অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে নকিব মুকশি’র পঞ্চম কবিতার বই ‘পৃথিবী এক সারোগেট মাদার’। এই বইয়ের নির্বাচিত কয়েকটি কবিতা শিরিষের ডালপালার পাঠকদের জন্যে তোলা রইলো। বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য।
প্রচ্ছদশিল্পীঃ ধ্রুব এষ
পৃথিবী এক সারোগেট মাদার
১.
বিদ্যাসাগর ছিলেন চমৎকার এক শকুন, ধ্যানস্থ ন্যাপকিন…
পুষি তাই হৃদয়ে
শকুন
ন্যাপকিন
স্যানিটাইজার
হেরা গুহার ঋষি…
পকেটে অনেকগুলো তাস, তাই মানুষ নবি, মানুষ হিটলার…
৩.
ফুলের ক্যাবিনেট—সে তো মালার সুতা, ভ্রমরকুঞ্জ
কোথায় পাবি বল
মান্দারিন হাঁসের গলায় এঁটেছে ন্যাটো, ওয়াগনার…
কীভাবে নামাবি
কীভাবে পালাবি
জি-সেভেনের ডাইনিংরুম থেকে জরায়ু সকল?
জিব, দেশে দেশে কার্যকর ডানার মতো নির্ভার হ
চিরতরুণ আমাজন হ, চৌকস ফরেস্টার মনীষা হ
দেখিস, সবুজে সবুজে ভরে যাবে বুকের উইন্টার
৫.
হেলানো দরোজায় সিংহখোদিত কূটনৈতিক কৌশল—
ঢুকে পড়ে সুতাসাপটি—ছুটছে তারা জেলের দিকে…
ওদিকেই তারা টেনে নেয় সারসের পালক, কার্পাস…
যেমনি গলিতে গলিতে পা বাঁধা মোরগ নিয়ে হকার…
তেমনি টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় শিলামণ্ডলের তাপ,
জেব্রা ও জিরাফের পাল কুমকুম গরাদের ভিতর…
পিতাকে দেখা যায় নটেশাকের বনে, ধস্ত মেথির গন্ধে
তামাম কবিরাজ দিয়ে দুধের গুণ মাখে, অবিরাম দেহে
হরিণীর দৌড় নিয়ে যে জীবন বয়ে যায় শহরের নবনীতা,
সেখানে আমিও মাপি বেলাজ শির ও ধস্ত ঘাসের ফিতা!
মীনাভিধান ঘাঁটতে ঘাঁটতে মানুষের চামড়ায় ফোটে
গতিবিদ্যার সমূহ পাঠ-বোবা কুঁড়ির উন্মুখ বয়ান…
রাজাসন, তোরণে থাকে খোদাই করে আঁকা সিংহ—
তবে রাজাদের হৃদয়ে থাকে আসল সিংহের দাঁত
জনসাধারণের দিকে, ঘাসদের দিকে, জুতাদের দিকে…
৯.
মোষের দুধের মতো হৃদয়শোভা থেকে
সাদা সাদা স্বপ্নেরা পাল তোলে উদ্দাম
সংহত উজানে
আমি হতে চাই—
সেই পাল তোলা নাওয়ের দক্ষ মাঝি
তিমির দুধের নহরে
স্নান করে স্বপ্ন দেখি—দরজাগুলো খুলি
মহাপথগুলো সব গোল গোল অক্ষ—
পর্যায়বৃত্ত দোল—জন্ম-মৃত্যুর মহারথ,
আমাদের হৃদয় হোক ইন্টারপোল!
১১.
এ দুনিয়ায়
চিরকাল
মাছির মতোই
বিরক্তিকর
রাষ্ট্রীয়
কসবি—বিটিভি
১৪.
অন্ধক ছড়ায় কর্পস ফুলের পচা মাংসের গন্ধ!
হলুদ ঘাসের মিছিল, মূর্ত হয়ে ওঠে হাতের রেখা,
স্ফীত গণসংগীতের ভৈরব, জুতা ও সিঁড়ির উজান—
কার্পাস ওড়া আবহাওয়ার সহজ দিন ফাঁসিয়ে
বয়ে যায় আক্ষরিকভাবেই হিংসাঢল না-মানুষের!
