পাণ্ডুলিপি থেকে : মেমোরিজ অব ৩৩ জুলাই | রুম্মানা জান্নাত

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে রুম্মানা জান্নাত-এর নতুন কবিতাগ্রন্থ মেমোরিজ অব ৩৩ জুলাই। প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। মূদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা। পাওয়া যাবে ঐতিহ্য, প্যাভিলিয়ন ২৮ এ

দেশ যদি স্বাধীন হয়, যদি কখনো আবার আনন্দের দিন আসে জীবনে, যদি আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের উপলক্ষ্য আসে, কোনো অর্জন, এক বেলায় ভালো খাইতে পারার মতো সুখের দিন যদি আসে আবার—আমি প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের এই রক্তের দিনগুলা মনে করবো, প্রতিটা মুখ! আমি নিজেরে প্রতিদিন মনে করায়া দেবো কিভাবে আমার ভাইয়েরা জালিমের বন্দুকের সামনে তাদের স্বচ্ছল তাজা জীবন পাইতা দিলো, কিভাবে আমার বোনদের রক্ত গড়ালো, আমি নিজেরে মনে করায়া দেবো কিভাবে ঘরে ঢুকে আমাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে—বিছানায়, জানালায় এমনকি বাবার কোলে কিভাবে লুটায়া পড়লো আমাদের দুধমাখা শিশু! আঙ্কেল!

আমি যদি লিখি আর—আমার কবিতায়, ভাষায়, আমার সাহিত্যে আমার ভাইদের রক্তের উষ্ণতা থাকবে, আমার বোনদের বিদ্রোহের রঙ আর আমার সন্তানদের বেহেশতি খুশবু! থাকবে।

আমি আমার মগজরে শাণিত করবো। আমি আমারে কখনোই ভুলতে দেবো না এই অশান্তির রাতগুলা কিভাবে আমরা জানালার শিক ধরে কাটাইছি, আমরা দেয়ালে হেলান দিয়ে বইসা থাকছি, কান পাইতা থাকছি বাকশালীর পতনের দিকে। আমি বারবার নিজেরে মনে করায়া দেবো কিভাবে আমাদের মানুষগুলার চোখে অন্ধত্ব দিয়েছে জালিমেরা যেন তারা স্বাধীনতার একটা আলোকরশ্মিও দেখতে না পায়!

আমার নিজের সাথে ওয়াদা—আমার যেকোনো আনন্দে, আমার প্রতিটা বেদনায় আমি আমারে মনে করায়া দেবো আমরা এই সবুজ দিনগুলা কিভাবে পাইছি! আমি আমারে কখনোই ভুলতে দেবো না। আমি আমারে কোনোদিন ভুলতে দেবো না কোনো মুখ!

স্বৈরাচারীর পতন হলে তোমারে নিয়া বাড়ি যাবো। আমাদের অন্তর পাখি হয়ে যাবে তখন। মনে হয় তিন শ কিলো দৌড়ায়াই চলে যাবো। গিয়ে দেখবো মা নামাজ পড়তেছে। মার পেছনে বসে আমার হাউমাউ করে কান্না আসবে। এতগুলা জান! এত রক্ত! খুনির পতন হলে ভাইরে নিয়া সারা পাড়া চিৎকার করে দৌড়াব। দৌড়াইতেই থাকব। এত আনন্দে শহীদদের কথা মনে কইরা আমাদের হয়তো আবার কান্না আসবে। এত আনন্দ এত কান্না নিয়া আমরা দৌড়াইতেই থাকব—

 

আমার যে ছেলেডা মরছে, আমি কি ওরে পামু কোনোদিন কন কোনোদিন পামু?’

