নুসরাত নুসিন
পশ্চাৎ পথের অভিমুখ
নদীর মতো মানুষের আপাত গন্তব্য তবে মোহনা? পশ্চাৎ পথের অভিমুখ ?
রঙের বিস্তৃত বাঁকগুলো এক হয়ে উঠলে কেমন নান্দনিক সমুদ্র হয়ে উঠি । তরঙ্গ ঘন হতে হতে একরঙা বরফময়— তারপর ধীরে ধীরে উচ্চতায় সোনালি প্রমিথিউস গান । বাঁকগুলোয় ফিরে যেতে যেতে না বিস্ময়ে দেখি, কবেকার বিরুদ্ধস্রোত আছড়ে পড়ছে অযুত নিযুত মুহূর্তকাল পর।। থমকে গেছে গতিশীল পায়ের আয়ু, অজস্র চাহনি ভেসে আছে, প্রতিটি চোখের শীতল যাত্রায় স্ব স্ব আদি প্রণোদনা । তারা কী সহস্র স্রোতের বিপরীতে জেনে যাচ্ছে, মিলনই একমাত্র অবশিষ্ট আরাধনা । প্রতিটি অপেক্ষা মূলত পুনরাগমনের প্রতীক্ষা । লাল, নীল, বিন্দু, নক্ষত্র— আমরা তীব্রতর অপেক্ষায় এভাবেই প্রকৃতির এক একটিকে গন্তব্য বানিয়ে নেই আর আবিস্কার করি, রহস্য তাহলে ফিরে আসার এ সমস্ত যুগপৎ আয়োজন ! যাপন তাহলে একরৈখিক গতি ! যেমন এই যে আমি সম্মুখগামী— আমার নিশানা তো আমাকেই অতিক্রমণের । এভাবেই মানুষ নদীর মতো একা সরে সরে যায়— ফিরে ফিরে আসে । আর প্রত্যেকটি ফিরে আসা মূলত সমবিন্দু কামনা, মিলনের অলৌকিক গান ।
জোনাকি, আগুন
পৃথিবীতে নিরশ্রু আলো ঠিক কোন পথ ধরে আসে? এই পথে শান্তিনগরের কুটির, গুচ্ছ জোনাকগ্রাম কতদূর?
ঘুম ভেঙ্গে আলো আসে তবু।
এই প্রশ্ন একদিন নিজস্ব বাতাসে মুহুর্মুহ আছড়ে পড়েছিল । ঈশানের নিশানা ধরে বহুদূর যেতে না যেতেই জানা গেছে, জোনাকির কোলে বসে আছে থইথই অন্ধকার, পথে পথে প্রতিসরণ ছড়িয়ে জেগে আছে তারা— জ্বলে ওঠার, আরেকটু উজ্জ্বলসম আলোর বাসনায় ।
ঘাসের সহোদরা পাতারাও সমতলে বিছানা বিছিয়েছে উপরিতলে আকাশ দেখবে বলে । ডানাহীন নক্ষত্রহীন ছায়াপ্রতিম তারাটি জেগে থাকে,
রাত্রির মতো নীরবতায়,
জোনাকির মতো পিদিমগুলো কতটা জাগায় জীবনআগুন ।
ধুতুরা, তীর্যক
আজ আবার হাতে পেলাম ধুতুরার আশ্চর্য চেরাগ। চোখে ছড়িয়ে দিলো তীর্যক আলোর প্রতিদান। এমনতর আলোয় আমি নিজেই পাঠ করতে চেয়েছি আহত মুদ্রার নিরশ্রু গান, দীর্ঘ স্বরের অনুপ্রাস আর উৎকৃষ্ট বিরহের ঘাসফুল ভায়োলিন। বিপরীত চোখে অনাসক্ত বাদক— ধুতুরা আলোয় আশ্চর্য জাদুমায়ার রুপালি গিট খুলি, আহা! বন্ধন আমার নয় বলিয়াই কোনো বন্ধনকে ধরিয়া রাখতে পারি না। আজ এমনই একটি শুনানি হলো যে বন্ধনে অনাসক্তি ও আনুগত্যের পরিণয় এক।
গান যে করে সে আনন্দের দিক হইতে রাগিণীর দিকে যায়, গান যে শোনে সে রাগিণীর দিক হইতে আনন্দের দিকে যায়। তার মানে তুমি বলতে চাও বিরহই মৌলিক। আজ দেখতে পেয়েছি, বাদকের চোখ বিপরীত পথের অভিমুখে…