অথচ অড়বরইগুচ্ছ চেনে একান্নবর্তী পারাবত
যৌথ গুঞ্জরণে কেবল বাজে সংসারব্রত-সন্তর…
মৃদু গান ছেড়ে ওড়ে মাল্লাপাল-নদীসহচর,
বেজে ওঠে শেষে দীর্ঘ জাঁতায় জং ধরা সেতার,
তবু ওত পাতা জীবাণু আকাশ কালো করে নামে!
দামামার শেষে জাগে ভগ্নাংশ, মনে শান্তি-শ্লোক—
ডাচ্-ফরাসি-ইংরেজ-নীলকরের জাহাজ ফেরে
স্বদেশে—একদিন ফুটো করে তারা কূটকৌশলে
আমাদের একান্নবর্তী বাংলা-বজরা—গ্রিন কার্পেট…
দামামার শেষে জাগে ভগ্নাংশ, মনে শান্তি-শ্লোক!
যখন খেতজুড়ে আগাছাগুলো রাবণ হয়ে যায়,
তখন ফসলও অগত্যা মধুসূদন, ধীরে ধীরে হয়
আগাছার দাস, জীর্ণশীর্ণ-পৃথিবীতে এভাবেই
অ্যাসিড বৃষ্টি নামে, বাজ-বরফে ঢাকে চরাচর
অশ্রুতে ধুয়েমুছে যায়, সদল আসে, ফের যায়…
১৬.
দিন শিরদাঁড়া দেখালে রাত রাষ্ট্র দেখায়, শিশ্ন দেখায়
বইঠা ভালো, তবেই দিগন্ত দূরে যায় তার খোঁচায়;
কিন্তু মাল্লা প্রেমিক হলে
গন্তব্য কাছে আসে দ্রুত
যাত্রীরা শিফন হৃদয়ে জারি-সারি-ভাটিয়ালি আওড়ায়…
ভগবান আর রাতের অথরিটি—তারা
হয়তো সৎভাইবোন : ভগবান ভয় দেখায় দোজখের,
আর রাতের অথরিটি হুমকি দেয় হাজত ও গুমের!
দিন সূর্য দেখালে রাত রান দেখায়, ব্ল্যাকহোল দেখায়
সজারু বেরিয়ে এসে ঝোপ থেকে
রাতের ন্যায় দরজার সামনে দাঁড়ায়—
বিহ্বল পাখির চাহুনি নিয়ে সেঁজুতি
নিজেকে সলতে ভাবতে থাকেন…
করাত আর পাখির এলিজি যমজ—
ভাবতে ভাবতে দেখি, সিংহাসনে দাঁড়ানো তেলের জাহাজ,
রাষ্ট্র হাসতে হাসতে শিশুগুলোর ওপর পেচ্ছাব করে দিল!
দিন ফরেনসিক রিপোর্ট দেখালে রাত ফণা দেখায়
তোমার মাজারে যখন দুটি রুশ বিপ্লব দানা বাঁধে
দুটি শিষ মিসাইলের মতো ফুঁসতে থাকে, তখন—
বৃষ্টিমুখর সংসদে কে যেন কালি ছিটিয়ে দেয়
কারা যেন মান্দারিন হাঁসের ডিমগুলো খেতে আসে—হালুম!
মিসাইলি নার্স হয়ে ঘরে ঘরে ঢুকতে থাকে, আর মেঘ ঘনায়!
২১.
ভাঙনের হাপরে হাওয়া দেয়
দিকচক্রবাল রিউমার—
ফ্যাসিস্ট বুটের সুহৃদ;
শীত নামায় সূর্যের মুখে মুখে
ধস্ত ঘাসেরও শিষে ফোটে ফুল
শিরনামার জটিল খোপে পড়ে
মহাপৃথিবীর জুতার শরীর যেন
আখের ছোবড়া, রস গেছে চুরি…
সেতু দূষিত, হ্রদ জীর্ণ
মানুষের মাংসের উচ্চ দর!
কারণ এই যে—
হৃদয়জুড়ে হরেক রকম
সলিড ফুয়েল মিসাইল উন্মুখ,
তারা মূলত মানুষমুখী!