 

ক্যালেন্ডার না দেখলে জানবো না কত তারিখ তেমন একটা দিন আজ। বিষ্টির ছাঁচ লেগে ঘুম ভেঙে যায়। যেহেতু ঘুম আসে এখন কিছুটা। বুঝি না কী এমন দিন যে জাগতেই হবে। কোনো মিছিল তো নাই কোথাও। আজ রক্তের ভিতর চঞ্চলতা নাই। কোনো একটা মাস শেষ হইতেছে। আমাদের অন্তরে তো এখনো জুলাইয়ের বাতাস লাগা ঘোর। আমার ভাইদের রক্ত এখনো গড়ায়া যাইতেছে। কী নরম হৃদয় ছিল আমার ভাইদের, কোমল তালুর ভিতর একটা পতাকা ধরে বেহেশতি খুশবু হয়ে গেছে আমার বোন!

 

এত বছর ধরে সংসার করি, এই হাতটা তো আমি চিনি’

 

আজ এমন কিছুই ঘটে নাই যে দিনটারে আলাদা করা যাবে। বুঝলাম না কিছুই খালি একটা সুরের ভিতর ঢুকে বাচ্চা হৃদয়ের মতন মাথা দুলাইলাম। আর রাস্তায় একটা অচেনা মানুষের দাঁড়ানোর ভঙ্গিমায় নিজের বেদনা দেইখা ফেললাম যেন। বুঝলাম, যে গেছে তারে তো ছোঁয়া যাবে না। এক দুনিয়া চইষা ফেললেও ছোঁয়া যাবে না তো। খুব একটা নড়াচড়া করি না ঘুমের বিছানায়। যেন একটা বিরহ কাইত হয়ে পড়ে থাকে কাছেই। তোমার সাথে অত বেশি সমুদ্রে যাই নি কোনোদিন—শুধু ঢেউগুলা তোমার পায়ের কাছে এসে ফেনা হয়ে যায়। দেখছি বালি ও ফেনার সমান্তরালে তুমি কেমন মাথা নিচু কইরা হাঁটো।

কত জনে তো বইলা গেল, একজীবন সাথে থাকলেও একটা মানুষ অচেনাই থাইকা যায়। তার আনন্দের রঙ বেখবরই থাকে কিন্তু আমি জানি ঘুমের সাবধানতা। ঠিক কল চাপার ঢঙেই মা বুঝে যাইতো আব্বার মুখ। তোমার আত্মার ভিতর একটা ফুল কয়টা পাঁপড়িসহ দোল দেয় আমি তা টের পাই। অতটা বুঝি না জীবন। এখনো কাপড় ধুইতে গেলে রঙ লেগে যায় শাদায়। কয় আঙ্গুল পানি দিলে ঝরঝরে ভাতের স্বাদ পাওয়া যায়—মনে রাখতে পারি না। কিন্তু একটা দুঃস্বপ্ন তোমারে কাবু করার আগেই আমার ঘুম ভেঙে যায়। জীবন বুঝি না খুব। হেঁটে আসার কোন শব্দ ঠিক আমার দরজায় এসে থাইমা যাবে আমি তা জানি।

 

একটা গুলি করি, একটা মরে। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না—’

 

কোথাও একটা ফিরে আসতে চাই আমি, আমরা। জামার হাত গুটাইতে গুটাইতে কোথায় ফিরতে চাই, জানি না। যারা চইলা গেছে ওরা তো ফিরবে না এইটুক বুঝি। সরল বাতাসের নীচে মাথা নীচু হয়ে আসে। কী সুন্দর সবুজ হইছে গাছ। আমাদের পাখিরা কেবলই আসমানে উইড়া যাবে তাও। আমাদের হৃদয় এখন গত শতাব্দীর মতোন ফাঁকা, বিস্তীর্ণ। আমরা সব ভুইলা যাব আমাদের—শুধু আমার ভাইদের নাম, বোনদের মুখ আমাদের অন্তরে তড়পাবে। আমার শিশুদের খুশবু ঘর থেকে জমিন, জমিন থেকে আসমান অব্দি নিয়ে যাবো আমি, আমরা!

 

আমারে যাইতে দেন না, আমার ছোট একটা বোন আছে!’