নিমফলা
আমার ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার নিম রঙের দাগে ভরে যাচ্ছে, নিমফুল চোখে প্রতিদিন দেখি। রঙিন কচুপাতায় বিন্দু বিন্দু আস্বাদ নির্বাক বায়োস্কোপে ছবি হয়ে ফোটে। আমার আছে দুই যুগ ভ্রমণের বিশদবৃত্তান্ত, এক একটি অক্ষর মানুষ ভেবে কিভাবে ফিরে এসেছি নিমফুল চোখে। কলা অনুষদে পড়িনি, ভ্রমণের বৃত্তান্ত বুঝিনা তবু ক্যালেন্ডার আমাকে শেখালো দুই অক্ষরের মাঝে বিচ্যুতির ব্যবধান। অমিলিত বিচ্ছেদে তুমি শেষমেষ দুরত্বপ্রবাল।
তবু আমি এক পালতোলা নৌকাবাহার, গোটা গোটা অক্ষরের পাশে বিষণ্ন হলুদ। নিম সময় নিমপাতা ক্যালেন্ডারে তরঙ্গ তোলে। আমি দুলে যাই, পায়ে ভীষণ রিদম।।
আয়না
আয়না চাতুরি জানে না। যা দেখবো, দেখায়।
একটা ফ্রেমহীন আয়নায় প্রতিদিন বরফ গলে যাওয়া দেখি।
আর বলি চোখের আয়নায় এত কেনো ভাষার ধনুক বিভ্রম। সোমবারের সত্য বুনন আহা আমি তবু জেনে বুঝে যাই…
নুসরাত নুসিন। জন্ম: ২১ নভেম্বর, ১৯৯০ । একটি দৈনিকে সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত। বসবাস করেন রাজশাহীতে। যোগাযোগ: নুসরাত নুসিন, হোল্ডিং, ১০৭ পাঠানপাড়া, রাজশাহী। Email: nushinnushrat@gmail.com
মাহী ফ্লোরা
কবিতাগুচ্ছ
১.
এরকম হয় পথে ঘাটে মাঠে পাখিরা ফুলেরা বিনয়ে বিনয়ে নুয়ে পড়ে যায়।
আমি শুধু ভাবি হায় কি সহায় তার ঈশ্বর!
ছোট বীজ থেকে দেবতা কোমল পথে ঘাটে মাঠে ছড়াতে ছড়াতে যায়
কোমল দুব্বা ধানে।
ঈশ্বর হাসে, পথিকের হাসি-
কোমলতা তার অন্যখানে!
২.
আমার চাওয়া একটি দীর্ঘ জীবন।সমুদ্রে ডুবতে থাকা একটি উরু যেমন জলের কাছে নগ্ন করে দেয় পোষাকের অভ্যন্তর। আমি সেই দীর্ঘ জীবনে অনেক সমুদ্র দেখব বলে বুকের দিকে তাকাই। জিভের আদর পেলে ওরা ফুলে ওঠে। একটি স্রোত লক্ষ্য করো।তাকাও। সমুদ্রকে কতদিন দেখোনা তুমি! আমার চেয়ে গভীর কবিতা কি সমুদ্র লিখেছে কোনোদিন?
৩.
কখনো কখনো আমার বর্ষাকাল আঁকতে ইচ্ছে করে। খাতার পাতা ভিজে যাবে বলে আঁকতে পারি না। অথচ চলতে ফিরতে আমার পা পিছলে যায়, ক্যানভাস নিয়ে বসে থেকে আমার বয়সও বেড়ে যাচ্ছে! কত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মুখোশ, আমার মনকে বনের বাঘে খাচ্ছে।
সূর্যও আজকাল স্বভাবে সন্ন্যাসী। সূর্য চিরন্তন, সূর্য সত্য। মেঘেদের আচরণ তাই মিথ্যেবাদী বালকের। একদিন সত্য হলেও বাঘেই খাবে! বনের বাঘে। যথারীতি মনের বাঘেও।
৪.
