অব্যক্ত সন্ধির দিকে
১.
অভেদ আগুন যেন, যেন উড়ন্ত মিথুন শূন্যে
উড়ছে—উড়ছে হাওয়া আর জলের ভেতর দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে—
ক্রমাাগত উথাল-পাথাল, ধুম অন্ধকার
শাখায় রচিত কুয়াশার ফুল যেন—
হারোনো পথের বাঁকে, শিঙায় ফুঁ দিয়ে, নিমিষে সে
আত্মমগড়ব হলো, হলো ধ্যানী—
স্মৃতিময় আরশিতে, কখন যে, দেখেছে সে নিজের নিয়তি!
২.
নিঃসঙ্গ ঐ প্রুফরিডারকেই বেশি ভালো লাগে—
দরজার আড়ালে বসে
যে কেটে কেটে
ফে
লে
দে
য়
অক্ষরের বিষ!
৩.
যে ভাবে নীরব আছ—পাথরের মতো—বহুদিন—
উদাসীন একইভাবে—বদরাগে—রাত্রি জাগরণে—
স্রেফ হয়ে গেছি একা। জানি— পুরোনো মলিন বড়!
আপন ঠিকানা ভুলে—ফুলে ফুলে নতুন আবাস
গড়ে তুমি নিয়েছ সঠিক। বেঠিক পথের পাড়ে—
এখনো যে আড়ে-ঠারে চাই। আর সেই পথ জুড়ে
শোকের নীলচে রঙে আমাকে আঁকাই। …সুখী হও।
পুজো শেষ হয়ে গেছে— কুয়াশা পড়ছে রোজ মাঠে
তুমি কি এমন দিনে— চিনচিনে ব্যথা পাও টের?
অথবা, আদা-চা খেতে খেতে— সিনে-ম্যাগাজিনে রাখো
চোখ? পুলক পুলক কোন আভা ভেসে ওঠে চোখে?
সহস্র স্মৃতির পথে মনে মনে হেঁটে যাই রোজ
তোমারও কি পথ হলো? এখনও কি আঁকো ফুল পাখি?
যে গেছে ভুলের দেশে—যাক—আমি প্রাণ খুলে রাখি!
অবিরাম বিস্মরণ
১.
তোমাকে স্মরণ করি, বিস্মরণে, শোনো—
অজস্র আলোকরেখা জ্যান্ত চিতা থেকে
এঁকেবেঁকে যায় চলে কোথা সে সম্মুখে?
কোন সুরে শব্দবন্ধে কার গান বোনো?
যেহেতু কিছুই নেই, সমস্ত আঁধার—
থেকে থেকে বোকা বৃষ্টি অমূলক ঝরে
সারা রাত জেগে, তবু, প্রচণ্ড নগরে,
ভোর হলো, দেখো, এই মৌন শবাধার!
আমি তবু যাব, অনু, যাব ঠিক দেখো—
উত্তরে না থাকো যদি, প্রত্যুত্তরে থেকো।
২.
ফুল, তুমি গণিতের সাঁকো।
তোমার ব্যাসার্ধে যে নিপুণ মৌমাছি ঘুরে গেল, সে আমি। কেঁপে উঠছি ঘ্রাণের মৌতাতে। আর তুমি, রাজহংস ব্যতিরেকে আমাকেই কেন ভাবলে নিজস্ব রেণু, এই প্রশ্ন উত্তরহীন। জগৎ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে পঞ্চভূত, আর ভাগে প্রবঞ্চনা। যাব না যাব না করেও যখন আত্মা গলে যায়, লুণ্ঠিত হয় দেহ; তখন দর্পণে ভেসে ওঠে ঘরনির মুখ। এই আত্মপ্রবঞ্চনার কথা আমি কাকে বলব? কাকে বলব আগুন কেবল পোড়ায় না, নিজেও পোড়ে। ওই ব্যাস, ব্যাসার্ধ, ফুল ও পাপড়ি তার নিজস্ব কায়দায় আমাকে ডেকে চলেছে আজও। অথচ আমি নিজের দিকেই থাকতে চেয়ে মরে যাচ্ছি জ্বরে।
আমাকে ডেকো না রাই, খুব বেশি খুন হয়ে গেছি।
কবি পরিচিতি
জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মার্চ। চারুকলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন।
প্রকাশিত বই:
‘অব্যক্ত সন্ধির দিকে’ [কবিতা; চৈতন্য, ২০১৫], ‘এসো বটগাছ’ [না-কবিতা; চৈতন্য, ২০১৭], ‘শ্রীদেবী অপেরা’ [কবিতা, তবুও প্রয়াস, কলকাতা, ২০১৯], ‘অবিরাম বিস্মরণ’ [কবিতা, বৈভব, ২০২৩], ‘ইচ্ছেশ্রাবণ’ [গদ্য, বৈভব, ২০২৪] এবং সম্পাদিত বই ‘শতবর্ষে সত্যজিৎ’ [শ্রী, ডিসেম্বর ২০২১]।
কলকাতা থেকে পেয়েছেন ‘আদম সম্মাননা-২০১৭’। সম্পাদনা করেন ওয়েবম্যাগাজিন ‘শ্রী’।