 

দেশ আজাদ হইলে ভাইরে নিয়ে এক দৌড়ে বিলে চলে যাব, না হয় একটা লটকন বা আনারের গাছ লাগাইতে পারি যেহেতু বিষ্টির দিন। এমন সাধ ছিল আমার। যেমন রেল দেখার সাধ নিয়ে মরে গেছে দূর্গা। কত সাধ থাকে মানুষের। একটা মাসুম সুর বাতাসে বলতে থাকে, ‘আমি কিচ্ছু করি নাই আঙ্কেল! আমি কিচ্ছু করি নাই!’ আজ ভাবি, একটা জীবন ওই সারি সারি কবরের পাশে যেন দাঁড়ায়া থাকি। লাউয়ের জাংলা যেমন শ্যাওলা সবুজ হয়ে থাকে সারাদিন আমার ভাইদের কবর তেমনি রোশনাই—আমার জানলাগুলা ফজরের আজান বরাবর খোলা রাখবো যেন আমার ভাইদের কবরের হাওয়া এসে লাগে। ওদের কবরে ফুল ফুটলেই কেবল আমাদের ঘরে বসন্ত আসতে পারে!

‘ভুইলা যাইয়ো না যে মাতৃভূমি কেবল বলার জন্য কোনো কাহিনি না, বরং বেঁচে থাকার জন্য সবথেকে জরুরি সত্য এবং এই ভূমিতে জন্মানো প্রত্যেক শহিদের সাথে আরও এক হাজার প্রতিবাদী জন্মায়।’

আমাদের আত্মা নরম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীর মতো বিরান। যখন আমাদের শহর পেঁচায়া ধরছে খুনির জিভ আমরা তখনও ভাবছি ফিলিস্তিন কতদূর ছোট ছোট শিশুদের দাঁত পড়ে আছে রাস্তায়, আমরা ভাবি একটা লং মার্চের কথা। ভাবি, জলপাই বাগানের হাওয়া এদিকেই প্রবহমান। আমাদের বিরহ কী এতই মামুলি খালি কাতরাইতে থাকবো নিজস্ব ঘরে! আমার খোয়াবের ভিতর একটা ছোট্ট খুকি আহত ভাইরে নিয়ে দৌড়াইতে থাকে। আমার ভীরু আত্মা বিধ্বস্ত ইট-পাথরের কবরে তড়পায়। আমার জীবন তো এতটাও নমলা নয় যে খালি খালি মরণের কথা কই। আমার সমস্ত সফর আজ ফিলিস্তিনের দিকে পা ফেলতেছে! ঘুমের ভিতর থেকে জেগে ওঠা শরীর শহীদী বাসনার দিকে হেলে পড়তেছে—খালি শুনতেছি গাজার সমস্ত মসজিদে ঘোষিত হইতেছে ইনকিলাব! ইনকিলাব!

একটা মঙ্গলবারের দিন যেভাবে শুরু হয় তেমনি আজ। গরম, জ্যাম আর সেই পুরানা কটকটা রোদ যেন রিকশাতেই ঘুমায়া যাবে।

রাস্তায় পা দিলেই অনন্ত এক তাড়াহুড়া লেগে যায় আমার। এই শহরে আসার পর এটাই রপ্ত করছি খালি। যদিও লোকাল বাস তাও জানলার পাশে বসতে পারলে সহজ লাগে সময়।

আর ভাবতেছি পুরাটা গ্রীষ্ম আমি খালি বাতাসের কথা লিখবো। যেভাবে ভাল্লাগে একটা সবুজ গাছের নিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়াইতে।

এবং একটা যুদ্ধের বাতাস কিভাবে আমাদের সুখী বারান্দায় এসে লাগে, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। চোখ মুঞ্জে বসে থাকি। একটা পতাকা ধুয়ে মুছে মেলে দেই রোদে। একটা পতাকা আজাদির খোয়াব নিয়ে উড়তে থাকে বাতাসে।

সপ্তাহের মাঝ বরাবর একটা দিন, মঙ্গলবার। দিয়াশলাই ফুরায়া যাওয়ার মতো সাধারণভাবে শেষ হয়ে গেল।

 