একটি নিঃশ্বাস অন্ধকারের বুকে মিশে যায়। একটি অন্ধকারে কার আলোকবর্তিকা ফুল তোমার মুখে এসে পড়ে। তুমি গেয়ে ওঠো… তুমি ওঠো গেয়ে,
বহুদিন আগে যা আমাকে দিয়েছো। আমি যেন সেই গান কখনো শুনিনি।
দু একটা ভুলকে যদি বলি হও, হয়ে যায়।
আমি শুধু পাই থেকে থেকে তোমার দীর্ঘশ্বাসের ধ্বনি!
৫.
রাস্তাগুলো সাক্ষী হলো বানান ভুলের, রাস্তাগুলো চেনায় বুকের দুপুর খুলে,
রাস্তাগুলো ভাঙা এবং সন্ধ্যে হলে,
মন হয়ে যায় উদাস এবং বাউন্ডুলে!
রাস্তাগুলো উড়ায় ধুলো খোলা চুলে,
কাঁপছে পাতা বিষন্নতা দীঘির জলে, হাওয়ার গভীর যায় উড়ে যায় পাওয়ার স্ট্রিট,
দিন চলে যায় নাগরদোলায় সবটা ভুলে!
রাস্তাগুলো শীত নামালো মনের ভুলে
কান্না কান্না পাখির চোখে কৌতুহলে
রাস্তাগুলো গল্পকথার বিস্তৃতিতে
মন হারালে খুঁজবো কোথায় কোন অতলে।
মাহী ফ্লোরা। জন্ম ২৯ ডিসেম্বর,১৯৮৭, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত।
রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে বাংলায় এম.এ।বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এম.ফিল. রত।
কবিতার বই চারটি।
সে এক আশ্চর্য জলপ্রপাত (ভনে প্রকাশ,ঢাকা, ২০১২),
চন্দ্রহারা মানবীর চুল থেকে জল ঝরে ( আড়িয়াল প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১২)
সবুজ বোতাম এবং অন্যান্য ( ত্রৈবিদ্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৩)
ম্যাচবাকসো ( হৃদি প্রকাশ, রাজশাহী, ২০১৫)
ইমেইল: mahiflora25@gmail.com
মিতা চার্বাক
নির্জনতার ডাকনাম পাড়াগাঁ
বিন্নাতীর পুল পেরিয়ে
মেহগনি বাগানের আঁড় দিয়ে যে চিকন চিলচিলে সড়কটা চলে গেছে, তার শেষ মাথায় সুনসান একটা পাড়াগাঁ দাঁড়িয়ে । ঘুঘুর ঘুমেলা দুপুরে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা সড়কে, সড়কের উড়নচন্ডী ধুলোয় যত নির্জনতা ডুবে থাকতো, তা আমি আলমিরার গোপনীয় দেরাজে তালা দিয়ে রেখেছি
দেরাজের চাবিটা এখনো আমার হাতে আছে
নির্জনতার চাবিটা পড়ে আছে জঙ ধরা নীল জ্যামিতি বক্সে… চাঁদা, ত্রিভূজ, ক্ষয়ে যাওয়া পেন্সিলের পাশে ।
রোজ সন্ধ্যায় ঘুটঘুটা আন্ধকারে ১৮ মিনিটের পথটায় সোনালী, রুপালী আধুলির ছক আঁকতে আঁকতে খুব তাচ্ছিল্যে আটকা পড়েছে আমার যাবজ্জীবনের নির্জনতা (যে পথ আমার সমগ্র সংসার হারিয়ে ঘরের দিকে যাওয়া) । আশ্বিনার কুটুম্ব বৃষ্টি নামলে সড়ক জুড়ে নির্জনতার আততে জমা হওয়া সমস্ত বিষন্নতার সংগীত আমার মুখস্থ
