অন্য পৃথিবী
ছায়ার ওপর থেকে ছায়া সরে গেলে
দৃশ্যত হেরফের নাই ৷
জবুথবু রোদের ভেতর তোমাদের কেমন কেমন স্বর;
মূর্ত হয় ফণীমনসার ঝোপ, কাঁটাবিদ্ধ আলো ৷
প্রাত্যহিক জীবন তো ভুলে গেছে
কতটা নিঃশব্দে কোনো নিঃস্ব হাত
প্রতীক্ষায় থাকে ৷
কাঁটাতার সরে যায়
অখণ্ডিত পৃথিবীর স্বপ্নের ভেতর ৷
বস্তুত বিবাদঋতু
হাতের ওপর থেকে হাত সরে যায় ৷
রঙ
বিচূর্ণ হওয়ার রাত
আরো ধীর, নম্র হয়ে আসি।
ঘৃণামেঘ সরে না গেলেই
শহর তলায় ঝড়ে,
চোখের উত্তাপসম রৌদ্রভাসিত মুখ
কাঁপে, মুছে যেতে থাকে।
জাহাজ ডুবানো হাওয়া
বাড়ি খায় দালানে দালানে
‘ফিরে আসব’ বলে
না ফেরা সে মৃত নাবিকের আকাঙ্ক্ষাসমেত।
এই ছলোছলো ঘুম
নত অন্ধকারটিকে
যে রঙে ডুবিয়ে দিতে চায়
সে জানে না
মেরুন কি রঙ নাকি রঙের চিৎকার।
প্রবল প্রকাশ্য প্রেম থেকে
কেন উড়তে পারছি না
আমায় টেনে ধরছে এক
নীল অবাক প্রজাপতি,
তার পালকে আঁকা মেঘ ৷
এই মগ্ন চাঁপা ভোর
তোমার শুন্যতাকে ঘিরে
ছেঁড়া পেঁয়াজ খোসা যেন
ভেসে যাচ্ছে কোথা ওড়ে৷
অই দুপুর রোদের দিকে
কারো মাতাল করা ঘাম!
আমায় উসকানি দেয় ঘ্রাণ,
তোমায় দেখতে দাঁড়ালাম৷
একা শরীর ব্যথার মোড়ে
দুটো মন খারাপের রঙ
আড্ডা জমায়, উড়িয়ে নিল
ছোট্ট চায়ের টঙ৷
আহা, মন খারাপের রঙে
কেন আষাঢ় নেমে আসে
কারো না থাকাকে ঘিরে
ফোঁটে কদম বারোমাসে ৷
তুমুল বৃষ্টি এবং স্মৃতি
বিষাদ হচ্ছে শুধুই গাঢ়
প্রবল প্রকাশ্য প্রেম থেকে
আমি গুটিয়ে যাচ্ছি আরও ৷
কান্নার আলো
ফিরে ফিরে আসি অবসাদের পাশে বসে থাকা অবসন্ন বালিয়াড়ির কাছে ৷ ঝুমসন্ধ্যায় পারাপারের একমাত্র সাঁকোটি ডুবিয়ে এখানেই পুঁতে গিয়েছিলে কুটুম্ব চুক্তির ছিন্ন টুকরোগুলো _ দ্বিধাহীন , প্রকৃত রাত্রির বুকে জন্মেছে অবিন্যস্ত ভাঁটফুল ৷ ঘুমন্ত আয়নার বিভ্রান্ত ঘোর ভেঙে তাদেরকে ছুঁতে ছুটে আসা, হয়তো কীর্তনীয়, হয়তো কীর্তনীয় নয়…
যেকোন উন্মুখতার ভেতরে একটি বাতিঘর থাকে ৷ আমার আলোহীন বাতিঘরে হেঁটে চলা হাওয়াতেই কেঁপে ওঠা ভাঙা হারিকেন : বোবা সমাধির বিষণ্ন চোখ৷ তার কান্নার আলোতে ভাঁটফুল গাছে ফোটে বর্ণহীন ফুল __ চুক্তিহীন , যুক্তিহীন তোমাকে চাওয়া…
রণদৌড়ের ঘোড়া
তুমি সুন্দর, তুমি শারীরিক
বসন্তের কাম আলুথালু
ফুলদের পাশে শুয়ে শুয়ে
দেখে যাচ্ছি।
কথা কমছে, শ্বাস বাড়ছেই
মাথাভর্তি যেন চুল নয়,
কচি ধানক্ষেত
আঙুল ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে খুব হচ্ছে।
রণদৌড়ের ঘোড়া যেন এক
এসে সামনেই নত, বলছে—
আর কিছু নয়, দিগ্বিজয় নয়
চাই তোমাকেই, হৃদয় টলছে।
ধরছ না, হায়, এমন তপ্ত
গলিত লোহা এ
আগ্নেয়মুখে অগ্নিস্নানে লাল…
প্রেম নাকি পাপ
কটেজের রাত মুছে দিচ্ছে এ সমস্তই।
মনে পড়ছে না সেই ব্যথাদেরও যারা
প্রশমিত হতে পারে নাই।
ওই বাহুডাল যেন রাস্তাই,
দুর্ঘটনার নেই শঙ্কাও।
ফোঁটা বৃষ্টির মতো রোমকূপ জুড়ে কম্পন,
তুমি কাঁপছ, কী যে টের পাই!
স্তনবৃন্ত এত ভালো লাগে যেন সমতলে
অমসৃণ গোল ভূমি আর সামান্য ঝোপঝাড়
নাকে ঘষছি।
তির্যক চোখ
তৃষ্ণার বনোভূমিতেই পথ হারিয়েছে,
তাতে ঝরাপাতা ঝ’রে পাতার উপর,
মৃদু ঝরে পড়ার শব্দ।
শীৎকারও এই সুনসানে এক সাইলেন্ট রূপমাত্র,
অধীর ঝর্না পাথর-খাঁজে ছড়ার চলন বুঝে নিচ্ছে।
এত তীব্র যেন সূর্য—
ঝুমসন্ধ্যায়
সাগর-জলে ঢুকে যাচ্ছ।
এই দৃশ্যও
যত সত্য তত মিথ্যে,
জানি অন্য আরেক দেশে
তুমি সকালের রোদ হচ্ছ।
কবি পরিচিতি
![]()
জন্ম: ২০ ডিসেম্বর ১৯৮৯, জামালপুর
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
প্রকাশ্য হওয়ার আগে ( ২০১৭)
রণদৌড়ের ঘোড়া (২০২৪)
সম্মাননা :
জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ১৪২৩