একটা মানুষ মারতে কয়টা গুলি লাগে স্যার? আমার ছেলের বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে’

 

আমাদের স্মৃতির সাথে সাথে যে শরীরগুলাও বাড়তে থাকে প্রতিটা বসন্তে তাদের গায়ে হাত রাখলে মনে পড়ে তার ছোট্ট হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোন এট্টুক শরীর। পৃথিবীর সমস্ত মায়া নিয়ে কিভাবে হাই তুলতো আমার বোনটা ঘুমের ভিতর আর তার পায়ের পাতায় আমি চুমু খাইতে থাকতাম অগুনতি তারা হয়ে। কিভাবে মিঠা রোদে অতি সাবধানে ঠিক করে দিতাম নাকের গড়ন। জন্মের পর প্রথম যখন ওর চুল ছেটে ফেলা হলো এবং আমারে বলা হলো কোনো এক পুকুরে ফেলে আসতে—ভাবতেছিলাম আমার মুঠির ভিতর গলে যাইতেছে এত নরম মখমল চুলগুলা কেন ফালায়া দেব বরং আমি সারাজীবন রাইখা দিব ট্রাঙ্কে। যদি খারাপ কিছু হয় ওই ছোট্ট শরীরে, ভাইবা ভাসায়া দিই আবার।

রোদ পোহানোর সময় মা বলে, যখন তুমি এক মাস; তোমার শরীর এত পলকা ছিল যে ধরতেও ভয় লাগতো। বলি, সবারই থাকে। মা বলে, না না। তোমার শরীর যেন কেমনই ছিল, পোড়া বেগুনের মতো চামড়া উঠতে থাকতো তোমার, আমি এত হালকা করে ধরতাম যেন আমার হাতের দাগ না বসে যায়। যেন একটা খসখসে ব্যথাও না লাগে কোথাও !

‘ব্যাথার চেয়ে আমার ওই অনুভূতিগুলো বেশি হতো যে আমার পা আছে, কিন্তু আমি যখন হাত দেই, দেখি আমার পা নাই’

খোদা জানে, আমাদের সফর শুরু হইছে অনেক আগেই। এমন কত রাত ঘরের আলো বন্ধ করে বইসা থাকছি আমরা। লাল চোখ, উদভ্রান্ত পা নিয়া আমরা হাঁটছি হাসপাতালে, থানার দরজায়। মর্গে শোয়ায়া রাখলেই কি আমার বোন লাশ হয়ে যাবে? যাবে না। তোমরা যতই বলো অপঘাত। আমরা জানি এইটা খুন! তার গড়ানো রক্ত : এক অপার মহিমা! জালিমেরা কি জানে, আমাদের ঘরগুলা কত খালি কিন্তু আমাদের হৃদয়! কী সুন্দর বিষ্টিতে ভিজে যাইতেছে সন্ধ্যামালতী। আরো লাল আরো সবুজ হইতেছে দিন। যখন পতাকায় ঢাকা ভাইয়ের মুখ দেখছি আমি, দুনিয়ার কোন সুন্দর দেখে আর আমার অন্তর ভরবে বলো!

 

আরও দুইটা গুলি কইরা দে। বাইচ্চা যাইতে পারে’

 

যখন অক্লান্ত কোনো বেদনার সামনে পইড়া যাই, কিংবা হাসপাতাল থেকে কোনো সংবাদ উড়ে আসে মনে হয় খরগোশের মত চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায় থাকি যেন কিছুই দেখতেছি না আমি। লাগে সবকিছু ঘটতেছে স্বপ্নের ভিতর। চোখ খুললেই ফিরে যাব ভরপুর সবুজ বাতাসের মাঠে। যেদিন আমার ভাই বলল, আমার হাত ভেঙ্গে গেছে, বাড়ি আসো, লাগতেছিল আমার এই অবেলার ঘুম ভাঙতেছে না কেন! আমি চোখ বন্ধ করে খালি বুঝতে চাইতাম, যখন সাইকেলের নিচে ওর হাতের কিশোর দুইটা হাড় ভেঙ্গে গেল ও ঠিক কতটা ব্যথা পাইছিল?  বিষের মতো নীল হয়ে গেছিল কি জমিন—আমি ভাবতে পারতাম না বেশি। কিছু না জেনেও মার বুক যে কাঁপতেছিল আমি তা টের পাইতাম এই অনাত্মীয় শহরে বসে। মা বলতো, আমি যদি ওরে বাজারে না পাঠাইতাম ঘরেই থাকতো। আমি ভাবতাম, এমন তো হইতেই পারতো কাদা জমে নাই রাস্তায়; যদি সাইকেলই কিনে না দিতাম আমি!