রাফ খাতা ভর্তি দুপুর কাব্যের নির্জনতা
সেই সব দুপুর… সেই সব নির্জনতা
তার ডাকনাম পাড়াগাঁ
ব্রাকেটবন্দী
আমরা বস্তুপৃথিবীর কোথাও পড়ে থাকা সিন্দুকের ভিতর পাশাপাশি শুয়ে আছি শুধু… শুধুমাত্র নয় । কি-হোলের চোরাগুপ্ত পথে নেবুপাতার ঘ্রাণ নিয়ে বাতাস ঢুকছে, শিরশিরায়ে ৷ আমরা পড়ে পড়ে ঘুমাই ৷ ঘুমের ভিতর জেগে উঠি । কাগজের অ্যারোপ্লেন বানাই ৷ দুপুরগুলো শুধু শুধু ধনেপাতার গুনগান ৷
সিন্দুকের ব্যাকগ্রাউন্ড জুড়ে মহেঞ্জোদারো রাতের মিথ সং । সারারাতের অন্ধকারে পেট ফুলে উঠা জংশনবাড়িতে আমরা ঘড়ির কাঁটাহীন সময় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অ-নাগরিক যাপন ।
এইখানে মৃত ডুমুরের নীরবতার সিম্ফনি
শরীরের ভিতর আরেক শরীর জুড়ে প্রেমবোধ (অপ্রেমের আওতায়) নড়াচরা ।
{আমরা ২ জন (১ + ১ = ২) আর কখনও কখনও (১ x ১ = ১) একটা সন্যাস সিন্দুকে ব্রাকেটবন্দী ৷}
সিন্দুকের জঙধরা চাবিটা পড়ে আছে দূর বাহামা দ্বীপপুঞ্জে…
অশরীরি
বিকালের বারান্দা ক্রমশই রহস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ সিঁড়ি ঘরে নৈঃশব্দ্যের ঐকতানে বহুকালের পুরোনো চিঠির বান্ডিলে শব্দরা চুপচাপ। দক্ষিণে পাঁচিলে ঘেরা বাগানবাড়ি… মেহগনির ফাঁকে গড়িয়ে সন্ধ্যা, ছাদে লিলেনের দড়িতে ঝুলছে দুপুরের কাপড়৷
তের বছর আগে, ঐ বাড়িটির ভিতর আমি একজন মানুষ হয়ে বেঁচে ছিলাম
কালার সেশন
এবারের শীতকালটা কফিকালারের খণ্ডিত অংশ
হেমন্তটা গেছে বাড়াবাড়ি রকমের শ্যাওলাসবুজ শাসনে ।
অথচ আমার উল্লেখযোগ্যভাবে পছন্দের কোন রঙ নেই ৷
আমার কালার সেশন ।
এক একটা দিন পার করতে করতে দূরবর্তী মফঃস্বলে জেগে জেগে ঘুমিয়ে উঠি । পড়ার টেবিলে ছড়ানো ছিটানো শোকাহত আঙুলের উচ্চারণ ।
এখানে শীতকাল মানে কুয়াশা ঘোর কিংবা দূর ধিয়াং পাহাড়ে ঝুপ করে নামা সন্ধ্যার শেড । যে সন্ধ্যাটার ব্যাকগ্রাউন্ডে একনাগাড়ে বেজে চলে ম্যান্ডোলিনের সুর ।
আর সেই সমস্ত বিষন্ন ম্যান্ডোলিন বাদকরা বহুকাল আগে ফিরে গেছে রুহের মাগফিরাত কামনায় ।
আমার অতিব্যক্তিগত শীতসকাল গুলো কেমন করে যেন কফিকালারে বাজেয়াপ্ত হয়ে যায় !
