গিঁট
একবার সুতো কেটে গেলে পর আর কখনোই
জোড়া লাগে না আগেকার মতোন
গিঁটগুলো খুব বিশ্রীরকম জেগে থাকে
মনে করিয়ে দিতে—
এই সুতোটা কেটেছিলো
এই সুতোটা কেটেছিলো
ধরুন, নাড়ির কথাই
জন্মের পর নরোম, মসৃণ নাড়িটি কাটা হলে
নাভিতে ক্যামোন গিঁট পাকিয়ে থাকে সারাজীবন
♣
বরং পাখিরা ভালো
বরং পাখিরা ভালো, ভানহীন
প্রেম আর প্রয়োজনে ফারাক জানে না
ঘাসখড়কুটো বয়ে আনা ঠোঁটে
অনায়াসে দিতে পারে ঘষে
প্রেমিকার ঠোঁট
হাওয়ায় ছড়াতে পারে শিস
যে-বাসা বোনে
প্রজনন-প্রয়োজনের মওসুম শেষে
ভেঙে গেলে, বাসা-ই ভাঙে কেবল
ভাঙে না হৃদয়
নয়া মওসুমে ঠোঁটে শিস ফোটে ফের
আসে বাসা বুনবার তাগিদ
আসে প্রেম ও প্রয়োজন
গলাগলি করে
অধিকন্তু নয়া বাসার বাসিন্দা
বদলে গেলেও
গ্লানি থাকে না কোনোও
অথচ, মানুষ!
ক্যামোন ভান নিয়ে কাটায় গোটা জীবন
♣
স্টপ, স্ক্রাউন্ড্রেলস
ব্রিজের তলে মরি যাওয়া নদী
ডিনামাইটে উড়ি যাওয়া পাহাড়
মরার আগে
ওড়ার আগে
মরণ চিৎকার করে না কি?
ডোডোদের কথা ভাবি
যারা উড়তে জানতো না
উড়ি যাইতে হইছে তো তাদেরও
দুনিয়া ছাড়ি একেবারে
পয়লাবার উড়তে গিয়া
তাদের ডানাগুলি ব্যথাইছিলো খুব?
যেভাবে ব্যথায়
সাগরজলের মারমেইডের
নয়া গজানি পা
জমিনে হাঁটতে গিয়া!
সেই ডোডোরাও
মরণ চিৎকার করছিলো নিশ্চয়ই?
মানুষের কান
এসব মরণ চিৎকার
শুনতে অক্ষম
মানুষের কানের কাছে
মানুষের স্বরে
আমারে চিল্লাইতেই হবে তাই
স্টপ, স্কাউন্ড্রেলস!
♣
ফেরার আয়োজন
প্রেম তুঙ্গে পৌঁছে গেলে পর
সমূহ আশ্লেষ মেখে স্বরে
বলে ওঠো—
আসো
সে আহবানে সাড়া দিয়ে
একে একে দেহ থেকে
খুলে ফেলি
সকল গিঁট ও বোতাম
পরিধেয় যতো
ছুঁড়ে ফেলি
জন্মাবধি যা কিছু খোলস
চাপায় মানুষ
নিজেকে ঢেকে ফেলতে, ভানে
এ য্যানো বহুকাল বাদে
মাতৃগর্ভে ফেরার ব্যাকুল আয়োজন
♣
খুন
বেতারে
বহুকাল বাজে না
মধুর গীত
উঠানে
ফোটে না
নয়নতারা ফুল
আমাদের
ভাত দেবার
ভাতার নাই
ঠিকই
মিছিলে গুলি চলে
খুন হয়, খুন!
♣
তুমি আসবে না
কাঁপতে কাঁপতে ফুরালো শীতকাল
এসে বসন্ত বসে থাকে না
যথানিয়মে বহিয়া যায়
সারা গ্রীষ্মজুড়ে কাতর থেকেছি
বর্ষা যদিবা এলো তৃষ্ণা গেলো না
এভাবেই শরত যাবে
হেমন্ত সেও
ঋতু সব একে একে এসে চলে যাবে
হেথা ক্ষণকাল নাহি তিষ্ঠায়
কালচক্র ঘুরে চলে অবিরাম
কোনওকালে তবু তুমি আসবে না!
♣
কী পাঠাই
কী পাঠাই, কী পাঠাই
যার গন্ধ শুঁকি আমারে পাইবা তুমি
ভাবতেছি!
ভাবতে-ভাবতে মনে হইলো—
নাভিটি কাটি পাঠাইতে দোষ কি!
এ প্রেমিকের শুকনা নাভিটিরে
বালিশের তুলার ভিতরে রাখি
শুইলা তুমি রোজ
নাহয় কস্তুরি-মৃগ নহি
প্রেমের সুঘ্রাণ পাইবা না কি তাই?
♣
এ জীবন গেলে
দূরে, কতো দূরে থাকো
তোমারে ছাড়া দিন-রাইত
কী যে উচাটন উচাটন লাগে!
কদাচ নিরলে
পাঁজরের খুব নিকটে পাবো
এমত সম্ভাবনা দেখি না
তুমি নাহয় মার্জারি ভাবো নিজেরে
যথা তোমার আরও নয়টি জীবন আছে
এদিকে আমার মোটে একটাই
এ জীবন গেলে
হায়, পাওয়া কি হবে তোমারে আর!
♣
তুচ্ছ মনে হবে
একখানি ঘর
পাহাড়ি ঝিরির ধারে কিংবা নদী কিনারে
জানালা খুললেই দ্যাখা যাবে
সবুজের বিস্তার, জলের নাচন
উঠানে রোদ খেলবে দিনভর
হাওয়া বইবে হু হু
বিকেল বিকেল
অচেনা পাখির দল এসে
শুনিয়ে যাবে গান
সন্ধ্যায় তারা ফুটবে দূর আকাশে
রাতভর হিম জোছনা ঝরবে আঙিনায়
পৃথিবীতে এলে বরষা
ঝরবে বৃষ্টিও অঝোরে দিনরাত
থাকবে সুখাদ্য, স্বাদু জল
আর আর কাঙ্ক্ষিতা রমণী উষ্ণ শয্যায়
এমন ভোগের জীবন কাটাবো যে
তুচ্ছ মনে হবে জান্নাতুল ফেরদৌস
♣
শহরে বেড়াতে এলে
গ্রামে থাকি
কদাচিৎ কাক দেখি
যাদের দেখি
উনারা দাঁড় কাক
উনারা বৃষ্টির দিনে
ভিজে জবুথবু হন
থেকে থেকে
ডানা ঝাপটান
ডানা ঝাপটাতে গিয়ে
ডেকেও থাকেন কখনো-সখনো
সেটা নেহাতই অনিচ্ছায়
একথা বলাই যায়
গ্রামে থাকি বলে কাকের ডাক
শোনা হয় না
শহরে পাখি মানে কাক
অর্থাৎ কাকের অভাব নাই
শহুরে কাক মূলত পাতিকাক
পাতিকাকেরা ডাকপ্রবণ
সারাক্ষণ ডাকাডাকি করেন
শহরে বেড়াতে এলে
কান ভরে কাকের ডাক শুনি
বায়েজিদ বোস্তামী
মকর জাতক। জন্ম রংপুরে। গদ্যকার, কবি। জীবন ভোগ নয়, উপভোগে আগ্রহী।
প্রকাশিত বই:
পাপের পুরাণ (কবিতা, ২০১৯)
গাঙডুবি (গল্প, ২০২১)
আমি যে মরি না তাই (কবিতা, ২০২১)
ইমেইল: bostami81@gmail.com