যেকোনো হৃদয়ছেড়া ঘটনার পর আমাদের মন ভাবতে থাকে কত সম্ভাবনা ছিল বাতাসে। অনেক আগে—যখন আমি উঠতি তরুণ; আমাদের পাড়ার এক ছেলে বাড়ি ফিরতেছিল রাতে। কালিতলা হাইওয়েতে, বাসে। যেখানে রাত গভীর হলে ড্রাইভারের সামনে খুলে যাইতো সাতমুখী রাস্তা। ঠিক রাস্তা খুঁজে না পাইলে বাস চলে যাইতো মৃত্যুর খাদ বরাবর। ওই রাস্তায় ছেলেটা হঠাৎ দরজা থেকে পড়ে যায় চলন্ত বাসের নিচে। আর পায়ের উপরে চাকা তুলে দিয়ে হাওয়া হয়ে যায় বাস। যেহেতু রাত একটু বেশি খুব একটা গাড়ি ছিল না রাস্তায় আর চিৎকারে রাস্তার পাশের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে বৃদ্ধ দম্পতি কিন্তু ওই ছেলের কাছে পৌছানোর আগেই হঠাৎ একটা ট্রাক পিষে দিয়ে যায় কোকড়ানো শরীর। অনেক অনেকদিন পার হয়ে যায়। সিদ্ধ ধানের উপর আমরা হাত মেলে বলতে থাকি, যদি ওই দুইটা লোক হাত তুলে থামায়া দিত ট্রাক, এমন তো হইতেই পারতো ট্রাক থাইমা যাইতো নিজেই। খয়েরি আঙরার দিকে তাকায়া আমরা ভাবতাম, কত ভালো হইতো, ঘটনাটা যদি কেবলই ঘটে যাইতো স্বপ্নের ভিতর আর আমাদের ঘুম ভাঙতো একটু বেলা করে।

 

আবু সাঈদের মতো আমি বুক পাইতা কমু গুলি কর খানকির পোলা’

 

আমাদের জানলা, ছাদ আর গলি বরাবর দরজাগুলা খোলা থাকে সারাদিন। আমাদের কাঁচলে শিশুদের বোল, মিঠা ভাষা ছড়ায়া যায় বাতাসে। আমাদের মন নরম হয়া আসে কী! মধুভাত শিশুরা আমার! এত হাহাকার, এত বিরহ! কোথায় গিয়া যে লুকাইতে চাই, এই জান কার বুকের ভিতর সারারাত তড়পাবে! আমরা তো জানি, মায়েরা তার মাখা ভাত উঠানে ছড়ায়া দিতেছে। এই ভাতের কসম খেয়েই তো আমরা এক হইছি। মেরে ফেলা নদীর কসম আমাদের জবান খুলে গেছে! আমাদের ভাষা দিছে গুম করা বেওয়ারিশ লাশ, আমাদের ভাষা দিছে রিক্সাওলা বাপ যে দিনমান টানতেছে ঝাঁঝরা হওয়া সন্তানের বুক!

 

রুম্মানা জান্নাত

জন্ম : ২৬ মার্চ, ১৯৯৩, গাইবান্ধা, বাংলাদেশ।
পড়াশোনা : ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত বই : ‘মিস করি’ সিনট্যাক্সের বাইরে, তোমাকে (নভেম্বর, ২০২২)

শেয়ার