যেমন করে বাজেয়াপ্ত হয়ে আছি গঙ্গাচড়ার রাস্তাটায়… ১৭ বছর আগে, সেই রাস্তায় শুয়ে থাকা সমস্ত অন্ধকারের স্বরলিপি আমার চোখে উঠে এসেছে ।
আদতে আমার পছন্দের কোন রঙ নেই, ছিলনা কোন কালে ।
আমার অনন্ত অন্ধত্বে যাপন শুধু
লাল, নীল, মেরুন
কোন কোন দিন হলুদ… সব অপটিকাল ইল্যুশন ।
নূপুর ভাবি
(১২ বছর আগের এক গৃহস্থালি জানালা)
এই সব নাগরিক জনপদে শীত আসে দূরবর্তী মফঃস্বল থেকে কিছুটা শীতের মহড়া নিয়ে । আর আমার নভেম্বরের দিন গুলো অ্যাজমাটিক… নিঃশ্বাসের টানাপোড়েন ।
সন্ধ্যাকালীন কুয়াশার মিহি দানা করোটির ভিতর ঢুকে ঢুকে পড়ছে ৷ আয়রন মেইডিনের “ফিয়ার অব দ্য ডার্ক” ৪ দিন থেকে মগজে একটানা তুমুল বেজে চলছে ৷
এবারে শীত এলো আমাদের শহরে, অভ্যন্তরে ৷
পেয়ারা বাগানের নির্জনতায় নূপুর ভাবির পায়ের ছাপ হারিয়ে যেতে যেতে…
খণ্ড খণ্ড হীমের পাতায় কাপন লাগলে আমার ধানফুলের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় । হারিকেনের নরম আলোর মত করে মনে পড়ে যায় নুপুর ভাবির মুখ ।
নূপুর ভাবিঃ ১২ বছর আগের এক গৃহস্থালি জানালা ।
আর আমার সেই সমস্ত রাত্রি দিন শেখপাড়ার পাতকুয়াটায় অন্ধকার পতনের সিম্ফনি ।
এবারের সারাটা শীতকাল অবসর । ছাদের বাগানেও দন্ডিত সন্তান । এবারের তাবৎ শীতকাল কৈশোরের প্রেমপত্রের মতন বিভ্রান্তি ৷
শীত এলেই, সমস্ত স্মৃতি জুম করে করে নান্দাইল ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা “আমাকে” দেখি । তখন একেকটা দিন অপরাবাস্তবতায় অ্যান্ড্রজিনাস হয়ে ওঠা । কুয়াশা ঘোরে মফঃস্বল শহর…শহরের দোকান ঘরের সামনে মরিচ বাতি । সব চেয়ে ব্যস্ত গলিতে অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ানো কড়াই গাছটি, তার কাছেই আমার হলুদাক্রান্ত দুপুর গুলো বাজেয়াপ্ত ।
জুম্মাবারের দিনে সারা সকাল ফিনিক্স সাইকেলের প্যাডেল । উপশহর, বাইপাস ঘুরে ঘুরে নান্দাইল ব্রিজ । ব্রিজের তলে, ব্রিজের ছায়ায় নিজের ভেজা ছায়া মিলিয়ে দেয়া, কিছুটা শুকোনোর মত করে ।
১২ বছর আগের একটা শীতার্ত সন্ধ্যা কম ভোল্টেজের আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার ব্যালকনিতে, প্রায়শ ।
আমার খুব উসখুস ৷ আমার একা একা এক কাপ লাল চায়ে নেবুর ঘ্রাণ এবং কতিপয় দৃশ্যের ডেজা-ভ্যু ৷
শীতের বৈকল্য ঘোর জেকে বসলে আজকাল আমার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা করে নূপুর ভাবি,
ফ্লেক্সিলোড করে দেওয়ার মতন আপনি কি আর কাউকে পেয়েছিলেন, আমরা শহর ছাড়ার পর ?
সেদিন অন্ধকারে বসে আলুথালু চুলে ওমন করে কার জন্য কাঁদলেন নূপুর ভাবি ?
আপনার বিষাদবিতানের সুর রাতভর কুয়াশার মতন করে ঝরে পড়ল বতুয়ার বনে ।
অথচ আমার কিছুই জানা হয়না…
শুধু শুধু সারাটা শীত অধিস্বপ্ন জুড়ে তালতলা হাইস্কুল
পুকুর ঘাটে সবুজ পাড়ের শাড়ি পুড়ে যায়, যাচ্ছেতাই
আর মধ্যদুপুর গুলো
হতভম্ব আমি নান্দাইল ব্রিজের নিচে
ব্রিজের ছায়ায়
নিজের ছায়ার বানান মিলিয়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকি
১২ টা ৪৫’এর ব্রিটিশ আমলের মালগাড়িটা যায় ব্রিজের উপর দিয়ে,
আমার ছায়ার উপর দিয়ে
আমার ছায়া মাড়িয়ে দিয়ে
আমি হন্তদন্ত হয়ে নূপুর ভাবির চাল ধোয়া হাত জোড়া খুঁজি
চারদিকে তখন কাফন থেকে অগোচরে লেগে যাওয়া আতরের মত কান্নার গন্ধ
মিতা চার্বাক রংপুরের মেয়ে। বর্তমান নিবাস রাজশাহী।