অন্য প্রাণীর দাঁত থাকে মুখে,
অথচ মানুষের দাঁত থাকে
তার হৃদয়ের গোপন কোটরে…
৩২.
জুতার হাত
অনেকটা পৃথিবীর মতো—গর্ভের মাংস আর হাড়
পুড়ে পুড়ে খনিজ হয়, সেই খনিজ উগরে দেয় মাটি,
চকচক করে মানুষের মুখ, হৃদয়ে বিলাস, মহামারি
দূষণ-দামামা…অথচ বিছানা পায় পারমাণবিক বোমা
তেমনই জুতার হাত শিকড়ে জলভাত পোষে, শিখরে
দেয় ফুলের মালা, তবু ক্ষয়ে যায়, পোড়ে তার ভাত…
জুতারা বড়ই সরল—যে কেউ পরে চাইলেই পারে
পাথর-কাঁটাপথ মাড়াতে, নিজেকে অন্দরে ঢুকালেও
জুতাদের রাখে বাইরের র্যাকে, ধুলার আস্তরণে…
জুতাদের জুতারাই চেনে, চেনে না কোম্পানি, চরণ…
৩৬.
একটু দূরে, মায়ের চোখে ভেজা রাগিনী—
যেন এক অনন্ত দেশাত্মকবোধক পাখি
ঝরে যাচ্ছে মরাপাতার সুর হয়ে শীতে!
শিরে ও তীরে কিছু কুমির রাজনীতি ছড়ায়
কিছুটা দূরে কর্ণিয়ার কাছে কূটচালের রশি—
পাতাল থেকে শিরে বাঁধা যেন কাঁটার জাল…
আম্মারা আটকে যায়, ফাঁসে মান্দারিন হাঁস!
হাড়-মাংসল রাষ্ট্রের সুপারভিশনে, তদন্তে
আমাদের নিঝুমে থাকতে চাওয়া হৃদয়ও
গোপন নেই, নুড পলিটিকসে গুম-গুম,
বেশরম রকমের উন্মুক্ত মহল- অনলাইনি…
আব্বা-আম্মা দেখতে পায় ছেলেমেয়েদের
গোপন বিকৃতি—স্বৈরাচারী রাজযৌনতা!
৩৮.
ফুলনীতি তালিকায় আমার নামটাও থাক নীরবে
যে শাসনে
চুলের বেণি হয়, সে শাসন কবিতাও চায়, জননীও
সে শাসনে
কারাগারনামচা নেই, আছে মায়া-প্রেম-রসায়ন…
ফুলনীতি তালিকায় তোমার নামটাও থাক সযত্নে
হরিণদের মাংস খেতে খেতে বলো না—
বউটা নিষ্ঠুর, ছ মাসের কন্যাটিকে রেখে
প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেল অভিসারে
মাংস, একটি মাংসাশী রাজনীতি—ম্যান্ডেটে নয়,
চলে জিহ্বায়; বাড়ে আমিষভোজী মেগা প্রকল্প…
ফুলনীতি তালিকায় জুতাদের নামগুলোও থাক
সামার ট্যানাজারের লালিমায় ফিরবে একদিন
মিসাইলবর্ণের কবিতা—পৃথিবীর অন্তিম কবিতা!
৪৬.
যেভাবে আলস্য ভেঙে হাই তোলে শিশু, ঠিক সেভাবেই
গ্র্যাফটিজম জেগে উঠুক
দুনিয়ার পথে-প্রান্তরে; পাহাড়গুলো সমতল হয়ে
একই কাতারে এসে দাঁড়াক
আল্লাহ আর মানুষেরা একই দস্তরখানায় বসে খাবার খাক
মাল্টিভার্স হৃদয় থাক,
থাক কৃষক-কুলি-মুচি-নায়ক-মিনিস্টার-ব্যবসায়ী-গায়ক…
কেবল হারিয়ে যাক মিসাইলি নার্স, মারণাস্ত্র, পুঁজিমায়া…
মানুষের মিটুক সাধ ও স্বাদ
সবুজে-শ্যামলে, ফলে-জলে, মাছে-হাঁসে, কামে-আশ্রমে…
কেবল মুছে যাক—
ফেরাউন-নিঃসরণ, মানচিত্র, চীনের প্রাচীর, নিজস্ব কসবি,