কাজটা এতোই আপত্তিকর যে কোনভাবেই আমি সেটা রাস্তায় করতে পারতাম না।“
তবে, কোন একটা কন্টেক্সটে ফেলে সহজেই গ্যালারিতে এইটা শো করা যায়।
“এইটা মূলত একজন কর্নেল যিনি বার্জেন-বেলসন’কে স্বাধীন করেছিলেন তার ডায়েরি থেকে নেয়া। উনি কিভাবে ক্যাম্প থেকে নারীদের উদ্ধার করেছিলেন সেটা ডায়েরিতে লেখা ছিলো। পরে ওনাকে ক্যাম্প থেকে একটা বক্স পাঠায়। দেখা যায় অই বক্সভর্তি ৪০০টা লিপস্টিক। উনি খুব অবাক, বুঝতেছিলেন না সৈন্যরা ওনাকে লিপস্টিক কেন পাঠাবে ? উনি পরে সেগুলো মেয়েগুলোকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওরা খুব সেজেছিল লিপস্টিকগুলো পেয়ে; একজন আরেকজনকে লিপস্টিক দিয়ে দিচ্ছিল, চুল বেঁধে দিচ্ছিল। এই ছোট্ট জিনিসটা তাদের কাছে অনেকটা বাঁচার প্রেরণার মতো। হয়তো সৈন্যরা এই একটাই ভালো কাজ করেছিল তাদের জন্য”।
খুব সুন্দর করে গল্পটা বলছিল…
“এই ঘটনার সাথে মিলিয়ে দেখা যায়, একটা পেইন্ট ক্যানও কত রকম পরিবর্তন আনতে পারে”।
ও কি নিজেকে আর্ট এস্টাবলিশমেন্টের একজন মনে করে?
“ জানি না। আমার খুব খারাপ কাজগুলোও চার্লস সাৎসিকে ( গ্যালারির মালিক) বিক্রি করবো না। যদি আমি ৫০০০ বই (এখন পর্যন্ত, ওর ‘এক্সিস্টেনশিয়ালিজম’ এবং ‘ব্যাংগিং ইয়ুর হেড এগেন্সট অ্যা ব্রিক ওয়াল’ এ দুইটা বই পাবলিশ হয়েছে) আর অনেক স্ক্রিনপ্রিন্টও বিক্রি করি, আর অই একজন লোক এসে আমাকে ‘আর্টিস্ট’ বানায় দিবে! আমার এইরকম আর্টিস্ট হওয়ার কোনো দরকার নাই। অবশ্য অই বাটপার ছাড়া যদি অন্য লোকজন কিনে তাহলে অন্য কথা। তবে, আমি আমার জানামতে কখনো কিছু বিক্রি করি নাই।“
আবার শো’র উদ্বোধনী রাতের কথা বলা শুরু করল, বেশ এক্সাইটেড দেখাল তাকে।
“আমার ভেতরের আরেকটা আমি আসলে ওখানে যেতে চাইছিল, এতো সুন্দর সেট-আপ করেছিলাম, দেখার ইচ্ছে ছিলো, খুব।“
তবে সেটা বেশি রিস্কি হয়ে যেতো, বলল।
ওর বাবা-মা কী ছিলো সেখানে? মাথা নেড়ে ‘না’ বলল।
“না ওনারা এখনো বুঝে উঠতে পারেন না কি করবেন।“
আসলেই, আমার মনে হয়, ওনাদের ধারণা নাই আপনি কতটা সফল।
“না”, খুব নরম গলায় বললেন, “ওনারা মনে করেন আমি পেইন্টার আর ডেকোরেটর।”