পাঁচটি কবিতা । মন্দিরা এষ


ভাদ্রের দুপুর


ট্রেন বিষয়ক কবিতাগুলো খুঁজে দেখছি

যেখানে স্বল্প পেয়ারার বন। কচি পাতার গন্ধ। আর, আর হারিয়ে যাওয়া রেল-ঘুনটি। বাড়ির দিকে হালকা উঁইখোটা। যাহ! আমার আধেক বাড়ি কেটে নিলো ওরা! যেসব জায়গায় নদী, কেমন ঝাপসা দেখায়…

একটা সাইকেল পেলে হতো; ওদিকটায় আরেকবার, নয়তো শেষবার, মাঠের কোণে গড়িয়ে দিতাম আলগোছে। দেখতাম কতদূর যায়, কার দিকে ঢলে পড়ে এই সন্ধ্যায়…


আমাকে


সমস্ত নদীর সমুদ্রে বিলীন
রোমাঞ্চিত করে সুইসাইডের দিকে।
আমি গুছিয়ে নিচ্ছি নিজস্ব গন্তব্য
পেলব স্বাভাবিকতায়। 

এ যাবৎ ভাবা যেতে পারে— প্রখর সূর্য-যাপন।
অথচ আমি জলেতেও নেই, থাকি না হাওয়াতে।
নিজের ভেতর কেবল কুণ্ডলী পাকিয়ে—
ঢুকে যাই নিজস্ব গোলকে।

এখানে অনন্ত অন্ধকার…
চুম্বকের মতো শুষে নেবে তোমাদের।
তাই—
প্রত্যেকের জন্য আমি লিখে যাবো ব্যক্তিগত চিঠি,
কিনে আনবো কয়েকটি হলুদ খাম।
তারপর—

প্রতিটি চিঠির ভাঁজে গুজে দেবো
তীব্র অন্ধকার ফুঁড়ে জন্ম নেয়া সূর্যমূখী ফুল
গভীর ভালোবেসে…


দুঃস্বপ্ন


খণ্ড ঘুমে চেপে চলে যাই মৃত্যুর দুনিয়ায়
ক্ষীণ শ্বাসের থেকেও দুর্লভ আনাগোনা
কয়েক জোড়া পরিত্যক্ত ডানার কথা মনে পড়ে…

শাণিত চোখের তলে বেসুমার ছায়াবাজি;
-উড়ন্ত ফড়িঙের শোক

আহত বাঘের থেকেও হিংস্র— অসহায় সময়…

লাস্ট ট্রেনেই ফিরবার কথা অথচ
ফিরতে পারছি না

ক্রমশ একটি হুইসেল কাঁপতে কাঁপতে
ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত
কী নির্বিকার অথর্ব এই পাশ ফিরে শোয়া!


ক্যামোফ্লাজ


ছাতিম ছাতিম রেণু
ওড়ে সন্ধ্যার ঘ্রাণে…
এমন নিকট অতীত ঝুলি থেকে খসে যায় কারো।
তার ‘বেখেয়ালি’ বেমানান লাগে।

এখানে দ্রুততম ইথারের কম্পন
সবুজ ওড়াচ্ছে খয়েরি গান, বাতাসে।

এইসব ধুলাবালির মৈথুন অগ্রাহ্য করে—
কার সাথে কে মেখে কোথায় চলে যাচ্ছে!
অপেক্ষা নামের এক গত শব্দকে
সে আওড়ায়—
          -গম্ভীর গমকে…
ঠিক তখনই হেসে ওঠে দুটি ইউক্যালিপটাস।
যদিও সে জানে—
মাথা নিচু করে চলে যাওয়া যেতো।
সে এও জানে—
কেউ কেউ যায় না, যেতে নেই।


ঘুম টোকা দেয়


সে বলেছিলো- হাসপাতাল আত্মজীবনের সর্বনাম।
শেষ ফেব্রুয়ারিতে মন্দারের লাল দুলতো দুপুরের
সাথে। আর দুপুরের জ্বর এলো উথাল-পাথাল!
যেসব করবিছায়া জানালার কাছে থাকতে পারতো, তাদেরও
জ্বর এলো খুব। একমাত্র বিজোড় শালিক
চক্রাকারে ফিরে ফিরে এলো,
তিরতির কম্পনধ্বনি কপালে ছোঁয়ালো। সে শুনতে পাচ্ছিল—
খুব ধীরে, সন্ধ্যাপ্রবণ ধূসরিত মাঠের বুকে
অনিবার্য ঘুম টোকা দেয়। 


নুন-ঘাম-জলে


এইসব নীরবতা, নিঃস্তব্ধতা নয়
এখানেও অবিরাম কথা বলে যাওয়া।

এক যুগ সময়কে গুণে গুণে কাটিয়েছে যে গলি
যুগ যুগ ধরে—
তার প্রতিটি ঘরে কান পেতে শুনে নিতে পারো—
কী অদ্ভুত ব্যঞ্জনাময় গল্পেরা শিউলির মতো
ঝরে পড়ে রাতদিন
নুন-ঘাম-জলে।


 মন্দিরা এষ

জন্মস্থান- জামালপুর
বর্তমান আবাস- ঢাকা
জন্ম- ২১ ফেব্রুয়ারি

কবিতাগ্রন্থ

ভোরগুলো অন্যরকম (২০১৫)
অরণ্যমিথের পৃষ্ঠা (২০১৮)

প্রাপ্তি – মাহবুবুল হক শাকিল পুরষ্কার- ২০১৯
ইমেইল- mandiraesh@gmail.com

শেয়ার